আফ্রিকা মহাদেশের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র সাও টোমে ও প্রিন্সিপে-র এক সংগঠন পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে তার পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মনে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক অভিনব উদ্যোগ চলছে৷ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ২৪ বছর বয়স্ক সিলেইন ফার্নানদেসের জন্য দীর্ঘ এই দিনটি ব্যস্ততায় ভরা৷ দাদিমার উঠান প্রায় ভরে গেছে৷ কয়েক মাস পর পর তিনি সব বোতল বিদায় করেন৷ প্রত্যেকটি বোতলই মূল্যবান৷ কারণ তার বদলে তো কিছু পাওয়া যায়৷ সিলেইন বলেন, ‘‘সবাই এই বায়োস্ফিয়ার বোতল পেতে চায়৷ বিশেষ করে শিশুদের দারুণ উৎসাহ রয়েছে৷ তারা সব বোতল সংগ্রহ করে৷ ফলে পথেঘাটে আর প্রায় কোনো বোতল দেখা যায় না৷’’
সিলেইন ফার্নানদেস বোতল গোনার কাজে সাহায্য করছেন৷ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের টিমে তিনি কাজ করেন৷ তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সব বোতলে করে পাম অয়েল বা তালের তেল আসে৷ কয়েক মাস পর পর তিনি বোতল সংগ্রহ করেন৷ এখনো পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি প্লাস্টিক বোতল জমা হয়েছে৷
আবর্জনা দিয়ে তৈরি স্কুল
কাম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা সৃষ্টি হয়, তা দেখে উক ভ্যান্ডে শুধু আবর্জনা দিয়ে একটি স্কুল তৈরি করার পরিকল্পনা করেন৷
ছবি: Coconut School
বোতলের প্লাস্টিক থেকে জাতীয় পতাকা
নম পেনের উপকণ্ঠে কো ডাচ দ্বীপের ‘কোকোনাট স্কুল’-এ প্লাস্টিকের বোতলগুলোকে সুন্দর করে কেটে, কাটা প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে নানা রঙে স্প্রে-পেইন্ট করে, পরে আবার জোড়া দিয়ে কাম্বোডিয়ার জাতীয় পতাকার একটি মুরাল বা দেয়ালচিত্র তৈরি করা হয়েছে৷ স্কুলের নামে কিন্তু কোনো প্লাস্টিক নেই: নাম রাখা হয়েছে ‘নারকেলি স্কুল’৷
ছবি: Coconut School
কাচ বসানো দেয়াল
মানে ঠিক কাচ নয়, খালি বিয়ারের বোতল৷ বোতলের ক্যাপগুলো দিয়ে মেঝেতে ফুলের নকশা করা হয়েছে৷
ছবি: Coconut School
পাখিরা যেভাবে বাসা সাজায়
ছাত্রছাত্রীরা আবর্জনা রিসাইক্লিং ও সেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মালমশলা দিয়ে হাতের কাজ করার প্রশিক্ষণ পায়, কাজেই এ সব প্রকল্প তাদের নিজেদের সৃষ্টি৷ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এভাবে আবর্জনা কমিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে শেখে – এছাড়া তাদের শিল্পবোধ ও সৃজনীশক্তির উন্মেষ হয়, বলেন উক ভ্যান্ডে৷ ছবিতে স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্কুলের প্রতীকটিকে প্লাস্টিকের চামচ আর বোতলের ছিপি দিয়ে সাজাচ্ছে৷
ছবি: Coconut School
ফেলে দেওয়া বলে কিছু নেই
ভ্যান্ডে স্কুল থেকে কোনো আয় করেন না৷ বরং স্কুল চালানোর জন্য তাঁকে বন্ধুবান্ধব, কলেজের ছাত্রছাত্রী ও আরো অনেকের দানের উপর নির্ভর করতে হয়৷ নম পেনের কিছু কিছু কাফে তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কাপ-চামচ ভ্যান্ডেকে দেয়, যা থেকে কোকোনাট স্কুলের ছাদের একাংশ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Coconut School
ঝোলানো বাগান
ফুলগাছ যে শুধু টবে লাগানো চলে, এমন তো নয়; পুরনো ফেলে দেওয়া গাড়ির টায়ারেও লতাপাতা গজাতে পারে – টায়ারটা শুধু রং করে নিলেই হলো৷
ছবি: Coconut School
আবর্জনা থেকে আলপনা
কোকোনাট স্কুলে আবর্জনার পালানোর পথ নেই: পড়ুয়া থেকে মাস্টার, সকলেরই চোখ কোন জিনিসটা দিয়ে কী তৈরি করা যায়, সেই দিকে৷ এই কামরাটি শুধুমাত্র প্লাস্টিক বোতলের টুকরো দিয়ে সাজানো হয়েছে, ভাবতে পারেন?
ছবি: Coconut School
শিক্ষার পরিবেশ ও পরিবেশ শিক্ষা
কাম্বোডিয়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ-বান্ধব করে তোলার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন, বিশ্বাস ভ্যান্ডের৷ ছোটদের নানা ধরনের টেকসই কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট করতে হবে, যাতে তারা তার ফলশ্রুতি দেখতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে যে, পরিবর্তন আনায় তাদেরও অবদান রয়েছে৷
ছবি: Coconut School
7 ছবি1 | 7
প্রতি ৫০টি প্লাস্টিকের বোতলের বদলে স্টেনলেস স্টিলের তৈরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতল পাওয়া যায়৷ অনেকের বাড়িতে বেশ এক বড় সংগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে৷ কেউ পানি ভরে স্কুলে নিয়ে যায়৷ তবে গোনার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি হয় না৷ ঠিক ৫০টি বোতল হতে হবে৷ লাল অথবা সোনালি রঙের মধ্যে বেছে নেওয়া যায়৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক এস্ট্রেলা মাটিলডে বলেন, ‘‘এর মধ্যেই আমরা প্রায় চার টন প্লাস্টিক সংগ্রহ করে সাও টোমে-র মূল দ্বীপে জমা রেখেছি৷ এক লজিস্টিক্স কোম্পানি আমাদের সাহায্য করছে৷ তারা বিনামূল্যে সেই প্লাস্টিক লিসবনে পৌঁছে দেবে৷ সেখানে দু'টি রিসাইক্লিং কোম্পানি সেগুলি গ্রহণ করতে প্রস্তুত৷’’
তাদের খুঁজে বার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷ কেউই আফ্রিকা থেকে আবর্জনা গ্রহণ করতে চাইছিল না৷ এই হাতবদলের প্রক্রিয়ার জন্য বছরে প্রায় ৩০,০০০ ইউরো ব্যয় হয়৷ তাই পরের বছরের জন্য নতুন দাতা খুঁজতে হবে৷ তবে কিছু নতুন পরিকল্পনাও রয়েছে৷ সিলেইন ফার্নানদেস বলেন, ‘‘আমরা এক নতুন যন্ত্রের অর্ডার দিয়েছি৷ তাতে প্লাস্টিক বোতল থেকে প্লাস্টিকের সুতা তৈরি হবে৷ সেই সুতা দিয়ে ঝুড়ি বা অন্যান্য জিনিস তৈরি করতে পারি৷ সেটা ভালোই হবে৷’’
প্রিনসিপে দ্বীপ এক টেকসই পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে৷ তবে আফ্রিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদে ভরা জঙ্গল ও প্রায় ৮,০০০ বাসিন্দার স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হচ্ছে৷ চার বছর আগে ইউনেস্কো গোটা দ্বীপকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ এই স্বীকৃতি সত্যি গর্বের কারণ৷ দ্বীপের মানুষ সেই পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে ছোট আকারে কিছু ফলমূল ও কোকো চাষ করে আসছে৷
ভানেসা ফিশার/এসবি
পানামায় প্লাস্টিকের বোতলের দুর্গ
পরিবেশ দূষণের একটা বড় কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য৷ এটি সমুদ্রের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর৷ এই ক্ষতি কমাতে এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিলেন এক ক্যানাডিয়ান৷ পানামার একটি দ্বীপে তৈরি করলেন পুরোনো প্লাস্টিক বোতলের প্রাসাদ৷
ছবি: Oliver Ristau
প্লাস্টিকের দুর্গ
পানামার বোকাস দেল তোরো রাজ্যের প্রধান দ্বীপ ইসলা কোলোনের গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছপালার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যযুগীয় ধাঁচে তৈরি অদ্ভুত এই প্রাসাদটি৷ প্রায় ৪০,০০০ পুরোনো পেট বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এটি৷ কারণ? প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা৷
ছবি: Oliver Ristau
সমুদ্রের জন্য হুমকি
প্রাসাদটির প্রবেশদ্বার ও ভেতরে নানা চিত্রকর্মে দেখানো হয়েছে কিভাবে বিশ্বের সমুদ্রগুলো প্লাস্টিকের কারণে দূষণের শিকার হচ্ছে৷ গবেষণা দল ‘ফিউচার ওশান’-এর মতে, বছরে ৩০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্যের অল্প পরিমাণই প্রক্রিয়াজাত করে পূনর্ব্যবহারযোগ্য করা হয়৷ অপরিশোধিত বর্জ্যের অনেকটুকুই যায় সমুদ্রের জলে, ২০১০ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ টন থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ টন পর্যন্ত৷
ছবি: Oliver Ristau
রবার্টের স্বপ্ন
নয় বছর আগে ক্যানাডার রবার্ট বেজেয়াউ মূলত অবসরের পরিকল্পনা নিয়েই বোকাস দেল তোরোতে এসেছিলেন৷ কিন্তু সেখানে কতটা বর্জ্য উৎপাদিত হয় তা নিয়ে দ্বীপ কর্তৃপক্ষের এক গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়ে বনে যান প্লাস্টিক দূষণবিরোধী প্রচারক৷ তিনি বলেন, ‘‘যদি পৃথিবীর ৭৩০ কোটি মানুষ প্রতিদিন এক বোতল করে পানীয় পান করেন, তাহলে বছরে ২৬ হাজার ৬শ’ কোটি বোতল বর্জ্য তৈরি হয়৷’’
ছবি: Oliver Ristau
ক্যারিবিয়ান স্বর্গ
বছর বছর মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা থেকে হাজারো পর্যটক ছুটি কাটাতে আসেন এই দ্বীপপুঞ্জে৷ চমৎকার সব বার ও রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি এসব দ্বীপে আছে ম্যানগ্রোভ বন, টলটলে সমুদ্র ও মনোরম সৈকতের মতো প্রকৃতির সমারোহ৷ কিন্তু পর্যটকের স্রোতের কারণে তৈরি হয় প্রচুর বর্জ্য, যার শেষ ঠিকানা হয় সমুদ্র, কারণ, এদের পর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা নেই৷
ছবি: Oliver Ristau
রবার্টের সংগ্রহ
৬২ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট এই দ্বীপেই বছরে জমা হয় প্রায় পনের লাখ খালি বোতল৷ রবার্ট এগুলো সংগ্রহ করেন তাঁর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য৷ শুধু সাধারণ পানীয়ের বোতলই তিনি ব্যবহার করতে পারেন, কারণ, অন্য বোতলগুলোতে দাহ্য উপাদান থাকে৷
ছবি: Oliver Ristau
প্লাস্টিক ও লোহার ব্যবহার
প্রথমে লোহার খাঁচায় প্লাস্টিকের বোতলগুলোকে একটার ওপর আরেকটা রাখা হয়৷ এরপর এগুলোর ওপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে দেয়াল বানানো হয়৷ প্রতিটি দেয়ালে ৩০০টি অর্ধলিটার বা ১২০টি দেড় লিটারের বোতল আঁটে৷ শুধু মধ্যযুগীয় শৈলীতে বানানো ত্রিকোণ জানালাগুলো এইভাবে তৈরি সম্ভব হয় না৷
ছবি: Oliver Ristau
স্থাপত্যের নতুন জ্ঞান
এই পদ্ধতিতে খুবই সাধারণ ভবন তৈরি করা সম্ভব, যার জন্য প্রায় ১৪,০০০ বোতল দরকার৷ রবার্ট একটি সেন্টার খুলতে চান, যেখানে তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিভাবে কম খরচে প্লাস্টিক বোতলকে নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তার প্রশিক্ষণ দেবেন৷ তাঁর মতে, এর একটা বড় উপকার হলো, বোতলের ভেতরকার বাতাস তাপ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে৷
ছবি: Oliver Ristau
তথ্য রিসোর্ট
দুর্গটিতে ঘুরে পর্যটকরা প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারেন৷ আর এখান থেকে যে অর্থ উপার্জিত হবে তা দিয়ে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করতে চান রবার্ট৷ তাঁর আশা, বিশ্বের যে অঞ্চলগুলোতে বর্জ্য তৈরি হবেই, সেখানে এগুলো দিয়ে অর্থবহ কিছু করা৷