সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ভারতের ষোড়শ সংসদীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ৷ তার আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ভোট-পূর্ব সমীক্ষা করেছে৷ তাতে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা উঠে এসেছে৷ তবে একা সরকার গড়ার মত অবস্থা থাকবে না৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে সোমবার ৭ এপ্রিল থেকে প্রথম দফার ভোটপর্ব শুরু হচ্ছে৷ ভোট হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুটি রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরায়৷ আসামে ১৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ভোট হবে ৫টি আসনে এবং ত্রিপুরার ২টি আসনের মধ্যে একটিতে৷ ভারতীয় সংসদের ৫৪৩টি আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নয় দফা ভোট পর্বে যোগ দেবেন ৮১ কোটিরও বেশি ভোটদাতা, যারমধ্যে প্রায় ১২ কোটি ভোটার ভোট দেবেন এই প্রথম৷ ভোটের আগাম ফলাফল নিয়ে গোটা দেশে জনমত সমীক্ষায় নেমে পড়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং ভোট বিশেষজ্ঞরা৷ সেইসব সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের ৩৫.৭ শতাংশ ভোট পড়বে বিজেপির ঝুলিতে৷ কংগ্রেস সেখানে পাবে ১৯.৯ শতাংশ৷ গ্রামীণ ভারতে বিজেপির ভোট বাড়তে পারে ১০ শতাংশের মত৷ ঐ তালিকার তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকবে যথাক্রমে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি ও কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি৷ তাদের ভোট দেবে ৩.৫ শতাংশ এবং ২.৯ শতাংশ৷ আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এবং উত্তরপ্রদেশে শাসক দল সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করবে ২.১ শতাংশ ভোটার৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
সমীক্ষার পূর্বাভাষ অনুযায়ী বিজেপির দখলে যেতে পারে ২১৫ থেকে ২২৫টি আসন৷ সেখানে কংগ্রেস এককভাবে পেতে পারে ১২১ থেকে ১৩২টি আসন৷ বিভিন্ন সমীক্ষার পূর্বাভাষ এক নয়৷ অন্য একটি সমীক্ষায় বলা হয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট বা এনডিএ পেতে পারে ২৩৪ থেকে ২৪৬টি আসন৷ আর কংগ্রেস ও তার শরিক দলগুলি হাতে আসবে ১২৩টি আসন৷ তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ২৩ থেকে ২৯টি আসন, বামফ্রন্ট ১৪ থেকে ২০টি আসন এবং দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুর জয়ললিতার এআইএডিএমকে ১৫ থেকে ২০টি আসন৷ সরকার গঠনে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবেনা৷ ত্রিশঙ্কু সংসদে বা ভঙ্গুর জনাদেশের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ৷ বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভেদকার মনে করেন, বিজেপি একা পাবে ২৫০-এর মত আর শরিক দলগুলি নিয়ে সেটা যাবে ২৯০-এর কাছাকাছি৷ বিজেপি এতটাই আত্মবিশ্বাসী৷ ভোট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেঙে পড়া অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণি আকৃষ্ট হবে মোদী শাসনের দিকে৷ কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, বিজেপির এই আত্মবিশ্বাসের বেলুন ফেটে যাবে৷ যেমনটা গিয়েছিল ২০০৪ এবং ২০০৯ সালের ভোটে৷ ক্ষমতায় আসবে কংগ্রেস তার পুরানো শরিক দলগুলিকে নিয়ে৷
তরুণ ভোটার টানতে অভিনব উদ্যোগ
ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যেন তরুণরা ভোট দিতে যায় সেজন্য অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেদেশের সরকার৷ ছবিঘরে থাকছে সে কথাই৷
ছবি: DW/B. Das
১৬তম লোকসভা নির্বাচন
আগামী ৭ তারিখ থেকে ভারতে ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে৷ প্রায় ৮০ কোটি ভোটার এবার ভোট দেবেন৷ ২০০৯ সালের চেয়ে সংখ্যাটা প্রায় ১০ কোটি বেশি৷
ছবি: DW/B. Das
প্রথমবার ভোটার ২.৩ কোটি
এবার প্রায় ২.৩ কোটি তরুণ প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন৷ এদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করাকে নিজেদের একটা অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: DW/B. Das
তরুণদের উৎসাহ দিতে
তরুণদের ভোট দিতে যেতে উৎসাহিত করতে ভারতের সরকার ২০১০ সালে ‘সিস্টেমেটিক ভোটারস এডুকেশন অ্যান্ড ইলেকটোরাল পার্টিসিপেশন’ বা এসভিইইপি নামে একটি প্রকল্প চালু করে৷ এর আওতায় জানুয়ারির ২৫ তারিখে ‘ন্যাশনাল ভোটারস ডে’ উদযাপন করা হয়৷
ছবি: DW/B. Das
দেয়ালচিত্র
এটি উত্তরপূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং এর একটি দেয়াল যেখানে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে৷
ছবি: DW/B. Das
আরও উদ্যোগ
শিলং-এর একজন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তরুণদের আকৃষ্ট করতে সৃষ্টিশীল সব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ এর মধ্যে রয়েছে রচনা লেখা, ছবি আঁকা, বিতর্ক ও ধাঁধা প্রতিযোগিতার আয়োজন৷ রয়েছে দেয়ালচিত্র আঁকা, নৃত্য, গান, স্লোগান ও জিঙ্গেল তৈরি, ‘রান ফর ডেমোক্রেসি ম্যারাথন’ ইত্যাদি৷
ছবি: DW/B. Das
অন্যদের কাছ থেকে উৎসাহ পাওয়া
দেয়ালচিত্র অংকন শিল্পী কারিন জপলিন লাংসটিহ বলেন, ‘‘জার্মানি সহ অন্যান্য দেশের স্ট্রিট আর্টওয়ার্ক দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি৷ স্থানীয় বিষয় যেমন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, গ্রামের বাস এসব জিনিসকে আমরা দেয়ালচিত্রে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি৷’’
ছবি: DW/B. Das
সব ভোটই গোনা হয়
এত সব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন তরুণ ভোটারদের যে বার্তা দিতে চায় সেটা হচ্ছে ‘সব ভোটই গোনা হয়৷’
ছবি: DW/B. Das
7 ছবি1 | 7
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চান দেশের ৪৫.৭ শতাংশ জনতা৷ রাহুল গান্ধীকে দেখতে চান ২১.৩ শতাংশ মানুষ৷ তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছেন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতি৷ এবারের মূল নির্বাচনি ইস্যুগুলি হল, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি (৬৫.৫%), দুর্নীতি (৪৫.৫%)৷ সাম্প্রদায়িকতা এবারের নির্বাচনি ইস্যু নয়, জনমত সমীক্ষায় এমনটাই বলা হচ্ছে৷