নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে প্লাস্টিক বা টিনে যেসব খাবার থাকে, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ বিপিএ-র মাত্রা খুব বেশি৷ এর কারণে গর্ভপাত যেমন হতে পারে, তেমনি নারীরা বন্ধ্যাত্বের শিকারও হতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
ক্যালিফোর্নিয়ার বায়োকেমিস্ট এবং অ্যামেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন এএসআরএম-এর প্রেসিডেন্ট ড. লিন্ডা গিউডিস জানান, টিনজাত খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থ বা বিপিএ থাকার কারণে স্বাস্থ্যের যে সব সমস্যা হতে পারে, সেগুলি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট কাজ এখনো হয়নি৷ তবে যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতে বলা যায় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপিএ গর্ভধারণ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকে৷ গত মাসে এএসআরএম প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ এবং গর্ভবতী নারীদের উপর এর প্রভাব নিয়ে কাজ করেন৷
বিসফেনল-এ এর সংক্ষিপ্ত রূপ বিপিএ৷ এটি এমন একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ যা হরমোনকে প্রভাবিত করে৷ পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রত্যেকের প্রস্রাবেই এই বিপিএ রয়েছে৷ গত কয়েক বছরে শিশুদের দুধের বোতল এবং পানীয়ের বোতল থেকে বিপিএ সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ তবে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বলছে যে, অন্যান্য টিনজাত খাদ্যে এখনও এটি রয়ে গেছে৷
ফাস্টফুড থেকে সাবাধান!
জার্মানিতে শতকরা প্রায় ১৫ জন কিশোর-কিশোরীর অতিরিক্ত ওজন৷ এদের মধ্যে বেশিরভাগই অতিরিক্ত ওজনের কারণে অসুস্থ৷ ফাস্টফুড বা এজাতীয় খাবার খাওয়া এবং সে তুলনায় প্রয়োজনীয় হাঁটাচলা না করায় শরীরে মেদ জমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফাস্টফুড খেলে জীবন হয়ে যেতে পারে দুর্বিসহ
পিৎসা, বার্গার, কোকাকোলা, চিপস – সবকিছু নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে যাওয়া, এটা অনেক বাচ্চা এবং কিশোর-কিশোরীদের যেন নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে৷ কিন্তু এর পরিণামের কথা কি ভেবে দেখেছেন মা-বাবারা? নিয়মিত ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে শিশুদের ফুলের মতো সুন্দর জীবন আগামীতে হয়ে যেতে পারে দুর্বিসহ
ছবি: dreamer12 - Fotolia.com
চিপস, চকলেট আর কোক
প্রায়ই দেখা যায় সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বাচ্চারা কিছু না খেয়ে তাড়াহুড়ো করে স্কুলে চলে যায়৷ আর যাবার সময় তুলে নেয় চিপস বা চকলেট জাতীয় কিছু একটা, আর সাথে হয়ত ছোট্ট কোকের বোতল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তৈরি খাবার
স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরেও সেই একই অবস্থা! বন্ধুরা অপেক্ষা করছে খেলার জন্য বা অন্য কোথাও একসাথে যাবে তাই৷ কাজেই এই অল্প সময়ে রেডিমেড খাবার খাওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ ফ্রিজে রয়েছে বার্গার, পিৎসা বা এ ধরণের অনেক কিছু৷ পেট ভরাই মূল লক্ষ্য , পরিণাম নিয়ে কারো যে মাথা ব্যথা নেই৷
ছবি: Fotolia/Barbara Dudzińska
শতকরা ১৫ জন কিশোর-কিশোরী মোটা
জার্মানিতে শতকরা প্রায় ১৫ জন কিশোর-কিশোরীর অতিরিক্ত ওজন৷ এদের মধ্যে বেশিরভাগই অতিরিক্ত ওজনের কারণে অসুস্থ৷ বেশি চিনি এবং বেশি চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া এবং সে তুলনায় প্রয়োজনীয় হাঁটাচলা না করায় শরীরে মেদ জমে যায়৷ সোজা কথায় – শারীরিক পরিশ্রম যে কম করে তার শরীরের ক্যালোরির প্রয়োজনও হয় কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের হাওয়া
আজকের যুগের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগই বাইরে খেলাধুলা করার চেয়ে পছন্দ করে নানা ধরণের কম্পিউটার গেম৷ বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল ফোন৷ আর টেলিভিশন তো রয়েছেই৷ অর্থাৎ তাদের শরীরের তেমন কোনো কাজ নেই৷ অন্যদিকে খেতে পছন্দ ‘ফাস্টফুড’, যা এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে রীতিমতো ফ্যাশান৷ কাজেই শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া খুবই সহজ৷ মনের অজান্তে অল্প বয়সে সেখানেই বাসা বাঁধে নানা কঠিন রোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শারীরিক সমস্যা থেকে মানসিক সমস্যা
অতিরিক্ত ওজনকে ঠিক সময়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় দেখা দেয় শারীরিক নানা সমস্যা, যা পরে মানসিক সমস্যাও হয়ে দাঁড়ায়৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় চলাফেরায় বাঁধা হয়ে যায়৷ ফলে স্কুলেও অন্যান্য বাচ্চাদের কাছ থেকে তারা দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়৷ সমবয়সিরাও মোটাদের নানাভাবে নানা কথা বলে উত্তেজিত করে এবং অন্যদের সাথে মিশতে নিরুৎসাহিত করে৷ ফলে মানসিকভাবে তারা অসুস্থ বোধ করে ও হতাশায় ভোগে৷ তখন খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় আরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন অনেক অসুখেরই পূর্বাভাস
জার্মানির উলম শহরে ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে ৫২০ জন মোটা বাচ্চা বা কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে গবেষণা করা হয়৷ ফলাফলে দেখা গেছে যে ওদের লিভারেরও রয়েছে অতিরিক্ত চর্বি৷ তাই প্রায়ই দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়েবেটিসের পূর্বাভাস, যা পরবর্তীতে ডায়েবেটিস এবং হার্টের জন্য হুমকিস্বরূপ৷ তাছাড়াও অতিরিক্ত ওজন থাকার ফলে অল্প বয়সেই হাড়ের জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সহজ সমাধান
জার্মানির স্বাস্থ্য সচেতনতা দপ্তরের কর্মকর্তা রাইনহার্ড মান মনে করেন, সন্তানকে বকাবকি বা অভিযোগ করে এর সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ বাচ্চার বয়স, উচ্চতা, স্কুলের চাপ ইত্যাদি ভালো করে জেনে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেভাবে খাবার দেওয়া উচিত৷ কারণ অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ন্ত বয়সে যাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না, বড় বয়সে তারা খাওয়ার দিকে অতি মনোযোগী হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ন্ত বয়স
অনেক মা-বাবাকেই বলতে শোনা যায়, ছেলে-মেয়ের বাড়ন্ত বয়সে অনেক বেশি খেতে দিতে হয়৷ কিন্তু ঠিক কতটুকু খাবার কার প্রয়োজন, তা তাদের জানা নেই৷ সময় মতো এ বিষয়ে খেয়াল রাখলে হয়ত অনেক সমস্যারই নিজে থেকে সমাধান হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
খাদ্য বিশেজ্ঞদের পরামর্শ
‘রান্নার সময় মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সাথে নিন৷ সবজি, ফল, সালাদ – এগুলো বাচ্চাদের কাটতে শেখান এবং রান্নার পরে সাথে নিয়ে খান এবং এ বিষয়ে আলোচনা করুন৷ সন্তানদের একটু বেশি সময় দিন, শুনুন ওদের সমস্যা এবং একসাথে মিলে সেসব সমাধানের চেষ্টা করুন৷ বাজার করার সময় লক্ষ্য রাখুন কম চর্বি এবং কম মিষ্টি জাতীয় খাবার কম কেনার৷ এতে ভালো ফল নিশ্চিত৷’
ছবি: picture-alliance/Beyond
সপরিবারে সাইকেল চালান
ছুটির দিনে বাচ্চাদের নিয়ে গাড়ির বদলে সাইকেল বা পায়ে হেঁটে চলুন৷ চলে যান কোনো পার্ক বা চিড়িয়াখানায়৷ যদি ছোটবেলা থেকে এসব শেখানো হয়, পরবর্তিতে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার হাত থেকে বাঁচা সম্ভব৷ আর ফাস্টফুডের বিজ্ঞাপণ থেকেও শিশুদের সচেতন করা প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Wünsch
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ
জন্মের পর থেকে স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে শিশুদের সম্পর্ক গড়ে তুলুন৷ যতটা সম্ভব ফাস্টফুড থেকে সন্তানদের দূরে রাখার চেষ্টা করুন৷ ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ – এই প্রবাদটি কিন্তু চিরদিনের জন্যই প্রযোজ্য!
ছবি: picture-alliance/dpa
12 ছবি1 | 12
অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাত হয় ডিম্বানু এবং ক্রমোজোমের কারণে৷ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ড. রুথ লাথি জানিয়েছেন, ইদুঁরের উপর করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে বিপিএ-র প্রভাবে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷
লাথি এবং আরো কয়েকজন গবেষক ১১৫ জন গর্ভবতী নারীর উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন, যাঁরা অল্প কয়েকদিনের গর্ভবতী৷ এসব নারীদের জীবনে দীর্ঘদিন বন্ধ্যাত্ব ও গর্ভপাতের ঘটনা ছিল৷ পরে এঁদের মধ্যে ৬৮ জনের গর্ভপাত হয়ে যায় এবং ৪৭ জন সুস্থ শিশুর জন্ম দেন৷
কিন্তু গবেষণাটি স্বল্প সংখ্যক মানুষের উপর করায় গবেষকরা এখনই এর সত্যতা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না৷
লাথি জানান, এমনও হতে পারে, যে নারীটির রক্তে বিপিএর মাত্রা বেশি ছিল, তাঁর অন্য কোনো ধরনের সমস্যা থেকে থাকতে পারে, যার কারণে গর্ভপাত হয়েছে৷ এই গবেষণাটির উদ্দেশ্য হলো নারীদের জানানো, যাতে তাঁরা বিপিএ সম্পর্কে সচেতন হন৷
বিপিএ-র মাত্রা কমাতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে৷ প্লাস্টিকের বাসনে খাবার গরম না করা৷ কেননা তাপের কারণে প্লাস্টিক থেকে বিপিএ নিঃসৃত হয়৷ পানির বোতল সূর্যের আলোতে না রাখা, টিনের খাবার কম খাওয়া৷ এমনকি দোকান থেকে যে রশিদ দেয়া হয়, তা গ্রহণ না করা, কেননা রশিদগুলি এমন একটি জিনিস দিয়ে তৈরি, যাতে বিপিএ থাকে৷ লাথি এও জানান যে, বিপিএ থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা আজকের বিশ্বে আর সম্ভব নয়৷