লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে থাকার সময় নিজের আইনজীবীর সঙ্গে প্রেম করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জ, দুই ছেলের পিতাও হয়েছেন৷ এক সাক্ষাৎকারে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন আসাঞ্জের বাগদত্তা স্টেলা মরিস৷
বিজ্ঞাপন
সাউথ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া মরিস সুইডেনের নাগরিক৷ ২০১১ সালে তিনি প্রথম আসাঞ্জের সঙ্গে পরিচিত হন৷ এরপর থেকে আসাঞ্জের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন৷
লন্ডনের ‘মেইল অন সানডে' রবিবার আসাঞ্জের দুই ছেলে থাকার কথা জানায়৷ প্রতিবেদনে মরিসের সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করা হয়৷ এতে ইকুয়েডর দূতাবাসের কাছে সার্বক্ষণিক প্রহরায় থাকা মার্কিন নিরাপত্তা সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তাঁরা প্রেম করেছেন এবং সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন, তা জানিয়েছেন৷
ধর্ষণ মামলার কারণে সুইডেন আর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের বিচার করতে যুক্তরাষ্ট্র আসাঞ্জকে খুঁজছে৷ এ থেকে বাঁচতে ২০১২ সালে ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন আসাঞ্জ৷ প্রায় সাত বছর সেখানে থাকার পর গত বছরের এপ্রিলে দূতাবাস থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ৷ এখন তিনি লন্ডনের কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত বেলমার্শ কারাগারে আছেন৷
আসাঞ্জের আইনজীবী হিসেবে নিয়মিত দূতাবাসে যেতেন মরিস৷ ২০১৫ সালের শুরুর দিকে তাঁরা প্রেম শুরু করেন বলে জানান তিনি৷ আসাঞ্জ সম্পর্কে মরিস বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে সে, আমি যে মানুষটাকে দেখতে পছন্দ করতাম তার চেয়ে আমি যে মানুষটাকে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দেখতে চাই, সেই মানুষে পরিণত হয়েছিল৷
‘‘মানুষের কাছে তাঁর যে ভাবমূর্তির তার প্রেমে আমি পড়িনি, এর পেছনে আছে প্রকৃত মানুষটি,'' বলে জানান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা ৩৭ বছরের স্টেলা মরিস৷
সুইডেনের নাগরিক হলেও ২০ বছর ধরে ব্রিটেনে বাস করছেন মরিস৷ ২০১৭ সালে আসাঞ্জ তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বলে জানান তিনি৷ সেই সময় তাঁরা আংটি বিনিময় করেন৷
এর আগে ২০১৬ সালে গর্ভধারণ করেন মরিস৷ প্রথম সন্তান গ্যাব্রিয়েলের বয়স দুই৷ আর ছোট ছেলের নাম ম্য়াক্স৷ গতবছর ফেব্রুয়ারিতে জন্মায় সে৷
মরিস বলেন, দূতাবাসের সামনে প্রহরায় থাকা মার্কিন নিরাপত্তা কর্মীরা যেন তাঁর গর্ভধারণের বিষয়টি বুঝতে না পারেন সেজন্য় ঢিলেঢালা পোশাক পরতেন তিনি৷ প্রথম সন্তান জন্মানোর সপ্তাহখানেক পরেই তাকে লুকিয়ে দূতাবাসে নিয়ে যাওয়ার কাহিনিও শুনিয়েছেন মরিস৷
মার্কিন নিরাপত্তা কর্মীরা একবার প্রথম সন্তান গ্যাব্রিয়েলের ন্যাপকিন থেকে ডিএনএ চুরির চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন মরিস৷ তারা ধারণা করছিলেন, গ্যাব্রিয়েলের বাবা হয়ত আসাঞ্জ৷
দূতাবাসে প্রেমের বিষয়টি বিদ্রোহের অংশ ছিল বলে মন্তব্য় করেছেন মরিস৷ তিনি বলেন, ‘‘সে (আসাঞ্জ) দূতাবাসে থাকার সময় প্রেমে পড়া, এনগেজড হওয়া, বাচ্চা নেয়ার বিষয়টি ছিল বিদ্রোহ৷
‘‘সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা হতে পারে এমন- এটা যুদ্ধের ময়দানে থাকার মতো পরিস্থিতি ছিল এবং মানুষ সবকিছু সত্ত্বেও যুদ্ধের সময় প্রেমে পড়তে পারে এবং পড়ে,'' বলেন স্টেলা মরিস৷
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি তিনি!
সারাবিশ্বের সংবাদমাধ্যম যাঁকে নিয়ে আলোড়িত, তাঁকে কেউ কেউ ডাকছেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ নামে৷ কে এই ব্যক্তি, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/P. Nicholls
যার পোষ্য এই বেড়াল
ওপরের ছবিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তোলা, যখন লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাস ছিল জেমস নামে এই বেড়ালটির ঠিকানা৷ এই বেড়ালের মালিক জুলিয়ান আসাঞ্জ, যার দীর্ঘ ৭ বছর দূতাবাসের ভেতর বন্দি থাকার পালা শেষ৷ এখন তাঁর ঠিকানা মধ্য লন্ডনের একটি জেলখানা৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
কে এই আসাঞ্জ?
উইকিলিকসের মাধ্যমে বহু গোপনীয় নথি ফাঁস করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা আসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ গ্রেপ্তার আতঙ্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর ভয়ে ২০১২ সালের আগস্ট থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান নেন তিনি৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
কেন গ্রেপ্তার?
ইকুয়েডর সরকার আসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করার পর থেকে সেই দূতাবাসেই অবস্থান করছিলেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার ইকুয়েডর কর্তৃক ওই রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিলের সিদ্ধান্তে আসার পর গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নেয় লন্ডন পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Pinney
কেন বাতিল রাজনৈতিক আশ্রয়?
ওপরের ছবিটি লন্ডনের সেই দূতাবাসের, যেখানে আসাঞ্জকে রাখা বাবদ প্রতি বছর ইকুয়েডর সরকারের খরচ হচ্ছিল আনুমানিক এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার! ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং দৈনন্দিন প্রটোকল লঙ্ঘনের’ কারণে তাঁর অ্যাসাইলাম বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো৷ কিন্তু শুধুই কি এটাই কারণ?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Leal-Olivas
অভদ্র অতিথি
প্রেসিডেন্ট মোরেনো বলেন, ‘‘আমরা এই স্পয়েলড ব্র্যাট, অর্থাৎ বখে যাওয়া ছেলের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করছি৷’’ এর কারণ আসাঞ্জের বিভিন্ন উদ্ভট অভ্যাস৷ আসাঞ্জ নাকি মধ্যরাতে দূতাবাসের ভেতর সশব্দে স্কেটবোর্ডিং করতেন৷ এছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে ছিল দূতাবাসের কর্মীদের শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ৷ এত টাকা খরচ করে যে অতিথিকে রাখছিল ইকুয়েডর সরকার, সেই দেশের দূতাবাসের দেওয়ালেই নাকি নিজের মল-মূত্র ছড়াতেন এই ইন্টারনেট-সৈনিক!
ছবি: Reuters/P. Nicholls
অফিস থেকে বেডরুম
ইকুয়েডরের দূতাবাস আয়তনে খুব একটা বড় না হলেও একটি অফিসঘরকে সাজানো হয় আসাঞ্জের শয়নকক্ষ হিসাবে৷ কিন্তু দূতাবাসের ভেতর ধীরে ধীরে পালটাতে থাকে আসাঞ্জের ব্যবহার৷ দূতাবাসের কর্মীরা বলছেন, প্রায়ই নাকি নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতেন আসাঞ্জ৷ স্নান করতেন না মাসের পর মাস৷ মধ্যরাতে স্কেটবোর্ডিং করার পাশাপাশি জোরে জোরে গানও চালাতেন তিনি, যা একটি দূতাবাসের জন্য বেমানান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Voskresenskiy
জাতীয় লজ্জা
ছোট দেশ ইকুয়েডর আসাঞ্জের কাণ্ড-কারখানাকে মোটেও ভালো নজরে দেখেনি৷ জানা গেছে, আসাঞ্জের আচরণকে দূতাবাসের ভেতর অনেকেই দেখতেন ‘ইকুয়েডরের লজ্জা’ হিসাবে৷ ফলে, বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন শুধু আন্তর্জাতিক চাপে নয়, আসাঞ্জের অভদ্র আচরণের কারণেও ইকুয়েডর বাতিল করেছে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন৷ সাথে, জুটেছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ হবার বদনামও৷
ছবি: picture-alliance/J.Wiseman
গোপন তথ্য ফাঁস
উইকিলিকস বিখ্যাত বিভিন্ন রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য৷ এবং ইকুয়েডরের কাছে আশ্রয় পাওয়া সত্ত্বেও আসাঞ্জ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট মোরেনোর বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ফাঁস করে দেন৷ এর সাথে, গোপন অ্যাকাউন্টে থাকা বিশাল অঙ্কের অর্থের হদিশও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন আসাঞ্জ৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
আসাঞ্জের পক্ষে যারা...
উইকিলিকসের খবর সামনে আসার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে উঠে আসছিল আসাঞ্জের পক্ষে আওয়াজ৷ বৃহস্পতিবার আসাঞ্জ গ্রেপ্তার হবার পরও দেখা যায় একই রকমের প্রতিক্রিয়া৷ ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনেই প্রতিবাদে নামেন বেশ কয়েকজন৷ দাবি জানান আসাঞ্জকে মুক্ত করার৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কী হতে চলেছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ হিসাবে খ্যাত ব্যক্তির সাথে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Stillwell
9 ছবি1 | 9
আসাঞ্জকে এখন যে কারাগারে রাখা হয়েছে সেখানে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ এই পরিস্থিতিতে আসাঞ্জের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছেন মরিস৷
আসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে করা ধর্ষণ মামলা গতবছর খারিজ হয়ে গেছে৷ ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের জন্য তাঁর প্রত্যর্পিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক আসাঞ্জ আর সুইডেনের নাগরিক মরিসের দুই সন্তান যুক্তরাজ্য়ের নাগরিক৷ এই বিষয়টি আসাঞ্জের যুক্তরাজ্য়ে থেকে পরিবার গড়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক৷