বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে৷ মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে খাদ্য উৎপাদনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে৷ এই সংকট মেটাতে প্রোটিনে ভরপুর পোকামাকড় খাওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
এটাই কি ভবিষ্যতের খাদ্য হতে চলেছে? হয়তো বা তাই৷ ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে পোকামাকড় থেকে খাদ্য তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে কয়েকটি বড় সুপারমার্কেট কোম্পানি নানা পণ্য বিক্রি করছে৷
সেগুলি হয় মিল ওয়ার্ম অথবা গোটা কীট দিয়ে তৈরি৷ ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ আসলে কিন্তু সব পোকাই খাওয়া যেতে পারে৷ বিশেষ করে এশিয়ার কিছু দেশে আদিকাল থেকেই রান্নায় পোকামাকড়ের ব্যবহারের চল রয়েছে৷ এমনকি কয়েকটি পদের বিশেষ কদর করা হয়৷ বলা বাহুল্য, ইউরোপে অবশ্য বিষয়টি মোটেই অতটা সহজ নয়৷ সেখানে খাবারের জন্য নির্দিষ্ট পোকামাকড় পালন করতে হলে কড়া বিধিনিয়ম মেনে চলতে হয়৷ বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি৷
পঙ্গপাল, ঝিঁঝিপোকার পাশাপাশি মিলওয়ার্ম ও বাফেলো ওয়ার্মও পালন করা হয়৷ বিশেষ এক ধরনের গুঁড়ো এই সব পোকামাকড়ের খোরাক৷ মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই পোকা খাবার উপযুক্ত হয়ে ওঠে৷ তার পরের চার সপ্তাহ ধরে বিশেষ ডায়েট খাইয়ে পোকার পাকস্থলি পরিষ্কার করা হয়৷ কারণ পেটের মধ্যেই বেশি ব্যাকটিরিয়া থাকে৷ অবশেষে পোকার শরীর ভালো করে ধুইয়ে আচমকা জমিয়ে ফেলা হয়৷ বাজারে আনার আগে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শেষ পদক্ষেপ হলো কমপক্ষে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তাপে পোকাগুলি গরম করা৷
সাপ, কেঁচো খেয়ে বেঁচে থাকা
থাইল্যান্ডের চান্থাবুড়িতে শুরু হয়েছে থাই-মার্কিন বার্ষিক ‘কোবরা গোল্ড’ প্রশিক্ষণ৷ মূলত জঙ্গলে কীভাবে সেনাদের বেঁচে থাকতে হয়, তারই প্রশিক্ষণ হচ্ছে৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কীটপতঙ্গের সঙ্গে যুদ্ধ
জঙ্গলের ভিতর সৈন্যদের কীভাবে সাপ, মাকড়সাসহ অন্যান্য কীটের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়, তার প্রশিক্ষণ হয় থাইল্যান্ডে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সাপের কামড়
এক থাই সেনাকে কামড়ে ধরেছে একটি সাপ৷ যদিও সাপের বিষ দাঁত ভাঙা৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
২৯ দেশের অংশগ্রহণ
পর্যবেক্ষক ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ২৯টি দেশের সেনারা৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মাকড়সা যখন খাবার
এক সেনা মাকড়সা ধরে খাওয়ার চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কেউটের রক্ত
এই থাই সেনা জঙ্গলে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ হিসেবে কেউটে সাপের রক্ত পান করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
প্রশিক্ষণ পর্ব
কীভাবে জঙ্গলে কেউটে সাপ ধরতে হয় তারও প্রশিক্ষণ চলছে এবং তারপর বিষ বের করে সেই সাপ খেতে হয় তা দেখাচ্ছেন একজন কমান্ডার৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মাকড়সার ডিম
মাকড়সার ডিম দেখে কীভাবে চিনবেন, তা-ই দেখাচ্ছেন একজন সেনা৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সাপ ধরার প্রশিক্ষণ
সাপ কীভাবে ধরতে হয় তা দেখিয়ে দিচ্ছেন একজন প্রশিক্ষক৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
প্রাকৃতিক পানি
বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে পানি জমা থাকে৷ এমন উদ্ভিদগুলো চিনিয়ে দেয়া হয় প্রশিক্ষণে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কন্ডমে ভাত রান্না
কন্ডমের ভেতরে ভাত রান্নার পদ্ধতি দেখাচ্ছেন এক কমান্ডার৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
কেঁচো
এক সৈন্য কেঁচো খাচ্ছেন৷ জঙ্গলের ভেতর যুদ্ধ চলাকালে কী খাবার পাওয়া যাবে, তাতো আর জানা সম্ভব নয়৷ তাই সবধরণের খাবার খাওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
11 ছবি1 | 11
প্রশ্ন হলো, আদৌ পোকামাকড় খাওয়ার প্রয়োজন কী? গোটা বিশ্বে দ্রুত বেড়ে চলা জনসংখ্যার চাপে জাতিসংঘ ও একাধিক বিশেষজ্ঞ বহুকাল ধরে ভবিষ্যতের খাদ্য হিসেবে পোকামাকড় ব্যবহারের ডাক দিয়ে চলেছেন৷ একমাত্র এভাবেই মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব৷ খাদ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্দ্রেয়া ফাডানি মনে করেন, ‘‘পোকামাকড় প্রোটিনে ভরপুর৷ ফ্যাটও কম নেই৷ আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে রুটির পাশাপাশি এ সবও দারুণ খাদ্য হয়ে উঠতে পারে৷''
টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়াও পোকামাকড়ের আরেকটি সুবিধা৷ পোকা দ্রুত বেড়ে ওঠে৷ খুব কম খোরাকের প্রয়োজন হয়৷ পোকা পালন করতে কম জ্বালানী প্রয়োজন হয়৷ এক কিলো গরুর মাংসের জন্য প্রায় ১৫,০০০ লিটার পানি প্রয়োজন৷ এক কিলো পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে মাত্র চার হাজার লিটার পানি লাগে৷ গরু পালন করতে হলে দিনে প্রায় ৮ কিলো খোরাক লাগে, পোকার ক্ষেত্রে মাত্র দুই কিলো৷
পোকামাকড় দিয়ে কী কী খাদ্যপণ্য তৈরি হয়? কিছু দোকানের পণ্য সত্যি বিস্ময়কর রকম বৈচিত্র্যে ভরা৷ নুডলস, বার্গার, ম্যুসলি, এনার্জি বার থেকে শুরু করে পোকামাকড়ের চিপস পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে৷ এমন সব খাদ্যপণ্যের স্বাদ কেমন? কেউ কেউ বলেন, খেতে খারাপ নয়৷ না জানলে মনে হতো ফুল গ্রেন-যুক্ত কোনো খাবার খাচ্ছি৷
একটি বার্গার রেস্তোরাঁয় মাংসের বদলে পোকামাকড়ের বার্গারও পাওয়া যাচ্ছে৷ এই পদের পোশাকি নাম ‘পরশু'৷ বাকি বার্গারের তুলনায় এটির দাম কিছুটা বেশি হলেও গ্রাহকদের আগ্রহ কিন্তু কম নয়৷ অনেকে মনে করেন, ভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করা যেতেই পারে৷ তাছাড়া অনেক দেশেই এসব খাওয়া হয়৷ বিষয়টি শুধু মনের ব্যাপার৷
অর্থাৎ সাহস করে কামড় বসানোর জন্য শুধু একটু সাহসের প্রয়োজন৷ বাকিটা রুচির বিষয়৷
বেটিনা ফিগার/এসবি
পৃথিবীতে কেন প্রয়োজন পোকামাকড়?
পোকামাকড় হারিয়ে গেলে পৃথিবী হারাবে কফি৷ আরো কী কী কারণে আমাদের দরকার পোকামাকড়, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
পোকামাকড়েরই এই পৃথিবী
আজকের পৃথিবীতে বাস করে প্রায় ১০ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় প্রাণী তারা৷ জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে মোট প্রজাতির ৪০ শতাংশ হারাতে চলেছি আমরা৷ এর প্রভাব ঠিক কতটুকু সমস্যা বয়ে আনবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে, তা অনেকেরই অজানা৷
ছবি: Imago Images/Xinhua
পরাগযোগে ভূমিকা
গমের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় ফসলের চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পোকামাকড়ের৷ পরাগযোগের কাজ, যা কিছু পোকা ছাড়া অসম্পূর্ণ, সম্ভব হবে না যদি বিশেষ কিছু প্রজাতির পোকা হারিয়ে যায়৷ চীনের কিছু অংশে শ্রমিকরা এই পরাগযোগের কাজ করলেও দেখা যাচ্ছে যে এর ফলে ফসলের দাম বাড়ছে কয়েকগুণ৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কফির কাপে কোপ
শুধু গম নয়, কফির চাষ বা বিশেষ কিছু ফলের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পরাগযোগের গুরুত্ব বিশাল৷ এছাড়াও পশম ও বেশ কিছু ওষধি গাছের চাষের ক্ষেত্রে গোকার ভূমিকা অপরিহার্য৷
ছবি: AFP/R. Arboleda
সাফাইয়ের দায়িত্বেও পোকা
গুবরে পোকা চিরকালই গল্প-উপন্যাসে হাসিঠাট্টার চরিত্র৷ কিন্তু এই গুবরে পোকা লুপ্ত হয়ে গেলে চারপাশ হয়ে উঠবে দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা৷ কারণ এই পোকার মূল কাজই হলো নিজের চারপাশের আবর্জনা পরিষ্কার করা৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
খাদ্য শৃঙ্খলে টান
পোকামাকড়ের গুরুত্ব এই পৃথিবীতে শুধু চাষে সাহায্য করা নয়, একাধিক অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন খাবারের তালিকাতেও রয়েছে তারা৷ আচমকা তারা হারিয়ে গেলে রীতিমত অভুক্ত থাকবে বেশ কিছু পশুপাখি৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
মানিয়ে নিতে না পারা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত পাল্টাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া৷ কিন্তু তাল মিলিয়ে জীবনধারা পাল্টাতে অক্ষম অনেক পোকামাকড়৷ ফলে, অবলুপ্তির পথে তারা৷ শুধু তাই নয়, চাষীদের বাড়ন্ত সার ব্যবহারের ফলেও মারা যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পোকা৷
ছবি: Imago Images/Design Pics/J. Wigmore
উন্নয়ন বনাম প্রাকৃতিক ভারসাম্য
পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে মনোকালচার বা একক কৃষির জনপ্রিয়তা৷ এর সাথে বাড়ছে ক্ষেতে কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত সারের ব্যবহারও৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই একটি কারণেই ইউরোপে কমছে পোকামাকড়ের সংখ্যা৷
ছবি: Getty Images/N. Safo
কোথায় যাবে তারা?
বিশেষজ্ঞদের মতামত, একক কৃষি ও কীটনাশকের ব্যবহার কমালে বদলাতে পারে চিত্র৷ পাশাপাশি, ফুল বাগান করার জন্য উৎসাহিত করে তুলতে হবে সাধারণ জনগণকে৷ এই চিন্তার ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু হায়গায় শুরু হয়েছে ‘পোকার হোটেল’ নামের এক অভিনব পরিকল্পনা, যা আসলে বাসায় পোকামাকড়ের জন্য নির্দিষ্ট একটি স্থান৷ এই হোটেলের বিক্রি ক্রমেই বাড়ছে ইউরোপে৷