দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে খরার প্রকোপে তৃষিত এক বিষধরকে প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খাওয়ানোর দৃশ্য দেখেছেন ২০ কোটি মানুষ, পোস্ট করার দিন দুয়েকের মধ্যে৷
বিজ্ঞাপন
ইংরেজিতে বলে ‘কিং কোবরা', বাংলায় শঙ্কচূড়, সবচেয়ে বড় ও বিযাক্ত গোখরা সাপ৷ বলতে কি, কিং কোবরা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বিষধর সর্প, ১৯ ফুট অবধি লম্বা হতে পারে৷ আর একটু পড়াশুনো করলে জানা যাবে যে, শঙ্খচূড় আসলে গোখুরাই নয়, সে একটি নিজস্ব প্রজাতি, ল্যাটিনে ‘ওফিওফেগাস হানা', গোখুরাদের অনুকরণে ‘নাজা হানা' নয়, যদিও প্রায়ই তা বলা হয়ে থাকে৷
শঙ্খচূড় সাপকে নিয়ে নানা কিংবদন্তি আছে, কিন্তু আসলে সে মানুষের সংসর্গ এড়িয়ে চলে এবং তার স্বভাবও বিশেষ উগ্র নয় – যদি না তাকে উত্যক্ত করা হয়৷ কাজেই কর্ণাটকের কাইগা শহরে এই ১২ ফুট লম্বা শঙ্খচূড়টি কেন ঢুকল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷
সারা দুনিয়া যখন গল্পের খোঁজে, তখন বিষধর সাপকে জল খাওয়ানো দৃশ্যের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে আসন্ন গ্রীষ্ম ও চলতি খরার করুণ কাহিনিটা জুড়ে দিতে বেশি সময় লাগেনি৷ আহা রে, তৃষিত শঙ্কচূড় স্রেফ পানির খোঁজে গাঁয়ে ঢুকেছে; দয়ালু গ্রামবাসীরা তাকে জল খাওয়াচ্ছেন – তাও আবার প্লাস্টিকের বোতল থেকে৷
কিন্তু শঙ্কচূড়ের লেজ ধরে রয়েছেন একজন, অন্যদিকে সাপকে যিনি জল খাওয়াচ্ছেন, তাঁর হাতে একটি স্নেক-ক্যাচার বা সাপ ধরার আঁকশিও রয়েছে – আর এঁদের সকলের পরণেই উর্দি৷ পরে বোঝা গেল যে এই সহৃদয় ব্যক্তিরা সরকারি কর্মকর্তা, বনবিভাগের ও পুলিশের৷ গ্রামবাসীরা কিং কোবরার দেখা পাওয়া মাত্র সঠিক জায়গায় খবর দিয়েছেন৷
ভিডিওতে যে সব সরকারি কর্মকর্তাদের দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন হলেন সি এন নাইকা, কারওয়ার ফরেস্ট রেঞ্জের ডেপুটি ফরেস্ট অফিসার৷ তিনি পরে ‘দ্য নিউজ মিনিট'-কে বলেন যে, গ্রীষ্মে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে৷ তাছাড়া মার্চ-এপ্রিল হলো ‘মেটিং সিজন', তাই কিছু কোবরা সঙ্গিনীর খোঁজে আবাসিক এলাকাতেও ঢুকে পড়ে৷
শঙ্খচূড় সাপ নিশাচর নয়, দিবাচর বলেই ধরে নেওয়া হয়ে থাকে৷ ভিডিওর শঙ্খচূড়টি দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রথম দেখতে পাওয়া গিয়েছিল৷ দুপুরের গরমে হয়ত তার সত্যিই তেষ্টা পেয়েছিল – অপরদিকে কোনো কোবরার দেখা পেলে স্থানীয় মানুষজন প্রথমে তাকে পানি দিয়ে থাকেন৷
নয়ত কারওয়ার ফরেস্ট রেঞ্জের ভিতর দিয়ে কালি নদী চলে গিয়েছে এবং কাইগা পাওয়ার প্ল্যান্টের কাছের খালবিলেও প্রচুর জল আছে – জানান নাইকা৷
অজগর সাপ দিয়ে গা মালিশ
গা ম্যাজম্যাজ করছে? মাসাজ, অর্থাৎ মালিশ করাতে চান? একটা অজগর সাপ যদি আপনার গায়ের ব্যথা দূর করে দেয়, কেমন হয়? ভয় পেলেন? ইন্দোনেশিয়ার একটি স্পা-এ কিন্তু অজগরের ‘সেবা’ নেন অনেকেই৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
শরীর মালিশে অজগর কেন?
অজগর কীভাবে বড় বড় প্রাণী শিকার করে, জানেন? কাছাকাছি পেলে প্রথমে শিকারকে সারা শরীর দিয়ে জড়িয়ে ধরে অজগর৷ তারপর যত জোরে সম্ভব চেপে ধরে৷ বড় ভয়ানক সেই চাপ৷ ফলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে মারা যায় সেই প্রাণী৷ তারপর ধীরে ধীরে প্রাণীটিকে গিলে ফেলে অজগর৷ তো এমন ভয়ংকর এক সাপকে দিয়ে কেন মানুষের শরীর মালিশ করানো হয় বালি দ্বীপের ওই স্পা-এ? এর উত্তর এখনো অনেকেরই অজানা৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
তবে ভয়ের কিছু নেই
বলা হচ্ছে, অজগর দিয়ে যেভাবে মাসাজ করানো হয়, তাতে নাকি ভয়ের কিছু নেই৷ কারণ প্রথমত, মাসাজ শুরুর আগে অজগরকে পেট পুরে খাওয়ানো হয়৷ পেটে ক্ষিদে না থাকলে অজগর মানুষকে গিলতে যাবে কেন? দ্বিতীয়ত, মাসাজের আগে অজগরের মুখও বন্ধ করে দেয়া হয়, সুতরাং চাইলেও সে কাউকে কামড়াতে বা গিলতে পারে না৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
অজগরের মাসাজ উপকারী?
যত অভয়ই দেয়া হোক না কেন, গায়ের ওপরে যখন প্রায় তিন মিটার লম্বা আর আট কেজির মতো ওজনের একটা সাপ ছেড়ে দেয়া হয়, ভয় তো লাগেই৷ সাপের পিচ্ছিল শরীর পিঠে যত নড়াচড়া করে, ততই ভয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ সেই ভয়ের কারণে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়৷ তাতে নাকি শরীরের অনেক উপকার!
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
মনেরও উপকার
অজগরকে কে না ভয় পায়! মাসাজ শেষ হলে সেই ভয়ের জায়গায় মনে ঠাঁই নেয় এক ধরনের মুক্তির আনন্দ৷ কেউ কেউ জানিয়েছেন, মাসাজ নেয়ার আগে তারা সাপের নাম শুনলেই ভয় পেতেন৷ কিন্তু মাসাজ নেয়ার পরে নাকি সেই ভয় কেটে গেছে৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন
বিশ্বে এমন মানুষের অভাব নেই, যাঁরা বিপদ ভালোওবাসেন৷ অন্যরকম কিছু করে বাড়তি আনন্দ পান তারা৷ এমন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের জন্য নাকি অজগরের মাসাজ আরো বেশি উপকারী৷ অজগর পিঠে চড়লে নাকি তাদের হরমোনের নিউট্রোট্রান্সমিটার ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
আছেন রক্ষাকর্তা
মাসাজের সময় কোনো মানুষকে কখনোই জলজ্যান্ত অজগরের কাছে একা ছেড়ে দেয়া হয় না৷ সবসময়ই একজন সুপারভাইজার কাছে থাকেন৷ তার কাজই হলো, অজগর কখনো থেমে যাচ্ছে কিনা, কোনো বিপদ ঘটাতে চাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
ব্রিটেন আর ফিলিপিন্সেও...
শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, ব্রিটেন আর ফিলিপিন্সেও সাপ দিয়ে মাসাজ করানো হয়৷ যাবেন নাকি?