ইন্টারনেট-সর্বস্ব এই যুগে গান, চলচ্চিত্র, সিরিয়াল মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গেছে৷ ‘অন ডিমান্ড' ব্যবস্থায় যখন খুশি সে সব দেখা বা শোনা যায়৷ কিন্তু ভালো গান, ভালো ছবির সন্ধান কে দেবে – যন্ত্র না মানুষ?
বিজ্ঞাপন
যারা স্ট্রিমিং পরিষেবা দেয়, তারা প্রায়ই পারস্পরিক পরামর্শের উপর নির্ভর করে৷ অর্থাৎ সংগীতের ক্ষেত্রে নিজের রুচির সঙ্গে অন্যান্য ইউজারদের রুচির তুলনা করা হয়৷ এর জন্য অ্যালগোরিদম ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু ফলাফল সবসময় মনের মতো হয় না৷ স্টেফান বাউমান তাই যন্ত্রের বদলে মানুষকে দিয়েই এই কাজ করাতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে উচ্চ মানের নতুন সংগীতের এই বিশাল সম্ভারের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অ্যালগোরিদম ও যন্ত্রের মাধ্যমে একটা প্রাথমিক তালিকা তৈরি করতে পারি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার, চলতি প্রবণতা সম্পর্কে উপলব্ধিই কাজে লাগে৷''
যেমন ইয়ুলিয়া নল্টে৷ তিনি প্লেলিস্ট কিউরেটর হিসেবে কাজ করেন এবং সব প্ল্যাটফর্মের জন্য ডিজিটাল মিক্সটেপ তৈরি করেন৷ এভাবে তিনি লাখ লাখ ইউজারের কাছে পৌঁছে যান৷ নিজের কাজের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বেশ সচেতন৷ নল্টে বলেন, ‘‘কোনো নতুন গান চালু হলে আমরা দ্রুত সেটিকে আমাদের প্লেলিস্টে যোগ করতে পারি৷ অথবা নতুন কোনো শিল্পীর সৃষ্টি যন্ত্র এখনো চেনে না৷ তখন আমরা সেই গানও প্লেলিস্টে রাখতে পারি – এমন জায়গায়, যা সবার চোখে পড়ে৷''
সংগীত সুস্থ হতে সাহায্য করে
সংগীত মানুষকে আনন্দ দেয় – সেকথা কম-বেশি সকলেই জানি৷ তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে একসাথে সংগীতচর্চা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগীকে সুস্থ করতেও ভূমিকা রাখে৷ আরো পাবেন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Hochschule für Musik Karlsruhe
সংগীতের আসর
গান শোনার সময় ‘মোটিভেশন হরমোন’ ডোপামিন এবং ‘সুখ হরমোন’ এন্ড্রোফিন’ মস্তিষ্কে একত্রিত হয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো সংগীতদল যখন কোরাসে গান গায়, তখন সেই গান উপভোগ করার সময় এক ধরণের বিশেষ অনুভূতি হয়৷ এই অনুভূতি মানুষকে নিরাপত্তা দেয় এবং মনোযোগও বাড়ায়৷ ফলে ‘ইমিউন সিস্টেম’ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷
ছবি: B. Maas
‘ইমিউনথেরাপি’ হিসেবে গান গাওয়া
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, কোনো সংগীতদলে গান গাওয়ার পর রোগী অনেক ভালো বোধ করেন৷ শুধু তাই নয়, সংগীত শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে উজ্জীবিত করে ‘স্ট্রেস’ কমায় এবং তার পাশাপাশি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ‘ইমিউন সিস্টেম’-কেও বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: DW/A. Slanjankic
গান গেয়ে ভালো থাকা
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষক দল বয়স্ক মানুষদের, যাঁরা গায়কদলে গান করেন এবং যাঁরা গান করেন না – তাঁদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান৷ সমীক্ষা চলাকালীন সখের গায়কদের কম ঔষুধের প্রয়োজন হয় এবং ডাক্তারের কাছেও কম যেতে হয়৷ অথচ যাঁরা গায়কদলের সাথে জড়িত ছিলেন না, তাঁদের অনেক বেশিবার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে৷
ছবি: picture alliance / dpa
পিয়ানো
‘‘স্ট্রোক হবার পর অনেকেরই আঙুলের খানিকটা অংশ অবশ হয়ে যায়৷ কিন্তু তাঁরা যদি পিয়ানো বাজান, তাহলে আস্তে আস্তে একটি একটি করে আঙুলে শক্তি ফরে আসতে পারে৷ অবশ্য এর জন্য আগে থেকেই পিয়ানো বাজানো জানতে বা শিখতে হবে না৷’’ এ কথা বলেন, জার্মানির হ্যানোভার শহরের মেডিকেল কলেজের সংগীত মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. একার্ট আল্টেনম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায়
পিয়ানো বাজানোর সময় প্রতিবারই হাতের আঙুলে তার প্রতিফলন ঘটে৷ বাজানোর সময় আঙুলের নড়াচড়া এবং শব্দধ্বনি রোগীর অনুভূতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এর কারণে রোগীর ‘মোটিভেশন’ বা ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায় এবং স্ট্রোকে ভীত হয়ে যাওয়ার ভাব কেটে যেয়ে৷ শুধু তাই নয়, সংগীত বা গানের মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দও খুঁজে পান রোগীরা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
হাঁপানি রোগ
সংগীত ‘ক্রনিক’ ব্যথা, ভয়, অশান্তি – এ সব কমিয়ে মন ভালো করে দেয়৷ যাঁরা বুড়ো বয়সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাঁরা সমাজ থেকে কিছুটা দূরে সড়ে যান৷ অথচ সংগীতের মাধ্যমে ‘ডিমেনশিয়া’-র রোগীদের কাছে যাওয়া যায়, করা যায় বন্ধুত্ব৷ এছাড়া স্যাক্সোফোন বা বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে শ্বাসনালীর পেশি শক্ত হয় ও ফুসফুসের কাজ বেড়ে যাওয়ায় ‘অ্যাজমা’ রোগীরাও উপকৃত হতে পারেন৷
ছবি: Hochschule für Musik Karlsruhe
6 ছবি1 | 6
ভিডিও স্ট্রিমিং পরিষেবাও ক্রমশঃ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ জার্মানিতে প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন এ ভাবে টেলিভিশন সিরিজ ও ছবি দেখেন৷ এ ক্ষেত্রেও একাধিক ইউজারের পরামর্শ কাজে লাগানো হচ্ছে৷
কিন্তু ভিডিও প্ল্যাটফর্মও শুধু যন্ত্রনির্ভর হতে পারে না৷ বেশ কিছু স্ট্রিমিং পরিষেবা অনেক প্রস্তাবিত সিরিয়ালের নমুনা ইন্টারনেটে প্রকাশ করে৷ ইউজারদের মূল্যায়ন ভালো হলে তবেই সিরিয়ালের শুটিং শুরু হয়৷
ইয়ুলিয়া নল্টে-ও এই কমিউনিটি থেকে নানা প্রতিক্রিয়া পান৷ এটা তাঁর প্রেরণার গুরুত্বপূর্ণ উৎস৷ মানুষই এই কাজ অনেক ভালো পারে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস৷