সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান মানু্ষকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে, যা জীবনযাপনকে করেছে সহজতর৷ কিন্তু বিজ্ঞানের সেই আশীর্বাদ মানুষের বিবেচনার অভাবে পরিণত হয়েছে অভিশাপে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার আজ অপরিহার্য৷ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে বিকল্প সামগ্রী হিসেবে পলিমারের ব্যবহার হচ্ছে৷ ক্যারি ব্যাগ থেকে ওষুধের বোতল, খাদ্য পরিবেশনের পাত্র থেকে ফুলেব টব — বিভিন্ন ক্ষেত্রে চটের ব্যাগ হোক কিংবা কাঁচের শিশি অথবা চিনেমাটির থালা কিংবা মাটির টব – এ সব কিছুরই বিকল্প হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক৷ অপেক্ষাকৃত সস্তা, বহনযোগ্য হওয়ার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছ পলিমারে তৈরি সামগ্রী৷ এর ব্যবহার নিয়ে আপত্তি নেই, কিন্তু ব্যবহারের পর যেভাবে এগুলিকে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে, আপত্তি তাতেই৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় তারা ব্যবহার করা প্লাস্টিকের সামগ্রী যেখানে-সেখানে ফেলে দিচ্ছে৷ যেহেতু প্লাস্টিকের সামগ্রী মাটিতে মিশে যায় না, এর একাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, তাই ক্রমশ তা বর্জ্য হিসেবে জমা হচ্ছে লোকালয়ের বুকে৷ আর তা থেকেই ছড়াচ্ছে দূষণ৷ পলিমার সামগ্রী পুড়িয়ে ফেললে আরও বিপদ, হাইড্রোকার্বন হয়ে বাতাসে মিশে তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দূষণের মাত্রা৷
আবর্জনা থেকে চোখধাঁধানো শিল্পকলা
যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন রাজ্যের সমুদ্রসৈকতে যে সব ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের টুকরো ভেসে আসে, তা জুড়ে জুড়ে সাগরের জীবজন্তুর মূর্তি গড়েন ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের শিল্পীরা৷
ছবি: Washed Ashore
সাগর, সচেতনতা ও শিল্প
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ মানে যা সাগরের পানিতে ভেসে এসেছে৷ সেই প্লাস্টিক সংগ্রহ করার মানে সমুদ্রসৈকতকে আবর্জনামুক্ত রাখা৷ আবার তা থেকে এ ধরনের ভাস্কর্য সৃষ্টি করার অর্থ শিল্পকলা৷ ভাস্কর্যটি প্রবালদ্বীপের বাসিন্দা একটি প্যারট ফিশের – কাজেই সাগরের আবর্জনা যেন শিল্প হয়ে আবার সাগরেই ফিরে যাচ্ছে৷
ছবি: Washed Ashore
আসলে...
তোতাপাখি মাছের সুবিশাল ভাস্কর্যটি কাছ থেকে দেখলে চোখে পড়বে: প্লাস্টিকের খেলনা, টুথব্রাশ, বোতল, গাড়ির টায়ার, প্লাস্টিকের স্যান্ডাল বা বাস্কেট, সব কিছু৷ এ সবই ভেসে এসেছে অরেগনের উপকূলে৷
ছবি: Washed Ashore
প্রথমে ময়লা পরিষ্কার
প্লাস্টিক আবর্জনা থেকে আর্ট সৃষ্টির আগে সেগুলোকে যোগাড় করে, ধুয়ে-মুছে, রং অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হয়৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীরা গত পাঁচ বছর ধরে ১৭ টন প্লাস্টিক আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন৷
ছবি: Washed Ashore
প্রধান শিল্পী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাঞ্জেলা হ্যাজেলটাইন পৎসি (ছবিতে), প্রধান শিল্পীও তিনি৷ ভাষ্কর্যের ধারণাগুলো প্রথমে তাঁর মাথাতেই আসে – জীবজন্তুর মুখ ইত্যাদি ‘শক্ত’ জায়গাগুলোতে তাঁকে হাত লাগাতে হয়৷
ছবি: Washed Ashore
কলাশিক্ষা
সব বয়সের স্বেচ্ছাসেবী ভাস্কর্যের কোনো না কোনো অংশে প্লাস্টিকের টুকরো বসানোয় সাহায্য করতে পারেন – যা কলাশিক্ষা হিসেবেও গণ্য হতে পারে, আবার অনেকের মনে হয়ত তাদের পরিবেশ সংক্রান্ত আচরণ নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে: ‘আমি নিজে কতটা প্লাস্টিক ব্যবহার করি?’
ছবি: Washed Ashore
চাই সচেতনতা
সাগরে প্লাস্টিক আবর্জনা যে সাগরের প্রাণীদের পক্ষে একটা বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিও এই ভাস্কর্যগুলির উদ্দেশ্য – সমাপ্ত হবার পরে সেগুলিকে গোটা মার্কিন মুলুকে ঘুরিয়ে দেখানো হয়৷ ১৫টি করে ভাস্কর্য নিয়ে এ ধরনের তিনটি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র পরিক্রমা করছে৷
ছবি: Washed Ashore
নজর কাড়া চাই
‘‘নজর কাড়া চাই – প্লাস্টিকের একটি সুবিশাল জীব দেখলে লোকজনের চোখ না ফিরিয়ে উপায় নেই!’’ বলেন হ্যাজেলটাইন পৎসি৷ অধিকাংশ মূর্তি দৈর্ঘ্যে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার মিটার আর উচ্চতায় প্রায় তিন মিটার৷ এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি ছিল একটি সাত মিটার লম্বা পাখাওয়ালা পাখির৷
ছবি: Washed Ashore
অনুকরণ কাম্য
অন্যান্য দেশের মানুষও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের ‘আবর্জনা শিল্প’ সৃষ্টি করুন, এই হলো পৎসির কামনা৷ তাঁর স্বপ্নে এই প্রকল্পটি হবে এক ধরনের ছোঁয়াচে মহামারী, যা আরো বেশি মানুষকে সমুদ্রসৈকত থেকে আবর্জনা সরানোর প্রেরণা দেবে৷ একাধারে শিল্প ও পরিবেশ সচেতনতার মহামারী...
ছবি: Washed Ashore
8 ছবি1 | 8
প্রতি বছর ভারতে ৫৬ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়৷ এর মধ্যে রাজধানী দিল্লি প্রতিদিন ৯,৬০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন করে৷ এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কঠোর কোনো আইন ভারতে নেই৷ একটাই আইন রয়েছে — ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ব্যাগ কেউ উৎপাদন বা ব্যবহার করতে পারবে না যেহেতু তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয় না৷ কিন্তু সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কম মাইক্রনের সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, যা বর্জ্য হিসেবে জমে উঠছে আমাদের পরিবেশে৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি কোথায়? সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে অনেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন৷ অনেক পরিবেশ সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিজেদের উদ্যোগে প্লাস্টিকের অভিনব ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে৷ অনেকে একেবারে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে প্লাস্টিক বর্জ্যের মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন৷ বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার প্রাক্তন গবেষক সীমা মুখোপাধ্যায় তেমনই একজন৷
ফেলে দেওয়া জিনিস ফেলনা নয়৷ এই স্লোগানকে সামনে রেখে লড়াইটা শুরু করেছেন সীমা৷ মূলত ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ ও বোতলই জনপদের পরিবেশকে বেশি দূষিত করছে৷ কলকাতা ও শহরতলির যে কোনো এলাকা সফর করলে দেখতে পাওয়া যাবে, রাস্তাঘাট, নিকাশি নালা, জলাশয়ের পড়ে রয়েছে ক্যারি ব্যাগ ও বোতল৷ কোথাও আবার থার্মোকলের থালা-বাটি৷ মূলত এই জিনিসগুলিকে নিয়ে নানা ধরনের শিল্প সামগ্রী তৈরি করছেন ড. মুখোপাধ্যায়৷ বোতল কেটে তৈরি করছেন ফুলদানি৷ ব্যাগ কেটে তৈরি করছেন ফুল৷ শিল্প সৃষ্টি হিসেবে এই বোতল বা ফুল হয়ত বিরাট উঁচু মানের নয়, কিন্তু এর নেপথ্যে থাকা মহত উদ্দেশ্য এই সৃষ্টিকে উৎকৃষ্ট শিল্পেরও উপরে নিয়ে যেতে পারে৷ প্লাস্টিক দূষণ তাঁকে ভাবিয়েছে এবং হস্তশিল্পের মুন্সিয়ানায় নতুন পথ তৈরি করেছেন৷
Sima Mukherjee - MP3-Stereo
সীমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোল্ড ড্রিংকসের বোতল, বাজারের ক্যারি ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট থেকে ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করা যায়৷ আমি বাড়িতে প্রথমে তৈরি করলাম৷ তারপর সেটাই স্কুলে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখিয়েছি৷ আমার হাতে থাকা কথা-বলা পুতুল তাদের বুঝিয়েছে, কেন এটা করতে হবে৷’’
ভারতের বিপুল জনসংখ্যার বিচারে এ ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা প্রচারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ সীমা মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিগত বা ছোট সংগঠনের স্তরে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা আদৌ পর্যাপ্ত নয়৷ তাই পরিবেশকর্মী ও বিজ্ঞান সংগঠনের সদস্যরা মনে করছেন, এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা দরকার৷ হুগলি জেলার কোন্নগরের সংগঠন যুক্তিমন-এর সদস্য মৌসুমী মুন্সী বলেন, ‘‘গণমাধ্যম এগিয়ে না এলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে প্লাস্টিকের কুফল তুলে ধরা যাবে না৷ আগামী ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি আমাদের বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতি বছর বহু মানুষ এই মেলায় আসেন৷ কিন্তু বছরভর এই প্রচার চালানোটা জরুরি৷ শুধু কয়েকদিনের মেলা বা কর্মশালা করে সচেতনতার প্রসার ঘটানো যাবে না৷''
আবর্জনা দিয়ে তৈরি স্কুল
কাম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা সৃষ্টি হয়, তা দেখে উক ভ্যান্ডে শুধু আবর্জনা দিয়ে একটি স্কুল তৈরি করার পরিকল্পনা করেন৷
ছবি: Coconut School
বোতলের প্লাস্টিক থেকে জাতীয় পতাকা
নম পেনের উপকণ্ঠে কো ডাচ দ্বীপের ‘কোকোনাট স্কুল’-এ প্লাস্টিকের বোতলগুলোকে সুন্দর করে কেটে, কাটা প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে নানা রঙে স্প্রে-পেইন্ট করে, পরে আবার জোড়া দিয়ে কাম্বোডিয়ার জাতীয় পতাকার একটি মুরাল বা দেয়ালচিত্র তৈরি করা হয়েছে৷ স্কুলের নামে কিন্তু কোনো প্লাস্টিক নেই: নাম রাখা হয়েছে ‘নারকেলি স্কুল’৷
ছবি: Coconut School
কাচ বসানো দেয়াল
মানে ঠিক কাচ নয়, খালি বিয়ারের বোতল৷ বোতলের ক্যাপগুলো দিয়ে মেঝেতে ফুলের নকশা করা হয়েছে৷
ছবি: Coconut School
পাখিরা যেভাবে বাসা সাজায়
ছাত্রছাত্রীরা আবর্জনা রিসাইক্লিং ও সেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মালমশলা দিয়ে হাতের কাজ করার প্রশিক্ষণ পায়, কাজেই এ সব প্রকল্প তাদের নিজেদের সৃষ্টি৷ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এভাবে আবর্জনা কমিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে শেখে – এছাড়া তাদের শিল্পবোধ ও সৃজনীশক্তির উন্মেষ হয়, বলেন উক ভ্যান্ডে৷ ছবিতে স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্কুলের প্রতীকটিকে প্লাস্টিকের চামচ আর বোতলের ছিপি দিয়ে সাজাচ্ছে৷
ছবি: Coconut School
ফেলে দেওয়া বলে কিছু নেই
ভ্যান্ডে স্কুল থেকে কোনো আয় করেন না৷ বরং স্কুল চালানোর জন্য তাঁকে বন্ধুবান্ধব, কলেজের ছাত্রছাত্রী ও আরো অনেকের দানের উপর নির্ভর করতে হয়৷ নম পেনের কিছু কিছু কাফে তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কাপ-চামচ ভ্যান্ডেকে দেয়, যা থেকে কোকোনাট স্কুলের ছাদের একাংশ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Coconut School
ঝোলানো বাগান
ফুলগাছ যে শুধু টবে লাগানো চলে, এমন তো নয়; পুরনো ফেলে দেওয়া গাড়ির টায়ারেও লতাপাতা গজাতে পারে – টায়ারটা শুধু রং করে নিলেই হলো৷
ছবি: Coconut School
আবর্জনা থেকে আলপনা
কোকোনাট স্কুলে আবর্জনার পালানোর পথ নেই: পড়ুয়া থেকে মাস্টার, সকলেরই চোখ কোন জিনিসটা দিয়ে কী তৈরি করা যায়, সেই দিকে৷ এই কামরাটি শুধুমাত্র প্লাস্টিক বোতলের টুকরো দিয়ে সাজানো হয়েছে, ভাবতে পারেন?
ছবি: Coconut School
শিক্ষার পরিবেশ ও পরিবেশ শিক্ষা
কাম্বোডিয়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ-বান্ধব করে তোলার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন, বিশ্বাস ভ্যান্ডের৷ ছোটদের নানা ধরনের টেকসই কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট করতে হবে, যাতে তারা তার ফলশ্রুতি দেখতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে যে, পরিবর্তন আনায় তাদেরও অবদান রয়েছে৷
ছবি: Coconut School
7 ছবি1 | 7
সীমার আক্ষেপ, অনেকক্ষেত্রেই তাঁর উদ্যোগ হাতের কাজ শেখার কর্মশালা হয়ে থেকে যায়৷ কেন প্লাস্টিক দিয়ে এ সব তৈরি করছি, সেই চেতনাটা সব ক্ষেত্রে জাগানো সম্ভব হয় না৷ তিনি বলেন, ‘‘চেতনা প্রসারের জন্য সরকারি স্তরে বড় ধরনের উদ্যোগ দরকার৷ না হলে ব্যক্তিগত চেষ্টায় বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷''
এ ব্যাপারে অবশ্য একটা ভালো খবর শুনিয়েছেন সীমা৷ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী হুগলী নদীর তীরবর্তী পুরসভা এলাকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশনের কথা ভাবছে৷ জানুয়ারিতে দু'পক্ষের বৈঠক হবে৷ সীমার মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যাওয়া নাগরিকরা পুরসভার দলকে এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেবেন৷
কিন্তু এ সব উদ্যোগ নিতে আমাদের একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো? পৃথিবীর মাটি, বাতাস, প্রাণী ও উদ্ভিদ প্লাস্টিক দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও তাতে থাকা জলজ প্রাণী-উদ্ভিদ৷ একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যেভাবে দূষণ বাড়ছে তাতে ২০৫০ সালে সমুদ্রে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের সংখ্যা বেশি হবে৷ এর মোকাবিলা কীভাবে হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা নেই৷ এর মধ্যেই খবর মিলেছে, অ্যামেরিকায় আগামী এক দশকে প্লাস্টিকের উৎপাদন বাড়বে ৪০ শতাংশ৷ কোথায় যাবে এই বিপুল বর্জ্য? এ যেন গোটা পৃথিবীর দূষিত আস্তাকুঁড় হয়ে ওঠার অশনিসংকেত!
সত্যিই তো, কোথায় যাবে এ সব বর্জ্য? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷
প্লাস্টিকের ব্যাগ কি শুধুই ব্যাগ?
বাজার করার জন্য একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগ হামেশাই দেখা যায় যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ‘ওয়ান-টাইম’ প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গায় সুতি, চট বা কাগজের ব্যাগও হতে পারে৷ ছবিঘরে কিছু ব্যাগের নমুনা দেখুন!
ছবি: DUH
সব সময় শুধু প্লাস্টিক নয়
সুপারমার্কেটগুলিতে ফল বা সবজি কেনার সময়, এই যেমন ধরুন কলা, আপেল বা গাজর কেনার সময়, হাতের কাছেই রাখা থাকে প্লাস্টিকের ব্যাগ৷ সেই ব্যাগে পছন্দের ফল বা সবজিগুলি ভরে ওজন করে নিয়ে যেতে হয় কাউন্টারে৷ এভাবেই মাথা পিছু বছরে প্রায় ৭১টি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেন জার্মানরা৷
ছবি: Fotolia/pizzicati
দূরে থাকুন
সাধারণ প্লাস্টিকের ব্যাগগুলির শতকরা ১০০ ভাগই কৃত্রিম পলিথিনের, যা জীবাশ্মের অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরি৷ এই ব্যাগগুলো মোটেই পরিবেশবান্ধব নয় এবং এগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লাগে৷ এ কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশ বিষয়ক কমিশন প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়৷
ছবি: picture alliance/ZB
‘অর্গানিক’ যে সব সময় ভালো, তা নয়
জৈবিক উপায়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়, এমন প্লাস্টিক ব্যাগও পাওয়া যায় আজকাল৷ তবে সেই সব প্লাস্টিকের ব্যাগ সাধারণত শতকরা ৭০ ভাগ অপরিশোধিত তেল এবং ৩০ ভাগ নবায়ণযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি৷ শুনতে ভালো লাগলেও, এ ধরণের প্লাস্টিকের ব্যাগ ‘রিসাইক্লিং’ করার ক্ষেত্রেও কিন্তু সীমাবদ্ধতা আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
রিসাইক্লিং-এর ভাগ বেশি থাকাও যথেষ্ট নয়
একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগে রয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ রিসাইক্লিং পলিথিন৷ এগুলি সাধারণ প্লাস্টিক ব্যাগের তুলনায় কিছুটা যে পরিবেশবান্ধব – তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে বেশিরভাগ প্লাস্টিক ব্যাগই আবর্জনায় ফেলে দেওয়া হয়, তাই উপায় থাকলেও রিসাইক্লিং করা হয় না বা যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি
অন্যদিকে কাগজের ব্যাগ যে সব সময়ই পরিবেশবান্ধব, অর্থাৎ কৃত্রিম ব্যাগের তুলনায় ভালো – তাও কিন্তু নয়৷ কারণ, এ সব ব্যাগ তৈরিতে অনেক বেশি সময় এবং ব্লিচিং করার জন্য শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তীতে আবারো রাসায়নিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়৷ এতে কিছুটা হলেও দূষণ ঘটে৷
ছবি: PA/dpa
কাপড়ের ব্যাগের অন্য দিক
কাপড়ের ব্যাগ যদি সুতির হয়, তাহলে সেগুলি বেশ মজবুত হয় এবং পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু এ ধরণের ব্যাগ তৈরির জন্য একদিকে যেমন বেশি মাত্রায় কাঁচামাল প্রয়োজন হয়, তেমনই প্রয়োজন হয় বেশি পরিমাণে জ্বালানি৷ বলা বাহুল্য, এর একটা প্রভাবও পড়ে পরিবেশের ওপর৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
আছে মজবুত প্লাস্টিকের ব্যাগও
কাপড়ের ব্যাগের তুলনায় কৃত্রিম বা পলিয়েস্টারের ব্যাগ কিন্তু কম মজবুত নয়৷ ‘ওয়ান টাইম ইউজ’ বা ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ – এমন ব্যাগ ছাড়াও বাজারে কয়েকবার ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম প্লাস্টিকের ব্যাগও পাওয়া যায়৷ এই যেমন ছবির ব্যাগটি৷ তবে এগুলো কতটা পরিবেশবান্ধব – সেটা বলা কঠিন৷
ছবি: DUH
বিজয়ী হচ্ছে...
তাই সত্যিকার অর্থে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ হচ্ছে পলিয়েস্টারের তৈরি এই হাল্কা ব্যাগগুলি৷ এগুলির ওজন মাত্র ৩০ গ্রাম এবং ভাঁজ করলে এগুলো একেবারে হাতের মুঠোয় রাখা সম্ভব৷ এই ব্যাগ দেখতে ছোট এবং ওজনে কম হলেও প্রায় ১০ কেজি ওজনের জিনিস বহন করতে পারে৷