1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্লাস্টিক বর্জ্যে ফলে দূষণ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান মানু্ষকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে, যা জীবনযাপনকে করেছে সহজতর৷ কিন্তু বিজ্ঞানের সেই আশীর্বাদ মানুষের বিবেচনার অভাবে পরিণত হয়েছে অভিশাপে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ৷

PET Plastikflaschen Recycling
ছবি: picture-alliance/dpa/D.Azubel

আমাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার আজ অপরিহার্য৷ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে বিকল্প সামগ্রী হিসেবে পলিমারের ব্যবহার হচ্ছে৷ ক্যারি ব্যাগ থেকে ওষুধের বোতল, খাদ্য পরিবেশনের পাত্র থেকে ফুলেব টব — বিভিন্ন ক্ষেত্রে চটের ব্যাগ হোক কিংবা কাঁচের শিশি অথবা চিনেমাটির থালা কিংবা মাটির টব – এ সব কিছুরই বিকল্প হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক৷ অপেক্ষাকৃত সস্তা, বহনযোগ্য হওয়ার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছ পলিমারে তৈরি সামগ্রী৷ এর ব্যবহার নিয়ে আপত্তি নেই, কিন্তু ব্যবহারের পর যেভাবে এগুলিকে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে, আপত্তি তাতেই৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় তারা ব্যবহার করা প্লাস্টিকের সামগ্রী যেখানে-সেখানে ফেলে দিচ্ছে৷ যেহেতু প্লাস্টিকের সামগ্রী মাটিতে মিশে যায় না, এর একাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, তাই ক্রমশ তা বর্জ্য হিসেবে জমা হচ্ছে লোকালয়ের বুকে৷ আর তা থেকেই ছড়াচ্ছে দূষণ৷ পলিমার সামগ্রী পুড়িয়ে ফেললে আরও বিপদ, হাইড্রোকার্বন হয়ে বাতাসে মিশে তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দূষণের মাত্রা৷

প্রতি বছর ভারতে ৫৬ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়৷ এর মধ্যে রাজধানী দিল্লি প্রতিদিন ৯,৬০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন করে৷ এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কঠোর কোনো আইন ভারতে নেই৷ একটাই আইন রয়েছে — ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ব্যাগ কেউ উৎপাদন বা ব্যবহার করতে পারবে না যেহেতু তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয় না৷ কিন্তু সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কম মাইক্রনের সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, যা বর্জ্য হিসেবে জমে উঠছে আমাদের পরিবেশে৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি কোথায়? সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে অনেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন৷ অনেক পরিবেশ সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিজেদের উদ্যোগে প্লাস্টিকের অভিনব ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে৷ অনেকে একেবারে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে প্লাস্টিক বর্জ্যের মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন৷ বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার প্রাক্তন গবেষক সীমা মুখোপাধ্যায় তেমনই একজন৷

ফেলে দেওয়া জিনিস ফেলনা নয়৷ এই স্লোগানকে সামনে রেখে লড়াইটা শুরু করেছেন সীমা৷ মূলত ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ ও বোতলই জনপদের পরিবেশকে বেশি দূষিত করছে৷ কলকাতা ও শহরতলির যে কোনো এলাকা সফর করলে দেখতে পাওয়া যাবে, রাস্তাঘাট, নিকাশি নালা, জলাশয়ের পড়ে রয়েছে ক্যারি ব্যাগ ও বোতল৷ কোথাও আবার থার্মোকলের থালা-বাটি৷ মূলত এই জিনিসগুলিকে নিয়ে নানা ধরনের শিল্প সামগ্রী তৈরি করছেন ড. মুখোপাধ্যায়৷ বোতল কেটে তৈরি করছেন ফুলদানি৷ ব্যাগ কেটে তৈরি করছেন ফুল৷ শিল্প সৃষ্টি হিসেবে এই বোতল বা ফুল হয়ত বিরাট উঁচু মানের নয়, কিন্তু এর নেপথ্যে থাকা মহত উদ্দেশ্য এই সৃষ্টিকে উৎকৃষ্ট শিল্পেরও উপরে নিয়ে যেতে পারে৷ প্লাস্টিক দূষণ তাঁকে ভাবিয়েছে এবং হস্তশিল্পের মুন্সিয়ানায় নতুন পথ তৈরি করেছেন৷

Sima Mukherjee - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সীমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোল্ড ড্রিংকসের বোতল, বাজারের ক্যারি ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট থেকে ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করা যায়৷ আমি বাড়িতে প্রথমে তৈরি করলাম৷ তারপর সেটাই স্কুলে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখিয়েছি৷ আমার হাতে থাকা কথা-বলা পুতুল তাদের বুঝিয়েছে, কেন এটা করতে হবে৷’’

ভারতের বিপুল জনসংখ্যার বিচারে এ ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা প্রচারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ সীমা মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিগত বা ছোট সংগঠনের স্তরে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা আদৌ পর্যাপ্ত নয়৷ তাই পরিবেশকর্মী ও বিজ্ঞান সংগঠনের সদস্যরা মনে করছেন, এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা দরকার৷ হুগলি জেলার কোন্নগরের সংগঠন যুক্তিমন-এর সদস্য মৌসুমী মুন্সী বলেন, ‘‘গণমাধ্যম এগিয়ে না এলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে প্লাস্টিকের কুফল তুলে ধরা যাবে না৷ আগামী ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি আমাদের বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতি বছর বহু মানুষ এই মেলায় আসেন৷ কিন্তু বছরভর এই প্রচার চালানোটা জরুরি৷ শুধু কয়েকদিনের মেলা বা কর্মশালা করে সচেতনতার প্রসার ঘটানো যাবে না৷''

সীমার আক্ষেপ, অনেকক্ষেত্রেই তাঁর উদ্যোগ হাতের কাজ শেখার কর্মশালা হয়ে থেকে যায়৷ কেন প্লাস্টিক দিয়ে এ সব তৈরি করছি, সেই চেতনাটা সব ক্ষেত্রে জাগানো সম্ভব হয় না৷ তিনি বলেন, ‘‘চেতনা প্রসারের জন্য সরকারি স্তরে বড় ধরনের উদ্যোগ দরকার৷ না হলে ব্যক্তিগত চেষ্টায় বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷''

এ ব্যাপারে অবশ্য একটা ভালো খবর শুনিয়েছেন সীমা৷ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী হুগলী নদীর তীরবর্তী পুরসভা এলাকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশনের কথা ভাবছে৷ জানুয়ারিতে দু'পক্ষের বৈঠক হবে৷ সীমার মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যাওয়া নাগরিকরা পুরসভার দলকে এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেবেন৷

কিন্তু এ সব উদ্যোগ নিতে আমাদের একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো? পৃথিবীর মাটি, বাতাস, প্রাণী ও উদ্ভিদ প্লাস্টিক দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও তাতে থাকা জলজ প্রাণী-উদ্ভিদ৷ একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যেভাবে দূষণ বাড়ছে তাতে ২০৫০ সালে সমুদ্রে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের সংখ্যা বেশি হবে৷ এর মোকাবিলা কীভাবে হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা নেই৷ এর মধ্যেই খবর মিলেছে, অ্যামেরিকায় আগামী এক দশকে প্লাস্টিকের উৎপাদন বাড়বে ৪০ শতাংশ৷ কোথায় যাবে এই বিপুল বর্জ্য? এ যেন গোটা পৃথিবীর দূষিত আস্তাকুঁড় হয়ে ওঠার অশনিসংকেত!

সত্যিই তো, কোথায় যাবে এ সব বর্জ্য? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ