যাত্রীবাহী জেট বিমানের কেবিনে বিষাক্ত ধোঁয়া ঢোকে – এমন সন্দেহ অনেকদিনের৷ তবে তা থেকে কি স্বাস্থ্যের হানি ঘটতে পারে? জার্মানির গ্যোটিঙেন শহরের বিজ্ঞানীরা এবার তা পরীক্ষা করে দেখেছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিমান থেকে নামার পরে দূরপাল্লার যাত্রীরা মাঝেমধ্যে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত অস্বস্তি-অসুবিধার কথা বলে থাকেন৷ এটা নতুন কিছু নয়৷ ফ্লাইট ক্রু, যাঁরা সারাক্ষণ কেবিনের বাতাস খাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে যে এ ধরনের ‘ব্যামো’ বা লক্ষণ যে কিছু বেশি হবে, সেটাও স্বাভাবিক৷ কিন্তু এই ব্যারামের পেছনে কোনো বাস্তবিক কারণ আছে কিনা, তা কি কেউ পরীক্ষা করে দেখেছেন?
হ্যাঁ, আস্ট্রিড হয়টেলবেক ও তাঁর সহযোগীরা গত তিন বছর ধরে এই সব মানুষদের রক্ত ও মূত্রের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন৷ তাঁরা যে ১৪০ জন রোগীকে পরীক্ষা করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ফ্লাইট স্টাফ৷ টেস্ট করার জন্য একাধিক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন গ্যোটিঙেনের বিজ্ঞানীরা৷
রোগীদের রক্তের ও মুত্রের নমুনায়, মানে স্যাপেলে একাধিক অরগ্যানোফসফেট খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা, যা কিনা মানবশরীরের এনজাইমগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ বিজ্ঞানীরা আরো পেয়েছেন, যাকে পরিভাষায় বলে ‘ভোলাটাইল অরগ্যানিক কমপাউন্ডস’, সংক্ষেপে ভিওসি৷ এই ভিওসি থেকে শ্বাসনালীর দাহ থেকে শুরু করে স্নায়ু প্রণালীর ক্ষতি হতে পারে৷ বিমানের ইঞ্জিনে যে কেরোসিন, তেল অথবা অ্যান্টি-ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়, তা থেকে এই ভিওসি বেরিয়ে পরে লিক করে কেবিনের বাতাসে মিশে গিয়ে থাকতে পারে, বলেই বিজ্ঞানীদের অনুমান৷
যাত্রী কেবিনের বাতাস টানা হয় বিমানের ইঞ্জিনগুলোর ভিতর দিয়ে৷ প্রায়ই দেখা যায় যে, এই ইঞ্জিনগুলোয় তেল অথবা অ্যান্টিফ্রিজ লেগে রয়েছে, যা থেকে ‘ফিউম ইভেন্ট’-এর সৃষ্টি হয়৷ বিমান পরিবহণের ভাষায়, কেবিনে ধোঁয়া সংক্রান্ত যাবতীয় ঘটনাকে বলা হয় ‘ফিউম ইভেন্ট’৷ গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকেই এ ধরনের ‘ফিউম ইভেন্ট’-এর কথা শোনা যাচ্ছে৷ শুধুমাত্র ২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এক জার্মানিতেই এ ধরনের ৬৬৩টি ‘ফিউম ইভেন্ট’ ঘটেছে বলে জানাচ্ছে দেশের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কর্তৃপক্ষ (বিএফইউ)৷ ২০১০ সালে একটি জার্মানউইংস বিমান কোলোনে ল্যান্ড করার সময় বিমানটির পাইলট ও কো-পাইলট অক্সিজেন মুখোশ পরতে বাধ্য হন, কেননা তারা নাকি কেবিনের ভিতরে পোড়ার গন্ধ পাচ্ছিলেন৷
এ সব সত্ত্বেও কেবিনের বাতাস থেকে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, তার কোনো বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷ বিমানকর্মীরা সম্ভবত সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে কিছুটা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন – এইটুকু বলাই যায়৷ গ্যোটিঙেনের বিজ্ঞানীদের আশা যে, তাঁদের আবিষ্কৃত তথ্য তথাকথিত ‘এয়ারোটক্সিক সিনড্রোম’-কে বুঝতে সাহায্য করবে৷
এসি/ডিজি (ডিডাব্লিউ, ডিপিএ)
ভবিষ্যতের বিমান তৈরিতে প্রকৃতি থেকে শিক্ষা
আগামীর বিমান তৈরিতে প্রকৌশলীরা প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয় থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন৷ এর ফলে ভবিষ্যতের বিমান ওজনে হালকা হবে, যা অল্প জ্বালানি ব্যবহার করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Neder
পাতার উপর মানুষ!
আসলেই এরকম এক ভিক্টোরিয়া জলপদ্মের উপর এক শিশুকে শুইয়ে দেয়া যায়৷ আকারটা একটু বড় হলে হয়ত সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক একজনকেও বসিয়ে দেয়া যেত৷ কিন্তু কীভাবে সম্ভব হয় এটা?
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Nederstigt
সেটাই দেখছেন তিনি
ছবিতে এক গবেষককে জলপদ্মের গঠন নিয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি একটি বিমান তৈরি কোম্পানিতে কাজ করেন৷ বিমানের স্পয়লার (সাধারণত ডানায় থাকে যা বিমানকে স্থির রাখে) তৈরির নতুন উপায় খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে জলপদ্মের এই গঠন৷
ছবি: Airbus
উপায়টি কী?
সেটা বুঝতে বাম পাশের ছবিটি দেখুন৷ এটি জলপদ্মের নীচের অংশ৷ দেখুন মাঝখানের অংশটুকু অন্য অংশের তুলনায় একটু মোটা৷ জলপদ্মের গঠনের এই কৌশল ব্যবহার করেই স্পয়লার তৈরি করেছেন পেটার সান্ডার (ছবিতে যাঁকে দেখছেন)৷ বামহাতে সেই স্পয়লার ধরে আছেন তিনি৷
ছবি: Airbus
পরিচিত মনে হচ্ছে?
এমন ডিজাইন আমরা হরহামেশাই দেখি৷ বিমান, গাড়ি সহ হালকা কাঠামো তৈরিতে এ ধরণের নকশা ব্যবহার করা হয়৷ বিজ্ঞানীরা এই কৌশলের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ডায়াটম নামের এক ধরণের শেওলা থেকে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
এই সেই ডায়াটম
অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলে ডায়াটম দেখতে যেমন মনে হবে এই ছবিটি সেরকম৷
ছবি: Alfred-Wegener-Institut für Polar und Meeresforschung
ভবিষ্যতের বিমান
বায়োনিক উপায় ব্যবহার করে এরকম বিমান তৈরির পরিকল্পনা করছে এয়ারবাস৷ অবশ্য খুব শিগগিরই বাণিজ্যিক উপায়ে এমন বিমান তৈরি সম্ভব হবে না৷ এ জন্য কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে৷
ছবি: AIRBUS S.A.S.
6 ছবি1 | 6
বিমান যাত্রায় যে ১০টি কাজ করবেন না
বিমানে চড়া আজকাল আর খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়৷ কাজের প্রয়োজনে, বেড়াতে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেকেই যাচ্ছেন অন্য দেশে, বিমানে৷ আর এই যাত্রায় যে দশটি জিনিস করা উচিত নয়, তা থাকছে এখানে৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে উঠতে তাড়াহুড়া নয়
একটি বিমানে একসঙ্গে কয়েকশত যাত্রী আরোহণ করেন৷ যাত্রীদের ঠিকভাবে তুলতে তাই বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গ্রুপ নম্বরে যাত্রীদের ভাগ করে ফেলেন৷ এরপর সেই নম্বর অনুযায়ী যাত্রীদের বিমানে উঠতে বলা হয়৷ সমস্যা হয়, যখন নম্বরের তোয়াক্কা না করেই অনেকে বিমানে উঠতে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন৷ এটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার৷ অনেক সময় শুধুমাত্র এ জন্য বিমান ছাড়তে দেরি হয়৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে ওঠার আগে শেষ টান
বিমানের মধ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ৷ অনেকে তাই বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে সিগারেটে দু’টো টান দিয়ে নেন৷ সমস্যা হচ্ছে, বিমানের ভেতরটা আবদ্ধ৷ তাই সেখানে আপনার সিগারেটের গন্ধ অন্য আরোহীকে বিরক্ত করতে পারে৷ তাই সম্ভব হলে বিমান ওঠার আগ মুহূর্তে ধূমপান পরিহার করুন৷ আর বিমানে ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি নয়
বিমানের সিটগুলো হয় হালকা ধরনের৷ মূলত তেল খরচ বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা৷ তাই এসব সিটে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিলে, তা সিটে বসা আরোহীকে আঘাত করতে পারে৷ সুতরাং কোনো অবস্থাতেই সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি দেবেন না৷
ছবি: dapd
হাতল দখলের লড়াই
বিমানের সিটগুলোতে খুব বেশি জায়গা থাকে না৷ একটি সিটের সঙ্গে আরেকটি সিট লাগানো থাকে এবং হাতল থাকে একটা৷ কেউ কেউ তাই কনুই দিয়ে অপর যাত্রীকে গুতা দিয়ে কিংবা হাত শক্ত করে হাতলে রেখে সেটা দখলে রাখার চেষ্টা করে৷ এমনটা করা মোটেই উচিত নয়৷
ছবি: dapd
নগ্ন পায়ে ঘোরা নয়
অনেকেই বিমানে উঠে জুতা, এমনকি মোজাও খুলে ফেলেন৷ এটা অনেকের জন্যই বিরক্তিকর৷ আর খালি পায়ে বিমানের টয়লেট ব্যবহার করলে রোগজীবাণু আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ সুতরাং বিমানে জুতা পরেই থাকুন৷
ছবি: Fotolia/Zeit4men
শব্দ বন্ধ না করেই গেম খেলা
আজকাল স্মার্টফোন, ট্যাবলেটে সহজেই ভিডিও গেম খেলা যায়৷ এতে অবশ্য খারাপ কিছু নেই৷ কিন্তু বিমানে বসে শব্দ বন্ধ না করে গেম খেললে তা অন্য আরোহীদের বিরক্ত করতে পারে৷ তাই শব্দ বন্ধ করে গেম খেলা ভদ্র ব্যাপার৷
ছবি: imago/Westend61
পেছনের লোকের আগে নামার লড়াই
বিমান ল্যান্ড করার পর তার দরজা খোলার আগেই অনেকে নামার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করে৷ পারলে সামনের যাত্রীকে ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা৷ এটা খুবই অশোভন আচরণ৷ বিমান যখন অবতরণ করেছে, তখন সব যাত্রীকেই নামাবে৷ তাই নিশ্চিন্তে বসে অপেক্ষা করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘হ্যালো, রানওয়েতে আছি’
বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে ফোন করতে শুরু করেন৷ এমনকি নেটওয়ার্ক না পাওয়া গেলে চলে নিরন্তন চিৎকার: হ্যালো, এইমাত্র ল্যান্ড করলাম, শুনতে পাচ্ছো? আসলে এভাবে তাড়াহুড়া করা ভালো নয়৷ বিমানবন্দরে অপেক্ষারতরা বিভিন্ন ডিসপ্লে ঘোষণার মাধ্যমে এমনিতেই বিমান অবতরণের খবর জানতে পারেন৷ তাই প্রিয়জনকে সেটা জানাতে তাড়াহুড়া না করলেও সমস্যা নেই৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
ভ্রমণ করছেন, কিন্তু নড়ছেন না
বড় বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ ধরনের ‘মুভিং ওয়াকওয়ে’ থাকে৷ এটা অনবরত সামনের দিকে যেতে থাকে৷ ফলে কেউ ‘মুভিং ওয়াকওয়েতে’ দাঁড়ালে এমনিতেই সামনের দিকে যেতে পারবেন৷ তাই অনেকে এতে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ এটা আসলে ঠিক নয়৷ বরং মুভিং ওয়াকওয়েতে আপনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে অন্য যাত্রীদের সুবিধা হবে৷
ছবি: Reuters
লাগেজ নেয়ার তাড়া
বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই লাগেজ নেয়ার জন্য বিশেষ জায়গা আছে৷ সেখানে বেল্টের উপরে লাগেজগুলো একের পর এক দেয়া হয়৷ সেই বেল্ট অনবরত ঘুরতে থাকে৷ অনেক সময় বিমান থেকে নেমেই মানুষ সেই বেল্ট ঘিরে বড় জটলা তৈরি করে ফেলেন৷ এটা অনর্থক৷ বরং একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলে আপনার লাগেজ দেখা সহজ হবে৷ এরপর সময়মত সেটি বেল্ট থেকে সরিয়ে নিলেই হলো৷