সোশ্যাল মিডিয়া আর বিজ্ঞাপনের জগতে আজ যা ফ্যাশনেবল, কাল তা নাও থাকতে পারে৷ বিশেষ করে জীবজন্তুদের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য৷ প্যাঁচা থেকে কিংবদন্তির একশৃঙ্গ, আলপাকা থেকে স্লথ – ফ্যাশনের চাকা ঘুরেই চলে৷
বিজ্ঞাপন
বড় বড় চোখ, তার ওপর ঝাঁকড়া চুল – এই প্রাণীর নাম আলপাকা! আসলে এক ধরনের উট৷ আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের ভীষণ কদর৷ আলপাকা নাকি ২০১৮ সালের ‘ট্রেন্ড’ হতে চলেছে৷
ফ্যাশন, ট্রেন্ড আর ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞ টোমাস নয়েবনার বলেন, ‘‘আলপাকাদের দেখতে এমন যে, গোড়া থেকেই মানুষজনের তাদের ভালো লাগে৷ বড় বড়, গোল চোখ, বিটলেদের মতো চুল, কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য আঁকার সময় একটু বাড়িয়ে নেওয়া যায়৷ এছাড়া আলপাকাদের আরো একটা বৈশিষ্ট্য হল, ওরা বেশ ত্যাঁদড়, কারো পরোয়া করে না৷ কাছে যাবার সময় লোকে ভাবে, ‘বাঃ, কী মিষ্টি দেখতে!' কিন্তু ঘটে ঠিক তার উলটো: হয় কামড়াতে আসে, নয়তো থুথু ছেটায়৷’’
আলপাকার ফ্যাশন
04:15
সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আলপাকাকে বিশেষ করে কেক তৈরির ডেকরেশন হিসেবে পাওয়া যাবে, ডু-ইট-ইয়োরসেল্ফ পাতাগুলোয় আলপাকার ছড়াছড়ি৷ উলকি হিসেবেও আলপাকা খুব জনপ্রিয়৷ তবে যারা আরো এক ধাপ এগোতে চান, তারা নিজের বিয়ের জন্য আলপাকা ভাড়া করতে পারেন৷
কাজেই আলপাকা ধীরে ধীরে ট্রেন্ড হয়ে উঠছে৷ কিন্তু একটি জীব ট্রেন্ড হয় কেন ও কীভাবে? টোমাস নয়েবনার বলেন, ‘‘কোনো জীবজন্তু যে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বোঝা যায় এ থেকে যে, তাকে সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বত্র দেখা যায়৷ বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলো তা দেখে জীবটিকে তাদের নানা পণ্যের মার্কেটিং-এর জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে৷’’
ফ্যাশনেবল জীব
আলপাকার আগেও অনেক জীব ফ্যাশনেবল হয়েছে এবং বিদায় নিয়েছে৷ গত বছর যেমন ইউনিকর্ন বা একশৃঙ্গ যাবতীয় পণ্যের উপর ডেকরেশেন হিসেবে শোভা পাচ্ছিল৷ তার বছর দু'য়েক আগে ফ্যাশনেবল ছিল প্যাঁচা৷ ফ্লেমিঙ্গো পাখির বাজার যেমন আগেও ছিল, এখনও আছে৷
কাছিমের অদ্ভূত ও বৈচিত্র্যময় জগৎ
কাছিমরা ২০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে বাস করছে৷ তবে অতি প্রাচীন এই প্রাণীটির অনেক প্রজাতিই আজ বিলুপ্তির পথে৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/M. Kolben
সর্পসুলভ
ইন্দোনেশিয়ার ছোট্ট রোটি দ্বীপে এই সাপের মতো গলাবিশিষ্ট কাছিমের দেখা মেলে৷ এই গলার জন্যই এর নাম ‘স্নেক নেকড্ টার্টল’৷ এই কাছিম নিজের গলাটিকে প্রয়োজনে ৭ থেকে ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়াতে পারে৷ তবে বিচিত্র দেখতে এই কাছিমের অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে৷ পোষ্য হিসেবে এদের কদর বেজায়৷ তাই এর বাজারদরও উঁচুতে৷
ছবি: Imago/S. Schellhorn
মাটা মাটা কাছিম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার বাসিন্দা এই মাটা মাটা কাছিম আদতে মাংসাশী৷ অগভীর জলাশয়ে ভেসে ভেসে শিকার ধরাটাই এদের কাজ৷ দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার কারণে এরা নিজেদের স্নায়ুর ওপর নির্ভরশীল৷ মুখের কাছে অবস্থিত স্নায়ুটির দ্বারা এরা জলাশয়ে ছোট মাছ কিংবা অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণী চিহ্নিত করতে পারে৷ নড়াচড়া বিশেষ করতে পারে না৷ কিন্তু মাঝেমাঝেই লম্বা মাথা তুলে জলের উপরে শ্বাস নেয়৷
রঙিন চিত্রিত খোলের জন্যই এই সামুদ্রিক কাছিম বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেখতে কাছিমদের মধ্যে অন্যতম৷ এই সৌন্দর্যের কারণেই এই কাছিমের অস্তিত্ব আজ সংকটে৷ সারা বিশ্বে গত শতকের তুলনায় কাছিমের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে গেছে৷
ছবি: Getty Images/M. Kolben
নরম খোলের কাছিম
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাসিন্দা এই কাছিমটিকে চিহ্নিত করা যায় তার নরম খোলের জন্য৷ ‘মালায়ান সফ্টসেল টার্টল’ বা ‘ফরেস্ট সফ্টসেল টার্টল’ – এই দুই নামেই প্রাণীটি পরিচিত৷ প্রবল গতিবিশিষ্ট জলস্রোতে আর কর্দমাক্ত জলাভূমিতে এদের দেখা যায়৷ নরম খোল থাকলেও এদের চোয়াল কিন্তু শক্ত৷ সেটা দিয়ে এরা অনায়াসে শামুক বা মোলাস্কা গোত্রীয় প্রাণীদের চিবিয়ে খেতে পারে৷ লম্বা গলার এই কাছিম শ্বাস নেওয়ার সময় শুঁড় ব্যবহার করে৷
দেখে যেন মনে হবে কাছিম বাবাজি মুখে হাসি নিয়ে আছেন৷ কিন্তু আফ্রিকার সাহারা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এই কাছিম আদতে কূট৷ সর্বভুক এই কাছিম খিদে পেলে সামনে যা পায়, তাই খেয়ে নেয়৷ গণ্ডার এবং বুনো দাঁতাল শূকরের শরীর থেকে পরজীবীদের তুলতে এদের জুড়ি মেলা ভার৷
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় হ্রদে এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটির দেখা মেলে৷ দেখতে প্রাগৈতিহাসিক মনে হলেও আদতে এরা ১০০ বছরই বাঁচে৷ শিকারের জন্য ফাঁদ পাততে এরা হাঁ করে থাকে৷ জিভের ওপর একটি পোকার মতো দেখতে উপাঙ্গ দিয়ে শিকারকে মুগ্ধ করে এরা৷ এদের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়াতেই আজ এরা বিপন্ন৷ জানা যায়, এ ধরনের পুরুষ কাছিমের ওজন প্রায় ৬৮ কেজির মতো হয়৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
লেদারব্যাক সি টার্টল
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ কাছিম বলে পরিচিত এই ‘লেদারব্যাক সি টার্টল’৷ অন্যান্য কাছিমদের মতো এদের শক্ত খোল থাকে না৷ বরং চামড়ার মতো উপাদানে তৈরি এদের পিঠ৷ এক একটা কাছিম দৈর্ঘ্যে ২ মিটার এবং ওজনে ৯০০ কেজির মতো হয়৷ এরা বছরে ১৬ হাজার কিলোমিটার অবধি অভিবাসন করে৷ বর্তমানে এরাও বিপন্ন বলে চিহ্নিত৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
পিগ নোসড্ টার্টল
শুঁড়খানা শূকরের মুখের মতো৷ তাই এই কাছিমের নাম ‘পিগ নোসড্ টার্টল’৷ অস্ট্রেলিয়া বা নিউগিনির নদী, ঝরনা বা উপহ্রদে এদের সন্ধান মেলে৷ পোষ্য হিসেবে অনবদ্য সম্ভার এই কাছিম৷ মনুষ্য সমাজে মাংস ও ডিমের জন্য এই কাছিম বেশ জনপ্রিয়৷ এছাড়া বাসস্থানের ক্ষতিও এই কাছিমকে বিপন্ন করে তুলেছে৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
8 ছবি1 | 8
এ বছর যে আলপাকার চাহিদা বাড়ছে, তা ড্যুসেলডর্ফে আলপাকার স্টলটি দেখলেই বোঝা যায়৷ আগ্রহীরা এখানে আলপাকা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন৷ আলপাকাটিকে লাগাম পরিয়ে এক চক্কর হেঁটেও আসতে পারেন – তার মধ্যেই তারা আলপাকার ফ্যান হয়ে যাবেন৷ কেউ বলেন, ‘‘ওরা এতো মিষ্টি, এতো নরম, এতো ভালো৷ ওদের সাথে হাঁটতে যাওয়াটা খুব সহজ, খুব আরামের৷ ওদের দেখলেই সেটা বোঝা যায়৷’’ অনেকে মনে করেন, ‘‘আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো বেশি আলপাকা দেখা যায় – আমার ওদের চিরকালই খুব মিষ্টি বলে মনে হয়৷ এছাড়া আলপাকাদের নাচ নিয়ে ভিডিওটা আছে, ওটা সত্যিই খুব মিষ্টি৷’’ কেউ বলেন, ‘‘আমার ওদের খুব রিল্যাক্সিং লাগে, কেননা ওদের সবসময়ে দেখা যায় না৷ এছাড়া ওদের কুকুর, বেড়াল কিংবা ইঁদুরের চেয়ে অন্যরকম দেখতে৷ বড় বড় চোখ আর দাঁত নিয়ে ওদের সবসময় এতো মিষ্টি আর সহজ-সরল লাগে!’’
আলপাকাদের আদি নিবাস দক্ষিণ অ্যামেরিকার আন্দেস পর্বতাঞ্চলে৷ ওদের এক আত্মীয় হল লামা, যদিও তারা আলপাকাদের চেয়ে বড় এবং ভারী৷ দু'টি জীবকেই ঐ এলাকার আদিম উপজাতিক বাসিন্দারা পোষ মানিয়েছে: লামাকে ব্যবহার করা হত মাল টানার জন্য; আলপাকা পালা হতো তার নরম পশমের জন্য৷
কাজেই আন্দেস পর্বতমালা থেকে ট্রেন্ড ফেয়ার – সর্বত্র আলপাকার অগ্রগতি৷ কিন্তু এই ট্রেন্ড কি বজায় থাকবে? নাকি ইতিমধ্যেই অন্য কোনো জীব ফ্যাশনেবল হতে শুরু করেছে – যেমন দক্ষিণ অ্যামেরিকার স্লথ নামের অতি শ্লথগতির প্রাণীটি?
অ্যালিস কোন/এসি
প্রাণিজগতের রেকর্ডধারীরা
কোন প্রাণী সবচেয়ে বড়, কোনটি সবচেয়ে লম্বা, কোনটির ওজন সবচেয়ে বেশি – এমন জানা-অজানা কিছু তথ্য জানুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: imago/imagebroker/C. Naumann
গ্রেট বাস্টার্ড
ইউরোপের সবচেয়ে ওজনদার উড়ন্ত পাখি এরা৷ এদের ওজন ১৫ কেজির বেশি হতে পারে৷ ভারী হওয়ার কারণে তারা বেশি উঁচুতে উঠতে পারে না৷ ফলে মাঝেমধ্যে বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে তাদের ধাক্কা লাগে৷
ছবি: imago/imagebroker/C. Naumann
উটপাখি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি এরা, যদিও তারা ওড়ে না৷ উচ্চতা সাধারণত ২ দশমিক ৭ মিটার আর ওজন ১৫ কেজি হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/S. Tanha
ভল্লুক
ডাঙায় বাস করা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাংসাশী প্রাণী ভল্লুক৷ যখন তারা পেছনের পায়ে ভর করে দাঁড়ায় তখন তারা প্রায় তিন মিটার দীর্ঘ হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/OKAPIA KG/E. Kuchling
পোলার বেয়ার
আনুষ্ঠানিকভাবে এরা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত৷ গড়ে এরা তাদের বাদামি রংয়ের আত্মীয়দের চেয়ে আকারে একটু বড় হয়ে থাকে৷ দেখতে সুন্দর হওয়ায় পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় সাদা ভল্লুক৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে৷
ছবি: Imago/D. Delimont
আফ্রিকান হাতি
ডাঙায় বাস করা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণী আফ্রিকান হাতি৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি সাড়ে সাত মিটার দীর্ঘ হতে পারে৷ আর লম্বায় হতে পারে ৩ দশমিক ৩ মিটার৷ তাদের ওজন হতে পারে প্রায় ছয় মেট্রিক টন৷
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা প্রাণী৷ উচ্চতা হতে পারে প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার৷ এমনকি একটি জিরাফের বাচ্চার উচ্চতা জন্মের সময় ১ দশমিক ৮ মিটার হয়ে থাকে৷ একটি বিষয় বোধ হয় অনেকের জানা নেই৷ প্রাণীদের মধ্যে তাদেরই রক্তচাপ সবচেয়ে উচ্চ৷
ছবি: Imago/Anka Agency International
কুমির
লোনাপানির কুমিররা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সরীসৃপ হিসেবে বিবেচিত৷ দৈর্ঘ্যে তারা সর্বোচ্চ ছয় মিটার হতে পারে৷ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে কুমিরটির হিসেব রয়েছে তার ওজন ছিল প্রায় ১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/J. Hauke
হাঙর
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাছ৷ ছবির এই হাঙরটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ছয় মিটার৷ তবে কোনো কোনো হাঙ্গরের দৈর্ঘ্য এর দ্বিগুণও হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/Scott Tuason
নীল তিমি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণী৷ এদের ওজন ১৮০ টন পর্যন্ত হতে পারে৷ দৈর্ঘ্য হতে পারে ৩০ মিটার পর্যন্ত৷