প্লাস্টিকের বদলে কাগজের ব্যাগ, পরিবেশ সুরক্ষার উপায়
ইয়ুলিয়া হাইনরিশসমান/এসি৫ এপ্রিল ২০১৪
উগান্ডার তরুণ অ্যান্ড্রু মুপুইয়া ভারতে কী ভাবে কাগজের ঠোঙা তৈরি করা হয়, তা ইউটিউবে দেখে রাজধানী কাম্পালা-য় ইয়েলি পেপার ব্যাগস নামের একটি কোম্পানি খোলেন৷ এভাবেই শুরু হয় তাঁর সফল যাত্রা৷
বিজ্ঞাপন
উগান্ডায় প্লাস্টিকের ব্যাগ বহুদিন আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু রাজধানী কাম্পালা-র শহরতলিতে এখনও তা সর্বত্র পড়ে থাকে৷ ২১ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু মুপুইয়া এই পরিস্থিতি বদলাতে চান – সে জন্য পাঁচ বছর আগেই তিনি তাঁর ব্যবসা চালু করেন৷ ১৫ জন কর্মী নিয়ে কাগজের ঠোঙা তৈরির ব্যবসা করেন মুপুইয়া৷ ধনী পরিবারের সন্তান তিনি নন, নিজের রোজগার থেকে আসে ব্যবসার পুঁজি৷ মুপুইয়া বলেন, ‘‘আমি প্রথমে প্লাস্টিকের বোতল কুড়োতে শুরু করি৷ স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে মিলে ৭০ কিলো-র বেশি বোতল কুড়িয়ে রিসাইক্লিং-এর জন্য নিয়ে যাই৷ আমার কাজকর্ম দেখে মানুষজন তখন ভেবেছিল, আমি পাগল হয়ে গেছি৷ কিন্তু আমি জানতাম, আমি ঠিক কী করছি৷''
প্লাস্টিকের ব্যাগ কি শুধুই ব্যাগ?
বাজার করার জন্য একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগ হামেশাই দেখা যায় যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ‘ওয়ান-টাইম’ প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গায় সুতি, চট বা কাগজের ব্যাগও হতে পারে৷ ছবিঘরে কিছু ব্যাগের নমুনা দেখুন!
ছবি: DUH
সব সময় শুধু প্লাস্টিক নয়
সুপারমার্কেটগুলিতে ফল বা সবজি কেনার সময়, এই যেমন ধরুন কলা, আপেল বা গাজর কেনার সময়, হাতের কাছেই রাখা থাকে প্লাস্টিকের ব্যাগ৷ সেই ব্যাগে পছন্দের ফল বা সবজিগুলি ভরে ওজন করে নিয়ে যেতে হয় কাউন্টারে৷ এভাবেই মাথা পিছু বছরে প্রায় ৭১টি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেন জার্মানরা৷
ছবি: Fotolia/pizzicati
দূরে থাকুন
সাধারণ প্লাস্টিকের ব্যাগগুলির শতকরা ১০০ ভাগই কৃত্রিম পলিথিনের, যা জীবাশ্মের অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরি৷ এই ব্যাগগুলো মোটেই পরিবেশবান্ধব নয় এবং এগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লাগে৷ এ কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশ বিষয়ক কমিশন প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়৷
ছবি: picture alliance/ZB
‘অর্গানিক’ যে সব সময় ভালো, তা নয়
জৈবিক উপায়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়, এমন প্লাস্টিক ব্যাগও পাওয়া যায় আজকাল৷ তবে সেই সব প্লাস্টিকের ব্যাগ সাধারণত শতকরা ৭০ ভাগ অপরিশোধিত তেল এবং ৩০ ভাগ নবায়ণযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি৷ শুনতে ভালো লাগলেও, এ ধরণের প্লাস্টিকের ব্যাগ ‘রিসাইক্লিং’ করার ক্ষেত্রেও কিন্তু সীমাবদ্ধতা আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
রিসাইক্লিং-এর ভাগ বেশি থাকাও যথেষ্ট নয়
একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগে রয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ রিসাইক্লিং পলিথিন৷ এগুলি সাধারণ প্লাস্টিক ব্যাগের তুলনায় কিছুটা যে পরিবেশবান্ধব – তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে বেশিরভাগ প্লাস্টিক ব্যাগই আবর্জনায় ফেলে দেওয়া হয়, তাই উপায় থাকলেও রিসাইক্লিং করা হয় না বা যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি
অন্যদিকে কাগজের ব্যাগ যে সব সময়ই পরিবেশবান্ধব, অর্থাৎ কৃত্রিম ব্যাগের তুলনায় ভালো – তাও কিন্তু নয়৷ কারণ, এ সব ব্যাগ তৈরিতে অনেক বেশি সময় এবং ব্লিচিং করার জন্য শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তীতে আবারো রাসায়নিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়৷ এতে কিছুটা হলেও দূষণ ঘটে৷
ছবি: PA/dpa
কাপড়ের ব্যাগের অন্য দিক
কাপড়ের ব্যাগ যদি সুতির হয়, তাহলে সেগুলি বেশ মজবুত হয় এবং পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু এ ধরণের ব্যাগ তৈরির জন্য একদিকে যেমন বেশি মাত্রায় কাঁচামাল প্রয়োজন হয়, তেমনই প্রয়োজন হয় বেশি পরিমাণে জ্বালানি৷ বলা বাহুল্য, এর একটা প্রভাবও পড়ে পরিবেশের ওপর৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
আছে মজবুত প্লাস্টিকের ব্যাগও
কাপড়ের ব্যাগের তুলনায় কৃত্রিম বা পলিয়েস্টারের ব্যাগ কিন্তু কম মজবুত নয়৷ ‘ওয়ান টাইম ইউজ’ বা ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ – এমন ব্যাগ ছাড়াও বাজারে কয়েকবার ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম প্লাস্টিকের ব্যাগও পাওয়া যায়৷ এই যেমন ছবির ব্যাগটি৷ তবে এগুলো কতটা পরিবেশবান্ধব – সেটা বলা কঠিন৷
ছবি: DUH
বিজয়ী হচ্ছে...
তাই সত্যিকার অর্থে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ হচ্ছে পলিয়েস্টারের তৈরি এই হাল্কা ব্যাগগুলি৷ এগুলির ওজন মাত্র ৩০ গ্রাম এবং ভাঁজ করলে এগুলো একেবারে হাতের মুঠোয় রাখা সম্ভব৷ এই ব্যাগ দেখতে ছোট এবং ওজনে কম হলেও প্রায় ১০ কেজি ওজনের জিনিস বহন করতে পারে৷
ছবি: DUH
8 ছবি1 | 8
মাত্র ১২ ডলার পুঁজি নিয়ে শুরু
ইতিমধ্যে মুপুইয়া-র ‘ইয়েলি পেপার ব্যাগ' সারা উগান্ডায় বিক্রি হচ্ছে৷ বিভিন্ন সুপারমার্কেট, ছোট বিপণী, ওষুধের দোকান, এরাই কেনে মুপুইয়া-র কাগজের ব্যাগ৷ খদ্দেরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ আজ মুপুইয়া-র কোম্পানি সপ্তাহে বিশ হাজার কাগজের ব্যাগ তৈরি করে – শুধু হাতে তৈরি, কোনোরকম যন্ত্র ছাড়াই৷
সহজ ব্যাগগুলো তৈরি করার প্রক্রিয়া হল নয় ধাপের; জটিল ব্যাগগুলো তৈরি হয় ৩২ ধাপে৷ মুপুইয়ার মেশিন কেনার সামর্থ্য নেই৷ ঠোঙা তৈরির কাগজ কেনেন কেনিয়া থেকে৷ তাঁর কারখানার কর্মীরা সব কাজ নিজেরাই শিখে নিয়েছে৷ অনেকটা মালিক মুপুইয়া-র মতোই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ইউটিউব-এর ভিডিও-তে দেখেছি, ভারতে মানুষজন কীভাবে কাগজের ঠোঙা তৈরি করে – এবং সেটাই শিখেছি৷ তারপর আমি একটা নমুনা তৈরি করে এখানকার সব সুপারমার্কেট ও দোকানে দেখিয়েছি৷ তারা আগ্রহ করে আমাকে অর্ডার দিয়েছে৷''
ব্যবসায়ী এবং ছাত্র
মুপুইয়া যখন তাঁর কাগজের ঠোঙা তৈরির ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন না, তখন তিনি কাম্পালা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়েন৷ এখানেই সতীর্থ-সহপাঠীদের মধ্য থেকে কোম্পানির নতুন কর্মী খুঁজে নেন৷ উগান্ডায় তাঁর মতো করিৎকর্মাদের এখন অনেক সুযোগ রয়েছে, বলে তাঁর ধারণা৷ তিনি বলেন, ‘‘নিজের ব্যবসা বা কোম্পানি খোলাটা উগান্ডায় এখনো একটা নতুন ব্যাপার৷ আমরা ধীরে ধীরে তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি বলে আমার ধারণা৷ তবে একাধারে ইউনিভার্সিটির পড়াশুনো আর সেই সঙ্গে একটি ব্যবসা গড়ে তোলা যে সহজ কাজ নয়, তা তো জানাই৷''
অথচ মুপুইয়া সাহসে বুক বেঁধে তা'ই করেছেন এবং ইতিমধ্যে বহু পুরস্কারও লাভ করেছেন৷ তাঁর ভবিষ্যতের স্বপ্ন কম উচ্চাভিলাষী নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাগজের ব্যাগ নির্মাতা হতে চাই৷ আমি আমার কোম্পানিকে বাড়াতে চাই৷ সেভাবে আমি অনেক বেশি ব্যাগ উৎপাদন করতে পারব, সারা বিশ্বে সেগুলো বিক্রি করতে পারব৷ এবং আমি সেটা পারব বলেই আমার ধারণা৷''
উগান্ডায় কাগজের ব্যাগের সুবিশাল বাজার পড়ে রয়েছে – বহু সুপারমার্কেট এবং দোকানে এখনও কাগজের ব্যাগের চল হয়নি৷ ইয়েলি পেপার ব্যাগস-এর এমনই চাহিদা যে, মুপুইয়ার কোম্পানি তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে৷ অ্যান্ড্রু মুপুইয়া ইতিমধ্যেই কথাবার্তা বলছেন: তিনি বিদেশ থেকে কাগজের ব্যাগ তৈরির মেশিন কিনতে চান৷ অবশ্য ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ পেলে৷