প্রার্থী তালিকা ঘিরে কর্মী বিক্ষোভ, অস্বস্তি বিজেপির
২০ মার্চ ২০২১২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থান হয় বাংলায়৷ সেই ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে ১২১ কেন্দ্রে এগিয়েছিল তারা, যা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের ম্যাজিক ফিগার ১৪৮-এর কাছাকাছি৷ দুই বছর পর বিধানসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন সাংগঠনিকভাবে বেশ অগোছালো লাগছে মোদী-শাহের দলকে৷ তৃণমূল ২৯১টি আসনে একইসঙ্গে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর বিজেপি হোঁচট খাচ্ছে৷ তারা একাধিক দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে৷ তারপরই শুরু হয়েছে তুমুল বিক্ষোভ৷
জেলা থেকে শহরে বিক্ষোভ
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর খোদ কলকাতায় বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে বিক্ষোভ হয়৷ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিজেপি নেতা-কর্মীরা দপ্তর ঘেরাও করে রাখে৷ এরপর পরের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, জগদ্দল, দুর্গাপুর, দমদমে দলীয় বিক্ষোভ দেখা যায়৷ কোথাও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, কোথাও পথ অবরোধ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন বিক্ষুব্ধরা৷ প্রতিবাদে অনেক বিজেপি কর্মীপদ ছেড়েছেন, কেউ দল৷ কোচবিহার বিজেপির সহ সভাপতি ভবেশ রায় প্রার্থী অসন্তোষের জেরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন৷
কেন বিক্ষোভ?
বিক্ষোভের নেপথ্যে মূলত দুইটি কারণ উঠে আসছে৷ বহিরাগত বনাম ভূমিপুত্র এবং আদি ও নব্য বিজেপির লড়াই৷ বিক্ষুব্ধ বিজেপির নেতা-কর্মীদের বক্তব্য, স্থানীয় পর্যায়ে যারা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে রাজনীতি করেছেন, তাদেরকে প্রার্থী করা হয়নি৷ বহিরাগত ইস্যুতে বরানগরের পার্নো মিত্র, আলিপুরদুয়ারের অশোক লাহিড়ি, দমদমের বিমলশঙ্কর নন্দর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, ‘‘কলেবরে বিজেপি বাড়ছে, এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দল হিসেবে মনোনয়নের সময় এরকম হতেই পারে৷ আর যারা বিজেপির উত্থানে শঙ্কিত, তারা উদ্দেশ্য নিয়ে বিক্ষোভগুলো করাচ্ছে৷’’
দ্বিতীয়ত, যারা সদ্য তৃণমূল ও অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাদের কেন প্রার্থী করা হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ করছেন কর্মীরা৷ সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেখানকার বিজেপি কর্মীরা৷ জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিরুদ্ধে পাণ্ডবেশ্বরে বিক্ষোভ হয়েছে৷ শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে জগদ্দলের প্রার্থী করায় রীতিমতো পথে নেমে, দলের ফ্লেক্স ছিঁড়ে, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা৷ অবশ্য অরিন্দম ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে আমার বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ চোখে পড়েনি৷ আমি নতুন লোক নই, শান্তিপুরের বিধায়ক৷ কারো যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকে, তাহলে দলকে বলবে৷’’
প্রার্থী নিয়ে জলঘোলা
শুধু বহিরাগত-ভূমিপুত্র বা আদি-নব্য সংঘাত নয়, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির অভাব দেখা গেছে৷ চৌরঙ্গিতে শিখা মিত্রের নাম ঘোষণা করার পরই প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা আপত্তি জানিয়েছেন৷ ভোটের লড়াই থেকেও সরে গিয়েছেন তিনি৷ নাম ঘোষণার পর ভোটে লড়তে চাননি বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত৷ পরে উচ্চতর নেতৃত্বের অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন তিনি৷ আবার কর্মীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে দল৷ সেই লক্ষ্যেই বিজেপির প্রথম তালিকায় স্থান পাওয়া আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী অশোক লাহিড়িকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷
জনমানসে প্রভাব
বিজেপির দলীয় অসন্তোষ ঘিরে নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়ছে যেমন, তেমনই বিরোধী পক্ষের সুরও চড়ছে৷ রাজনৈতিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপির যারা পুরনো লোক এখন তারা ঘরে বসে কাঁদছে৷’’
নির্বাচনের মুখে কর্মীদের দলীয় অফিস ভাঙচুর বা পথ অবরোধ বিজেপির নির্বাচনের ফলে কি আঘাত হানতে পারে? অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন না যে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিক্ষোভ মিটে গেলেই মানুষ এসব ভুলে যাবেন৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রতীক দেখে ভোট হয়৷ তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এ ব্যাপারে একটু সচেতন হওয়ার দরকার ছিল৷’’ হাওড়া দক্ষিণের প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত মনে করেন, ‘‘কে কোথায় প্রার্থী হল, সে নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা নেই৷’’