দফায় দফায় পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছে বিজেপি৷ কিন্তু তা নিয়ে এর মধ্যেই ক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে দলের ভেতরে৷
বিজ্ঞাপন
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর ক্ষোভ ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে৷ পশ্চিম মেদিনীপুরে বিজেপির স্থানীয় নেতারা চারটি আসনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজেরা প্রার্থী দেওয়ার কথা এর মধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন৷ যাঁরা ভোটে দাঁড়াবেন সমন্বয় মঞ্চের ব্যানারে৷
গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে নির্বাচনী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা৷ আলোচনার মাধ্যমেই রাজ্যে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত হয়, যা দুই দফায় ঘোষিত হয় গত শনিবার৷ সেই তালিকা অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি কেন্দ্রে প্রার্থী রাজীব কুণ্ডু, গড়বেতায় মদন রুইদাস, খড়গপুর গ্রামীণে তপন ভুঁইয়া ও মেদিনীপুরে টাউনে জেলা সভাপতি শমিত দাস৷ বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, জেলা সভাপতি নিজের প্রার্থীপদ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরও তিনটি কেন্দ্রে নিজের পছন্দের মানুষদের টিকিট পাইয়ে দিয়েছেন৷
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা এই প্রসঙ্গে জানালেন, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীরপরামর্শও নাকি মেদিনীপুরে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানা হয়নি৷ বরং কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব সাংগঠনিক স্তর ছাড়াও পেশাদার সমীক্ষক সংস্থাকে দিয়ে প্রতিটি এলাকায় দলের নেতাদের কাজকর্ম, সাধারণের মধ্যে তাদের প্রভাব, জনপ্রিয়তা যাচাই করে, এবং বিশেষ করে নেতাদের ভাবমূর্তি খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ এর আগে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে একই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই করে সাফল্য এসেছিল৷ এবার বিধানসভা ভোটেও সেই পরীক্ষিত ও প্রমাণিত রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছেন অমিত শাহ৷ প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সম্মতি তিনিই দিচ্ছেন৷
আমাদের ৩৬৫ দিনের পার্টি: শমীক ভট্টাচার্য, বিজেপি মুখপাত্র
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য যদিও মানতে চাইলেন না গেরুয়া শিবিরের এই ‘ভেতরের খবর’৷ বরং তাঁর দাবি, ‘‘শুধু উচ্চতর নেতৃত্ব কোনও এজেন্সির মাধ্যমে খবর নিয়ে প্রার্থী তালিকা ঠিক করছে, এই খবরটা ঠিক নয়৷ আমাদের ৩৬৫ দিনের পার্টি৷ সংগঠনের কথা নিঃসন্দেহে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ৷ জেলার সাংগঠনিক প্রধানরা এবং রাজ্যের যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা বলে, নামের তালিকা তৈরি করে, তার পর সংসদীয় বোর্ড এবং সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে৷ সেটা সর্বসম্মত ভাবেই হচ্ছে৷’’
আর মেদিনীপুরের প্রভাবশালী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শ, প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা নিয়ে শমীকবাবুর সাফ কথা, এটা ভুল খবর৷ যারা এটা ছড়াচ্ছেন, তারা ভুল খবর ছড়াচ্ছেন৷
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচার-কৌশল
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেছে। সব দলের প্রচার তুঙ্গে। কেমনভাবে চলছে ও চলবে বিজেপি-র প্রচার?
ছবি: picture-alliance/Zuma/D. Chatterjee
প্রচারের মুখ
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র প্রচারের মুখ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখনো পর্যন্ত বিজেপি কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। মোদীকে সামনে রেখেই ভোটে লড়বে তারা। রাজ্যে জনসভা শুরু করে দিয়েছেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গে আট পর্বের ভোটে বারবার তিনি আসবেন প্রচারে। তার ভরসাতেই ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। হলদিয়ার জনসভায় মোদীর ছবি।
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
মোদীর ব্রিগেড-পরীক্ষা
বাম ও কংগ্রেসের জনসভায় ব্রিগেড ছিল ভর্তি। বহুদিন বাদে বামেদের জনসভায় কাতারে কাতারে মানুষ এসে ব্রিগেড ভরিয়েছিলেন। এবার পরীক্ষা মোদীর। আগামী ৭ মার্চ ব্রিগেডে জনসভা করবেন মোদী। তার আগে নেতারা জেলায় চলে গেছেন। সেখান থেকে মানুষকে ব্রিগেডে আনবেন। মোদীর জনপ্রিয়তা ও দলীয় সংগঠনের দক্ষতায় ব্রিগেড ভরাতে চাইছে বিজেপি।
ছবি: DW/P. Tewari
বেশি সভা অমিত শাহের
এখনো পর্যন্ত ঠিক আছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি জনসভা করবেন অমিত শাহ। তিনি ইতিমধ্যেই ঘন ঘন পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। কখনো বাউল, কখনো কৃষকের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করছেন। কর্মীসভা করেছেন। জনসভা এবং রোড শো-ও। পশ্চিমবঙ্গে দলকে ক্ষমতায় আনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অমিত শাহ।
ছবি: Payel Samanta/DW
বারবার নাড্ডাও
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডাও বারবার পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসবেন। বিজেপি প্রচারকারীদের যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে নাড্ডা গুরুত্ব পাচ্ছেন।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW
থাকছেন যোগী আদিত্যনাথ
যোগী আদিত্যনাথ প্রচার শুরু করে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চড়া সুরে হিন্দুত্বের প্রচারের জন্য সুবিদিত। কিছুদিন আগে বিহারে তিনি এই কাজটাই করেছিলেন। এবার পশ্চিমবঙ্গেও করবেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটেও বিজেপি-র চড়া সুরের প্রচার চলবে। মোদী এবং যোগী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র বড় ভরসা।
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance
স্মৃতি ইরানি, রাজনাথরা থাকছেন
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে স্মৃতি ইরানি খুবই ভালো বাংলা বলতে পারেন। তাঁর মা বাঙালি। তিনি বংলায় থেকেছেন। খুবই ভাল বক্তা। তাই তাঁকে দিয়ে প্রচুর জনসভা করাবে বিজেপি। রাজনাথও প্রচার করবেন। বিহার এবং ওড়িশা থেকেও নেতাদের নিয়ে আসা হবে। ছবিতে কলকাতায় শোভাবাজার রাজবাড়িতে সিস্টার নিবেদিতা স্মারক বক্তৃতা দেয়ার আগে স্মৃতি ইরানি।
ছবি: picture-alliance/Pacific Press Agency/S. Paul
দিলীপ ঘোষ চষে বেড়াবেন
রাজ্য নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি জনসভা, রোড শো, বাড়ি গিয়ে প্রচার করবেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সারা রাজ্য তিনি চষে বেড়াচ্ছেন এবং বেড়াবেন। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে প্রচারে গুরুত্ব দেবে বিজেপি। তাঁকে দিয়ে প্রচুর জনসভা করানো হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
সর্বাত্মক প্রচার
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র প্রচার হবে সর্বাত্মক। কেন্দ্রীয় নেতারা বড় জনসভা করবেন। সেই সঙ্গে হবে ছোট পথসভা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। সঙ্গে থাকবে সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণাত্মক প্রচার। যার দায়িত্বে আছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়। প্রতিটি জেলায় ঘুরবে এলইডি প্রচারযান। এভাবেই প্রচারে কোনো ফাঁক রাখছে না বিজেপি।