টিকে থাকার সংগ্রামে প্রাণীদের নানারকম কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়৷ অনেক প্রাণী পারিপার্শ্বিকতার সাথে এমনভাবে খাপ খাইয়ে নেয় যে, তাদের অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না৷ কাউকে পাতা, কাউকে আবার পাথরের মতো মনে হয়৷
ছবি: CC-BY-SA-Sandilya Theuerkauf
বিজ্ঞাপন
কিছু প্রাণীকে শুধু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে, তারা পাতা বা গাছের ডালপালা নয়৷ অনেক পতঙ্গ পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির রূপ ও রং গ্রহণ করে নিজেকে প্রায় অদৃশ্য করে ফেলে৷ একে অনুকৃতি বলা হয়৷ যেমন এক ধরনের ‘স্টিক ইনসেক্ট' বা কাঠি পোকাকে চলন্ত পাতা বলে মনে হয়৷ প্রাণীদের ছদ্মবেশ ধারণের প্রবণতা বহু আগে থেকেই চলে আসছে বলে গবেষকরা জানতে পেরেছেন৷ কাঠি পোকা বলে পরিচিত প্রাণীটির অনুকরণের প্রবণতা পুস্পক গাছের উত্থানের সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে৷ এতদিন মনে করা হতো এসবের শুরু হয় বুঝি ৯০ মিলিয়ন বছর আগে৷
ছবি: CC-BY-SA-Bruce
১২৬ মিলিয়ন বছর আগেও একই কৌশল
গ্যোটিংগেন শহরের বিবর্তনবিষয়ক জীববিজ্ঞানী সোয়েন ব্রাডলার-এর পরিচালনায় এক গবেষণা টিম কাঠি পোকার ফসিলের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করেছেন যে, এই প্রাণীটি ১২৬ মিলিয়ন বছর আগেও অনুকরণের কৌশল চালাতো৷ বিবর্তন-গবেষণা জগতে এক চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার এটি৷ সম্প্রতি এই বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘প্লস ওয়ান'-এ এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
১২৬ মিলিয়ন বছর আগে চক প্রস্তরযুগে প্রাণীজগতে ডাইনোসোর ও উদ্ভিদ জগতে ফার্ন, গিংকো নেকেড সিড প্ল্যান্ট ইত্যাদির আধিপত্য ছিল৷ পুস্পক গাছ প্রায় দেখাই যেত না৷
ব্রাডলারের পরীক্ষিত ফসিলটি অবশ্য় কোনো পুস্পক গাছকে নয় বরং গিংকো জাতীয় উদ্ভিদকে অনুকরণ করতো৷ ‘‘অনুকরণকারী পতঙ্গগুলি সাধারণত যেসব উদ্ভিদ তারা খেয়ে থাকে, চেহারার দিক দিয়ে সেসব উদ্ভিদকে অনুকরণ করতে চায়৷ আজ সেটা হলো পুস্পক গাছ, আর সেকালে সেগুলি ছিল নেকেড সিড প্ল্যান্ট'', বলেন জীববিজ্ঞানী ব্রান্ডলার৷
বুদ্ধিমান প্রাণী
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ঈশপের গল্পে কাকের কৃতিত্ব প্রমাণ করে ছেড়েছেন৷ আরো অনেক প্রাণী আছে যাদের বুদ্ধিমত্তা আপনাকে অবাক করতে বাধ্য৷ এমন কিছু প্রাণীরই কৃতিত্বের প্রমাণ মিলবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাক্ষী তোতা
আফ্রিকায় অ্যালেক্স নামের এক প্রজাতির তোতা পাখি আছে, যারা ৫০ ধরনের আকার এবং ছয় পর্যন্ত সংখ্যা গুনতে পারে৷ এমনই এক তোতার মৃত্যুর আগের রাতে তার মনিব বলেছিল, ‘‘আমি তোকে ভালোবাসি’’৷ তোতার জবাব ছিল, ‘‘আমিও’’৷ আর ভারতের আগ্রায় সাংবাদিকের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর কিনারা করে সবাইকে বিস্মিত করে দিয়েছিল যে তোতা তার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে!
ছবি: picture-alliance/dpa
বুদ্ধিমান ডলফিন
সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে ডলফিন বা শুশুকদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মনে করা হয়৷ এরা বেশ সামাজিক, কেননা শিষ দিয়ে তারা একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় করে৷ এরা দীর্ঘদিন নিজের সন্তানের সাথে সাথে থাকে এবং তাদের জরুরি কাজ শেখায়৷
ছবি: Fotolia/davidpitu
প্রভুভক্ত প্রাণী
প্রাণীদের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু বলা হয় কুকুরকে৷ কুকুরকে ভালোমত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে তারা ইশারা মেনে সব কায়দা রপ্ত করতে পারে৷ প্রভুর ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতাও রয়েছে এই প্রাণীর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধীর কিন্তু বুদ্ধিমান
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের এই কচ্ছপের চলন দেখে অনেকেই বিরক্ত হতে পারে৷ কিন্তু এরা ভীষণ চালাক৷ এরা মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তা মনে রাখতে পারে৷ তবে দুঃখের বিষয় এই প্রাণী দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
শিল্পী মন
ঘোড়া এমন একটি প্রাণী যাদের চিন্তা-ভাবনাতেও ভিন্নতা রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘোড়া মুখে তুলি নিয়ে এমন সব ছবি এঁকেছে, যা বিস্মিত করেছে বিশ্ববাসীকে৷ ভেনিস ও রোমের আর্ট গ্যালারিতে ঐ ঘোড়ার আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনী হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/dozornaya
প্রখর স্মৃতিশক্তি
কুকুরের মতো বিড়ালকেও প্রশিক্ষণ দিলে অনেক খেলা শেখানো যায়৷ ওরা অনেক কিছুই দেখে দেখে শিখতে পারে৷ আর এদের স্মৃতিশক্তিও প্রখর৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
কাকের কৃতিত্ব
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কাকেদের কয়েকটি প্রজাতি নাকি খুবই বুদ্ধিমান৷ তাদের ঠোঁটে করে পাথর তুলে একটি টিউবে ফেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ প্রশিক্ষণের পর তাদের সামনে কয়েকটি টিউব রাখা হয়৷ তার কয়েকটির মধ্যে পানি, বাকিগুলির মধ্যে বালু ছিল৷ দেখা গেল, কাকেরা বেছে বেছে জলভরা টিউবেই পাথর ফেলছে৷
ছবি: dapd
বুদ্ধিমান শিম্পাঞ্জি
শিম্পাঞ্জি ভীষণ বুদ্ধিমান৷ আর হবে নাই বা কেন? মানুষের সাথে তাদের জীনগত বৈশিষ্ট্য ৯৮ ভাগ মিলে যায়৷ তাই অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে এই প্রাণী৷
ছবি: picture alliance/dpa
জ্যোতিষী পল
অক্টোপাস পলের কথা মনে আছে? ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ভবিষ্যতবাদী করে যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল৷ বিজ্ঞানীদের মতে, অক্টোপাসের কিছু প্রজাতির বুদ্ধিমত্তা মানব শিশুর সমান৷
ছবি: picture alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে ওস্তাদ পতঙ্গরা
জীবজগতের মধ্যে, বিশেষ করে পতঙ্গরা উদ্ভিদজগতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে ওস্তাদ৷ এতে তারা শুধু আত্মরক্ষাই করার চেষ্টাই করতে চায় না, শিকারের প্রাণীটিকে ফাঁদেও ফেলতে চায়৷ যেমন ম্যান্টিস বা লম্বা পা বিশিষ্ট এক ধরনের ফড়িং এই কৌশলটি ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে৷
অদৃশ্য হওয়ার কলাকৌশলে প্রকৃতিতে কোনো কমতি নেই৷ ‘‘এক ধরনের শুঁয়াপোকা পাখির বিষ্ঠার মতো আকৃতি ধারণ করে'', বলেন জীববিজ্ঞানী ব্রাডলার৷ তাঁর কথায়, ‘‘জীবজগতে অনুকরণের ক্ষেত্রে এই সাফল্য দেখে মনে হয় এখন পর্যন্ত যা প্রমাণিত হয়েছে, বিষয়টি তারা চেয়েও অনেক পুরানো৷''