জার্মানির কোলন, অস্ট্রিয়ার সালৎসবুর্গ অথবা ফ্রান্সের প্যারিস – এ সব শহরে নদীর উপর যে বড় বড় ব্রিজ আছে, তার দিকে একটু নজর দিলেই দেখবেন অসংখ্য তালা চোখে পড়ছে৷ এগুলোকে বলে ‘প্যাডলক’৷ সহজ করে বললে ‘প্রেম তালা’৷
বিজ্ঞাপন
এই তালার উদ্দেশ্য হলো সম্পর্কের অটুট বন্ধন৷ প্রেমিক বা প্রেমিকা তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে নিজের নামটা লিখে ঐ তালা ব্রিজে আটকে চাবিটা নদীতে ফেলে দেন৷ তাঁদের বিশ্বাস, এর ফলে সম্পর্ক ঐ তালার মতো দীর্ঘ সময় জোড়া লেগে থাকবে৷ প্যারিসকে বলা হয় প্রেমের নগরী৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিচরণ চোখে পড়ার মতো৷ এ কারণে ব্রিজে তালার সংখ্যাটাও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি৷
জার্মানির কিছু আকর্ষণীয় সেতু
আকর্ষণীয়, মজার, ঐতিহাসিক – জার্মানিতে রয়েছে এমনই কিছু ব্রিজ৷ ছবিঘরে থাকছে সে সবের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে প্রাচীন
জার্মানির সবচেয়ে প্রাচীন এই সেতুটি ট্রিয়ার শহরে মোজেল নদীর উপর অবস্থিত৷ শুরুতে এটা কাঠের তৈরি ছিল৷ এরপর রোমানরা সেটাতে পাথর আর শিলার ব্যবহার করে৷ ছবিতে যে পাথরের পিলারগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো প্রায় ১,৯০০ বছর আগের! আর উপরের অংশটায় প্রথম সংস্কার করা হয় আটশো বছর আগে আর দ্বিতীয়বার প্রায় দুশো বছর আগে৷
ছবি: imago/ARCO IMAGES
সেতুর নীচে বিস্ফোরক!
এই ব্রিজটি জার্মানির মূল ভূখণ্ডকে বাল্টিক সাগরে অবস্থিত ফেমান দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত করেছে৷ ১৯৬৩ সালে শীতল যুদ্ধের সময় সেতুটি নির্মাণ করা হয়৷ সে সময় সম্ভাব্য আক্রমণের কথা মাথায় রেখে ব্রিজের নীচে বিস্ফোরক জমা করে রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Pascal Walz
ব্রিজের সড়কের দুপাশে দোকান
এয়ারফুর্ট-এর পায়ে হাঁটা এই সেতুর দুপাশে রয়েছে গ্যালারি আর বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রির দোকান৷ প্রতিটি দোকানের অর্ধেক অংশ কাঠের তৈরি৷ প্রায় আটশো বছর আগে যখন ব্রিজটি তৈরি হয় তখন সেখানে মুদি দোকানিরা পণ্য বিক্রি করতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেতুর সড়কে ছাদ!
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ১২৭২ সালে তৈরি এই কাঠের ব্রিজটিতে ছাদ রয়েছে৷ সে সময় নির্মিত অনেক কাঠের সেতুতেই নিরাপত্তাজনিত কারণে এমনটা করা হতো৷ মজার ব্যাপার হলো এই সেতু পাড়ি দিয়ে আপনি জার্মানি থেকে সুইজারল্যান্ডে চলে যেতে পারবেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে বড়
স্যাক্সনি ও বাভারিয়া রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত এই ব্রিজটি ইট দিয়ে তৈরি৷ এখনো পর্যন্ত ইটের তৈরি এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু৷ ১৮৫১ সালে নির্মিত হওয়ার সময় ব্রিজটি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বাও ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রকৃতির মাঝে সেতু
ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই ব্রিজের অবস্থানটা কোথায়৷ ১৮৫১ সালে তৈরি হওয়া এই সেতুর কারণে পর্যটকরা এমন সব পাহাড়ি এলাকায় যেতে পারছেন না যেটা এমনিতে সম্ভব হত না৷
ছবি: Fotolia/Seewald
উপরে ট্রেন, নীচে গাড়ি
১৯৬১ সালে যখন বার্লিন প্রাচীর তৈরি হয়েছিল তখন এই ঐতিহাসিক ওবারবাউম ব্রিজটি শহরকে পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত করা সীমান্তের একটা অংশে পরিণত হয়েছিল৷ এই ব্রিজে দুটো রাস্তা রয়েছে৷ উপর দিয়ে চলে ট্রেন আর নীচ দিয়ে গাড়ি৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
পানি ব্রিজ!
ফেসবুকের কল্যাণে অনেকের কাছেই পরিচিত এই ছবিটি৷ এটি মাগডেবুর্গ ওয়াটার ব্রিজ৷ পানির ওপর স্থাপিত এই সেতুর রাস্তাও পানির! অর্থাৎ এই সেতু দিয়ে চলে জাহাজ৷ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৩ সালে৷ মূলত পণ্যবাহী জাহাজের রুট সংক্ষিপ্ত করতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
সেতু এক, দেশ তিন!
নাম ‘থ্রি কান্ট্রিস ব্রিজ’৷ বুঝতেই পারছেন তিন দেশে এই সেতুর অবস্থান৷ জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড৷ ২৪৮ মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি শুধু পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়ে পার হওয়া যায়৷ কোনো ধরনের গাড়ির প্রবেশ নেই সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
গত জুন মাসে সেখানকার একটি ব্রিজ নাকি এ সমস্ত তালার ভারে ধসে পড়েছে৷ হেলে পড়েছে একপাশের রেলিং৷ তাই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যটকদের জরুরিভিত্তিতে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেই ব্রিজের আশপাশ থেকে৷
তাই কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছেন৷ পর্যটক যুগলদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে যাতে তাঁরা হুজুগে মেতে আর তালা না লাগান৷ গত সোমবার প্যারিসের সিটি হলে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে একটি আবেদন জানিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রচার৷ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে #lovewithoutlocks লিখে তা পোস্ট করা শুরু হয়েছে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি মাধ্যমে৷
এই প্রচারের মাধ্যমে পর্যটকদের তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, এভাবে একটি করে তালা লাগানোর ফলাফলটা কতটা ভয়াবহ৷ এর পেছনে একটি সার্বিয়ান কাহিনি আছে৷ এক নববধূ তাঁর বিয়ের দিন এক ব্রিজে গিয়ে তালা লাগিয়ে দেন৷ কেননা বিয়ের আগে ঐ ব্রিজের ওপরই প্রেমিকের সাথে প্রতিদিন দেখা করতেন তিনি৷ এরপর থেকে এর প্রচলন শুরু হয়৷ যদিও ইটালির লেখক ফেডেরিকো মচা এই প্রচলন তাঁর লেখা উপন্যাস থেকে হয়েছে বলে দাবি করেছেন৷ বইটির নাম ‘আই ওয়ান্ট ইউ'৷ সেখানে এমন একটি দৃশ্য আছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
প্যারিসে অবশ্য সেই ২০০৮ সাল থেকে ব্রিজে যুগলদের তালা লাগানোর এই হুজুগ শুরু হয়৷ এরপর থেকে পুরো বিশ্বের সব ব্রিজেই এখন দেখা মেলে এ ধরনের তালার৷ পরিবেশবিদরা অবশ্য মূলত শঙ্কিত তালা লাগিয়ে যে চাবিগুলো নদীতে ছোড়া হচ্ছে, তা নিয়ে৷