ক্যাপিটল দাঙ্গায় অংশগ্রহণের জন্য এই শাস্তি ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটনের এক আদালত।
বিজ্ঞাপন
এনরিক ট্যারিও, ৩৯ বছরের এই ব্যক্তি একসময় অতি দক্ষিণপন্থি সংগঠন প্রাউড বয়েসের সভাপতি বা চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে মার্কিন কংগ্রেস আক্রমণের অন্যতম চক্রী ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের এক আদালত তার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করেছে। ক্যাপিটল দাঙ্গায় এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শাস্তি দেওয়া হল এনিককে। আদালত তাকে ২২ বছর কারাগারে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারি আইনজীবী অবশ্য সর্বোচ্চ ৩৩ বছরের শাস্তি চেয়েছিলেন আদালতের কাছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইন প্রয়োগের অনুরোধও করা হয়েছিল। উল্টোদিকে এনরিকের আইনজীবী বলেছিলেন, তার মক্কেল ভুল পথে চালিত হয়ে ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ভুল নেতার ডাকে তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। আসলে তিনি একজন দেশপ্রেমিক। তিনি ভেবেছিলেন, ওই কাজ দেশকে বাঁচানোর পথ।
ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে ক্যাপিটলে যত ক্ষয়ক্ষতি
বুধবার অনেকটা সময় ট্রাম্প সমর্থকদের দখলে ছিল মার্কিন ক্যাপিটল৷ বিস্তর ক্ষতি করেছেন তারা৷ জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Alex Wong/Getty Images
যা হয়েছিল
বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়লেন উত্তেজিত ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা৷ পুলিশের বাধা না মেনে দখল নেন ক্যাপিটল ভবনের একতলার৷ বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে৷ পরে, বাধ্য হয়ে গুলি চালায়৷ সব মিলিয়ে ক্যাপিটল ভবন ও সংবাদমাধ্যমের নানা সম্পত্তির অনেক ক্ষতি হয়৷
ছবি: REUTERS
রক্তাক্ত ক্যাপিটল
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকদের ক্রোধের আঁচ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যাকারি টেলরের আবক্ষমূর্তিতেও লেগেছে৷ ক্যাপিটলের ভেতরে হাতাহাতির ফলে রক্তপাত ঘটে, সেই রক্ত দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট টেলরের মূর্তির গায়েও৷
ছবি: Samuel Corum/Getty Images
ভাঙচুর যত
বুধবার টেলিভিশন থেকে ইন্টারনেট সর্বত্র ছেয়ে ছিল ক্যাপিটলে ভাঙচুরের ছবি৷ বিক্ষুব্ধরা শুধু ক্যাপিটলের বিভিন্ন দরজা, জানালার কাঠ-কাঁচ ভেঙেই থামেনি, ভেতরের মূল পোডিয়ামও কাঁধে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা৷ একটি ভিডিওতে দেখা যায় কয়েক শতক পুরোনো আসবাব, ঝাড়বাতি সব টেনে মাটিতে ফেলে দিতে৷
ছবি: Erin Scott/REUTERS
যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ক্যাপিটলে উপস্থিত হাউস প্রতিনিধি জেসন ক্রো বলেন, ‘‘আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়৷ পালাবার পথ ছিল না৷ যখন আমি ইরাক বা আফগানিস্তানে লড়ছিলাম, তখনও আমি এতটা ভীত হয়েছিলাম৷ এরপর আর কখনো এমন অনুভূতি হয়নি৷ কিন্তু সেই সময় আমার সামনে লড়ে বিপদ থেকে বেরোবার পথ ছিল৷ লড়ার জন্য ক্যাপিটলে আমার পকেটের কলম ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না৷’’
ছবি: Alex Wong/Getty Images
আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম
শুধু ক্যাপিটলের ভেতরে নয়, বাইরে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা, মাইক ভাঙা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের গালিও দেওয়া হয়৷ ওপরের ছবিতেও তার প্রতিফলন৷ ক্যাপিটলের দরজার ওপরে লেখা ‘মার্ডার দ্য মিডিয়া!’
ছবি: Erin Scott/REUTERS
সন্ত্রাস ও মৃত্যু
বুধবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে, রয়েছেন এক পুলিশকর্মীও৷ ভাঙচুর, মারামারি ও হাতাহাতির ভয়াবহতার কারণে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই বুধবারের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
6 ছবি1 | 6
কিন্তু আদালত এনরিকের আইনজীবীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি। আদালত জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের যে ক্লাসিক্যাল সংজ্ঞা, এনরিকের কাজ তার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। কিন্তু সন্ত্রাসের চেয়ে কম কিছুও করেননি তিনি। ফলে সরকারি আইনজীবী যে শাস্তি দাবি করেছে, এনরিকের শাস্তি তার কাছাকাছিই কিছু হওয়া উচিত। এরপরেই ২২ বছরের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গার দিন এনরিক ওয়াশিংটনে ছিলেন না। কিন্তু অভিযোগ, বাইরে বসে তিনি তার সংগঠন প্রাউড বয়েজকে প্রভাবিত করেছিলেন। তাদের দাঙ্গায় যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আদালতে এনরিক বলেছেন, তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন তার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু সরকারি আইনজীবী এনরিকের প্রতিটি বক্তব্য খণ্ডন করেছেন।
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, একজন সাধারণ সৈনিকের মতো নয়, ওই দিন এনরিকের ভূমিকা ছিল একজন সেনা জেনারেলের মতো। যে নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও পুরো ঘটনাটিকে ডিজাইন করেছিলেন। সারাক্ষণ নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন।
আগামী নির্বাচনগুলিতে কারও ফলাফল পছন্দ না হলে যাতে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্যই এনরিককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত বলে আদালতে আবেদন করেছিলেন সরকারি আইনজীবী।