প্রেমিককে হত্যার পর তাঁর হৃদপিণ্ড কেটে বের করে ফেলা বাংলাদেশের খুলনার এক তরুণীকে ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত৷ প্রেমিকার দাবি, ছেলেটির অন্য এক মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল৷
বিজ্ঞাপন
২১ বছর বয়সি ফাতেমা আক্তার সোনালী প্রতিশোধ নিতে দু'বছর আগে তার প্রেমিককে নির্মমভাবে হত্যা করে৷ কেননা ছেলেটি তাকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না৷ আর গোপনে তাদের যৌনমিলনের দৃশ্য ভিডিও করেছিল, জানিয়েছেন প্রসিকিউটর কাজি সাব্বির আহমেদ৷
তিনি বলেন, ‘‘অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে ছেলেটির যৌনমিলনের ভিডিও খুন করা মেয়েটি দেখেছিল, ছেলেটির ল্যাপটপে৷''
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আর অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় প্রেমিক এমদাদুল হককে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সোনালী৷ প্রেমিককে হত্যার আগে অবচেতন করতে বিশটি ঘুমের বড়ি মিশ্রিত কোমল পানীয় পান করায় সে৷ এরপর ২৮-বছর বয়সি প্রেমিকের হাতপা বেঁধে তাকে জবাই করে হত্যা করে সোনালী৷ সবশেষে তাঁর বুকের বামপাশে কেটে হৃদযন্ত্র বের করে ফেলে৷
মানুষ হত্যায় সিদ্ধহস্ত নারীরা
‘সিরিয়াল কিলার’ জ্যাক দ্য রিপারের কথা সবাই জানেন৷ আরো অনেক কুখ্যাত খুনির কথাও শুনেছেন হয়ত৷ তবে কোনো নারী সিরিয়াল কিলার বা খুনির কথা কি শুনেছেন? ছবিঘরে থাকছে এমনই ভয়ঙ্কর পাঁচ নারীর কথা৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
রক্ত দিয়ে গোসল করতেন অ্যার্জেবেত বাথোরি
হাঙ্গেরিতে ১৫৬০ সালে জন্ম, মৃত্যু ১৬১৪ সালে৷ তার গল্প শুনলে মনে হবে কোনো ভৌতিক ছবির কাহিনি শুনছেন৷ বলা হয়ে থাকে, ৫৪ বছরের জীবনে তিনি ৮০ থেকে ৬০০ জনকে খুন করেছিলেন৷ যাঁদের খুন করতেন, তাঁদের রক্ত দিয়ে গোসলও করতেন অ্যার্জেবেত বাথোরি৷ ভয়ঙ্কর খুনি হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম আছে তাঁর৷
টাকা আর সম্পত্তির লোভে খুন করতেন বেল গানেস
নরওয়ের বেল গানেসের জন্ম ১৮৫৯ সালে, মৃত্যু ১৯০৮ সালে৷ ইতিহাসে ইনি ‘ব্ল্যাক উইডো’ নামে পরিচিত৷ নরওয়ের এই নারী জীবনে ৪০ জনের মতো মানুষকে হত্যা করেছেন৷ নিহতদের মধ্যে তাঁর স্বামী, পানিপ্রার্থী, বোন, এমনকি সন্তানও ছিল বলে ধারণা করা হয়৷ মূলত জীবন বিমার টাকা এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই খুন করতেন তিনি৷ খুনের সাক্ষী না রাখতে গিয়ে অনেক জনকে হত্যা করতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/TopFoto
সন্তানকে বাঁচাতে তিন খুন
লিওনার্দা চিয়ানচিউলি (১৮৯৪-১৯৭০)৷ ইটালির এই নারী মাত্র তিনজনকে হত্যা করেই বিশ্বকুখ্যাত৷সন্তানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেতে হবে শুনে ভাবনায় পড়ে যান লিওনার্দা৷ সন্তানকে যুদ্ধ থেকে দূরে রেখে বাঁচানোর একটা উপায়ই এলো মাথায়৷ লিওনার্দা ভাবলেন, সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে অন্যের প্রাণ উৎসর্গ করলে ছেলেকে বাঁচানো যাবে৷ তারপর একে একে তিনজন মধ্যবয়সি নারীকে হত্যা করলেন লিওনার্দা৷
কুস্তিগির থেকে সিরিয়াল কিলার
মেক্সিকোর হুয়ানা বারাথা৷ জন্ম ১৯৫৭ সালে৷ ছিলেন পেশাদার কুস্তিগির৷ তবে মানুষ হত্যায় নেমে সেই পরিচয় প্রায় ভুলিয়ে দিয়েছেন৷ হুয়ানাকে এখন ঠান্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার হিসেবেই চেনে সবাই৷ কমপক্ষে ১১ জনকে খুন করেছেন৷ আরো ৪৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনেও তাঁর হাত আছে বলে সন্দেহ করা হয়৷ ১১ জনকে খুন করার জন্য ৭৫৯ বছরের জেল হয়েছে হুয়ানার৷ এখনো জেলেই আছেন হুয়ানা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Deolarte
ধর্ষকামীদের হত্যা?
যুক্তরাষ্ট্রের আয়েলিন ক্যারল ওয়ারনোস ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে সাতজনকে খুন করেছিলেন৷ আয়েলিনের দাবি, ওই সাতজন পতিতা হিসেবে কাজ করার সময় তাঁকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল, আত্মরক্ষার্থে হত্যা করতে হয় তাদের৷এ দাবির সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ফ্লোরিডার আদালত৷ তাঁর জীবনকাহিনী নিয়ে টিভি সিরিয়াল, পূর্ণ দৈর্ঘ ছবিও হয়েছে৷ ‘মনস্টার’ ছবিতে আয়েলিনের চরিত্র রূপায়ন করে অস্কার জেতেন শার্লিজ থেরন৷
ছবি: Getty Images/Florida DOC
5 ছবি1 | 5
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কি হয় তা দেখতে সোমবার খুলনার আদালতে হাজির হন অনেক মানুষ৷ আদালত সোনালীর শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে৷ প্রেমিকের হৃদযন্ত্র বের করে আনার কারণ হিসেবে খুনি আদালতকে জানায়, সে দেখতে চেয়েছিল তার প্রেমিকের হৃদয় কত বড়৷ কেননা সে মনে করেছিল, তার প্রেমিক যেসব ‘দুষ্কর্ম' করেছে তার জন্য তার হৃদযন্ত্র বড় হওয়ার কথা!
উল্লেখ্য, সোনালী ২০১৪ সালে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং খুলনার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে তার৷ তবে উচ্চ আদালত যদি মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে তাহলে সোনালী হবে ফাঁসিতে ঝোলা বাংলাদেশের প্রথম নারী৷
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷