প্যারিস অলিম্পিক্সে অংশ নেয়া উগান্ডার ম্যারাথন রানার রেবেকা চেপ্টেগেই মারা গেছেন৷ কেনিয়ায় রেবেকার প্রেমিক তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়৷
বিজ্ঞাপন
কেনিয়া ও উগান্ডার গণমাধ্যম জানিয়েছে, রেবেকার শরীরের ৭৫ শতাংশেরও বেশি পুড়ে যায়৷ ২০২১ সালের অক্টোবরের পর এ নিয়ে কেনিয়ায় তিনজন ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন৷
উগান্ডার অলিম্পিক কমিটির সভাপতি ডোনাল্ড রুকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘‘প্রেমিকের নৃশংস হামলায় আমরা আমাদের অলিম্পিক দৌড়বিদ রেবেকা চেপ্টেগেইর মৃত্যুর খবর পেয়েছি৷''
তিনি আরও বলেন, ‘‘রেবেকার আত্মা শান্তি পাক৷ নারীর উপর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই আমরা৷''
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যে দশটি কাজ করতে পারেন
বিশ্বের সবদেশেই কমবেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে তাদের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইম্যান নারীদের সুরক্ষায় সহায়তার দশটি উপায়ের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: Daniel Mihaulescu/AFP/Getty Images
ভুক্তভোগীর কথা শুনুন
একজন নারী সহিংসতার শিকার হওয়ার পর মুখ খোলার অর্থ হচ্ছে, তিনি সেই সহিংস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছেন৷ তখন সমাজের সবার উচিত তিনি যাতে তার কথা বলতে পারেন, সেরকম নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তার কথা শোনা৷ এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারীর পোশাক, যৌন পরিচয় বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করার চেষ্টার বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে৷
ছবি: Maurizio Gambarini/dpa/picture alliance
পরবর্তী প্রজন্মকে শেখান
আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে যে উদাহরণগুলো তৈরি করবো সেগুলো ভবিষ্যতে লিঙ্গ, সম্মান এবং মানবাধিকার বিষয়ে তাদের মনোভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে৷ যেসব প্রচলিত ধ্যানধারণায় ভুল আছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করতে হবে৷ তাদের মধ্যে যে যেমন, তাকে সেভাবে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ পাশাপাশি পৃথিবী সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের মতামতও শুনতে হবে৷
ছবি: Aref Karimi/DW
ভুক্তভোগীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করুন
সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি যাতে দ্রুত সহায়তা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্রুত সহায়তা বলতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, হটলাইন, পরামর্শের মতো বিষয়গুলো, যাতে ভুক্তভোগীর নাগালের মধ্যে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
সম্মতির বিষয়টি বুঝতে হবে
একজন মানুষ মুক্তভাবে এবং উৎসাহের সাথে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ যৌনতায় একজন নারী সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে৷ ‘‘সে এটা চেয়েছিল’’ বা ‘‘ছেলেরা এমনই’’ এ ধরনের কথাবার্তা বলে একজন নারীর সম্মতি প্রদানের বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ তৈরি করা যাবে না৷
নিগ্রহের নানা রূপ আছে এবং নির্যাতনের কারণে ভুক্তভোগীর উপর মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে পারে৷ আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার কোনো বন্ধু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাহলে তাকে সহায়তার চেষ্টা করুন৷ আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে নিপীড়ন করছে, তাহলে তা প্রতিরোধে সহায়তা নিন৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia
আলোচনা করুন
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা দশকের পর দশক ধরে ঘটছে৷ এই চর্চা বিস্তৃত হলেও অবধারিত নয়, যদি আমরা চুপ না থাকি৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংতার বিপরীতে শক্তভাবে অবস্থান নিন৷
ছবি: Frank Hoermann/Sven Simon/imago images
প্রতিবাদ করুন
ধর্ষণ সংস্কৃতি হচ্ছে এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে যৌন সহিংসতাকে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যুগ যুগ ধরে চলে আসা লিঙ্গ-বৈষম্য আর লিঙ্গ ও যৌনতা বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণার কারণে বিষয়টি এমন হয়েছে৷ ধর্ষণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে সবার উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Christin Klos/dpa/picture alliance
নারী বিষয়ক সংগঠনগুলোকে সহায়তা করুন
নারী অধিকার এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা করতে পারেন৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এই বিষয়ক স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন
কর্মক্ষেত্রে বা জনপরিসরে যৌন নিপীড়নসহ সহিংসতা নানাভাবে ঘটতে পারে৷ আপনার সামনে আপত্তিকর কিছু ঘটলে প্রতিবাদ করুন৷ এভাবে সবার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন আপনি৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
পরিসংখ্যান দেখুন এবং আরো দাবি করুন
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হলে বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে৷ আর এজন্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানলে সে অনুযায়ী উদ্যোগী হওয়া সম্ভব
ছবি: Michael McCoy/Reuters
10 ছবি1 | 10
প্যারিস অলিম্পিক্সের ম্যারাথনে ৪৪তম স্থানে থাকা এই দৌড়বিদকে হামলার পর কেনিয়ার রিফট ভ্যালি শহর এলডোরেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
মোই টিচিং অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ওয়েন মেনাচ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পর আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি মারা যান৷''
এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি৷
কেনিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী কিপচুম্বা মুরকোমেন তার মৃত্যুকে ‘সমগ্র অঞ্চলের জন্য ক্ষতি' বলে অভিহিত করেছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ড আবারও জানিয়ে দিলো যে, আমাদের সমাজে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের অবশ্যই আরও সক্রিয় হতে হবে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন ঘৃণ্য সহিংসতা আমাদের খেলার জগতেও আঘাত এনেছে৷''
উগান্ডার ক্রীড়া সংগঠন রেবেকার জন্য ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছে৷ উগান্ডার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী পিটার ওগওয়াং বলেছেন, ‘‘কেনিয়ার কর্তৃপক্ষ এই হত্যার তদন্ত করছে৷''
সরকারি তথ্য অনুসারে ২০২২ সাল থেকে কেনিয়ার ১৫-৪৯ বছর বয়সি প্রায় ৩৪ শতাংশ নারী শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ যার মধ্যে বিবাহিত নারীরা বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছেন৷ ২০২২ সালের সমীক্ষায় দেখা যায়, ৪১ শতাংশ বিবাহিত নারী দেশটিতে সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন৷
এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে, কেনিয়ার উদীয়মান তারকা দৌড়বিদ অ্যাগনেস টিরপকে ইটেন শহরে তার বাড়িতে গলায় ছুরিকাঘাতের ক্ষত সহ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ এ ঘটনায় তার স্বামী ইব্রাহিম রোটিচের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়৷ তবে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন৷ মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে৷