1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফরএভার অ্যাম্বার

ফ্রাংক হোফমান/এসি২৫ আগস্ট ২০১৬

অ্যাম্বার পাথর শুধু বাল্টিক সাগরের তীরেই নয়, ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমেও পাওয়া যায়৷ তবে চোরাইভাবে জঙ্গলের গাছ কেটে, মাটি খুঁড়ে, মাটিতে জল পাম্প করে যেভাবে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে, তা সত্যিই ভয়াবহ৷

Ukraine Illegale Bernsteinförderung
ছবি: Automajdan

অমূল্য অ্যাম্বারের খোঁজে...

05:23

This browser does not support the video element.

হলুদ রঙের অ্যাম্বার পাথর, যার খোঁজে ইউক্রেনের মাটি খুঁড়ে যেন চাঁদের পিঠ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক আসলে ইউক্রেনের সুবিখ্যাত আভটো-ময়দান আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য৷ অপরদিকে এই স্থানটিতে একটি সরকারি সংস্থা অ্যাম্বার পাথর সংগ্রহ করছে – সংস্থাটির দায়িত্ব ছিল, এলাকাটিকে গাছ পুঁতে আবার সবুজ করে তোলা, যার কিছুই করা হয়নি৷ বরং নতুন নতুন গহ্বর সৃষ্টি হচ্ছে৷

আভটো-ময়দান নাগরিক উদ্যোগের দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক বললেন, ‘‘এটা সম্ভবত বেআইনি অ্যাম্বার-সন্ধানীদের কাজ৷ ওরা হয় সুযোগ বুঝে, নয়ত যে পুলিশরা এলাকাটা পাহারা দেয়, তাদের ঘুস দিয়ে ঢুকেছে৷’’

কিছুটা গিয়েই দিমিত্রো দু’জন লোকের দেখা পেলেন৷ এদের বাস উত্তর-পশ্চিম ইউক্রেনের এই অঞ্চলের ক্লেসিভ গ্রামে৷ খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর দু’জনের একজন দেখাল, তারা মাটি খুঁড়ে কী খুঁজে পেয়েছে৷ এভাবে অ্যাম্বার খোঁড়া দণ্ডনীয় অপরাধ, এমনকি চোরাই অ্যাম্বার নিজের কাছে রাখাটাও ইউক্রেনে নিষিদ্ধ৷ কিন্তু অ্যাম্বার নিয়ে চোরাই ব্যবসা কোটি কোটি ডলারের: কালোবাজারে শুধু এই ক’টি পাথরের দামই এক হাজার মার্কিন ডলার৷ বিশেষ করে চীনারা চোরাই অ্যাম্বার কিনে থাকে, জানালেন দুই চোরাই অ্যাম্বার-সন্ধানী৷



বেআইনি ব্যবসা থেকে কিছু কিছু স্থানীয় বাসিন্দা সুখ-সমৃদ্ধির মুখ দেখেছেন৷ নতুন নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে৷ এটা ওদের অধিকার বলে গ্রামবাসীরা মনে করেন৷ চোরাই অ্যাম্বার বিক্রির টাকায় গ্রামটাকে নতুন করে গড়ে তুলছেন এরা৷ বাচ্চাদের খেলার জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন৷ গ্রামের রাস্তাটিও মেরামত করতে চান ওরা৷

অ্যাম্বার খোঁজার জন্য ফ্র্যাকিং!

অ্যাক্টিভিস্ট দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক ঠিক তারই সমালোচনা করেন৷ কেননা ইউক্রেনের অ্যাম্বার খনি এলাকায় হাজার হাজার হেক্টার জমি এভাবে নষ্ট হয়েছে৷ ‘‘বেশ কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লাখ মানুষ বলে শোনা যায়৷ এরা সবাই যেভাবে হোক, যে করে হোক জঙ্গলে ঢুকে অ্যাম্বার খোঁজে’’, জানালেন লেওন্তিয়ুক৷

গাছ কেটে ফেলার পর চোরাই অ্যাম্বার-সন্ধানকারীরা মাটির ২০ মিটার তলা অবধি হোসপাইপ ঢুকিয়ে জল পাম্প করেন৷ এভাবে অ্যাম্বার পাথর ওপরে উঠে আসে৷ এ যেন অ্যাম্বার খোঁজার জন্য ফ্র্যাকিং! দিমিত্রো ও তাঁর সঙ্গিসাথীরা নিজেরা লুকিয়ে থেকে মোবাইল ফোন দিয়ে এই বেআইনি খননকার্যের ছবি তুলেছেন৷

অ্যাম্বার-সন্ধানীরা ডিপ নেট বা স্কুপ নেট দিয়ে পাথরগুলোকে তুলে নেন৷ ছ’জন লোক মিলে একটা জলের পাম্প বসানোর জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ৬০০ মার্কিন ডলার পরিমাণ ঘুস দিতে হয় বলে শোনা গেল৷ তাহলে আর সরকারি কর্মকর্তারা এদিকে নজর দেন না৷



পড়ে থাকে এই ধরনের গর্তে ভরা একটি দৃশ্য, যেন চন্দ্রপৃষ্ঠ৷ যে ডোবাটা খোঁড়া হয়েছিল, তার চারপাশে এখনও ঘাস পর্যন্ত গজায়নি৷ লেওন্তিয়ুক বললেন, ‘‘এটা সত্যিই বীভৎস৷ অ্যাম্বার-সন্ধানীরা এর পরে আর কিছুই করেনি ও করবে না – যদিও তাদের অন্তত নতুন করে গাছ লাগানোর কথা৷’’

রাজধানী কিয়েভ এখান থেকে অনেক দূর৷ কাজেই ইউক্রেন সরকার দেশের উত্তর-পশ্চিমে প্রকৃতির কী সর্বনাশ ঘটছে, তা নিয়ে মাথা ঘামান না৷ কালেভদ্রে সরকারি কর্মকর্তারা উদয় হন৷ যেমন দিমিত্রো খবর পেয়েছেন, অ্যাম্বার কাটার, শান দেওয়ার আর পালিশ করার একটি কারখানায় হানা দেওয়া হবে৷

কারখানার মালিক ওলে ক্রাভচুক স্বীকার করলেন যে, তিনি অন্যভাবে আইন এড়ান: ইউক্রেনে বৈধভাবে অ্যাম্বার কেনা সম্ভব নয় বলে তিনি ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অ্যাম্বার কেনেন৷ জানালেন, ‘‘আমি পোল্যান্ডে এই অ্যাম্বার কিনেছি, যাতে কাজ শুরু করা যায়৷’’ অথচ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেনের অ্যাম্বার – আগে বেআইনিভাবে পোল্যান্ডে পাচার করে পরে আবার কেনা হয়েছে৷ ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ সেকথা খুব ভালো করেই জানেন বলে দিমিত্রোর ধারণা৷

খুদকুঁড়ো

অ্যাম্বার যে খুব মূল্যবান বস্তু, এমন নয়৷ তা সত্ত্বেও ইউরোপ বা চীনের বাজারে অ্যাম্বার বেচাকেনা করে লাখপতি, কোটিপতি হওয়া যায়৷ কাজেই এই হতদরিদ্র এলাকার মানুষজন যে সেই ব্যবসার খুদকুঁড়ো কুড়িয়েই খুশি, দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অ্যাম্বার খোঁড়াটা বৈধ করে দেওয়া যেতে পারে ও এমনভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে যে, সকলেই তা থেকে কিছু পাবে৷ দশ-পনেরোজন স্থানীয় বাসিন্দার একটি সমবায়ের জন্য তিন-চার বছর ধরে যথেষ্ট কাজ থাকবে৷ সব অ্যাম্বার বার করে নেওয়ার পর তাদের আবার গর্তগুলো বুজিয়ে, গাছ লাগিয়ে জমিটাকে ঠিক করে দিতে হবে৷’’



সেটাই হল দিমিত্রোর কামনা: ইউক্রেনের বনাঞ্চলের এই ‘সোনা’ দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে না গিয়ে স্থানীয় মানুষজনের উপকারে আসুক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ