1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাণের টানে সমৃদ্ধ বাঙালির নববর্ষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালির নববর্ষ পহেলা বৈশাখ৷আর এই আয়োজনে সবাই অংশ নেন প্রাণের টানে৷ থাকে না কোনো বিশাল বাজেট৷ তারপরও প্রাণপ্রাচুর্য আর বর্ণিল আয়োজনে সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন উৎসব৷ বাঙালির প্রাণের উৎসব৷

ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

বাংলা বর্ষবরণের এই উৎসব শহর থেকে গ্রামে সবখানেই নানা আয়োজনে সমবেত মানুষের প্রাণের টানে এক মহাউৎসবে পরিণত হয়৷ ঢাকায় রমনা বটমূলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের গানে গানে বর্ষবরণের ঐতিহ্য ১৯৬৭ সাল থেকে৷ পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য থেকেই রমনা বটমূলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছর বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠান হয়নি৷ আর ২০০১ সালে এই অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলায় ১০ জন নিহত হন৷

ছায়ানটের শিক্ষক এনামুল হক ওমর ২০০১ সালের সেই দিনের ঠিক সেই মুহূর্তে তবলা বাজাচ্ছিলেন৷ আর ২১ নং গান গাইছিলেন নাসিমা শাহিন ফেন্সি৷ গাইছিলেন ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার...৷' ওমর বলেন, ‘‘ শব্দ৷ তারপর মানুষগুলো স্লো-মোশনে পড়ে যাচ্ছিল৷ চিৎকার আর কান্না৷'' তারপরও তো প্রতিবছর ছায়ানটের আয়োজন হয় ভয়হীন চিত্তে৷ এর প্রাণশক্তি কোথায়? জবাবে ওমর বলেন, ‘‘এটাই বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি৷ পরাভব মানে না৷ কোনো ভয় করে না৷ সবাইকে এক জয়গায় নিয়ে আসে৷ পহেলা বৈশাখে বাঙালি তার প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে৷''

এনামুল হক ওমর

This browser does not support the audio element.

এত বড় আয়োজন, প্রতি বছর৷ খরচের জোগান দেন কীভাবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রাণের শক্তিতে খরচের বহর আর থাকে না৷আমরা যারা শিল্পী, তারা সম্মানী নেই সামান্যই৷ আর কিছু খরচ হয় সাউন্ড সিস্টেমে৷ ছায়ানটের আয় থেকেই তা বহন করা হয়৷ বর্ষবরণের দিন শাড়ি পোশাকের খরচও ভাগ করে বহন করা হয়৷''

চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সাল থেকে৷ এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় থাকে নানা প্রতিকৃতি৷ মুখোশ আর চিত্রকলা৷ এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চারুকলায় ঢুকে আন্দোলনকারীরা অনেক ক্ষতি করে৷ এর ফলে চারদিন কাজ পিছিয়ে যায়৷ মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক চারুকলার শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এ কারণে আমরা চারদিন কাজ করতে পারিনি৷ তারপরও শেষ পর্যন্ত সব কাজ গোছানো হয়ে গেছে৷''

আবু সুফিয়ান

This browser does not support the audio element.

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান, ‘‘মানুষ ভজলে, সোনার মানুষ হবি৷ এর মাধ্যমে মানবতারই জয়গান গাইছে এই শোভাযাত্রা৷ বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরে এই শোভাযাত্রা৷'' এই মানবিক শোভাযাত্রা ২০১৬ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়৷ শোভাযাত্রায় প্রতিবছর খরচ কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চারুকলার সব বর্ষের ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করি৷ আমাদের শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে থাকেন৷ আমরা যে মুখোশ, মোটিফ, সরাচিত্র তৈরি করি তার একটা অংশ বিক্রি করি৷ এ থেকেই আসলে খরচ উঠে যায়৷''

এবারে নগরজুড়ে থাকছে আরো নানা আয়োজন৷ ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দু'বছর পর বিকেলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বর্ষবরণ হচ্ছে৷ গত দু'বছর এ অনুষ্ঠান হয়নি৷ জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কারণে বিকেল পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে বলায় আমরা অনুষ্ঠান করিনি৷ কারণ আমাদের অনুষ্ঠানই হয় বিকেলে৷ এবার আমাদের সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুমতি দেয়ায় আমরা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করছি৷''

গোলাম কুদ্দুস

This browser does not support the audio element.

কিন্তু সাধারণভাবে এবারও সবাইকে বিকেল ৫টার মধ্যেই বাইরের অনুষ্ঠান শেষ করতে বলা হয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়, চারুকলা, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, রমনা পার্কে ব্যাপক নিরাপত্তা৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার রমনা পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখার পর বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এবার এই শোভাযাত্রায় বিদেশি মেহমানরা থাকতে পারেন৷ সেজন্য মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘বিকাল পাঁচটার পর বাইরে কোনো অনুষ্ঠান চলবে না৷ আপনারা সন্ধ্যার পর সবাই যে যার বাড়িতে ফিরে যাবেন৷''

নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা প্রস্তুত আছি৷ আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে৷''

ঢাকার মতো এবার যশোরসহ দেশের জেলায় জেলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা, আছে ভোরের গানে নতুন বর্ষকে আহ্বান৷ বৈশাখী মেলা৷ আছে বর্ণিল সব আয়োজন৷''

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

01:46

This browser does not support the video element.

গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘‘হুমকি আর নানা বাধা পেরিয়ে বঙালি সব সময়ই তার এই প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছে৷ এটা বঙালি সংস্কৃতির শক্তি৷ তাই আমরা বলেছি, মানুষকে উৎসব পালন করতে দিতে হবে৷ ঘরে আটকে রাখা যাবে না৷ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সেই সুযোগ দিতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সেই কবে কবি চণ্ডিদাস বলে গেছেন, শোনো হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই৷ বাঙালি সংস্কৃতি মানুষের কথা বলে৷ মানুষে মানুষে মিলবার কথা বলে৷ তাই কোনো অপপ্রচার বা কটুক্তি দিয়ে একে ঠেকানো যায় না৷ বাংলা ১৪২৫ সাল তাই মানবতার বার্তা নিয়ে আসছে৷ মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসছে৷ পহেলা বৈশাখের আয়োজনও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ