ডায়না এই গাড়িটি হামেশাই নিজে চালাতেন। কখনো কখনো তার সঙ্গে পিছনের সিটে বিশেষ আসনে প্রিন্স উইলিয়ামসও থাকতেন। ডায়নাকে এই গাড়ি নিয়ে প্রায়ই চেলসি ও কেনসিংটনে দেখা যেত। আর ডায়না গাড়ি চালালে তার দেহরক্ষীও পিছনের আসনে বসতেন।
রাজকীয় গাড়ি নয়
ব্রিটিশ রাজপরিবারে প্রিন্সেস গাড়ি চালাচ্ছেন, এমন ঘটনা বিরল। কিন্তু এই সাহসী সিদ্ধান্ত ডায়না নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সিলভারস্টোন অকশনের গাড়ি বিশেষজ্ঞ আরওয়েল রিচার্ডস। তিনি বলেছেন, রাজপরিবারের সদস্যরা সরকারি গাড়িতে পিছনের আসনে বসে সফর করেন। কিন্তু ডায়না নিজে গাড়ি চালাতে পছন্দ করতেন।
আইকন লেডি ডায়ানা
তাঁর নানা গাউন, ককটেল ড্রেস, কস্টিউম ইত্যাদি আজ অবধি নিলামে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হয়৷ ফ্যাশন ছিল প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি৷ লন্ডনের একটি প্রদর্শনীতে ঠিক সেই সত্যটাই যেন প্রকাশ পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
‘কুইন অফ হার্টস’
সামনে তাঁর সেই কিংবদন্তিপ্রতিম ‘ভেরসাচে’ ড্রেস , লেডি ডায়ানা ১৯৯১ সালের একটি ফটো শুট-এ যা পরেছিলেন৷ এই ড্রেসটি নাকি লেডি ডাই-এর জন্য জান্নি ভেরসাচে-র প্রথম সৃষ্টি৷ দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল৷ ড্রেসটি ২০১৫ সালের একটি নিলামে দু’লাখ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Zumapress
ফ্যাশনের আয়নায় জীবন
আশির দশকের ঝালর আর লেস দেওয়া সব ‘রোম্যান্টিক’ ড্রেসের পর আসে ফ্যাশন ডিজাইনারদের সৃষ্ট ইভনিং ড্রেস-এর যুগ৷ প্রিন্সেস ডায়ানা সেই সান্ধ্য পোশাককে কূটনীতির অস্ত্রে পরিণত করেন৷ নব্বই-এর দশকের গোড়ায় যখন তাঁর দাম্পত্য জীবনে সংকটের ছায়া ঘনাচ্ছে, তখন তিনি কি পরছেন, সেটা ডায়ানার পক্ষে হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতা ও ক্ষমতার প্রতীক৷
ছবি: picture alliance/dpa/Y.Mok
সূচনায়...
লেডি ডায়ানা স্পেন্সার ফ্যাশনের জগৎ সম্পর্কে বিশেষ জানতেন না৷ তাঁর নিজের একটি ফ্রক, একটি ব্লাউজ ও একজোড়া ভালো জুতো ছিল – বাকিটা নাকি তিনি বান্ধবীদের কাছ থেকে ধার করতেন৷ এই হালকা গোলাপি রঙের শিফন ব্লাউজটি তিনি পরেছিলেন ১৯৮১ সালে, তাঁর প্রথম সরকারি পোর্ট্রেট তোলার সময়৷ বাদামি রঙের টুইড কস্টিউমটি তিনি পরেছিলেন বালমোরালে তাঁর মধুচন্দ্রিমায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Y. Mok
চার্লসের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায়
গোড়ায় তিনি ছিলেন শুধু প্রিন্স চার্লসের সহধর্মিনী৷ ১৯৮১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে চার্লসের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবার পর ডায়ানাকে ধীরে ধীরে তাঁর নতুন জীবন ও ভূমিকায় অভ্যস্ত হতে হয়৷ যতো তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, ততোই তাঁর পোশাক আরো বেশি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হয় ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
পরিচ্ছদই বার্তা
যত তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, ততই ডায়ানা তাঁর পোশাকের মাধ্যমে কূটনৈতিক বার্তা দিতে শুরু করেন৷ যেমন একবার সৌদি আরব সফর করার সময় তাঁর রেশমি পোশাক বাজপাখির ছবি দিয়ে সাজানো ছিল – কেননা বাজপাখি সৌদি আরবের প্রতীক৷
ছবি: John Stillwell/PA Wire/picture alliance/empics
ট্রাভোল্টার ড্রেস
লন্ডনে ডায়ানার পোশাক-আশাকের প্রদর্শনীতে সবচেয়ে চোখধাঁধানো ড্রেস সম্ভবত ভিক্টর এডেলস্টাইন-এর ডিজাইন করা একটি নীল মখমলের গাউন৷ এই ড্রেসটি পরে ডায়ানা ১৯৮৫ সাল হোয়াইট হাউসে জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে নেচেছিলেন৷ এর দু’বছর পরে জার্মানির বন শহরে তাঁকে এই ড্রেসটি পরতে দেখা যায়৷
তাঁর আত্মবিশ্বাস যত বাড়তে থাকে, ততই নিজের ভাবমূর্তি যে কী হবে, তা নিজে নির্ধারণ করতে ও পোশাকের মাধ্যমে তা ব্যক্ত করতেও শুরু করেন ডায়ানা৷ তাঁর প্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন ক্যাথেরিন ওয়াকার৷ ওয়াকার প্রথমে বিভিন্ন ইভনিং গাউন ও পরে সুদৃশ্য দিনের কস্টিউমে সাজান ডায়ানাকে, যা পরে ডায়ানা নানা চ্যারিটি বলে যেতেন: স্যাভয় হোটেলে ডিনার থেকে শুরু করে এইডস রোগাক্রান্তদের পরিদর্শন অবধি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Zumapress
ফটোগ্রাফারদের প্রিয়
ডায়ানার সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সম্পর্ক ছিল প্রেম ও বৈরিতার৷ কখনো তিনি পাপারাৎসিদের বিরুদ্ধ অভিযোগ করতেন, কখনো বা জেনেশুনে মিডিয়ায় গোপন ও অন্তরঙ্গ খবর ছড়াতেন৷ ডায়ানাকে ঘিরে একটা আস্ত শিল্প – বা ব্যবসা – গড়ে ওঠে, যাদের কাজই ছিল ডায়ানার ছবি তোলা আর তাঁর ‘গোপন খবর’ ফাঁস করে অর্থোপার্জন করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/K.Green
প্রিন্সেস থেকে কুইন অফ হার্টস
১৯৯২ সালে চার্লস আর ডায়ানার বিচ্ছেদের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়৷ এর পর থেকে ডায়ানার ‘ওয়ার্ড্রোবের’ প্রকৃতিও যেন বদলে যায়: প্রিন্সেস অফ ওয়েলস-এর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এক ‘পিপলস প্রিন্সেস’ – জনগণের রাজকুমারী – যার অকালমৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার যাকে কুইন অফ হার্টস বলে অভিহিত করেছিলেন৷
ছবি: Johny Eggitt/AFP/Getty Images
আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ এক নারী
প্রদর্শনীর শেষ কামরাটিতে ডায়ানার প্রখ্যাততম ইভনিং গাউনগুলির মধ্যে পাঁচটি রাখা আছে৷ স্টার ফটোগ্রাফার মারিও টেস্টিনো-র সঙ্গে একটি ফটো সেসনে এই ড্রেসগুলি পরেছিলেন ডায়ানা৷ সেই কামরাটিতেই ঝুলছে ডায়ানার একটি আনন্দ ও আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ প্রতিকৃতি, যার বক্তব্য হলো, আমি নিজেকে নিয়ে সুখি৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Yan
10 ছবি1 | 10
আর ডায়না রাজপরিবারের রোলস রয়েস সহ অন্য গাড়ির বদলে নিজের গাড়ি ব্যবহার করতে ভালোবাসতেন।
ফোর্ড এসকর্ট খুব একটা বিলাসবহুল গাড়ি নয়। এটা ব্রিটেনে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ির অন্যতম। তবে আরএস টার্বো কেনার সামর্থ্য কম আয়ের মানুষদের নেই।
ফোর্ড আবার ডায়নার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তারা একটা অতিরিক্ত রিয়ার ভিউ মিরর দিয়েছিল, যাতে পিছনের গাড়ির উপর নজর রাখা যায়। গ্লাভস বক্সে একটা রেডিও রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
সাধারণত এই গাড়ির রঙ হয় সাদা। কিন্তু ডায়নার অনুরোধে এই গাড়ির রং কালো করা হয়েছিল। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ডায়না এই গাড়িটি প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছিলেন। তারপর তিনি গাড়িটি ফোর্ডকে ফেরত দেন। বয়সের তুলনায় গাড়িটা খুব কম চলেছে। সাকুল্যে ২৫ হাজার কিলোমিটারের মতো।
ডায়নার মৃত্যুবার্ষিকী
সম্প্রতি প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুর ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। প্যারিসের টানেলে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ডায়না।
তাই ডায়নার জীবন ঘিরে আবার মানুষের ঔৎসুক্য বেড়েছে। নেটফ্লিক্সের 'দ্য ক্রাউন' সিরিজও সেই ঔৎসুক্য বাড়িয়েছে।
নিলাম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই গাড়ির বিক্রি ঘিরে সারা বিশ্বে সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ আলোচনা করেছেন।