প্রেসিডেন্ট হয়েই ট্রাম্প যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন
২১ জানুয়ারি ২০২৫
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পরই একাধিক প্রশাসনিক নির্দেশে সই করলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে অ্যামেরিকার সরে আসা, ক্যাপিটলে দাঙ্গার দায়ে অভিযুক্ত দেড় হাজার সমর্থকের মুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে সরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত
ট্রাম্প যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন, তা হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত।
এই নির্দেশে বলা হয়েছে, এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেবে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। কিছু সদস্য রাষ্ট্রের অন্যায্য রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে এই সংস্থায়। চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এখানে অনেক বেশি অর্থ দিচ্ছে।
ট্রাম্প বলেছেন, ''বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের ছিঁড়ে খাচ্ছে। সবাই অ্যামেরিকাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। কিন্তু আমি তা আর হতে দেব না।''
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবচেয়ে বড় আর্থিক সাহায্যকারী ছিল অ্যামেরিকা। তারাই এই সংস্থার ১৮ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করতো।
২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প এই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা পরিবর্তন করেন এবং অ্যামেরিকা আবার বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থায় যোগ দেয়।
ট্রাম্পের অভিষেক-পূর্ব সমাবেশ
অভিষেকের প্রাক্কালে রোববার নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রাজধানী ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় একটি প্রচারণামূলক সমাবেশের আয়োজন করেন৷ সেখানে সমর্থকদের সঙ্গে তিনি তার বিজয় উদযাপন করেন৷
ছবি: Matt Rourke/AP/picture alliance
ভিন্ন এক উদযাপন
ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক-পূর্ব সমাবেশটি যেন নির্বাচন পূর্ববর্তী প্রচারণামূলক সমাবেশগুলোরই পুনরাবৃত্তি ছিল৷ এই সমাবেশে উপস্থিতরা ট্রাম্পের প্রচারণা সমর্থকদের মতো ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ টুপি, ট্রাম্প শার্ট ও আমেরিকান পতাকার পোশাকে সজ্জিত হয়ে আসেন৷
ছবি: Celal Gunes/Anadolu/picture alliance
বক্তারাও
অভিষেক-পূর্ব সমাবেশের বক্তারাও পূর্বের প্রচারণার সমাবেশের মতোই ছিলেন৷ যেমন ইউএফইসির সিইও ডানা হোয়াইট, ট্রাম্পের সহকারী স্টিফেন মিলার এবং তার দুই ছেলে৷ সমাবেশে ট্রাম্প পূর্বের প্রচারণার স্লোগান পুনরাবৃত্তি করেন এবং ভিডিও প্রদর্শন করেন৷
ছবি: Brian Cahn/ZUMAPRESS/picture alliance
ভিলেজ পিপল-এর গান
ট্রাম্পের অভিষেক-পূর্ব সমাবেশে জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ভিলেজ পিপল’ তাদের গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে তোলে৷ ভিলেজ পিপল তাদের অনন্য স্টাইল এবং জনপ্রিয় গানের জন্য পরিচিত৷ এটি সমকামী ব্যান্ড না হলেও তাদের পোশাক এবং ‘ওয়াইএমসিএ’ ও ‘ইন দ্য নেভি’-এর মতো গানের জন্য তারা এলজিবিটিকিউ সংস্কৃতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কিত৷
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
ট্রাম্প বলেন
শপথ নিয়ে কী করবেন তার একটি ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, ‘‘অ্যামেরিকার মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন৷ এর প্রতিদানে আমরা তাদের সেরা প্রথম দিন, সেরা প্রথম সপ্তাহ এবং অসামান্য প্রথম ১০০টি দিন উপহার দেব৷’’
ছবি: Scott Olson/Getty Images
প্রথম দিনেই ডাবল সেঞ্চুরি
প্রথম দিনেই ২০০টি নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এমন খবর দিচ্ছে গণমাধ্যমগুলো৷ এই আদেশগুলোর মধ্যে থাকবে সীমান্ত নিরাপত্তা, গণ-প্রত্যাবাসন, বৈচিত্র্য উদ্যোগ বাতিল, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হামলার আসামীদের ক্ষমা, তেল-গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরকারি কর্মচারীদের প্রতিস্থাপন৷
ছবি: Matt Rourke/AP/picture alliance
5 ছবি1 | 5
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা
শপথ নেয়ার পর ট্রাম্প যে সব প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে অ্যামেরিকার সরে আসার সিদ্ধান্ত।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল। তার থেকে সরে এলেন ট্রাম্প।
তবে চুক্তির নিয়ম অনুসারে বর্তমান কোনো সদস্য দেশ জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠাবার পর এক বছরের মতো সময় লাগে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে।
ট্রাম্প এদিন জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্তে সই করেছেন। এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ''যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক। আমরা ড্রিলিংয়ের কাজ অনেকটাই বাড়াব।'' প্রশাসনিক নির্দেশ জারির পর তিনি বলেছেন, ''এখন আমরা ড্রিল করব। ড্রিল বেবি ড্রিল।''
ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে ঢুকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেছিল ট্রাম্প সমর্থকরা। বাইডেনের আমলে তাদের বিচার শুরু হয়। বেশ কয়েকজন শাস্তি পয়।
ট্রাম্প প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে বলেছেন, তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হলো। এদের প্রতি জাতীয় অন্যায় হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে সব বকেয়া মামলা প্রত্যাহার করা হবে। যারা জেলে আছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হবে।
সরকারি হিসাব, দেড় হাজার জনেরও বেশি মানুষকে ক্যাপিটল দাঙ্গার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা
ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় সই করেছেন। এর ফলে ট্রাম্প এই সীমান্তে সেনা পাঠাতে পারবেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ''আইনি পথে অভিবাসীরা আসুক, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাদের মানুষ দরকার। কিন্তু তাদের আইনি পথে আসতে হবে।''
আরেকটি নির্দেশে বলা হয়েছে, মোক্সিকোর মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলি হলো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান স্বীকৃত এই আইনে বদল করতে চাইছেন ট্রাম্প। এদিন ওভাল অফিসে বসে এই বিষয়েও একটি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন তিনি।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার এইভাবে প্রশাসনিক নির্দেশে বদল করা সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্ত আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে।
টিকটকে নিষেধাজ্ঞা এখনই নয়
টিকটক নিয়ে আরেকটি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন ট্রাম্প। সেখানে বলা হয়েছে, টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর করা হবে না। প্রশাসনিক নির্দেশে বলা হয়েছে, টিকটক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ৭৫ দিন পিছিয়ে দেয়া হলো।
ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প যে সিদ্ধান্ত নিতে চান
প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হওয়ার পর প্রথম টিভি সাক্ষাৎকারে ডনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, তিনি এখন কী কী সিদ্ধান্ত নিতে চান।
ছবি: Nbc News/ZUMA Press Wire/picture alliance
একগুচ্ছ পরিবর্তন
আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে তিনি জানিয়েছেন তিনি দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একগুচ্ছ পরিবর্তন আনবেন। তার একাধিক সিদ্ধান্তের ফল সুদূরপ্রাসারী হতে পারে।
ছবি: Nbc News/ZUMA Press Wire/picture alliance
অ্যামেরিকায় জন্মালেই নাগরিকত্ব নয়
এনবিসি টেলিভিশনে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই কেউ নাগরিক হওয়ার অধিকার পাবেন না। মার্কিন সংবিধান এই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের মতে, এটা একটা অর্থহীন ব্যবস্থা। তিনি প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়ে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করবেন।
ছবি: Thibault Camus/AP Photo/picture alliance
অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো
ট্রাম্প বলেছেন, এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু এটা করা দরকার। বেআইনিভাবে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেও প্রস্তুত।
ছবি: Heather Khalifa/AP Photo/picture alliance
বাণিজ্যিক মাসুল নিয়ে
ট্রাম্প জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে যে সব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে, সেগুলির উপর চড়া হারে মাসুল বসানোর বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনই কিছু বলবেন না। ট্রাম্পের বক্তব্য, ''আমি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছি না। আগামিকালও কোনো গ্যারান্টি দিতে পারব না।''
ছবি: Brandon Bell/Pool via REUTERS
ক্যাপিটল নিয়ে
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ক্যাপিটলে যারা ঢুকে পড়েছিল এবং শাস্তি পয়েছে, ক্ষমতায় আসার পরেই তাদের দ্রুত ক্ষমার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন। ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক এখন বন্দি আছেন। তাদেরই ক্ষমা করার কথা বলেছেন ট্রাম্প।
ছবি: Stephanie Keith/Getty Images
গর্ভধারণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ
গর্ভধারণ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি গর্ভপাতের ওষুধের উপর নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা করবেন না।
ছবি: FREDERIC J. BROWN/AFP
ইউক্রেনকে সাহায্য়ের পরিমাণ কমবে
গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। রোববার তিনি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটা চুক্তি করতে চাইছে। ট্রাম্প পুটিনকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্য়োগাী হন। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, খুব সম্ভবত তিনি ইউক্রেনকে দেয়া সাহায্য়ের পরিমাণ কম করবেন।
ছবি: Ludovic Marin/AFP via Getty Images
ন্য়াটোয় থাকা নিয়ে
ট্রাম্প এর আগে একাধিকবার ন্যাটোর সমালোচনা করেছেন। এখন তিনি বলেছেন, ন্যাটোর সব সদস্য দেশ যদি তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ খরচ করে, সবাইকে পরিবারের অংশ মনে করে, অ্যামেরিকার সঙ্গে ন্যায্য ব্যবহার করে, তা হলে ঠিক আছে, না হলে তিনি ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাববেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
8 ছবি1 | 8
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ''টিকটক বন্ধ করা হবে নাকি বিক্রি করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমাকে একটু সময় দিন।''
টিক টকের সিইও সোউ চিউ ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরো নির্দেশে সই
ট্রাম্প জাতীয় স্তরে কর্মী নিয়োগ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সই করেছেন। আরেকটি নির্দেশে বলা হয়েছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম নয়, সরকারি কর্মীদের সবাইকে অফিসে এসে কাজ করতে হবে।