ক্যাপিটলের ঘটনার পরে গ্রেফতার হয়েছে হোয়াইট সুপ্রিমেসির নেতা এনরিক ট্যারিও। সে পুলিশের চর বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকমাস ধরে অ্যামেরিকায় প্রাউড বয়দের নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের সময় থেকেই এই গোষ্ঠীটির নাম বার বার খবরের শিরোনামে এসেছে। অতি দক্ষিণপন্থী এই দলটি হোয়াইট সুপ্রিমেসিতে বিশ্বাস করে। অ্যামেরিকায় নতুন করে বর্ণবাদের যে আবহ তৈরি হয়েছে, সেখানে এই গোষ্ঠীটি অত্যন্ত সক্রিয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় ডনাল্ড ট্রাম্প যখন বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন, তখনো এই প্রাউড বয়রা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। সেই প্রাউড বয় গোষ্ঠীর নেতা এনরিক ট্যারিও এখন জেলে। ক্যাপিটলের ঘটনার দুই দিন পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করতে গিয়ে নতুন তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের চর হিসেবে কাজ করেছে এই ট্যারিও।
বাস্তেই থেকে ক্যাপিটল: সরকারি ভবনে হামলার কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা
৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে হামলার ঘটনায় হতবাক বিশ্ব৷ কিন্তু এটাই প্রথম নয়৷ ইতিহাসে এমন আরও কয়েকটি ঘটনার কথা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: akg-images/picture alliance
১৭৮৯: ফরাসি বিপ্লব
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসের বাস্তেই দুর্গ পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়৷ এই দুর্গে স্বাধীনতাকামী রাজনীতিবিদদের বন্দি করে নির্যাতন করা হত৷ বিক্ষুব্ধ মানুষ ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করতে দুর্গে চড়াও হয়৷ নিহত হয় দুই শতাধিক৷ ফ্রান্সে বর্তমানে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় ১৪ জুলাই৷
ছবি: akg-images/picture alliance
১৯১৭: অক্টোবর বিপ্লব
রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লব শুরু হয় যখন বলশেভিকরা উইন্টার প্যালেসে হামলা চালায়৷ প্রাদেশিক সরকারের অফিস ছিলো এটি৷ ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার জারের পতন ঘটে৷ ‘রেড অক্টোবরে’ বলশেভিকরা রাজধানী সেন্ট পিটার্সব্যর্গ থেকে সরকার উৎখাতে সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg
১৯৫৮: ইরাকে সামরিক অভ্যুত্থান
সে বছরের জুলাইয়ে বাগদাদে বাদশাহ ফয়সালের প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা৷ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় রাজতন্ত্রের৷ বাদশাহ ফয়সাল এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
১৯৭৩: চিলির সামরিক অভ্যুত্থান
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাতরে আলেন্দে তিন বছর ক্ষমতায় থাকার পর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী৷ ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবন দখল করে নেয় সামরিকবাহিনীর সদস্যরা৷ আলেন্দে আত্মহত্যা করেন এবং চিলিতে আগুস্তো পিনোশের নৃশংস সামরিক স্বৈরাচারী শাসন শুরু হয়৷
ছবি: OFF/AFP/Getty Images
১৯৮১: স্পেনে অভ্যুত্থানের চেষ্টা
ঐ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি লেফটেনেন্ট গভর্নর আন্তোনিও তেজেরো মলিনা ২০০ পুলিশ ও সেনা নিয়ে স্পেনের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পার্লামেন্ট সদস্যদের ১৮ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে৷ রাজা খুয়ান কার্লোসের মধ্যস্থতায় ফ্রাঙ্কো শাসনামলের শেষে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ হয় দেশটির৷ অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং মলিনাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
১৯৩৩: জার্মান পার্লামেন্ট
সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ঘটনা ঘটে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে হিটলারের শপথ নেয়ার চার সপ্তাহ পর এক বিদ্রোহী জার্মান পার্লামেন্ট ভবনের নীচতলায় আগুন দেয়৷ গত বছরের আগস্টে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কড়াকড়ি উঠিয়ে নেয়ার দাবিতে ভবনে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছিল বিক্ষোভকারীরা৷ এদের বেশিরভাগই ছিলো কট্টর ডানপন্থি দলের সমর্থক৷
ছবি: Reuters/C. Mang
২০২১: ক্যাপিটল ভবন
২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ৬ জানুয়ারি কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক কংগ্রেস ভবনের সামনে জড়ো হয়৷ এক পর্যায়ে ভবনে হামলা চালায় সহিংস বিক্ষোভকারীরা৷ নিহত হয় চারজন৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
7 ছবি1 | 7
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় ট্রাম্পপন্থিরা। ভবনের ভিতরে ঢুকে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ভন্ডুল করে দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রথমে চারজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরো এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় প্রাউড বয়রা জড়িত ছিল আগেই জানিয়েছিল পুলিশ। ঘটনার দুইদিন পরে প্রাউড বয়দের নেতা ট্যারিওকে গ্রেফতার করা হয়। ক্যাপিটলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গিয়েছিল সে। সঙ্গে ছিল একটি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের ব্যানারও। কাছেই একটি চার্চ থেকে তা খুলে নিয়ে গিয়েছিল সে। ক্যাপিটলে ওই ব্যানারটি পোড়ানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
বৃহস্পতিবার সংবাদসংস্থা রয়টার্স ট্যারিও-র বিষয়ে নতুন তথ্য সামনে এনেছে। পুলিশের সূত্র উদ্ধৃত করে তারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই ট্যারিও পুলিশের চর। এবং সে কারণে এক সময় তার শাস্তিও কমিয়ে দিয়েছিল অ্যামেরিকার একটি আদালত।
ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে ক্যাপিটলে যত ক্ষয়ক্ষতি
বুধবার অনেকটা সময় ট্রাম্প সমর্থকদের দখলে ছিল মার্কিন ক্যাপিটল৷ বিস্তর ক্ষতি করেছেন তারা৷ জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Alex Wong/Getty Images
যা হয়েছিল
বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়লেন উত্তেজিত ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা৷ পুলিশের বাধা না মেনে দখল নেন ক্যাপিটল ভবনের একতলার৷ বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে৷ পরে, বাধ্য হয়ে গুলি চালায়৷ সব মিলিয়ে ক্যাপিটল ভবন ও সংবাদমাধ্যমের নানা সম্পত্তির অনেক ক্ষতি হয়৷
ছবি: REUTERS
রক্তাক্ত ক্যাপিটল
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকদের ক্রোধের আঁচ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যাকারি টেলরের আবক্ষমূর্তিতেও লেগেছে৷ ক্যাপিটলের ভেতরে হাতাহাতির ফলে রক্তপাত ঘটে, সেই রক্ত দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট টেলরের মূর্তির গায়েও৷
ছবি: Samuel Corum/Getty Images
ভাঙচুর যত
বুধবার টেলিভিশন থেকে ইন্টারনেট সর্বত্র ছেয়ে ছিল ক্যাপিটলে ভাঙচুরের ছবি৷ বিক্ষুব্ধরা শুধু ক্যাপিটলের বিভিন্ন দরজা, জানালার কাঠ-কাঁচ ভেঙেই থামেনি, ভেতরের মূল পোডিয়ামও কাঁধে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা৷ একটি ভিডিওতে দেখা যায় কয়েক শতক পুরোনো আসবাব, ঝাড়বাতি সব টেনে মাটিতে ফেলে দিতে৷
ছবি: Erin Scott/REUTERS
যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ক্যাপিটলে উপস্থিত হাউস প্রতিনিধি জেসন ক্রো বলেন, ‘‘আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়৷ পালাবার পথ ছিল না৷ যখন আমি ইরাক বা আফগানিস্তানে লড়ছিলাম, তখনও আমি এতটা ভীত হয়েছিলাম৷ এরপর আর কখনো এমন অনুভূতি হয়নি৷ কিন্তু সেই সময় আমার সামনে লড়ে বিপদ থেকে বেরোবার পথ ছিল৷ লড়ার জন্য ক্যাপিটলে আমার পকেটের কলম ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না৷’’
ছবি: Alex Wong/Getty Images
আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম
শুধু ক্যাপিটলের ভেতরে নয়, বাইরে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা, মাইক ভাঙা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের গালিও দেওয়া হয়৷ ওপরের ছবিতেও তার প্রতিফলন৷ ক্যাপিটলের দরজার ওপরে লেখা ‘মার্ডার দ্য মিডিয়া!’
ছবি: Erin Scott/REUTERS
সন্ত্রাস ও মৃত্যু
বুধবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে, রয়েছেন এক পুলিশকর্মীও৷ ভাঙচুর, মারামারি ও হাতাহাতির ভয়াবহতার কারণে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই বুধবারের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
6 ছবি1 | 6
২০১৪ সালে ডায়েবেটিসেরজাল ওষুধবিক্রি করার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিল সে। আদালতে তাকে তোলার পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই জাল ওষুধ চক্রকে ধরিয়ে দেওয়ায় সাহায্য করেছে ট্যারিও। বিভিন্ন ধরনের স্মাগলিং, নারী পাচারের গ্যাংকেও সে ধরিয়ে দিয়েছে। সর্বত্রই আন্ডারকভার হিসেবে কাজ করেছে সে এবং সময়মতো পুলিশকে খবর দিয়েছে।
বিস্তারিত জানার পরে বিচারক ট্যারিও-র ৩০ মাসের শাস্তি কমিয়ে ১৬ মাস করে দেন। এর আগে ২০১২ সালেও একটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল ট্যারিও। তারপর থেকেই পুলিশের চর হিসেবে সে কাজ করছে বলে জানা গিয়েছে।
ট্যারিও এবং তাঁর আইনজীবী অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। ট্যারিও সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে, বিচারক তার শাস্তি কমিয়েছে মনে থাকলেও বাকি বিষয়ে কিছুই তার মনে নেই। তার আইনজীবীও এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
প্রশ্ন হলো, তবে কি প্রাউড বয়েও আন্ডারকভার হিসেবে কাজ করছিল ট্যারিও। নাকি বিশ্বাস থেকেই হোয়াইট সুপ্রিমেসির প্রচার চালাচ্ছিল। পুলিশ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।