1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রস্তুতিতে প্রাণহানি, বিশ্বকাপের কালো অধ্যায়

১৮ নভেম্বর ২০২২

ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতে উঠছে সারা বিশ্ব৷ কাতারের এ আয়োজন উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে কোটি মানুষের মাঝে৷ তবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরের এবারের আয়োজনের পেছনে রয়েছে কালো এক অধ্যায়৷

কাতারের আল খলিফা স্টেডিয়াম
কাতারের আল খলিফা স্টেডিয়ামছবি: Jewel Samad/AFP

আয়োজনের প্রস্তুতি পর্যায়ে ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হাজারো প্রবাসী শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা৷

২০১০ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকে খনিজ তেলসমৃদ্ধ দেশটি শুরু করে ব্যাপক প্রস্তুতি৷ নতুন অবকাঠামো তৈরির অংশ হিসেবে সুবিশাল স্টেডিয়াম, নুতন বিমানবন্দর, অতিথিশালা ইত্যাদির জন্য কাতার বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করে৷

বড় সব প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সময়মতো শেষ করার জন্য মরিয়া কাতার অপেক্ষাকৃত সস্তা মজুরির অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভর করলেও তাদের কাজ ও আবাসনের পরিবেশের দিকে নজর দেয়নি৷ ফলে ঘটেছে বহু শ্রমিকের অকাল মৃত্যু৷

কতজন মারা গেছে?

বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য কাতার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের নিয়োজিত করে৷ এসব দেশেরর শ্রমিকরা বেশি মারা গেছে৷

কাতার বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে?

02:01

This browser does not support the video element.

মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি৷ তবে সংখ্যাটি বেশ বড়৷ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সাড়ে ছয় হাজার থেকে ১৫,০০০ হাজার অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে গত ১০ বছরে, যাদের অধিকাংশই তরুণ৷ এর মধ্যে ১ হাজার ১৮ জন বাংলাদেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে৷

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন বলছে, গত ১০ বছরে ৬,৭৫১ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করে৷ তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে এই সংখ্যা দিগুণেরও বেশি৷ কাতারের অফিশিয়াল সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই মানবাধিকার সংস্থা বলছে, ১৫,০০০ প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দশকে৷

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান বলছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের ২,৭১১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশের ১,০১৮ শ্রমিক, নেপালের ১,৬৪১, পাকিস্তানের ৮২৪ এবং শ্রীলংকার ৫৫৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এই সময়ে৷

কাতারে জনশক্তির অপর দুই বৃহৎ উৎস হলো ফিলিপাইন্স ও কেনিয়া৷ দেশ দুটি থেকে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের সংখ্যা যুক্ত করলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে৷

এছাড়া গত এক বছরে যারা মারা গেছেন তাদের সংখাও জানা সম্ভব হয়নি৷ ফলে প্রকৃতপক্ষে এ পর্যন্ত কতজন প্রবাসী শ্রমিক কাতারে মৃত্যুবরণ করেছেন তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়৷

বিধ্বস্ত পরিবারের অগণিত গল্প

প্রবাসী হিসেবে যারা কাজ করতে যায় তারা সাধারণত গরিব পরিবারের সন্তান৷ অধিকাংশ পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠাতে ঋণ বা কর্জ করতেও দ্বিধা করে না৷ কেননা, তারা জানেন যে, তাদের সন্তান বিদেশ গিয়ে টাকা উপার্জন করে পাঠাবে৷ এতে করে ঋণ শোধ হবে আর পরিবারও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে৷

কাতারে মারা যাওয়া সুজনের পরিবারের দুঃখ গাথা

01:20

This browser does not support the video element.

কিন্তু কাজ করতে গিয়ে যদি তাদের সন্তান মারা যায় তবে তাদের বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে হয়৷

কাতারে মৃত্যুবরণ করা প্রতিটি পরিবারের ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটেছে৷ পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীকে হারিয়ে তাদের অনেকেই দিশেহারা৷

এদের মধ্যে আছে বাংলাদেশের ২৯ বছর বয়সি মোঃ শহিদ মিয়া৷ ২০১৭ সালে কাতারে কাজ করতে যাওয়ার জন্য প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছিল তার পরিবারকে৷ এ জন্য টাকা ধার করতে হয়৷

তার অকাল মৃত্যু তার পরিবারকে বিপদে ফেলে দিয়েছে৷ এই অর্থের বোঝা এখন তার বাবা-মাকে বহন করতে হবে৷ কাতার থেকেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ৷

স্বাভাবিক মৃত্যু?

কিন্তু এসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশটি আর তা নিয়েও রয়েছে সমালোচনা৷

গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যতজন মারা গেছেন, তাদের শতকরা ৬৯ ভাগের স্বাভাবিক মৃত্যু ও ১২ ভাগের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়৷ শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুর সঙ্গে কাজের পরিবেশ জড়িত৷ আর ৭ ভাগ কর্মী করেছেন আত্মহত্যা৷

তবে বেশিরভাগ মৃত্যুর ক্ষেত্রেই মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি৷ আবার দেশটি এত বড় সংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো ধরনের অনুসন্ধান করেনি৷ ফলে মৃত্যুর আসল কারণ চাপা পড়ে যায়৷

এদিকে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বানকেও এড়িয়ে গেছে কাতার৷

কাতারে প্রায় ২০ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক কাজ করে৷

ম্যাট ফোর্ড/একেএ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ