ফেলে দেওয়া বা অপ্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে শিল্প সৃষ্টি বেশ বড় চ্যালেঞ্জ৷ এক ব্রিটিশ শিল্পী লাগামছাড়া কল্পনাশক্তি দিয়ে বস্তু গলিয়ে এমন অভিনব সৃষ্টি করে চলেছেন৷ সৃজনশীল সেই প্রক্রিয়া মাঝপথে ছেড়ে দিতেও তিনি প্রস্তুত৷
বিজ্ঞাপন
হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে কেনা প্লাস্টিকের পাইপ এবং হেয়ার ড্রাইয়ার৷ লন্ডনের ডিজাইনার টম প্রাইস শুধু এই দু'টি জিনিসের সাহায্যে প্লাস্টিক গরম করে চেয়ার ডিজাইন করেন৷ প্রতিটি আসবাবই একটা এক্সপেরিমেন্ট৷ টম বলেন, ‘‘দৈনন্দিন জীবনে এ সব আমাদের ঘিরে রয়েছে, নানা কাজে সেগুলির ব্যবহার হয়৷ তাই আমরা সেগুলিকে তেমন পাত্তা দেই না৷ তার কিছু অংশ গলিয়ে মূল রূপ তুলে ধরলে অনেক অপরিচিত দিক চোখের সামনে এসে যায়৷ সেটা আমার জন্য সত্যি বিস্ময়কর৷''
যেমন পাইপ দিয়ে তৈরি হালকা চেয়ার৷ স্থাপত্যের মতো সেগুলি পারিপার্শ্বিকের উপর ছাপ রাখে৷ গলানো উপকরণ দিয়ে তৈরি এই সব আসবাবের দাম ১৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ টম প্রাইস নায়লনের দড়িও গলান৷ ব্রোঞ্জ অথবা ফয়েলও বাদ পড়ে না৷ টম বলেন, ‘‘একটি বস্তু তৈরি হলে আমার কাছে তা ‘ফুল স্টপ' হয়ে যায় না৷ অর্থাৎ কাজ মোটেই শেষ হয় না৷ কাজটাই প্রক্রিয়া৷ কাজ থেকে যা তৈরি হয়, সেটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মতো, সেগুলি যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসে৷ আবিষ্কারের এই আনন্দের মাত্রা আমি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছি৷''
প্লাস্টিকের ব্যাগ কি শুধুই ব্যাগ?
বাজার করার জন্য একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগ হামেশাই দেখা যায় যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ‘ওয়ান-টাইম’ প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গায় সুতি, চট বা কাগজের ব্যাগও হতে পারে৷ ছবিঘরে কিছু ব্যাগের নমুনা দেখুন!
ছবি: DUH
সব সময় শুধু প্লাস্টিক নয়
সুপারমার্কেটগুলিতে ফল বা সবজি কেনার সময়, এই যেমন ধরুন কলা, আপেল বা গাজর কেনার সময়, হাতের কাছেই রাখা থাকে প্লাস্টিকের ব্যাগ৷ সেই ব্যাগে পছন্দের ফল বা সবজিগুলি ভরে ওজন করে নিয়ে যেতে হয় কাউন্টারে৷ এভাবেই মাথা পিছু বছরে প্রায় ৭১টি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেন জার্মানরা৷
ছবি: Fotolia/pizzicati
দূরে থাকুন
সাধারণ প্লাস্টিকের ব্যাগগুলির শতকরা ১০০ ভাগই কৃত্রিম পলিথিনের, যা জীবাশ্মের অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরি৷ এই ব্যাগগুলো মোটেই পরিবেশবান্ধব নয় এবং এগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লাগে৷ এ কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশ বিষয়ক কমিশন প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়৷
ছবি: picture alliance/ZB
‘অর্গানিক’ যে সব সময় ভালো, তা নয়
জৈবিক উপায়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়, এমন প্লাস্টিক ব্যাগও পাওয়া যায় আজকাল৷ তবে সেই সব প্লাস্টিকের ব্যাগ সাধারণত শতকরা ৭০ ভাগ অপরিশোধিত তেল এবং ৩০ ভাগ নবায়ণযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি৷ শুনতে ভালো লাগলেও, এ ধরণের প্লাস্টিকের ব্যাগ ‘রিসাইক্লিং’ করার ক্ষেত্রেও কিন্তু সীমাবদ্ধতা আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
রিসাইক্লিং-এর ভাগ বেশি থাকাও যথেষ্ট নয়
একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগে রয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ রিসাইক্লিং পলিথিন৷ এগুলি সাধারণ প্লাস্টিক ব্যাগের তুলনায় কিছুটা যে পরিবেশবান্ধব – তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে বেশিরভাগ প্লাস্টিক ব্যাগই আবর্জনায় ফেলে দেওয়া হয়, তাই উপায় থাকলেও রিসাইক্লিং করা হয় না বা যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি
অন্যদিকে কাগজের ব্যাগ যে সব সময়ই পরিবেশবান্ধব, অর্থাৎ কৃত্রিম ব্যাগের তুলনায় ভালো – তাও কিন্তু নয়৷ কারণ, এ সব ব্যাগ তৈরিতে অনেক বেশি সময় এবং ব্লিচিং করার জন্য শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তীতে আবারো রাসায়নিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়৷ এতে কিছুটা হলেও দূষণ ঘটে৷
ছবি: PA/dpa
কাপড়ের ব্যাগের অন্য দিক
কাপড়ের ব্যাগ যদি সুতির হয়, তাহলে সেগুলি বেশ মজবুত হয় এবং পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু এ ধরণের ব্যাগ তৈরির জন্য একদিকে যেমন বেশি মাত্রায় কাঁচামাল প্রয়োজন হয়, তেমনই প্রয়োজন হয় বেশি পরিমাণে জ্বালানি৷ বলা বাহুল্য, এর একটা প্রভাবও পড়ে পরিবেশের ওপর৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
আছে মজবুত প্লাস্টিকের ব্যাগও
কাপড়ের ব্যাগের তুলনায় কৃত্রিম বা পলিয়েস্টারের ব্যাগ কিন্তু কম মজবুত নয়৷ ‘ওয়ান টাইম ইউজ’ বা ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ – এমন ব্যাগ ছাড়াও বাজারে কয়েকবার ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম প্লাস্টিকের ব্যাগও পাওয়া যায়৷ এই যেমন ছবির ব্যাগটি৷ তবে এগুলো কতটা পরিবেশবান্ধব – সেটা বলা কঠিন৷
ছবি: DUH
বিজয়ী হচ্ছে...
তাই সত্যিকার অর্থে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ হচ্ছে পলিয়েস্টারের তৈরি এই হাল্কা ব্যাগগুলি৷ এগুলির ওজন মাত্র ৩০ গ্রাম এবং ভাঁজ করলে এগুলো একেবারে হাতের মুঠোয় রাখা সম্ভব৷ এই ব্যাগ দেখতে ছোট এবং ওজনে কম হলেও প্রায় ১০ কেজি ওজনের জিনিস বহন করতে পারে৷
ছবি: DUH
8 ছবি1 | 8
উপকরণের ক্ষেত্রে টম প্রাইস-এর বাছবিছার কম৷ নায়লনের দড়ি দিয়ে পেঁচানো বেলুন থেকে তিনি বাতাস বার করে নেন৷ তারপর তিনি গরম ধাতুর বাটির উপর সেই প্লাস্টিক গলিয়ে নেন৷ এভাবে আরামকেদারার আসনের ছাঁচ তৈরি হয়৷ দড়ির গিঁট কেমন হবে, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না৷ টম প্রাইস বলেন, ‘‘এমন কাকতালীয় অবস্থার প্রতি আমার আগ্রহের মূল কারণ হলো, আমি আসলে নির্দিষ্ট স্টাইল অথবা কাজের মধ্যে সচেতনভাবে কোনো বাঁধাধরা নান্দনিকতা থেকে পালাতে চেয়েছিলাম৷ বস্তুকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিলে অনেক সিদ্ধান্ত আর নিতে হয় না, সিদ্ধান্ত নিতে আমার ভালো লাগে না৷''
টম প্রাইস লন্ডনে প্রথমে ভাস্কর্য, তারপর আসবাব ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ তাঁর তৈরি কেদারার মধ্যে তার প্রতিফলন দেখা যায়৷ এক একটি আসবাবপত্র একেবারে অনন্য৷ টম বলেন, ‘‘এই জিনিসটি তৈরি করতে অনেক সময় লেগেছিল৷ প্রায় ১০,০০০ কেবেল বাঁধা আছে৷ বল তৈরি করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগেছে৷ প্রথমবার গলানোর কাজ খুব কঠিন ছিল৷ মনে হয়েছিল, সব ভুল হয়েছে, পণ্ডশ্রম হয়েছে৷ অন্য কোনো কাজের সময় এত ঝুঁকি নিতে হয়নি৷''
টম আপাতত বাতি নিয়ে মেতেছেন৷ একটি নন-স্টিকিং প্যানে মধ্যে তিনি প্লাস্টিক গলিয়েছেন৷ সেটি দেখতে তৈলাক্ত কাগজের মতো লাগছে৷ ফলে আলো কখনো জোরালো, কখনো বা টিমটিমে দেখতে লাগছে৷ তবে সব আইডিয়াই শেষ পর্যন্ত কার্যকর করেন না তিনি৷ টম বলেন, ‘‘কাজের মাঝখানে হাল ছেড়ে দেবার স্বাধীনতাও আমার ভালো লাগে৷ অনেক সময়ে আশা অনুযায়ী ইন্টারেস্টিং হয় না৷ তবে প্রকল্পের পেছনে কোনো কোম্পানি টাকা ঢাললে অবশ্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন হয়৷''
টম প্রাইস শিল্প ও ডিজাইনের মাঝের ক্ষেত্রে বিচরণ করেন৷ প্লাস্টিকের পাইপ থেকে তিনি গাছও তৈরি করেছেন৷ সেই ইনস্টলেশনের নাম ‘চেরি গার্ডেন'৷ গলানো বস্তু দিয়ে তৈরি অভিনব সেই জগত৷
পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাতকরণ
গত কয়েক বছরে ঢাকায় প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায়, তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ তবে বর্তমানে বেশ কিছু প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা গড়ে ওঠায়, এ সমস্যা অনেকটাই দূর হওয়ার পথে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবেশের হুমকি প্লাস্টিক বোতল
ঢাকার একটি দোকানে প্লাস্টিক বোতলগুলোয় বিভিন্ন রকম পানীয়৷ গত কয়েক বছরে প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায়, তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ব্যবহৃত বোতল যেখানে সেখানে ফেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে৷ তবে এবার বেশ কয়েকটা প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা গড়ে ওঠায় এ সমস্যা দূর হতে যাচ্ছে বলে আশা করছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
কামরাঙ্গীর চরের কারখানা
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করে এনে বিক্রির জন্য পরিমাপ করা হচ্ছে কামরাঙ্গীর চরের একটি কারখানায়৷ এখানে ধরণ অনুযায়ী প্রতি কেজি বোতলের জন্য দেয়া হয়ে থাকে ছয় টাকা থেকে পনেরো টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী
পরিমাপের পর বাছাই করার জন্য বোতল নামাচ্ছেন এক মহিলা কর্মীরা৷ ঢাকার বিভিন্ন বোতল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী৷ কামরাঙ্গীরচরের এ সব কারখানায় মহিলা শ্রমিকেরা পুরুষের চেয়ে কম বেতন পান৷ এক সপ্তাহ কাজ করে একজন পুরুষ শ্রমিকের বেতন কমপক্ষে ২০০০ টাকা৷ অথচ সমান কিংবা তারও বেশি কাজ করে একজন নারী শ্রমিক পান মাত্র ১৪০০ টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
কারখানার জন্য স্বতন্ত্র জায়গা
বিভিন্ন রঙের বোতলগুলো বাছাই করে আলাদা করা হয়৷ এ সব প্লাস্টিকের বোতল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে আসে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা৷ রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকও এ সব রপ্তানীকারকদের দশ ভাগ ‘ইনসেনটিভ’ দিয়ে থাকে৷ এছাড়া এ ধরণের কারখানার জন্য স্বতন্ত্র একটি জায়গার কথাও ভাবছে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এফবিসিসিআই৷
ছবি: DW/M. Mamun
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াকরণ কারখানার শ্রমিকরা কাজ করেন মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে৷ ছবিটা দেখেই যেটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আপনার কাছে – তাই না?
ছবি: DW/M. Mamun
ধোয়া ও শুকানো
বোতলগুলো চূর্ণ করে ভাঙার পরে সেগুলো ফেলা হয় ছোট এই চৌবাচ্চায়৷ এরপর সেখান থেকে ধুয়ে সেগুলো শুকানোর জন্য দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
রপ্তানির জন্য প্রস্তুত
পানিতে ধোয়া প্লাস্টিকের টুকরা শুকানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে৷ বলা বাহুল্য, এগুলোকে সম্পূর্ণ পানিমুক্ত করে তবেই রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চূড়ান্ত বাছাই
সবশেষে চূড়ান্ত বাছাই করা হয় টুকরাগুলো৷ এ সব প্লাস্টিকের টুকরাগুলো মূলত চীনে রপ্তানি করা হয়৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে, যেখানে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এ সব বর্জ্য প্লাস্টিক৷ এই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় মূলত বিভিন্নরকম ফাইবার৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ
বোতলগুলোকে এ পর্যায়ে মেশিনে দিয়ে ভাঙা হয়৷ এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি মহিলা ও পুরুষেরা সমানভাবেই করে থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি বর্জ্য তৈরি
এ সব কারখানা ঢাকা থেকে বর্জ্য অপসারণে ভূমিকা রাখলেও, নিজেরাই আবার ভূমিকা রাখে বর্জ্য তৈরিতে৷ প্লাস্টিক বোতলের যেসব অংশের বাণিজ্যিক মূল্য নেই, সেসব সরাসরি ফেলা হয় পাশের বুড়িগঙ্গার শাখা নদীতে৷ ফলে এ নদীটির জলপ্রবাহ প্রায় বন্ধের উপক্রম৷