1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্লাস্টিক দূষণ, মহাসাগরে চরম বিপর্যয়

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ২৮ জুলাই ২০১৭

পণ্যের মোড়ক বা ব্যাগ ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহার হয় প্লাস্টিক৷ কিন্তু এই প্লাস্টিকের শতকরা ২ ভাগের স্থান হচ্ছে মহাসাগরে৷ জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, যা থেকে মানুষেরও বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷

ছবি: Getty Images/M.Clarke

কাগজ বা কাপড়ের তুলনায় অনেক টেকসই প্লাস্টিক৷ এ কারণেই বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে এখনও সবার পছন্দ এই পণ্য৷ কিন্তু এই একই কারণে ‘বন্ধু' প্লাস্টিক এখন পরিণত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘শত্রু'তে৷

এখন প্লাস্টিক ছাড়া একদিনও কল্পনা করা যায় না৷ কিন্তু ইতিহাস বিবেচনায় প্লাস্টিক একেবারেই নতুন একটি পণ্য৷ ১৯৫০ সালেই পুরো পৃথিবীতে প্লাস্টিকের উৎপাদন ছিল মাত্র ২ দশমিক ২ টন৷ ৬৫ বছর পর, ২০১৫ সালে সে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪৮ মিলিয়ন টনে৷ কল্পনা করা যায়!

পৃথিবীতে এখন প্রতি বছর মাথাপিছু ৬০ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার হয়৷ উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং জাপানের মত শিল্পোন্নত দেশগুলোতে এই পরিমাণ মাথাপিছু ১০০ কেজিরও বেশি৷

বাংলাদেশে এ পরিমাণ বিশ্ব তো বটেই, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক কম৷ বেসরকারি সংস্থা ওয়েইস্ট কনসার্নের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু ৩ দশমিক ৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে৷ শ্রীলঙ্কাতে এই পরিমাণ ৬ কেজি৷ কিন্তু ব্যবহার কম হলে যে বাংলাদেশের ক্ষতিও কম হচ্ছে, তা কিন্তু নয়৷

ছবি: Getty Images/AFP/M.Uz Zaman

প্রথমত, অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক খারাপ৷ ফলে প্লাস্টিক, কাঁচ, কাগজ, কাপড় বা পচনশীল দ্রব্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা না করায় অধিকাংশ প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল দ্রব্য মিশছে মাটিতে৷

দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সচেতনতা না থাকায় নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট দ্রব্য ফেলার সংস্কৃতি এখনও বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি৷ ফলে দেশের আনাচেকানাচে বিনাবাধায় ছড়িয়ে পড়ছে প্লাস্টিক৷

তৃতীয়ত, নদী-নালা খাল-বিলের দেশ বাংলাদেশ৷ ফলে পানির অবিরাম প্রবাহ দেশের অধিকাংশ প্লাস্টিক বয়ে নিয়ে ফেলছে সমুদ্রে৷

প্লাস্টিকে ব্যবহার ও ক্ষতি নিয়ে নতুন এক গবেষণা বলছে, ১৯৫০ সাল থেকে অপরিশোধিত তেল দিয়ে তৈরি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক৷ এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ এখনও বাসাবাড়ি, গাড়ি বা কারখানায় ব্যবহার হচ্ছে৷ আরো ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে গবেষণায়৷

ছবি: picture-alliance/Zumapress/Suvra Kanti Das

কিন্তু বাকি ৬০ শতাংশ প্লাস্টিকের হদিস মেলেনি এই গবেষণায়৷ এ হিসেবে মাথাপিছু প্রায় ৬৫০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক বর্জ্য কোথাও না কোথাও পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে৷ এই ‘কোথাও না কোথাও'-টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহাসগর৷ প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন বলছে উৎপাদিত প্লাস্টিকের শতকরা ২ ভাগেরই স্থান হয় মহাসাগরে৷

‘ওয়েইস্ট কনসার্নের' প্রতিবেদন বলছে বাংলাদেশে ৫ লাখ টনেরও বেশি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হয়৷ এর মধ্যে রিসাইকেল হয় মাত্র ৯ দশমিক ২ শতাংশ৷

প্লাস্টিক বছরের পর বছর পরিবেশে টিকে থাকতে পারে৷ মহাসাগরে ধীরে ধীরে টুকরো টুকরো হয়ে প্লাস্টিকের পণ্য প্রথমে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়৷ পানি ও অন্য খাদ্যের সাথে একসময় এই মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন জীবের দেহে প্রবেশ করে৷ একসময় মাছের সাথে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক যা ঘটায় চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়৷

ছবি: DW

এছাড়া তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় বেশিরভাগ কাপড়েই সিনথেটিক ফাইবারের ব্যবহারও বেড়েছে৷ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে তৈরি একটি জ্যাকেট একবার ধুলে ১০ লাখেরও বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের টুকরো মেশে ওয়াশিং মেশিনের পানিতে৷ সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক গবেষণায় দেখা গেছে ওয়াশিং মেশিন থেকে প্রতি বছর ৩০ হাজার টন সিনথেটিক ফাইবার পানিতে মেশে৷

বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ বিভিন্ন পণ্যে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পাটের মতো পচনশীল পণ্যের ব্যবহার উৎসাহিত করছে৷ কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার যে হারে ছড়িয়েছে, তাতে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল, বলছেন গবেষকরা৷

বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১২ বিলিয়ন টনে৷ ধেয়ে আসা এই প্লাস্টিক দুর্যোগের ধাক্কা একসময় প্রাকৃতিক উপায়েই কাটিয়ে উঠবে পৃথিবী, কিন্তু মানবজাতি পারবে তো?

কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এই দুর্যোগ থেকে? অাপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ