প্রাক্তন কর্নেলকে জার্মানির রাষ্ট্রদূত করলেন ট্রাম্প
২৮ জুলাই ২০২০
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগরকে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ করলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি রিচার্ড গ্রেনেলের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
বিজ্ঞাপন
সেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর ম্যাকগ্রেগর ফক্স নিউজের ভাষ্যকার ছিলেন। তিনি জার্মানির সামরিক ইতিহাসও লিখেছেন। ম্যাকগ্রেগর মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন অপারেশনের খোলাখুলি সমালোচনা করে থাকেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ম্যাকগ্রেগর হলেন ফোর্স ডিজাইন ও রণকৌশল বিশেষজ্ঞ।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি রেডিও ও টিভিতে নিয়মিত বিশ্লেষণ করেন। সামরিক বিষয়ে তাঁর লেখা অ্যামেরিকা, ন্যাটো ও ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে এ বার অনুমোদন করবে মার্কিন সেনেট। তবে সেখানে প্রেসিডেন্টের দল রিপাবলিকান পার্টির গরিষ্ঠতা আছে। ফলে ছাড়পত্র পেতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
ম্যাকগ্রেগর ইরাক যুদ্ধের কট্টর সমালোচক। ফক্স নিউজে তিনি সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করা নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
জার্মানিতে মার্কিন সেনা কেন
সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মানিতে আছে অ্যামেরিকার সেনা। সেই সময় থেকেই ইউরোপে অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষেত্রে জার্মানির গুরুত্ব তাঁদের কাছে বিশাল।
ছবি: Getty Images/AFP/J.-C. Verhaegen
বিশ্বযুদ্ধের পরে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে মিত্রশক্তির বাহিনী জার্মানিতে ছিল। ১৯৪৫ থেকে '৫৫ পর্যন্ত। মার্কিন, সোভিয়েত, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের বাহিনী। ১৯৪৯ সালে সরকারিভাবে পূর্ব জার্মানি হলো। সেখানে থাকল সোভিয়েত বাহিনী। আর সাবেক পশ্চিম জার্মানিতে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের বাহিনী।
ছবি: Horace Abrahams/Keystone/Getty Images
জার্মানিতেই সদরদফতর
ইউরোপের আরও দেশে অ্যামেরিকার সেনা আছে। তাদের বলা হয় ইউএস ইউরোপীয়ান কম্যান্ড (ইউকম)। তাদের সদর দফতর হলো জার্মানির শহর স্টুটগার্টে। এখান থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় থাকা মার্কিন সেনার মধ্যে সমন্বয় করা হয়।
ছবি: AP
কেন মার্কিন সেনা
ইউকমের মিশন হলো ইউরোপে কোনও বিরোধ বা সংঘাত হলে তা থামানো, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলিকে সহায়তা করা এবং মার্কিন স্বার্থরক্ষা। ইউরোপে অ্যামেরিকার স্থল, নৌ, বিমান বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। জার্মানিতেও অ্যামেরিকার সব কটি বাহিনী আছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Arme
জার্মানিতে সব চেয়ে বেশি
ইউরোপের মধ্যে সব চেয়ে বেশি মার্কিন সেনা আছে জার্মানিতে। মোটামুটি ৩৮ হাজার ৬০০-র মতো। তবে এই সংখ্যাটা সবসময় এক থাকে না। কারণ, জাপান ছাড়া এত বেশি মার্কিন সেনা অন্য কোনও দেশে নেই।
ছবি: AFP/Getty Images/C. Stache
সংখ্যা কমেছে
জার্মানিতে অবশ্য মার্কিন সেনার সংখ্যা কমেছে। জার্মান সরকারের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১৮র মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যা অর্ধেকের থেকেও বেশি কমেছে। আগে ছিল ৭২ হাজার ৪০০। সেখান থেকে হয়েছিল ৩৩ হাজার ২৫০। তারপর একটু বেড়েছে।
ছবি: AFP/Getty Images/C. Stache
শুধু সেনা নয়
জার্মানি সহ ইউরোপে মার্কিন সেনা শিবিরে শুধু অ্যামেরিকার সেনারাই থাকেন না। সেখানে অনেক সময় অসামরিক ব্যক্তিদেরও নিয়োগ করা হয়। তাছাড়া অনেক সময় পরিবারের লোকেরাও সেনার সঙ্গে থাকেন।হামস্টাইনের মতো কিছু জায়গায় তো তাঁদের নিয়ে একটা ছোট শহরই গড়ে উঠেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kramer
সুবিধা পান স্থানীয়রা
জার্মানিতে যে জায়গায় মার্কিন সেনারা আছেন, সেখানে সুবিধা পান জার্মানরাও। ওই ছোট শহরের যাবতীয় পরিষেবা দেন তাঁরাই। সে জন্য অ্যামেরিকা সেনা কমালে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানান।
ছবি: AP
ট্রাম্পের ঘোষণা
এ বার অ্যমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জার্মানিতে মার্কিন সেনা কমিয়ে ২৫ হাজার করার কথা বলেছেন। ট্রাম্পের যুক্তি, জার্মানি প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াচ্ছে না, অ্যামেরিকাকে বানিজ্যে সুবিধা দিচ্ছে না। তাই তিনি এই পদক্ষেপ নিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
ক্ষতি কার
অ্যামেরিকাতেই ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেতারা বলছেন, এর ফলে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে। ট্রাম্প রাশিয়া ও চীনকে সুবিধা করে দিচ্ছেন। ইউরোপ থেকে সেনা কমা মানে অ্যামেরিকার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়া।
ছবি: picture-alliance/dpa/Armin Weigel
9 ছবি1 | 9
ম্যাকগ্রেগর ১৯৭৬ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনীতে ছিলেন। সেখান থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁকে টিভিতে বিশেষজ্ঞ হিসাবে প্রায়ই বলতে দেখা গেছে। তাঁর মত হলো, ইরাক বা সিরিয়ায় অ্যামেরিকার কোনো স্বার্থ নেই। আর ইরান নয়, তাঁর মতে, অ্যমেরিকার কাছে বিপদের কারণ হলো তুরস্ক। ম্যাকগ্রেগর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পূর্ব জার্মানির সম্পর্ক নিয়ে গবেষণাও করেছেন।
এই বছরের জুনে ট্রাম্প জার্মানি থেকে সাড়ে নয় হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জার্মানি যুক্তিপূর্ণ ব্যবহার করছে না। তাঁর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে জার্মানি।
ম্যাকগ্রেগর যাঁর জায়গায় জার্মানির রাষ্ট্রদূত হতে চলেছেন, সেই রিচার্ড গ্রেনেলও খোলাখুলি কথা বলতে ভালোবাসতেন। তিনি রাষ্ট্রদূত থাকার সময় ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থীদের ক্ষমতায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন। গত ১ জুন তিনি রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তার ডিরেক্টর হয়েছেন।