ফক্স নিউজকে দেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সাক্ষাৎকার ছিল তর্ক-বিতর্কে ভরপুর।
বিজ্ঞাপন
আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার তিন সপ্তাহ আগে রক্ষণশীলদের দিকে ঝুঁকে থাকা টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। সাক্ষাৎকার নিলেন ব্রেট বেয়ার। ব্রেট বারবার অভিবাসনের প্রসঙ্গ তুললেন, বাইডেনের পরিবর্ত প্রার্থী হিসাবে হ্যারিসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলেন।
প্রায় ৩০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকার ছিল উপভোগ্য, হ্যারিস ও ব্রেট সমানে এক অপরকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করে গেছেন।
একটা সময় হ্যারিস যখন একটা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন, তখন ব্রেট কিছু বলতে যান। হ্যারিস তখন বলেন, ''আগে আমাকে অভিবাসন নিয়ে প্রশ্নের জবাব শেষ করতে দিন। আমি কি এই জবাব শেষ করতে পারি?''
আরেকবার হ্যারিস উত্তেজিত তর্ক-বিতর্কের মধ্যে বলেন, ''আমার মনে হয়, এই আলাপচারিতা যদি তথ্যের ভিত্তিতে হয়, তাহলে ভালো হয়।''
মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসলে কতটা ক্ষমতা?
ওভাল কার্যালয়ে যিনি বসেন, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন- সাধারণ মানুষের ধারণা এমনই৷ আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ কারণ, সরকারের অন্যান্য বিভাগেরও বলার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Ken Cedeno/abaca/picture alliance
মার্কিন সংবিধান যা বলছে
একজন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ তিনি রাষ্ট্র এবং সরকারের প্রধান৷ কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগ তার দায়িত্বে থাকে, যার কর্মীসংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি৷ তাদের মধ্যে সেনা সদস্যরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন৷ কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন প্রয়োগ করা তার দায়িত্ব৷
ছবি: bildagentur-online/picture alliance
ভারসাম্য রক্ষা
নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা নামে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে৷ এরা একে অপরের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে৷ প্রেসিডেন্ট চাইলে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং কেন্দ্রীয় বিচারপতিদের নিয়োগ দিতে পারেন৷ তবে সেগুলো নিশ্চিত করতে সিনেটের অনুমোদন লাগবে৷ সিনেটের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও নিয়োগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Evelyn Hockstein/File Photo/REUTERS
কংগ্রেসকে জানাতে হয়
দেশ কেমন চলছে তা পর্যায়ক্রমে কংগ্রেস জানানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রেসিডেন্টের৷ বাৎসরিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তব্যে এটা করেন তিনি৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
চাইলেই ‘না’ বলতে পারেন না
রাষ্ট্রপতি চাইলে একটি বিল অনুমোদন না করে কংগ্রেসে ফেরত পাঠাতে পারেন৷ কিন্তু কংগ্রেসের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য যদি চান, তাহলে বিলটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াও কার্যকর করতে পারেন৷ এখন অবধি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভেটো দেয়া এক হাজার পাঁচশ ত্রিশটি বিলের মধ্যে মাত্র ১১২টি কার্যকর করেছে সিনেট৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP/Getty Images
ক্ষমতার ধূসর দিক
সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টে সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি পুরোপুরি বোঝাতে পারে না৷ ‘পকেট ভেটো’ নামের একটি চর্চা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রচলিত আছে, যেটির প্রয়োগ কোনো বিলের ক্ষেত্রে করা হলে কংগ্রেসের কিছু করার থাকে না৷ সহস্রাধিকবার এই পন্থার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা৷
ছবি: Jacquelyn Martin/AP Photo/picture alliance
নির্দেশনা আইন হিসেবে কাজ করে
সরকারি কর্মীদের কোনো কাজ নির্দিষ্ট পরিধি অবধি করার নির্দেশনা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷ ‘নির্বাহী নির্দেশগুলো’ আইনের মতোই৷ এগুলোর প্রয়োগে অন্য কোনো অনুমতির দরকার হয় না৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেস চাইলে পাল্টা আইনের অনুমোদন দিতে পারে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আগের প্রেসিডেন্টের জারি করা নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন৷
ছবি: Ronen Tivony/ZUMA Press/IMAGO
কংগ্রেসকে পাশ কাটানোর উপায়
প্রেসিডেন্ট চাইলে অন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে৷ কিন্তু সেগুলো সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেতে হবে৷ তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ‘নির্বাহী সমঝোতার’ মাধ্যমে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন৷ কংগ্রেস আপত্তি না তোলা অবধি এ ধরনের সমঝোতা কার্যকর থাকে৷
ছবি: Evan Vucci/AP Photo/picture alliance
মার্কিন সেনা কোথায় যাবে নির্ধারণের ক্ষমতা
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অবশ্য সশস্ত্র সংঘাতে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: HORST FAAS/AP/picture alliance
চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ
যদি একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার বা কোনো অপরাধ করেন, তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ মার্কিন ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমনটা ঘটেছিল৷ তবে তারা কেউই অভিযুক্ত হননি৷ প্রেসিডেন্টের উপর চাপ প্রয়োগে কংগ্রেসের নানাবিধ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
হ্যারিস বারবার ট্রাম্পকে আক্রমণ করতে চেয়েছেন। তিনি এটাও জানাতে চেয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে কেমন করে দেশ চালাবেন। তিনি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বাইডেনের সময়ের নীতির নিছক অনুসরণ করবেন না। আগের সব প্রেসিডেন্টের মতো তিনিও তার জীবনের অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত অনুভবকে কাজে লাগাবেন। নতুন ধারণার রূপায়ণ করবেন।
ডিডাব্লিউর সাংবাদিক কী মনে করছেন
ডিডাব্লিউর ওয়াশিটনের প্রতিনিধি জেনেলে দুমালাওন মনে করছেন, ''হ্যারিসের সাক্ষাৎকারের অনেকটা অংশ অভিবাসন নিয়ে প্রশ্ন-উত্তরের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর কাছে সবচেয়ে দুর্বল বিষয়টি নিয়ে ব্রেট বারবার প্রশ্ন করে তাকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছেন।''
জেনেলে বলেছেন, ''হ্যারিস বারবার বলতে চেয়েছেন, ট্রাম্পের নীতির জন্যই বেআইনি অভিবাসন হচ্ছে। একটা সময়ে সাক্ষাৎকারটা অধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় পরিণত হয়েছে। ব্রেট বেয়ার নিজের কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। হ্যারিস তার বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন।''
তিনি জানিয়েছেন, ''হ্যারিস আসলে তার কথা বলতে চেয়েছেন এবং যারা আগে শোনেননি, তাদের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন। যারা এখনো কাকে ভোট দেবেন ঠিক করতে পারেননি, তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন।''