ভোজনরসিক হিসেবে বাঙালির সুনাম রয়েছে৷ আমাদের পছন্দের খাবারদাবারই কি আমাদের পরিচয়? এক আলোকচিত্রী অনেক বিখ্যাত মানুষদের পছন্দের খাবারের ছবি তুলে তাঁদের আসল পরিচয় তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
ড্যান ব্যানিনো স্টুডিও নয়, রান্নাঘরে ছবি তোলেন৷ পিনাট বাটার দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে তারপর ক্যামেরার শাটার টেপেন৷ খাবারদাবারই তাঁর কাজের মূল উপকরণ৷ তিনি জানান, বিশেষ করে ইটালির খাবার চিরকাল বড় ভূমিকা পালন করেছে৷
ড্যান ব্যানিনো তারকাদের পছন্দের খাবারের ছবি তোলেন৷ যেমন মারায়া কেরি নাকি বেগুনি রংয়ের খাবার খুব পছন্দ করেন৷ শোনা যায়, লেডি গাগা নাকি ট্যুরে বেরোলে বেবিফুড খেয়েই থাকেন৷ লেমোনেড, চিকেন নাগেট ও আলু ভাজা নাকি ইউসেন বোল্ট-এর প্রিয় খাদ্য৷ বিশ্বের দ্রুততম মানুষ ফাস্ট ফুড খেতে বড়ই পছন্দ করেন৷
ড্যান ব্যানিনোর ক্যামেরায় এই সব খামখেয়ালীপনা ধরা পড়ে৷ তাঁর ‘স্টিল ডায়েটস' নামের ছবির সিরিজে খাবারের মাধ্যমে মানুষের প্রতিকৃতি ফুটে ওঠে৷ ড্যান বলেন, ‘‘সামান্য একটি প্লেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ খাবার সবারই চেনা এক ভাষা, যা অনেক কাহিনি বলতে পারে৷ খাবারের দিকে তাকিয়ে সবাই তার নিজস্ব কাহিনি পড়ে নিতে পারে৷''
তাঁর নতুন প্রকল্পের বিষয় জার্মানির মডেল হাইডি ক্লুম৷ হাইডির পছন্দের খাবার তিনি ‘স্টিল লাইফ' শৈলিতে ক্যামেরাবন্দি করেছেন৷ ৪৬ বছর বয়সি এই মডেল নাকি ৮০ ভাগ স্বাস্থ্যকর খাবার খান, বাকিটা নিয়ে বাছবিচার করেন না৷ সেই রুচিবোধ তুলে ধরতে ড্যান কিছু স্কেচ দিয়ে কাজ শুরু করেছেন৷ পরের সৃষ্টিকর্মের ছবির কম্পোজিশন তাতে ফুটে উঠেছে৷ ড্যান ব্যানিনো নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি অবশ্যই ক্যামেরা ব্যবহার করি, তাই আমাকে আলোকচিত্রী বলতে পারেন৷ কিন্তু ফটো আমার কাজের প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ৷ আমি আইডিয়া আঁকতে শুরু করছি৷ ক্যামেরা সে কাজে সাহায্য করছে৷''
প্রিয় খাদ্যের মধ্যেই তারকাদের আসল পরিচয়
04:08
সোফিয়া লোরেন নাকি বলেছিলেন, স্প্যাগেটি খেয়েই তাঁর শরীরের ভাঁজ এত সুন্দর হয়েছে৷ এমন উদ্ধৃতি বা আলব্যার্ট আইনস্টাইনের নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছে৷ অথবা ডায়েট কোকের প্রতি কার্ল লাগারফেল্ড-এর মতো ডিজাইনারের আশক্তি৷
ড্যান ব্যানিনো-র ফটো প্রতিকৃতি বারোক যুগের চিত্রপট, কারাভাজোর মতো শিল্পীর সেরা সৃষ্টিকর্ম অথবা ফ্রেমিশ শিল্পের স্বর্ণযুগের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ সে যুগেও খাবারদাবার শিল্পের বিষয়বস্তু ছিল৷ কারণ তার মাধ্যমে সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যেত৷ ড্যান বলেন, ‘‘তাঁরা সবাই আমাকে প্রেরণা জোগান৷ আমার মনে বারোক যুগের শিল্পকর্ম ও স্টিল লাইফের সংগ্রহশালা সৃষ্টি হয়েছে৷ তাই ছবি সৃষ্টির সময় আমি তাঁদেরই শিল্পকর্মের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলি৷ মনের ছবি স্কেচের মধ্যে ফুটে ওঠে৷''
হাইডি ক্লুম-এর ফটোর জন্য বরাবরের মতো তাঁর বাসাই ফটো স্টুডিও হয়ে উঠেছিল৷ তাঁর কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সেট বা প্রেক্ষাপট গড়ে তোলা৷ সেখানেই স্কেচে আঁকা আইডিয়া বাস্তবে রূপান্তরিত হয়৷
হাইডি ক্লুম-এর পছন্দের পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ ও নুডলস সাজানো হচ্ছে৷ সেগুলিকে ঘিরে রয়েছে নানা স্বাস্থ্যকর উপকরণ, যেগুলি তিনি মিক্সারের মাধ্যমে স্মুদি বা ঘন সরবতে পরিণত করেছেন৷
অবশেষে ছবি তোলা হলো৷ হাইডি ক্লুম-এর প্রতিকৃতি প্রস্তুত৷ ড্যান ব্যানিনো পরিশ্রমের ফলাফল ও উপকরণগুলি একইসঙ্গে উপভোগ করেন৷
পরিবেশবান্ধব খাদ্যের টুকিটাকি
পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে পরিবেশে সচেতনতার বিষয়টি এখন মুখে মুখে৷ প্রতিটি জনপদ থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে এই ধ্বনি৷ খাদ্য উৎপাদন কিংবা গ্রহণের মধ্য দিয়েও পরিবেশের সুরক্ষা সম্ভব৷ পরিবেশবান্ধব খাদ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/V. Kern
প্রাকৃতিক খাদ্য
মাংস দূষণ কেলেঙ্কারি কিংবা কৃষিতে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব-এসব মাথা নিয়ে মানুষ এখন দিনকে দিন নিরামিষভোজী হয়ে উঠছেন৷ তবে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আহারের আরো কিছু উপায় আছে৷ আলপাইনের মতো তৃণভূমি হয়তো সবখানে নেই! কিন্তু অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা প্রাণীজ মাংসের পণ্য এখন হাতের কাছেই মিলছে৷
ছবি: imago/Eibner
নিরামিষভোজী
উনিশ শতকের ৭০ কিংবা ৮০-র দশকের কথা যদি ধরি, তখনকার নিরামিষভোজীরা যেকোনো প্রাণিজ্য খাদ্য থেকে দূরে থাকতেন৷ এমনকি দুধ, ডিমের মতো সাধারণ খাবারও তাঁরা খেতেন না৷ সময়ের সঙ্গে বদলে যায় সবকিছু৷ জোনাথন সাফরান ফুয়েরের ‘ইটিং অ্যানিমেল’ বইটিতো মাংস নিয়ে মানুষের ভাবনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ গোটা বিশ্বে বেড়েই চলেছে নিরামিষ রেস্তোরাঁ৷
ছবি: DW/V. Kern
কার্বন ও পানির প্রভাব
নিরামিষ ভোজনের ভালো দিক হলো কার্বন নির্গমণটা কমিয়ে দেয়, তেমনি সাশ্রয় করে পানি৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেব তো চমকে দেয়ার মতো৷ সংস্থাটি বলছে, মানুষের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাসের এক পঞ্চমাংস আসে মাংস থেকে৷ যা জলবায়ু পরিবর্তনে রাখছে নেতিবাচক ভূমিকা৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদনে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়৷
ছবি: Fotolia/Janis Smits
জেনে শুনে বুঝে নিন
ক্রেতাকে কাছে টানতে জীবন্ত পশু দেখিয়ে বিক্রি করে পোস্টডামের একটি খামার৷ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পশু জবাইয়ের আগে ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা করে নেয় তাঁরা৷ যদিও তাঁদের কার্যক্রমটি আশপাশের এলাকাতে সীমাবদ্ধ৷ ‘মাইনে ক্লাইনে ফার্ম’ বা ‘আমার ছোটো খামার’ ধরণের প্রকল্পগুলোও যানবাহন নির্ভরতা সংকুচিত করে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণকে কমিয়ে আনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৃষি হাট
স্থানীয় পণ্য স্থানীয়রা কিনে নিলে দীর্ঘ পথে পণ্য পরিবহনের ঝুট ঝামেলা মিটে যায়৷ ফলে কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমে যায়৷ ক্যানাডিয়ান দম্পতি অ্যালিসা স্মিথ এবং জে বি ম্যাককিনন তাঁদের ‘হান্ড্রেড মাইল ডায়েট: আ ইয়ার অব লোকাল ইটিং’ বইতে এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন৷ তাঁদের বাড়ি থেকে শত মাইলের মধ্যে খাবার যোগাড় করে বছর জুড়ে খেয়েছেন এই দম্পতি৷ নিজেরা খাবার সংরক্ষণ করে পূরণ করেছেন শীতকালের কঠিন সময়৷
ছবি: DW/E. Shoo
একফসলি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ
আধুনিক কৃষি শিল্পে ভূট্টা কিংবা সয়ার মতো একফসলি চাষ লক্ষ্যণীয়৷ এর ফলে শস্যদানা সংক্রমতি হয় নানা রোগবালাইয়ে আর আক্রমণ করে কীটপতঙ্গ৷ ফলে প্রচুর কীটনাশক দিতে হয় চাষীকে৷ একমুখী চাষের বদলে বৈচিত্র্য আনা হলে ভালো ফলন যেমন হয়, তেমনি কীটপতঙ্গের সংক্রমণও কমে যায়৷ খরার দিনেও ফলন নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়না কৃষককে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনের প্রিন্সেস গার্ডেন
বড় শহরে থেকেও নিজের চাহিদা কিংবা তারও বেশি পরিমাণ শস্য উৎপাদন খুব একটা কঠিন কাজ নয়৷ জার্মানির রাজধানী বার্লিনের মতো শহরে ‘প্রিন্সেস গার্ডেন‘ সেই দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে৷ শস্য উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা তো মিটছে, সঙ্গে দুপুরের খাবারও বিক্রি করছে তাঁরা৷ বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়াতে খোলা হয়েছে একটি ক্যাফে৷ এই বাগানটি যেমন তাজা খাবারের চাহিদা পূরণ করছে তেমনি পরিবেশ সম্পর্কেও বাড়াচ্ছে সচেতনতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খাদ্যবর্জ্য কমান, সম্পদ বাঁচান
পরিসংখ্যান বলছে, বছরে ২০ মিলিয়ন টন খাবার নষ্ট করে জার্মানি৷ তাই ভাগাভাগি করে খাওয়াকে পরিবেশবান্ধব প্রবণতা হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ রেস্তোরাঁ আর মুদি দোকানিরাও অনেক খাবার দান করছে৷ জার্মানিতেই আছে foodsharing.de নামের একটি ওয়েব পোর্টাল৷ কারো কাছে অতিরিক্ত খাবার থাকলে এই পোর্টালের মাধ্যে বিনিময় করার সুযোগ থাকছে৷ ফলে খাবার নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে আসছে৷
ছবি: Dietmar Gust
সুস্থ থাকার সুবিধা
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরামিষভোজী হওয়াটা ভালো সিদ্ধান্ত৷ অনেকগুলো গবেষণা বলছে, প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে আনা হলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, মুটিয়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে৷