জার্মানিতে ফক্সভাগেনের এজিএম-এ প্রায় ১০ জন পরিবেশকর্মী ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখান।
বিজ্ঞাপন
ফক্সভাগেন পরিবেশের ক্ষতি করছে। এটাই ছিল ওই পরিবেশকর্মীদের মূল বক্তব্য। তাদের গায়ে স্লোগানে লেখা ছিল 'ডার্টি মানি'। ফক্সভাগেনের বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন নারী পরিবেশকর্মী নিজের জামা খুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তার পিঠে লেখা ছিল ডার্টি মানি শব্দটি। সিইও অলিভার ব্লুমস যখন বক্তৃতা দিতে ওঠেন, তখনই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরিবেশকর্মীরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তরক্ষীরা তাদের বাইরে বার করে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে প্রেক্ষাগৃহের ভিতর। বৈঠক চলাকালীন কেকও ছুঁড়ে মারেন তারা।
জার্মানির ‘অটোবান’ বা মোটরওয়ের নিয়মকানুন
ফক্সভাগেন, আউডি, মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ বা ওপেল গাড়ির দেশ জার্মানিতে মোটরওয়ে যে চোখ-ধাঁধানো হবে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷ তবে সেখানেও গাড়ি চালানোর নিয়মকানুন আছে৷
ছবি: Imago/Horst Galuschka
গতিসীমা নেই
জার্মান অটোবানে সাধারণভাবে কোনো গতিসীমা নেই৷ বলতে কি, গোটা ইউরোপের মধ্যে একমাত্র জার্মান মোটরওয়েতেই যত খুশি স্পিডে গাড়ি চালানো যায় – অবশ্য ট্র্যাফিকের আইনকানুন মেনে ও নিজের বা পরের জন্য কোনো বিপদ সৃষ্টি না করে৷ গাড়ি ও মোটরওয়ের দেশে মোটরচালকের কোনো অভাব নেই: ১৭ বছর বয়স হলেই, লাইসেন্স থাকলে কোনো প্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে গাড়ি চালানো যায়৷ বাধাহীন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় ১৮ বছর বয়স থেকে৷
ছবি: Imago/Horst Galuschka
যানজট
জার্মানির জাতীয় অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের নাম হলো – তার আদ্যক্ষর মিলিয়ে – এডিএসি৷ তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে তার আগের বছরের তুলনায় মোটরওয়েতে ১৫ শতাংশ বেশি যানজট ঘটেছে৷ প্রধানত চারটি কারণে: সাধারণভাবে গাড়ির সংখ্যা বাড়ার ফলে; একটি চ্যানেল অধিকাংশ সময় ট্রাক আর লরিতে ভর্তি থাকার কারণে; অটোবানের বিভিন্ন জায়গায় মেরামতির কাজ চলে বলে এবং চতুর্থত, কাছাকাছি কোনো বড় শহর আছে বলে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
সম্মুখে ঠেলিছে মোরে...
অটোবানের ‘ভিতরদিকের’, অর্থাৎ বাঁদিকের চ্যানেলগুলো হল দ্রুতগামী চ্যানেল; ওভারটেক করতে না হলে, ও ধরনের চ্যানেল আটকে গাড়ি না চালানোই ভালো – নয়ত দেখবেন, কোনো ব্যস্তবাগীশ হয়ত পেছন থেকে আপনার ঘাড়ে এসে পড়ে, হর্ন না বাজালেও, বাতি জ্বালিয়ে-নিভিয়ে তার ব্যস্ততা আর বিরক্তি প্রকাশ করছে৷ মনে রাখবেন, শশব্যস্ত হয়ে তাকে রাস্তা ছেড়ে দেবার কোনো তাড়া নেই: কেননা সে যা করছে, সেটাও রীতি ও নীতিবিরুদ্ধ!
ছবি: imago/Jochen Tack
ছবি তোলানোর দাম অনেক হতে পারে
স্পিড ক্যামেরা! জার্মানিতে মোটরওয়ের ধারে-ধোরে এ ধরনের বসানো বা মোবাইল স্পিড ক্যামেরা থাকাটা আজকাল প্রায় স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পরে ডাকপিয়নের হাতে করে আসবে – ছবি সুদ্ধু – স্পিড লিমিট ছাড়ানোর সাক্ষ্যপ্রমাণ ও শেষমেষ জরিমানার তলব৷ ছবিতে গাড়ির নাম্বারপ্লেটের সঙ্গে নিজের শ্রীমুখও স্পষ্ট দেখতে পাবেন, কাজেই পার পাবার কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Galuschka
গাড়িতে হাতে মুঠোফোন নিয়ে কথা বলা চলবে না
বিশেষ করে অটোবানে চলন্ত অবস্থায়৷ ধরা পড়লে ১০০ ইউরো জরিমানা আর সেই সঙ্গে ফ্লেন্সবুর্গে ‘গাড়ি পুলিশের’ কালো খাতায় একটি ঢেঁড়া বা পয়েন্ট৷ আর যদি কানে মোবাইল ফোন ধরে গাড়ি চালানোর সময় কোনো অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে, তবে তো রক্ষা নেই: জরিমানা তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্সও কিছুদিনের জন্য বাজেয়াপ্ত হতে পারে৷ এর চাইতে স্টিয়ারিং থেকে হাত না উঠিয়ে ফোন করার ব্যবস্থা রাখাই ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
যানজট হলে অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের জন্য রাস্তা রাখবেন
অর্থাৎ পাশাপাশি দু’টি চ্যানেলের গাড়িকে ডানদিকে ও বাঁদিকে সরে গিয়ে সেই দু’সারি গাড়ির মাঝখানে অ্যাম্বুলেন্স বা পুলিশের গাড়ি যাবার জন্য জায়গা রাখতে হবে৷ কারণ? মোটরওয়েতে যানজট হবার একটা বড় কারণ হলো অ্যাক্সিডেন্ট৷ সেক্ষেত্রে আহতদের দেখাশোনা ও দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি নথিবদ্ধ করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের অকুস্থল অবধি পৌঁছাতে পারা চাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
আর যদি নিজের গাড়ির কিছু হয়?
ধরুন মোটরওয়েতে গাড়ি খারাপ হলে, মূল চ্যানেলগুলোর পাশে ‘অবস্থানের ’ চ্যানেলটিতে গাড়ি পার্ক করে, সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ‘সতর্কতা ত্রিভুজ’ বসাতে হবে; নিজে গাড়ি থেকে নামলে ফ্লুওরেসেন্ট স্ট্রাইপ দেওয়া জ্যাকেট পরে নামতে হবে৷ অটোবানে গাড়ি চালাতে হলে এ সব সাজসরঞ্জাম ছাড়া গাড়িতে একটি ‘ফার্স্ট এইড কিট’ রাখাটা বাধ্যতামূলক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর অনেক বিপদ
এক্ষেত্রে জার্মানি হলো ‘জিরো টলারেন্স’ বা কোনো-মাপ-নেই-এর দেশ৷ মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর সীমা হলো ০ দশমিক ৫ শতাংশ বিএসি বা রক্তে অ্যালকহলের পরিমাণ৷ মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর জরিমানাই শুরু হয় ৫০০ ইউরো দিয়ে; এছাড়া গাড়ি পুলিশের খাতায় ঢেঁড়া, এমনকি একমাসের জন্য লাইসেন্স বাতিল, এ সব তো আছেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতে ‘স্নো টায়ার’
জার্মানিতে শীতকাল মানে পথেঘাটে বরফ পড়ে থাকতে পারে, বৃষ্টির পানি চরম শীতে জমাট বেঁধে ‘কালো বরফ’ তৈরি হয়ে থাকতে পারে – যা খালি চোখে হঠাৎ খেয়াল করা যায় না, বিশেষ করে রাতের আঁধারে৷ কাজেই জার্মানিতে শীত এলে গাড়িতে শীতের টায়ারে লাগানো হলো কর্তব্য – নয়ত বীমা কোম্পানিরা গোঁসা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Kästle
9 ছবি1 | 9
পুলিশ তাদের প্রেক্ষাগৃহের বাইরে বার করে দেওয়ার পর হলের ঠিক বাইরে রাস্তার উপর বসে পড়ার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু পুলিশ তাদের সেখানেও বসতে দেয়নি।
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে ফক্সভাগান কারখানা চালাচ্ছে। যদিও গাড়ি সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কোনোরকম মানবাধিকার লঙ্ঘন তারা করেননি। শিনজিয়াং প্রদেশ বরাবরই বিতর্কিত। অভিযোগ, চীন সেখানেই উইগুর মুসলিমদের আটকে রেখেছে। তাদের দিয়ে অন্যায়ভাবে কাজ করানো হচ্ছে।
এর পাশাপাশি পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, ফক্সভাগেনের গাড়ি পরিবেশে মাত্রার অতিরিক্ত কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি করছে। তারা সমস্ত নিয়ম মানছে না। গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাটির বক্তব্য, বিক্ষোভ দেখিয়ে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। পরিবেশকর্মীরা চাইলে জেনারেল মিটিং ডেকে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ফক্সভাগেন।