শহরের মধ্যে ছোট বাসায় বাগান করা কঠিন নয় কি? অথবা সেখানেই চাষবাসের ব্যবস্থা? অতি সহজ উপায়ে এমনটা করা সম্ভব৷ প্রায় বিনা ব্যয়েই পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা যায়৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাকের মাল ঢাকার পুরানো চাদর থেকে ব্যাগ, সাইকেলের টায়ারের টিউব দিয়ে বেল্ট অথবা পুরানো পর্দা দিয়ে মানিব্যাগ৷ আবর্জনা এড়ানোর সৃজনশীল প্রচেষ্টা বা ‘আপসাইক্লিং'-এর কদর বাড়ছে৷ এর ফলে পরিবেশ সংরক্ষণও হচ্ছে৷
ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুলিয়া সালোমন এক অভিনব কায়দায় ঠিক সেই কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আপসাইক্লিং-এর অর্থ হলো, যে সব বস্তুর মূল কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে, সেগুলিকে নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা৷ তখন একেবারে অন্য রূপে সেটি ব্যবহার করা যায়৷ তাই আপসাইক্লিং কোনো বস্তুকে নতুন মাত্রা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই রূপান্তর দেখতেও ভালো হয়৷''
প্লাস্টিকের পানির বোতলের জীবন
সারা বিশ্বে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ বোতল পানি বিক্রি হয়৷ কিন্তু পানি পান করার পর প্লাস্টিকের ঐ বোতলগুলোর কী হয় তা কি জানেন? ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত৷
ছবি: Fotolia/zhekos
প্লাস্টিকের দামই বেশি
এক বোতল পানি কেনার জন্য আপনি যে দাম দেন তার বেশিরভাগই কিন্তু চলে যায় প্লাস্টিকের জন্য৷ এছাড়া রয়েছে বোতলের গায়ে লেবেল লাগানো, পরিবহণ, সংরক্ষণ ও বোতল নষ্ট করে ফেলার খরচ৷
ছবি: Fotolia/fottoo
তেলের ব্যবহার
অশোধিত তেল দিয়ে তৈরি হয় পলিইথিলিন টেরেফথালেট (পিইটি) প্লাস্টিক৷ এরপর সেটা দিয়েই তৈরি হয় প্লাস্টিকের বোতল৷ এই তেল উৎপাদনের সময় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়৷ এছাড়া প্লাস্টিক তৈরির সময় বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ ছবিতে জার্মানির সবচেয়ে বড় তেলশোধন প্ল্যান্ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বড়ি থেকে বোতল
পরিশোধিত তেল থেকে প্রথমে প্লাস্টিকের এমন ছোট ছোট বড়ি তৈরি করা হয়৷ এরপর সেগুলোকে গলিয়ে বোতল তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/digitalstock
চারে এক
আর্থ পলিসি ইনস্টিটিউটের হিসেবে সারা বিশ্বে উৎপাদিত চারটি পানির বোতলের অন্তত একটি ক্রেতার খোঁজে কমপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে৷ অর্থাৎ, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়৷ এভাবে পানি পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত যানবাহন থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পানি সংকট
প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের হিসেবে এক বোতল পানির জন্য তিনগুণ বেশি পানি খরচ হয়৷ ফলে যে অঞ্চলে পানির ফ্যাক্টরি অবস্থিত সেখানকার ভূগর্ভে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাত্র অর্ধেক
এক হিসেবে জানা গেছে, ইউরোপে গত বছর প্রায় ৬০ মিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল রিসাইকেল করা হয়৷ পরিমাণটা, যত বোতল ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্ধেকের কিছু বেশি৷ বাকি বোতলগুলো বিভিন্ন জায়গায় জমে গিয়ে বিশেষ করে জলাধার ও সাগরে পড়ে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে৷
ছবি: JOSEPH EID/AFP/Getty Images
রিসাইক্লিং
ব্যবহার হওয়ার পর পানির বোতলগুলো রিসাইকেল করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়৷ যেমন এক ধরণের পশম, যেটা শীতবস্ত্র জাতীয় পোশাক তৈরিতে কাজে লাগে৷
ছবি: Fotolia/zhekos
7 ছবি1 | 7
ইয়ুলিয়া সালোমন চতুর্থ সেমেস্টারে পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ ইন্টারনেটে তিনি আপসাইক্লিং-এর এক বিশেষ স্বাস্থ্যকর রূপ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন৷ তার আওতায় পুরানো প্লাস্টিক বোতলকে মিনি-বাগানে পরিণত করা যায়, তার মধ্যে চাষ করা যায়৷ ইয়ুলিয়া বলেন, ‘‘বোতল আসলে আপসাইক্লিং বাগানের জন্য খুবই উপযুক্ত৷ সেগুলি এমনভাবে সাজানো যায়, যাতে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানিও রিসাইকেল করা যায়৷ ফলে বাড়ির মধ্যে আর্দ্রতাও এড়ানো সম্ভব৷ যে কোনো ছোট রান্নাঘরেই এমন ঝুলন্ত বাগান করা যায়৷''
অত্যন্ত ছোট ঘরেও এমন বোতলের বাগান বেড়ে উঠতে পারে৷ শীতকালে রান্নাঘরে, গরমকালে বারান্দায়৷ বোতলে গজিয়ে ওঠা শাকসবজি, ফল ও তৃণগুল্ম পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর ও তাজা খাদ্যের উৎস হতে পারে৷ যে সব দেশে প্লাস্টিক বোতল পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই, সেখানে এমন বাগান বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে৷ ইয়ুলিয়া সালোমন বলেন, ‘‘যে সব দেশে খালি বোতল ফেরত দিয়ে পয়সা পাওয়া যায় না, সেখানে এই ব্যবস্থা খুবই কাজে লাগতে পারে৷ সে কারণেই এই সব বোতল পুনর্ব্যবহার করে তার মধ্যে নিজের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা উচিত৷ এর ফলে কিছুটা খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায়৷''
এই ব্যবস্থার আওতায় প্রায় একই মাপের পাঁচটি বোতল গাছের টব হিসেবে প্রস্তুত করতে হয়৷ সবচেয়ে উপরের বোতলে পানি ঢাললেই চলে৷ সেই পানি উপরের বোতলের ছিদ্র দিয়ে নীচেরগুলিতে নামতে থাকে৷ সবচেয়ে নীচেরটিতে বাড়তি পানি জমা হলে তা আবার উপরে ঢেলে দেওয়া যায়৷
এমন বোতল কীভাবে প্রস্তুত করতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বাগানে ইউলিয়া তাঁর বন্ধুদের হাতেনাতে তা দেখিয়ে দিচ্ছেন৷
সুস্বাদু ফল স্ট্রবেরি খান, সুন্দর থাকুন!
আরো জানতে সাথে আসুন
ছবি: AP
লাল টকটকে রসালো ফল
সামান্য টক, মিষ্টি আর রসালো ফল স্ট্রবেরি খেতে খুবই সুস্বাদু৷ যা শতকরা ৯৬ জন জার্মানই খেতে ভালোবাসে৷ এতে অন্যান্য ভিটামিনসহ লেবু এবং কমলার চেয়েও বেশি পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে৷ প্রায় ১০০ জাতের স্ট্রবেরি রয়েছে৷ জার্মানিতে প্রচুর স্ট্রবেরির চাষ হলেও স্পেন, হল্যান্ড বা ইটালির মতো বিভিন্ন দেশ থেকে স্ট্রবেরি আমদানি করা হয় এখানে৷
ছবি: Michael Urban/ddp
স্ট্রবেরির বাগান
স্ট্রবেরি ফলের মৌসুম মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত৷ আজকাল অসময়েও পাওয়া যায় তবে সেগুলো তেমন সুস্বাদু হয় না৷ এই ফল যে শুধু বাজারে কিনতে পাওয়া তা নয়৷ জুন/জুলাই মাসে যে কেউ স্ট্রবেরি খেতে গিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো যত খুশি স্ট্রবেরি তুলে আনতে পারে খুবই কম পয়সায়৷ আর খেতে বসে যত খুশি খাওয়া যায় বিনে পয়সায়৷ অনেকে সখ করে নিজের বাগানে বা ব্যালকোনিতেও লাগান স্ট্রবেরি৷
ছবি: nick barounis/Fotolia
স্ট্রবেরি ফলনে যাদের অবদান
গ্রিসেও প্রচুর স্ট্রবেরি চাষ হয় এবং সেখানকার বাগানে প্রচুর বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করে৷ সম্প্রতি তাদের পাওনা টাকা না দেওয়ায় প্রতিবাদ করেছিল বাংলাদেশি শ্রমিকরা৷ এর ফলে গত ১৮ই এপ্রিল তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল তাদেরই দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা গ্রিক কর্মী৷ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ২০ জনেরও বেশি বাঙালি শ্রমিক আহত হয়৷ ছবিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের তাঁবুতে ফিরে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
খেত থেকে স্ট্রবেরি তোলার পর ফল বা জুস হয়ে বাজারে আসার আগে এভাবেই প্রসেস করা হয়৷ স্ট্রবেরি পরিষ্কার এবং প্যাকিং-এর জন্যও রয়েছে বিশেষ নিয়মকানুন৷
ছবি: Emir Musli
বেশি করে স্ট্রবেরি খান, সুন্দর থাকুন
স্ট্রবেরি যেমন দেখতে সুন্দর ঠিক তেমনি যে খায় তাকেও এই ফল করে তোলে সুন্দর আর স্লিম৷ ১০০ গ্রাম স্ট্রবেরিতে ক্যালোরি মাত্র ৩৫৷ আর স্ট্রবেরিতে থাকা ফাইবার বা আঁশ মানুষকে মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে৷ শুধু তাই নয়, স্ট্রবেরি খাওয়ার সময়ই মানুষের মনকে পুলকিত করে৷ কাজেই যত খুশি স্টবেরি খান, শরীর মনে সুন্দর থাকুন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
ওজন কমাতে স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের সেলগুলোকে বাত রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে৷ কোনো কোনো পরীক্ষায় দেখা গেছে এই মিষ্টি ফল ক্যান্সারের প্রতিরোধেও সাহায্য করে৷ জার্মান পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হান্স ডিটার শাউপ সুস্থ থেকে শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর জন্য স্ট্রবেরি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/rico287
দারুণ মজার আইসক্রিম
আপনারাই বলুন, এরকম লোভনীয় স্ট্রবেরি আইসক্রীম দেখলে কি ‘না’ করার উপায় আছে? এদেশে সারা বছরই কম বেশি আইসক্রিম বিক্রি হয়, তবে এই সুন্দর দৃশ্যটি অবশ্যই গ্রীষ্মের৷ কেক, জুস, বিস্কুট, চকোলেট, আইসক্রিমে – নানাভাবে জার্মানরা স্ট্রবেরি খেয়ে থাকেন৷ এমনকি রান্নায়ও স্ট্রবেরি ব্যবহার করা হয়৷ স্ট্রবেরির জেলি খুবই প্রিয় অনেকের কাছেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যানকেক আর স্ট্রবেরি খেতে খুবই সুস্বাদু
শুধু যে দোকান বা বেকারিগুলোতেই স্ট্রবেরি কেক বিক্রি হয়, তা নয়৷ স্ট্রবেরির মৌসুমে ঘরে ঘরেই স্ট্রবেরি কেক বানানো হয়৷ ঠিক আমাদের দেশের শীতের পিঠার মতো৷ এসব মজার কেক ছেলে বুড়ো সবারই পছন্দ৷
ছবি: emmi - Fotolia.com
ঠিক যেন গরমকালের ঠান্ডা হাওয়া
প্রচণ্ড গরমে বাইরে থেকে ঘুরে এসেছেন বা সপ্তাহান্তে ঘরের নানা কাজ করছেন কিংবা বাগানের কাজে ব্যস্ত৷ মন বলছে কয়েক মিনিট বিশ্রাম হলে মন্দ হয় না৷ ঠিক সেরকমই কোনো ফাঁকে ‘স্ট্রবেরি ড্রিংক’ প্রাণটা জুড়িয়ে দেবে, মনটাকে করবে আরো উৎফুল্ল আর কাজে এনে দেবে নতুন উদ্দ্যম৷
ছবি: cc/by/nc/sa/clg20171
স্ট্রবেরি পুডিং
খাওয়ার পর অনেকেই একটু মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন৷ স্ট্রবেরি পুডিং সেরকমই একটি খাবার, একটু টেস্ট করে দেখবেন কি? বাচ্চারাও দারুণ পছন্দ করে কিন্তু!
ছবি: photocrew/Fotolia.com
বেরি ফলের রাজা
ব্লু বেরি, রাসবেরি, ক্র্যানবেরির মতো অনেক প্রজাতির বেরি ফল রয়েছে৷ তবে স্ট্রবেরিকেই বেরি ফলের রাজা বলা হয়৷
ছবি: dapd
চকলেটে স্ট্রবেরি
দোকানে নানা স্বাদের স্ট্রবেরি চকোলেট পাওয়া যায়৷ তবে রসালো একটি স্ট্রবেরিকে চকোলেটের মধ্যে আধা ডুবিয়ে খেতে কেমন লাগে, তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই৷ একবার খেয়েই দেখুন না, দারুণ মজা!
ছবি: AP
13 ছবি1 | 13
শুধু সবচেয়ে উপরের বোতলের নীচের অংশ কেটে ফেলতে হয়৷ ছিপির উপর গর্ত করা হয়৷ এবার প্রথম বোতলটি পরেরটির মধ্যে গুঁজে দেওয়া হয়৷ দ্বিতীয় বোতলে কয়েকটি জানালা করে তাতে তুলসি বা স্ট্রবেরির মতো গাছ লাগানো যায়৷
শেষে সব বোতল উলটো করে দড়ি দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে বেঁধে ঝোলানো হয়, যাতে ছিপির দিকটা নীচে থাকে৷ তারপর তাতে মাটি ও চারাগাছ ভরে দেওয়া হয়৷ ইয়ুলিয়া সালোমন বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভালো মিশ্র জৈব সার, যা কাছের অরগ্যানিক খামারেই পাওয়া যায়৷ অথবা বাসায় জৈব সার তৈরির ব্যবস্থা থাকলে তো কথাই নেই৷ পুষ্টিভরা মাটি ব্যবহার করলে ভালো৷ গাছপালা সেটা বেশি পছন্দ করে৷''
তবে শুধু পুরানো প্লাস্টিকের বোতলই এমন বাগানের জন্য উপযুক্ত নয়৷ দুধের টেট্রা প্যাক-ও আপসাইক্লিং-এর মাধ্যমে এমন বাগানের কাজে লাগানো যায়৷
আবর্জনা বা পুরানো জুতোর মতো বাতিল হয়ে যাওয়া জিনিসপত্রও পুনর্ববহার করে নতুন ভাবে কাজে লাগানো যায়৷ পরিবেশের উপকার হয়, কাজটা করতে মজাও লাগে৷ ইয়ুলিয়া বলেন, ‘‘অবশ্যই নিজে চাষ করলে সেই খাদ্যের স্বাদ অনেক ভালো হবে৷ তার একটা আলাদা মূল্য রয়েছে৷ অন্য যে কোনো খাদ্যের তুলনায় মানুষ সেটা অনেক বেশি উপভোগ করে৷''
অপুষ্টির সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা এমন সহজ ও কার্যকর কন্টেইনার বাগান কাজে লাগাতে চান৷ সেই কাজের ফল সবাই পেতে পারে৷