মহাকাশযানের নাম লুনা-২৫। চাঁদের সাউথ পোলে নামবে এই মহাকাশযান।
রাশিয়ার মহাকাশসংস্থা রসকোমস জানিয়েছে, সয়ুজ রকেটে করে মহাকাশযানকে পাঠানো হয়েছে। চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছাতে পাঁচদিন লাগবে। তারপর সাতদিন তা চাঁদের কক্ষপথে থাকবে। তারপর নামবে চাঁদে। তিনটি সম্ভাব্য জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। তারমধ্যে একটিতে নামবে লুনা-২৫।
চাঁদে বরফের খোঁজ
লুলা-২৫ চাঁদের সাউথ পোলে নেমে বরফের খোঁজ করবে। এর আগে অ্যামেরিকা, রাশিয়া. চীন, ভারত, জাপান ও ইসরায়েলের চন্দ্রাভিযান চাঁদের বরফ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করেনি।
লুনা-২৫ চাঁদে ১৫ সেন্টিমিটার নিচ থেকে পাথর সংগ্রহ করবে। এই মহাকাশযানে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি আছে, যা দিয়ে তারা সংগৃহীত পাথর ও অন্য জিনিসের বিশ্লেষণ করবে।
লুনা-২৫-এর প্ল্যানিং গ্রুপের প্রধান ম্যাক্সিম লিটভাক বলেছেন, ''খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, যেদিকে কেউ নামেনি, সেদিকেই লুনার-২৫ নামবে ও পরীক্ষা চালাবে। যেখানে লুনা-২৫ নামবে, সেখানে বরফের চিহ্ন আছে।''
লুনা-২৫-এ রাশিয়ার তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: Roscosmos//TASS/dpa/picture alliance
রাজনৈতিক লক্ষ্য
রাশিয়া ও বিদেশি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, লুনা-২৫-এর একটা ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আছে।
রাশিয়ার জনপ্রিয় মহাকাশ-বিশ্লেষক ভিতালি ইগোরভ জানিয়েছেন, ''চাঁদের পরীক্ষাটা লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য হলো, মহাকাশের সুপারপাওয়ার হওয়া। চীন, অ্যামেরিকা ও অন্য দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় নামা।''
অ্যামেরিকার ফর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আসিফ সিদ্দিকি বলেছেন, ''এতগুলি দশক পরে রাশিয়া যে চাঁদের নতুন জায়গায় মহাকাশযান পাঠিয়েছে, তার তাৎপর্য বিশাল। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, শেষবার ১৯৭৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল।''
তার মতে, ''রাশিয়া বিশ্বের অন্য দেশগুলির কাছে নিজেদের শক্তি দেখাতে চাইছে।''
ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
রাশিয়া চেষ্টা করছে, ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর আগে লুনা-২৫-কে চাঁদে নামাতে।
চাঁদে জলের সন্ধান
চীনের একটি মহাকাশ গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা এই তথ্য দিয়েছেন। কাচের বিডের ভেতর জল আছ বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: Jade Gao/AFP
কাচের পাথর
এমন পাথরের ভিতরেই জমে আছে জল। সব মিলিয়ে প্রায় ২৭০ ট্রিলিয়ন লিটার। এই তথ্য দিচ্ছেন, চীনের একটি মিশনে যোগ দেয়া বিজ্ঞানীরা।
ছবি: Tingshu Wang/REUTERS
নেচারে প্রকাশ
নেচার ম্যাগাজিনে সম্প্রতি তারা এই আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেছেন। এর আগেও কিছু বিজ্ঞানী চাঁদে জল থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন।
ছবি: Jin Liwang/Xinhua/AP/picture alliance
আগের বিশ্বাস
আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, চাঁদের নিজস্ব কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। চাঁদের জমি অত্যন্ত রুক্ষ। ফলে সেখানে জল থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
ছবি: Joel Kowsky/NASA/IMAGO
কেন কাচের ভিতর
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, যেহেতু চাঁদের নিজস্ব বায়ুমণ্ডল নেই, ফলে সেখানে বার বার উল্কাপাত হয়। উল্কা এসে চাঁদের জমির উপর আঘাত করে। আর সেই আঘাত থেকেই কাচের মতো পাথর তৈরি হয়।
ছবি: Tingshu Wang/REUTERS
কাচের ভিতর জল
কাচের মতো পাথরের ভিতর হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণে জল তৈরি হয়, যা মূলত ওই ধরনের পাথরের ভিতর স্পঞ্জের কাজ করে।
ছবি: N. Bartmann/AFP
জল বার করার উপায়
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, একশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওই পাথরকে গরম করলে ভিতর থেকে জল বেরিয়ে আসবে।
ছবি: CHINA DAILY/REUTERS
যুগান্তকারী আবিষ্কার
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
ছবি: Saurabh Sirohiya/ZUMA Wire/IMAGO
7 ছবি1 | 7
দুইটি মহাকাশযানই ২৫ অগাস্ট চাঁদের সাউথ পোলে নামবে। কে প্রথম নামবে, সেটাই দেখার।
চন্দ্রযান-৩ দুই সপ্তাহ ধরে পরীক্ষা চালাবে। আর লুনা-২৫ এক বছর ধরে সেখানে থাকবে ও পরীক্ষা চালাবে।
মহাকাশে রাশিয়া
১৯৫৯ সালে রাশিয়াই প্রথম দেশ, যারা চাঁদে মহাকাশযান পাঠায়। পরে এই প্রতিযোগিতা চাঁদ থেকে সরে মঙ্গল ও অন্য গ্রহের দিকে চলে গেছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনের পর থেকে রাশিয়া এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
চাঁদের সাতটি মজার তথ্য
পঞ্চাশ বছর আগে চাঁদে যাওয়ার পর থেকে তা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বহু মজার তথ্য৷ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ সম্পর্কে এমন সাত তথ্য জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
ছোটো হয়ে যাচ্ছে চাঁদ!
নাসার গবেষণা বলছে, ক্রমান্বয়ে উত্তাপ হারাচ্ছে চাঁদ৷ এ কারণে চাঁদের উপরিভাগ আঙ্গুর থেকে কিশমিশের রূপ ধারণ করছে৷ শুধু তাই নয়, চাঁদের ভেতরের অংশও সঙ্কুচিত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে৷ কয়েক লাখ বছর ধরে এটি দাঁড়িয়েছে ৫০ মিটারে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/B. Lamm
কীভাবে উড়েছিল অ্যামেরিকার পতাকা?
ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বলে থাকেন, চাঁদে পা রাখার ঘটনা ছিল ভুয়া৷ চাঁদের পরে কোনো একটি মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন নাইল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন৷ কারণ, অলড্রিনের রাখা অ্যামেরিকার পতাকা উড়তেছিল, অথচ মহাশূন্যে তা উড়ার কথা না৷ তবে, পতাকা ওড়ার কারণ হিসাবে নাসা বলছে, বাজ অলড্রিন পতাকার দণ্ড নাড়ানোয় অমন দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Neil A. Armstrong
চরম গরম, হঠাৎ ঠাণ্ডা
তাপমাত্রার উঠানামায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠে, তা ঠিক৷ কিন্তু এই উঠানামা চাঁদের তুলনায় কিছু্ই না৷ কারণ, চাঁদের গায়ে যখন সূর্যের তাপ পড়ে, তখন এর তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে৷ আবার সূর্যের আলো সরলেই মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায় তাপমাত্রা৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Kahnert
চাঁদের বুড়ি
চাঁদের বয়স যত, চাঁদে মানুষ বা বুড়ি আছে এমন রূপকতার বয়সও তত৷ অনেকেই পূর্ণ চন্দ্রের মধ্যে একজন মানুষের মুখ দেখতে পান৷ অনেকে বলেন, পাপ করার কারণে ওই ব্যক্তিকে গ্রাস করেছে চাঁদ৷ চাঁদের বুড়ির গল্পতো কতো শুনতে হয় আমাদের! আর যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এমন গুজব রটার বয়সওতো বেশিদিন হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
দূরে সরে যায় চাঁদ
প্রতিবছর চার সেন্টিমিটার করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায় চাঁদ৷ দূরে সরে গেলে আমাদের কাছে সেটাকে ছোটো দেখায়৷ এভাবে ৫৫০ মিলিয়ন বছর পরে এটাকে সবচেয়ে ছোটো দেখা যাবে৷ এরপর আর কোনো পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে না৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চাঁদকে পরোয়া করে না নেকড়ে
সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে পড়ে? যেখানে চাঁদের দিকে নেকড়ের ভীতিকর গর্জনে শেষ হয় হরর সিনেমা৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পূর্ণ জোৎস্না হলেও নেকড়ের কিছু যায় আসে না৷ এমনকি তারা সেদিকে তাকিয়ে গর্জনও দেয় না৷ তবে, রাতে নেকডের গর্জনের কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা দুটোর সংযোগ ঘটিয়েছেন হয়ত৷
ছবি: Imago/Anka Agency International/G. Lacz
চন্দ্রারোহী সবাই অ্যামেরিকান পুরুষ
এখন পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদে হেঁটেছেন৷ নানান পেশা থেকে আসলেও কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে তাঁদের৷ মিলগুলো হচ্ছে- তারা সবাই অ্যামেরিকান, সবাই সাদা এবং সবাই পুরুষ৷ অ্যামেরিকানের বাইরে কিংবা নারীদের চাঁদে যাওয়ার জন্য আরো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে বোধহয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া তাদের মহাকাশ গবেষণা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তারা পশ্চিমা যন্ত্রপাতি বর্জন করে দেশীয় যন্ত্রপাতি দিয়েই কাজ করছে।
ইগোরভ বলেছেন, ''বিজ্ঞানীরা চাঁদে বরফ নিয়ে পরীক্ষা ও গবেষণা করবেন। কিন্তু রসকোমসের প্রধান কাজ হলো, চাঁদে মহাকাশযানকে নামানো এবং সোভিয়েত আমলের দক্ষতাকে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া।''