প্লাস্টিক পণ্য শুধু তখনই রিসাইকেল করা যায় যখন সেটি একই ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়৷ কিন্তু বেশিরভাগ প্যাকেজিংয়ে কয়েক ধরনের প্লাস্টিক থাকে৷ সে কারণে রিসাইকেল করতে চাইলে আগে বিভিন্ন প্লাস্টিক আলাদা করতে হয়৷
বিজ্ঞাপন
কীভাবে তিনি সেটা করেন?
প্রথমে বর্জ্য টুকরো করেন সামান্থা ও তার দল৷ এরপর তাদের তৈরি গোপন এক রাসায়নিক মিশ্রনে সেগুলো মেশান৷ সামান্থা অ্যান্ডারসন বলেন, ‘‘মিশ্রনে যদি পিইটি, আর পিভিসি থাকে, তাহলে বিক্রিয়াটা পিইটি প্লাস্টিককে লক্ষ্য করে হয়৷ বিক্রিয়ায় সময় পিভিসি প্রতিক্রিয়া দেখায় না, পিইটি দেখায়৷ সে কারণে আমরা আসলে পিইটি থেকে বিভিন্ন কঠিন পদার্থ পৃথক করতে পারি এবং তারপর আমরা পিইটি থেকে মনোমার পৃথক করতে পারি৷''
অন্য দুই সহকর্মী বার্দিয়া ভালিজাদেহ ও ক্রিস্টোফার আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে মিলে গোপন রিএজেন্টটি উদ্ভাবন করেছেন সামান্থা৷ তারা তাদের উদ্ভাবনকে এখন ব্যবসায় পরিণত করছেন৷
প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং
04:24
এরপর মিশ্রনটা ছেঁকে নেওয়া হয়, যেটা নতুন প্লাস্টিক তৈরির মূল উপাদান৷ শেষে যা তৈরি হয়, তা হচ্ছে সাদা পাউডার৷ ‘‘এটাকে (সাদা পাউডার) বলে বিশুদ্ধ টেরেফথ্যালিক এসিড৷ বর্তমানে এটা তেল ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাওয়া যায়৷ অপরিশোধিত তেল একটা শোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং সেখান থেকে এই সাদা পাউডার পাওয়া যায়৷ এই পাউডার দিয়ে যে-কোনো ধরনের পিইটি পণ্য, পলিয়েস্টার, যে-কোনো ধরনের প্লাস্টিক, যার মধ্যে টেরেফথ্যালিক এসিড, তৈরি করা যায়৷ আর এখন আমরা তেল থেকে না করে প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এটা বানাতে পারছি৷''
সামান্থাদের প্রোটোটাইপ একটা প্ল্যান্টে আছে৷ সেখানে তাদের একটা ঘর আছে, যেখানে তারা তাদের কেমিক্যাল রিসাইক্লিং সিস্টেম তৈরি, পরীক্ষা ও তার মান উন্নয়ন করতে পারে৷ টেরেফথ্যালিক এসিড, যেটা পিইটি তৈরির মূল উপাদান, সেটা এই ফিল্টারে ধরা হয়৷
কিন্তু কেমিক্যাল রিসাইক্লিং কি টেকসই? সামান্থা বলেন, ‘‘এটা নিরাপদ হতে পারে৷ আসলে আমরা যে রাসায়নিক ব্যবহার করছি তার বেশিরভাগের সংস্পর্শেই হয়ত আপনি নিয়মিত আসছেন৷ এটা হয়ত রুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ হয়ত টুথপেস্টে আছে৷ ফলে এটা নিরাপদ হতে পারে, টেকসই হতে পারে৷ এটা শুধু সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়ার বিষয়, যেটা আমরা বের করেছি৷ এটাই আমাদের প্রযুক্তির বিশেষত্ব, কারণ রসায়নটা খুব সাধারণ৷''
সস্তা এবং হাল্কা বলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে৷ ফলে পরিবেশ-বিপর্যয়ও বাড়ছে৷ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে কেনিয়ায় আলোচনায় বসেছে বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: James Wakibia/Zumapress/picture alliance
আলোচনার তৃতীয় পর্ব
সোমবার থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে যে সম্মেলন শুরু হয়েছে তা আসলে সারা বিশ্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাসের উদ্দেশ্যে একটি চুক্তি সাক্ষর সংক্রান্ত আলোচনার তৃতীয় ধাপ৷ এর মূল লক্ষ্য আগামী বছর জাতিসংঘের প্রস্তাবে সম্মতির ভিত্তিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ আরো জোরদার করা৷ গত বছর তাতে সম্মতি জানিয়েছিল বিশ্বের ১৭৫টি দেশ৷
ছবি: MONICAH MWANGI/REUTERS
পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহার হ্রাস
ছবিতে কেনিয়ার গিতাধুরু নদী থেকে প্লাস্টিক তুলে প্রকারভেদে আলাদা করার দৃশ্য৷ পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ২০১৭ সাল থেকে নিষিদ্ধ৷ তারপরও সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে নানা ধরনের প্লাস্টিক৷ পরিবেশে প্লাস্টিক যাতে বেশি হারে ফিরে না আসে সেই ব্যবস্থা করতে রিসাইক্লিংয়ে জোর দিয়েছে কেনিয়া৷ ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যাপক হারে কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Gerald Anderson/AA/picture alliance
এক বছরে ৪০০.৩ মিলিয়ন টন!
ইউরোপিয়ান প্লাস্টিক প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছর সারা বিশ্বে ৪০০.৩ মিলিয়ন টনের মতো প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়েছে৷ ২০০২ সালে সারা বিশ্বে এর অর্ধেক প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়েছিল৷ ছবিতে কেনিয়ার এক নদী থেকে জাল দিয়ে প্লাস্টিক তোলার দৃশ্য৷
ছবি: Gerald Anderson/AA/picture alliance
জার্মানির সাগরে ‘বহিরাগত’ প্লাস্টিক
নদী আর সাগরকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে গিয়ে জার্মানিও অনেকটা নাজেহাল৷ অন্য দেশ থেকে পানিতে ভেসে প্রচুর প্লাস্টিক চলে আসে সাগরে৷ ২০২১ সালে মোট ৪১ হাজার ৭০০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক এলবে নদী হয়ে চলে এসেছিল সাগরে৷
ছবি: Axel Heimken/dpa/picture alliance
যত ‘বাঁচে’, তত মারে
প্লাস্টিক উুৎপন্ন করা যত সহজ, ধ্বংস করা কিন্তু তত সহজ নয়৷ প্লাস্টিক পচতে অনেক ক্ষেত্রে কয়েক শতকও লেগে যায়৷ তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই উপাদান যতদিন থাকে, ততদিন প্রাণিজীবনের ক্ষতি করে৷
ছবি: James Wakibia/Zumapress/picture alliance
প্লাস্টিকের নৌকা
কেনিয়ায় প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারকে উৎসাহিত করে নতুন প্লাস্টিক তৈরি কমানো হচ্ছে৷ ওপরের ছবিতে পুরোনো প্লাস্টিক দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘ফ্লিপিফ্লপি’ নৌকা তৈরি করছেন একজন৷