প্লাস্টিকের পাইপ জাতীয় কিছু ছিল: বিমান প্রতিমন্ত্রী
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯বাংলাদেশে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন যুবক রবিবার রাতেই চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের মধ্যেই কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছেন৷ তার নাম মাহাদি ওরফে পলাশ৷ বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায়৷ তার পরিবার জানিয়েছে, সোনারগাঁর তাহেরপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছিল সে৷ এরপর আর পড়াশোনা করেনি৷
এরইমধ্যে মাহাদির লাশের ময়নাতদন্ত এবং সুরতহাল করা হয়েছে৷ তাঁর বুকে ও পিঠে মোট দু'টি গুলির চিহ্ন আছে বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আর এখন পর্যন্ত যা মোটিভ, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে বিচ্ছেদের হতাশার ফল এটি৷ তার পরিবারও বিয়ে এবং বিচ্ছেদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ আর চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার রবিবার রাতে নিশ্চিত করেছেন যে, তার হাতে খেলনা পিস্তল ছিল৷ যদিও এর আগে বলা হয়েছিল পিস্তলের (আগ্নেয়াস্ত্র) কথা৷ ছিনতাই চেষ্টার সময় উড়োজাহাজের মধ্যে তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানানো হয়েছিল৷
কিন্তু বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সন্দেহভাজন ওই যুবকের কাছেকোনো ধরণের পিস্তল থাকার কথা অস্বীকার করেছেন৷ তিনি সোমবার বিকেলে বলেছেন, তার কাছে প্লাস্টিকের পাইপ জাতীয় কিছু ছিল৷ বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি আছে কিনা, ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন৷ টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘‘কোনো লুপহোল ছিলোনা৷ সে প্রোপার সিকিউরিটি চেকের মধ্য দিয়েই প্রবেশ করেছে৷ তাকে সম্পূর্ণ চেক করা হয়েছে৷ আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি৷ কোনো ধরনের সিকিউরিটি সিগন্যাল ছিলনা৷ দু'টি স্ক্যানিং মেশিনের মধ্য দিয়ে তার লাগেজ গিয়েছে৷ তাকে পুরোপুরি চেক করা হয়েছে৷ সব তথ্য আমাদের কাছে আছে৷’’
তারপরও সে ‘পিস্তল’ নিয়ে ঢুকলো কীভাবে? এই প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘তার কাছে তো তেমন কিছু ছিলনা৷ যতটুকু আমি জানতে পেরেছি, তার কাছে গলানো প্লাস্টিকের পাইপ জাতীয় কিছু ছিল৷ ওগুলোই হয়তো সে অস্ত্র হিসেবে বলার চেষ্টা করেছে৷ সে আসলে মুভমেন্টের মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে৷ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান সাহেবও ওখানে (চট্টগ্রাম) গিয়েছিলেন৷ তিনিও দেখেছেন৷’’
তিনি জানান, ‘‘এরপরও আমরা পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখেছি৷ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে৷’’
বিমান প্রতিমন্ত্রী সোমবার নিজে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেছেন৷ একজন কর্মকর্তার প্যান্টের পকেটে একটি সত্যিকারের পিস্তল দিয়ে তা সিকিউরিটে চেকিং-এ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়৷ সেটি স্ক্যানিং-এ ধরা পড়ে৷ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক৷’’
তবে তিনি বলেন, ‘‘স্ক্যানিং-এ মেটালের অবয়ব দেখা যায়৷ প্লাস্টিক হলে তা দেখা যায়না৷’’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই ধাপে সিকিউরিটি চেকিং করা হয় যাত্রীদের৷ এভিয়েশন বিষয়ক প্রতিবেদক চৌধুরী আকবর হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিমানবন্দরে প্রবেশের পরই প্রথম সিকিউরিটি চেকিং৷ যাত্রীকে আর্চওয়ে গেটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ আর সব মালামাল স্ক্যানিং করা হয়৷ ফলে মেটাল বা নন-মেটাল যাই থাকুকনা কেন তার অবয়ব দেখা যায়৷ আর মেটাল হলে সিগন্যাল দেয়৷ প্রকৃতি অনুযায়ী স্ক্যানিং-এ রংয়েরও পার্থক্য হয়৷ বোর্ডিং পাস নেয়ার পর আরেক দফা একইভাবে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়৷’’
আকবর হোসেন বলেন, ‘‘বিস্ফোরক শনাক্ত করার যন্ত্রও আছে৷ সেটা ব্যবহার করা হয় দৈবচয়নের ভিত্তিতে৷ অথবা কোনো কারণে নিরাপত্তা তল্লাশির সময় সন্দেহ দেখা দিলে৷’’
বাংলাদেশে উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা এই প্রথম৷ তবে ১৯৭৭ সালে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকার তেজগাঁ বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়েছিল৷
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং বিমান বোর্ডের সাবেক সদস্য গাজী ওয়াহিদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শাহজালাল বিমান বন্দরের দুই স্তরের আধুনিক নিরাপত্তা তল্লাশি ব্যবস্থা আছে৷ সেখানে মেশিন আছে, ম্যান আছে৷ এখন ম্যান ঠিকমত কাজ করে কিনা সেটা দেখার বিষয়৷ পিস্তল সে আসল হোক আর প্লাস্টিকেরই হোক, নিরাপত্তা তল্লাশিতে তা ধরা না পড়ার কোনো কারণ নেই৷ যদি প্লাস্টিকের পিস্তলও হয় তাহলে তা ধরা পড়লনা কেন, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷’’
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ময়ুরপঙ্খী বোয়িং-১৪৭ উড়োজাহাজে এই ‘ছিনতাই চেষ্টার’ ঘটনা ঘটে রবিবার৷
বিকাল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই ‘ছিনতাইকারী’ ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে৷ কিন্তু ক্রুদের বাধার কারণে সে ককপিটে ঢুকতে পারেনি৷ বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে৷ রাতে আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী নিহত হন৷ উড়োজাহাজের পাইলট, ১৪ জন ক্রু এবং ১৩৪ জন যাত্রী সবাই নিরাপদে বের হতে পেরেছেন৷ সন্দেহভাজন ওই যুবক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেয়ার দাবি করেছিল বলে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়৷