একবার ব্যবহার হয় এমন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞায় ইইউ সাংসদরা একমত হয়েছেন বলে বুধবার জানান অস্ট্রিয়ার মন্ত্রী এলিজাবেথ ক্যোস্টিঙ্গার৷ মে মাসে ইউরোপীয় কমিশন এই প্রস্তাব করেছিল৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমানসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে অস্ট্রিয়া৷ দেশটির টেকসই ও পর্যটন মন্ত্রী ক্যোস্টিঙ্গার এক টুইট বার্তায় এই চুক্তিকে একটি ‘মাইলস্টোন' হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
অবশ্য চুক্তিটি কার্যকর হতে হলে ইইউর সব সদস্যরাষ্ট্র ও সংসদে সেটি পাস হতে হবে৷
আগামী দুই বছরের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে৷
মে মাসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাবে একবার ব্যবহার হয় এবং যেসবের নন-প্লাস্টিক বিকল্প আছে, এমন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ এমন প্লাস্টিক পণ্যের মধ্যে আছে প্লেট, স্ট্র, চামচ, কাপ, বেলুনের স্টিক, কান পরিষ্কার করার ‘কটন বাড', প্লাস্টিকের হালকা ব্যাগ, ফাস্ট-ফুড বিক্রির সময় দেয়া পলিস্টাইরিনের কনটেনার ইত্যাদি৷
ইউরোপীয় কমিশন বলছে, সাগরে যেসব বর্জ্য ফেলা হয় তার ৮০ শতাংশই প্লাস্টিক৷ এছাড়া মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের তিন ভাগের এক ভাগেরও কম বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইকল করা হয় বলে জানায় কমিশন৷ বাকিগুলোর বেশিরভাগই সাগরে গিয়ে পড়ে, যা মাছসহ সাগরের অন্যান্য প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে৷
ইতিমধ্যে এক জরিপে দেখা গেছে, মানুষের খাদ্যচক্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকে পড়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
একক ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বিকল্প
ইউরোপিয়ান কমিশন ‘ডিসপোজেবল’ প্লাস্টিকের বস্তু নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী৷ তা বলে কি প্লাস্টিকের প্লেট, চামচ, স্ট্র ব্যবহার করবেন না? বরং বিকল্প বস্তুগুলির দিকে নজর রাখুন৷
লক্ষ লক্ষ প্লাস্টিকের স্ট্র বর্জ্য হিসেবে পড়ে থাকে৷ সমুদ্র এবং স্থলভাগে এগুলি স্তূপাকারে জমা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাই প্লাস্টিকের বর্জ্য কমাতে স্ট্রয়ের মতো একক ব্যবহার্য প্লাসটিক বন্ধ করতে চায়৷ কিন্তু যাঁরা স্ট্র ছাড়া থাকতে পারবেন না, তাঁ#দের কী হবে? পরিবেশ বান্ধব স্ট্র রয়েছে না তাদের জন্য! ছবিতে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী মার্কো হর্ট ২৫৯ টি স্ট্র মুখে!
ছবি: AP
নয়া উপায় কী?
সমুদ্রের জলজীবেরা প্রায়ই প্লাস্টিকের স্ট্র খেয়ে নেয়৷ তাই যাতে সমুদ্রে স্ট্র জমা না হয়, তাই স্ট্র খেয়ে ফেলাই ভালো৷ ‘ওয়াইস ফুড’ নামে একটি জার্মান স্টার্ট আপ সংস্থা এমনই ভোজ্য স্ট্র বানিয়েছে৷ আপেলের রস বের করার পর তার ছিবড়ে দিয়ে তারা তৈরি করেছে এই অভিনব স্ট্র৷ প্লাস্টিকের দূষণ রোধ করতে ধাতু, কাঁচ বা বাঁশের তৈরি স্ট্র ব্যবহার করা যেতেই পারে৷
ছবি: Wisefood
একে কি চামচবিদ্ধ বলে?
একবার ব্যবহার করার পরেই বহু জিনিস আমরা ফেলে দিই৷ এমন কত চামচ, ছুরি আর কাঁটাচামচ যে ফেলে দিই, তার সংখ্যা বলা যাবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসব বন্ধ করতে চলেছে৷ যাত্রাপথে আমরা ধাতব চামচ ব্যবহার করতে পারি না৷ সে জন্যই দরকার ভোজ্য চামচ, যা ব্যবহারের পর খেয়ে ফেলা যায়৷ একটি ভারতীয় স্টার্ট আপ সংস্থা জোয়ার নির্মিত এমনই এক কাঁটাচামচ তৈরি করেছে, যা ভোজ্য৷ একটি মার্কিন কোম্পানিও আলু দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholz
কিছুই পড়ে থাকবে না
চামচের পরে আসি প্লাস্টিকের প্লেটের কথায়৷ ইতিমধ্যে ইইউ প্লাস্টিকের প্লেট নিষিদ্ধ করার পথে৷ তাই এবার ভোজ্য প্লেটের ভাবনা! পোল্যান্ডের একটি সংস্থা এবার তুষ থেকে প্লেট তৈরি করেছে৷ আর প্লেট যদি না খেতে পারেন, তাহলে চিন্তা নেই৷ প্লেটটি জৈব বস্তু দিয়ে তৈরি এবং বায়োডিগ্রেডেবল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Reszko
কাপ বাদ দিন
ইইউ রেস্তোরাঁ, ক্যাফেগুলিতেও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট মুখর৷ একবার চুমুকের পর কত কাপ যে ফেলে দেওয়া হয়, তা বলা বাহুল্য! তাই সে দিকেও জৈব উপাদানে তৈরি কাপের কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Thompson
এটা প্লাস্টিক নয়
ভুট্টা শ্বেতসার দিয়ে বায়োপ্লাস্টিক তৈরি হয়েছে৷ এটা দেখতে কাপের মতোই এবং হাতে ধরলে অনেকটা পেট্রোলিয়ামজাত কাপের মতো মনে হবে৷ এটা বায়োডিগ্রেডেবল বা মাটিতে মিশে যায় সহজেই৷
ছবি: Avani-Eco
পুনর্ব্যবহার
প্লাস্ট্কি কাপ পুনর্ব্যবহার করে নানরকম বস্তু তৈরি করা এসব ক্ষেত্রে ভালো উপায়৷ কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরোলে নিজের কফিপাত্রটি পাবেন কোথায়? বার্লিন শহরে রাস্তাঘাটে ইদানীং সামান্য টাকায় পুনর্ব্যবহৃত বস্তু দ্বারা তৈরি কফিপাত্র পাওয়া যাচ্ছে৷ পরবর্তী স্থানে সেটা অন্য কাউন্টারে ফিরিয়ে দিলেই হলো! .
ছবি: justswapit
কান পরিষ্কার আর সমুদ্রে আবর্জনা!
কান পরিষ্কার রাখার ‘বাড’ দেখতে ছোট হলেও প্লাস্টিকজাত বস্তু হিসেবে এটাও বেশ দূষণ ছড়ায়৷ জিনিসটিকে সামুদ্রিক প্রাণীরা মাঝে মাঝে খেয়েও ফেলে৷ তাই প্লাস্টিক মুক্ত ‘বাড’ তৈরিতে বাঁশ বা কাগজ ব্যবহার করা যেতেই পারে৷ তবে কান পরিষ্কার করতে তোয়ালেও ব্যবহার যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Wildlife Photographer of the Year /J. Hofman