সুখাদ্যের স্বাদ
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩তালিকায় হাজার আড়াই সামগ্রী৷ এখান থেকেই জার্মানি তথা ইউরোপের নানা ‘এশিয়া শপ', সেই সঙ্গে হোটেল-রেস্তরাঁ-সুপারমার্কেটে ফরমায়েশ মতো খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়৷ গোডাউনের হলগুলোর উচ্চতা দশ মিটার৷ শেল্ফগুলোয় সব মিলিয়ে সতেরো হাজার প্যালেট রাখার জায়গা আছে৷ কোম্পানির সিইও টিম ক্রাইয়েনহপ এক গ্লাস টিক্কা মশালা সস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, ভারতের ‘ট্রুলি ইন্ডিয়ান' কোম্পানির পণ্য৷
‘স্ট্রিট ফুড' নয়, স্ট্রেট ফুড
জার্মান টুরিস্টরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেড়াতে গেলে পথেঘাটে অনেক কিছু সুস্বাদু খাদ্য কি অখাদ্য দেখে ও চেখে থাকেন – যেমন ভাপে সিদ্ধ ম্যাকারেল মাছ কিংবা ভাজা মুর্গির মাথা৷ ‘ক্রাইয়েনহপ অ্যান্ড ক্লুগে'-র ভাঁড়ারে সে সব বস্তুর খোঁজ করে কোনো লাভ নেই, কেননা এশিয়ায় এমন অনেক কিছু খাওয়া হয়, যার ইউরোপে বিশেষ চাহিদা নেই৷ আবার হয়ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়মকানুন তা আমদানি করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
আমদানি করতে হচ্ছে বলেই যে এ সব এশীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হতে হবে, তার কোনো কারণ নেই৷ এক গ্লাস টিক্কা মশালার দাম সাকুল্যে দুই ইউরো৷ আর কয়েক পা এগোলেই শেল্ফ ভর্তি কোকোনাট মিল্ক বা নারকেলের দুধ৷ জার্মানরা তাদের রান্নাবান্নায় আগে যেখানে ক্রিম ব্যবহার করতেন, আজ সেখানে নারকেলের দুধ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, কেননা নারকেলের দুধে স্নেহ জাতীয় পদার্থের পরিমাণ কম৷
এই সব মালপত্র আসে সমুদ্রপথে, জাহাজে করে, কাজেই ইউরোপে পৌঁছতে ছ'সপ্তাহ অবধি সময় লেগে যেতে পারে৷ কনটেইনারে করে মালপত্র ব্রেমারহাফেন বন্দর হয়ে অয়টেনে পৌঁছয়৷ সেখান থেকে ট্রাকে করে মাল যায় জার্মানি ও গোটা ইউরোপে: ভিয়েতনাম থেকে স্লাইস করে টিনে ভরা আনারস; জাপানি সুরা; থাইল্যান্ডের বিয়ার৷
ডর্টমুন্ডে তৈরি চিলি সস নয়
এ সব তো রোজকার ব্যবহারের জিনিস: সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে এগুলোকে ইউরোপে আনার কি কোনো অর্থ হয়? টিম ক্রাইয়েনহপ বলেন: ‘‘আমরা আসল এশীয় খাদ্যপণ্য চাই, ডর্টমুন্ডে তৈরি চিলি সস নয়৷'' ‘ক্রাইয়েনহপ অ্যান্ড ক্লুগে'-র গ্রাহকদেরও দৃশ্যত তা-ই মত৷ নয়ত এই কোম্পানিতে আজ ১৪০ জন মানুষ কাজ করতেন না; বছরে বিক্রির পরিমাণ সাত কোটি ইউরোর কাছাকাছি হতো না৷
শুধুমাত্র অয়টেনের গোডাউনেই প্রায় এক কোটি ইউরো মূল্যের পণ্য থাকে – আসে, যায়, বদলায়৷ এমনকি ব্যাংকক থেকে একটি আস্ত ‘টুক-টুক', বা অটো-রিকশা আমদানি করা হয়েছে শুধু বিজ্ঞাপনের খাতিরে: বিশেষ করে খাদ্যমেলাগুলিতে স্টল সাজাতে এটি খুবই কাজে লাগে৷ অথচ ভাবতে গেলে, এই ইউরোপেই এককালে – সুদূর অতীতে – নুনও দুষ্প্রাপ্য ছিল৷ পরে ‘এক্সোটিক' বা বিদেশ-থেকে-আনা, রোমাঞ্চকর, অদ্ভূত বলে গণ্য হতো কালোমরিচ কিংবা দারচিনির মতো পণ্য৷
এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট
তার অনেক, অনেক পরে জার্মানি তথা ইউরোপীয়রা চিকেন কারি কিংবা জাপানি ‘সুশি'-র স্বাদ পেয়েছেন৷ আজ কিন্তু ‘ক্রাইয়েনহপ অ্যান্ড ক্লুগে'-র কর্মীরা হংকং, ব্যাংকক, হো চি মিন সিটিতে বসেও কাজ করেন – চীনেও কোম্পানির দু'টি কার্যালয় আছে৷ বিদেশে অফিসগুলোর একটা বড় কাজ হলো নতুন সব খাবার-দাবার, মশলা অথবা নতুন ধরনের রান্নার খোঁজ রাখা: বিশ্বায়িত বিশ্বে গ্রাহকদের হঠাৎ কি খাবার ইচ্ছে জাগে, কে বলতে পারে?
ঠিক তার উপর নির্ভর করেই ৩৮ বছর বয়সি, তৃতীয় প্রজন্মের এশীয় খাদ্যপণ্য আমদানিকারক টিম ক্রাইয়েনহপ অন্য একটি রপ্তানি বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন: ঠিক একই পথ, একই অফিস, একই সব যোগাযোগ ব্যবহার করে জার্মান বিয়ার কিংবা জার্মান মোরব্বা কাম্বোডিয়া-ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ডের সুপারমার্কেটগুলোয় তুলতে পারলে কেমন হয়?