প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করলো কলকাতা হাইকোর্ট
২২ এপ্রিল ২০২৪
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক কর্মকর্তা জেলে। সেই মামলার রায় ঘোষণা করছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বিজ্ঞাপন
লোকসভা ভোট শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দফার ভোট শেষ। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করলো কলকাতা হাইকোর্ট। গত কয়েক বছরে এই মামলা রাজ্য়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। বস্তুত রায় বের হওয়ার পরেই রাজ্যের সাবেক বিচারপতি এবং বর্তমানে তমলুকে বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রায়কে স্বাগত জানিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের পদত্য়াগ দাবি করেছেন। অভিজিতের কথায়, ''মুখ্য়মন্ত্রী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে জোচ্চুরি করেছেন। তার পদত্য়াগ করা উচিত।''
সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করছে। সব মিলিয়ে ৩৫০টি মামলা রুজু হয়েছিল এই ঘটনায়। রায় ঘোষণার শুরুতেই আদালত জানিয়েছে, প্রতিটি মামলাই আদালতে গ্রহণযোগ্য। এরপর বলা হয়, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল করা হচ্ছে। এর ফলে বাতিল হচ্ছে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। এসএসসি প্য়ানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের সুদ-সহ বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই অর্থ ফেরত দিতে হবে। বার্ষিক সুদের হার ১২ শতাংশ হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত।
উল্লেখ্য, এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার নির্দেশে বহু নিয়োগ বাতিল হয়েছিল। রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী জামিন পাননি। পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন তিনি। যা নিয়ে নানা স্তরে বিতর্ক হয়েছে।
সোমবার সেই বহুচর্চিত নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে মামলাটি চলেছিল হাইকোর্টে। গত ২০ মার্চ শুনানি শেষ হয়। কিন্তু আদালতরায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল। সোমবার সেই বহু প্রতিক্ষিত রায় ঘোষণা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী ও এক কাউন্সিলারের বাড়িতে এবার ইডি তল্লাশি
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে এই তল্লাশি। পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সূত্র ধরে এই তল্লাশি চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুজিত বসুর বাড়িতে
সুজিত বসুর বাড়িতে সকাল সাতটা নাগাদ ইডি কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রচুর সশস্ত্র জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে যান। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মন্ত্রীর বাড়ি কার্যত ঘিরে ফেলেন। তারপর থেকে তার বাড়িতে তল্লাশি চলছে। দুপুরেও তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির কর্মকর্তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সন্দেশখালি থেকে শিক্ষা নিয়ে
সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি কর্মকর্তারা। শ্রীভূমিতে সুজিতের বাড়ির সামনের রাস্তায় টহল দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। জটলা হলেই তারা সরিয়ে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে রুট মার্চ করছেন। বন্দুক, লাঠি ছাড়াও তাদের কাছে কাঁদানে গ্য়াসের সেল আছে। বোঝা যাচ্ছে, তারা সবদিক চিন্তা করে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে এসেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জানানো হয়েছে পুলিশকেও
সন্দেশখালির ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশকে না জানিয়ে কেন সেখানে গিয়েছিল ইডি। এবার তারা পুলিশকে জানিয়েই গিয়েছে। সুজিতের বাড়ির কাছে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে আছে তার বাড়ির কাছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী অভিযোগ?
সুজিত বসুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে কিছু নথি পেয়েছে ইডি। সেই সূত্র ধরেই মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রধান ছিলেন সুজিত বসু। তখনই দুর্নীতি হয়েছিল বলে মনে করছে ইডি-র তদন্তকারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রভাবশালী সুজিত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীদের মধ্যে সুজিত বসুকে যথেষ্ট প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। দমকলমন্ত্রী সুজিত এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, তার সাবেক আপ্তসহায়ক নিতাই দত্তকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত
গত মার্চে অয়ন শীলকে জেরা করতে গিয়ে এই কেলেঙ্কারির কথা জানতেপারে ইডি। বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের বিনিময়ে দুইশ কোটি টাকা তোলার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। তখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শ্রীভূমির পুজো থেকে মার্তিনেজ, রোনাল্ডিনহো
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো হলো সুজিত বসুর পুজো। প্রতিবছর এই পুজো দেখতে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হন। কোনোবার সেখানে লেজারের চমকপ্রদ শো থাকে, কোনোবার উঠে আসে ডিজনিল্যান্ড। ভিআইপি রোড ধরে উল্টোডাঙ্গা থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে বাঁদিকে শ্রীভূমির সামনে রয়েছে বিগ বেনের অনুকরণে স্তম্ভ। সেটাও সুজিত বসুর উদ্যোগেই হয়েছে। মার্তিনেজ, রোনাল্ডিনহোরা যখন কলকাতায় এনেছিলেন তখনও তাদের পাশে দেখা গিয়েছিল সুজিতকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তাপস রায়ের বাড়িতে
সুজিত বসুর পাশাপাশি রাজ্যের আরেক মন্ত্রী তাপস রায়ের বাড়িতেও তল্লাশি করছে ইডি। বৌবাজারে তাপস রায়ের বাড়ি ও নিজের অফিস পাশাপাশি। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস ও তৃণমূল করছেন তাপস। ইডি সূত্রে জানা গেছে, তাপস রায়ের নির্বাচনকেন্দ্র বরাহনগরে পুরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তা নিয়ে তদন্ত করার সূত্রেই তারা তাপস রায়ের বাড়িতে তল্লাশি করছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তাপস রায়ের পরিচিতি
তাপস রায় সোজাসাপ্টা কথা বলেন। অনেক সময় তার কথার সূত্রে দলের মধ্যেই বিতর্ক হয়। বৌবাজারের বাসিন্দা তাপস রায়ের নামে এতদিন পর্যন্ত দুর্নীতির কোনো অভিয়োগ ওঠেনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আরো তল্লাশি
সুজিত বসু, তাপস রায় ছাড়াও উত্তর দমদম পুরসভার কউন্সিলার সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতেও ইডি-র তল্লাশি চলছে। সুবোধ তৃণমূলের কাউন্সিলার। তার বিরুদ্ধেও পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সূত্রেই তদন্ত হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
আদালত জানিয়েছে, মানবিক কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না ক্য়ান্সার আক্রান্ত সোমা দাসকে। কিন্তু বাকি প্রায় ২৬ হাজার চাকরিপ্রাপকের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে। অন্য়দিকে এসএসসি পরীক্ষার সমস্ত উত্তরপত্র এসএসসি-র ওয়েবসাইটে আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। প্রয়োজনে সন্দেভাজনদের হেফাজতে নিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সব মিলিয়ে ৩৫০টি মামলার শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার চাকরিপ্রার্থীর মামলাও আছে। আদালতের নির্দেশে যাদের চাকরি চলে গেছিল। সুপ্রিম কোর্ট তাদের রক্ষাকবচ দিলেও ছয়মাসের মধ্যে মামলা শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গত প্রায় তিন বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের দাবি, পরীক্ষায় পাশ করা সত্ত্বেও তারা চাকরি পাননি। নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী নানাভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সোমবার আদালতের রায়ে এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ স্থির হলো। একইসঙ্গে যারা চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের নিয়োগ বৈধ কি না, সে বিষয়েও রায় জানিয়ে দিল আদালত।
এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপিপ্রার্থী অভিজিৎ তার মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী দিনে ভোট প্রচারে এই বিষয়টি সামনের সাড়িতে আসবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।