অ্যাম্বার পাথর শুধু বাল্টিক সাগরের তীরেই নয়, ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমেও পাওয়া যায়৷ তবে চোরাইভাবে জঙ্গলের গাছ কেটে, মাটি খুঁড়ে, মাটিতে জল পাম্প করে যেভাবে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে, তা সত্যিই ভয়াবহ৷
বিজ্ঞাপন
অমূল্য অ্যাম্বারের খোঁজে...
05:23
হলুদ রঙের অ্যাম্বার পাথর, যার খোঁজে ইউক্রেনের মাটি খুঁড়ে যেন চাঁদের পিঠ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক আসলে ইউক্রেনের সুবিখ্যাত আভটো-ময়দান আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য৷ অপরদিকে এই স্থানটিতে একটি সরকারি সংস্থা অ্যাম্বার পাথর সংগ্রহ করছে – সংস্থাটির দায়িত্ব ছিল, এলাকাটিকে গাছ পুঁতে আবার সবুজ করে তোলা, যার কিছুই করা হয়নি৷ বরং নতুন নতুন গহ্বর সৃষ্টি হচ্ছে৷
আভটো-ময়দান নাগরিক উদ্যোগের দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক বললেন, ‘‘এটা সম্ভবত বেআইনি অ্যাম্বার-সন্ধানীদের কাজ৷ ওরা হয় সুযোগ বুঝে, নয়ত যে পুলিশরা এলাকাটা পাহারা দেয়, তাদের ঘুস দিয়ে ঢুকেছে৷’’
কিছুটা গিয়েই দিমিত্রো দু’জন লোকের দেখা পেলেন৷ এদের বাস উত্তর-পশ্চিম ইউক্রেনের এই অঞ্চলের ক্লেসিভ গ্রামে৷ খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর দু’জনের একজন দেখাল, তারা মাটি খুঁড়ে কী খুঁজে পেয়েছে৷ এভাবে অ্যাম্বার খোঁড়া দণ্ডনীয় অপরাধ, এমনকি চোরাই অ্যাম্বার নিজের কাছে রাখাটাও ইউক্রেনে নিষিদ্ধ৷ কিন্তু অ্যাম্বার নিয়ে চোরাই ব্যবসা কোটি কোটি ডলারের: কালোবাজারে শুধু এই ক’টি পাথরের দামই এক হাজার মার্কিন ডলার৷ বিশেষ করে চীনারা চোরাই অ্যাম্বার কিনে থাকে, জানালেন দুই চোরাই অ্যাম্বার-সন্ধানী৷
বেআইনি ব্যবসা থেকে কিছু কিছু স্থানীয় বাসিন্দা সুখ-সমৃদ্ধির মুখ দেখেছেন৷ নতুন নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে৷ এটা ওদের অধিকার বলে গ্রামবাসীরা মনে করেন৷ চোরাই অ্যাম্বার বিক্রির টাকায় গ্রামটাকে নতুন করে গড়ে তুলছেন এরা৷ বাচ্চাদের খেলার জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন৷ গ্রামের রাস্তাটিও মেরামত করতে চান ওরা৷
অ্যাম্বার খোঁজার জন্য ফ্র্যাকিং!
অ্যাক্টিভিস্ট দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক ঠিক তারই সমালোচনা করেন৷ কেননা ইউক্রেনের অ্যাম্বার খনি এলাকায় হাজার হাজার হেক্টার জমি এভাবে নষ্ট হয়েছে৷ ‘‘বেশ কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লাখ মানুষ বলে শোনা যায়৷ এরা সবাই যেভাবে হোক, যে করে হোক জঙ্গলে ঢুকে অ্যাম্বার খোঁজে’’, জানালেন লেওন্তিয়ুক৷
গাছ কেটে ফেলার পর চোরাই অ্যাম্বার-সন্ধানকারীরা মাটির ২০ মিটার তলা অবধি হোসপাইপ ঢুকিয়ে জল পাম্প করেন৷ এভাবে অ্যাম্বার পাথর ওপরে উঠে আসে৷ এ যেন অ্যাম্বার খোঁজার জন্য ফ্র্যাকিং! দিমিত্রো ও তাঁর সঙ্গিসাথীরা নিজেরা লুকিয়ে থেকে মোবাইল ফোন দিয়ে এই বেআইনি খননকার্যের ছবি তুলেছেন৷
অ্যাম্বার-সন্ধানীরা ডিপ নেট বা স্কুপ নেট দিয়ে পাথরগুলোকে তুলে নেন৷ ছ’জন লোক মিলে একটা জলের পাম্প বসানোর জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ৬০০ মার্কিন ডলার পরিমাণ ঘুস দিতে হয় বলে শোনা গেল৷ তাহলে আর সরকারি কর্মকর্তারা এদিকে নজর দেন না৷
সব ভুলে সোনার খোঁজে
ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ লম্বক৷ সেখানকার মানুষের জীবনে বিশাল পরিবর্তন এনেছে সোনার খনি৷ যদিও সেটা অবৈধ৷ এছাড়া এই কাজে আশেপাশের পরিবেশও বিনষ্ট হচ্ছে৷ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্য৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
আর্থিক উন্নতি
সোনার খনির কারণে ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপের মানুষের জীবনে বিশাল পরিবর্তন এসেছে৷ একসময় তাঁরা মাছ ধরে আর কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন৷ এখন তাঁরা সোনা বিক্রি করেন৷ যেমন রিজকি নামের এই মানুষটি তাঁর দোকানে এক গ্রাম সোনা বিক্রি করেন আড়াই লাখ রূপিতে৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
বিষাক্ত উপাদান
সোনার খনিতে পারদের ব্যবহার ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ হলেও, লম্বকের খনিগুলোতে এটা নিয়মিতই ব্যবহৃত হয়৷ ফলে প্রতি বছর সেখানকার পরিবেশে প্রচুর পরিমাণ পারদ ছড়িয়ে পড়ে৷ এছাড়া ক্ষতিকর এই পারদ মানবদেহেও প্রবেশ করতে পারে৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
টানেলের সমাহার
মাইনিং বা খনিখননের কাজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লম্বকের পাহাড়ের গায়ে বড় বড় গর্ত ও টানেল তৈরি হয়েছে৷ ছবিতে নীল রংয়ের যে তারপলিন দেখা যাচ্ছে, সেগুলো টানেলে ঢোকার প্রবেশপথ৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
খনিতেই সারাদিন
হাতে বাটালি নিয়ে ৪৮ বছরের সাইফুল খনির ভেতরে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন৷ প্রতিটি ৩০ কেজি ওজনের ব্যাগ তিনি অশোধিত আকরিক দিয়ে ভরে থাকেন৷ যত বেশি ব্যাগ ভরবেন সোনা পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি৷ তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাইফুলের খনিতেই কাটে৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
সরু টানেল
শুধু একজন মানুষ যেতে পারে সেরকম করে টানেল তৈরি করা হয়৷ সাইফুল বলেন, অনেকসময় দেখা যায় টানেল কাটতে গিয়ে আরেক বন্ধুর টানেল চলে আসে৷ সেসময় একটু পিছিয়ে গিয়ে আবার শুরু করতে হয়৷ মাথায় হেলমেটের সঙ্গে থাকা ল্যাম্পই সাইফুলের জন্য খনিতে আলো পাবার একমাত্র উৎস৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
ঝুঁকি
১৮ বছরের মসুর পারদ নিয়ে কাজ করছে৷ কিন্তু সে জানে না যে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পারদের ব্যবহার কতটা ঝুঁকিপূর্ণ৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটানো ছাড়াও কিডনি, ত্বক, ফুসফুস ও চোখের ক্ষতি করতে পারে পারদ৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
বিতর্কিত সায়ানাইড
অশোধিত আকরিক থেকে সোনা বের করতে সায়ানাইডের ব্যবহার একটি বিতর্কিত প্রক্রিয়া৷ কারণ সায়ানাইড খুবই বিষাক্ত৷ কিন্তু লম্বকের তাওয়ান গ্রামে সায়ানাইডের ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
পরিবেশের ক্ষতি
সোনা উত্তোলনের ক্ষেত্রে পারদ আর সায়ানাইড ব্যবহারের কারণে লম্বক দ্বীপের পাশের সাগরের পানি ও সেখানকার ম্যানগ্রোভ বনের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে৷ সাগরের পানিতে বিষ ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার প্রাণীকূলের ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: Elisabetta Zavoli
8 ছবি1 | 8
পড়ে থাকে এই ধরনের গর্তে ভরা একটি দৃশ্য, যেন চন্দ্রপৃষ্ঠ৷ যে ডোবাটা খোঁড়া হয়েছিল, তার চারপাশে এখনও ঘাস পর্যন্ত গজায়নি৷ লেওন্তিয়ুক বললেন, ‘‘এটা সত্যিই বীভৎস৷ অ্যাম্বার-সন্ধানীরা এর পরে আর কিছুই করেনি ও করবে না – যদিও তাদের অন্তত নতুন করে গাছ লাগানোর কথা৷’’
রাজধানী কিয়েভ এখান থেকে অনেক দূর৷ কাজেই ইউক্রেন সরকার দেশের উত্তর-পশ্চিমে প্রকৃতির কী সর্বনাশ ঘটছে, তা নিয়ে মাথা ঘামান না৷ কালেভদ্রে সরকারি কর্মকর্তারা উদয় হন৷ যেমন দিমিত্রো খবর পেয়েছেন, অ্যাম্বার কাটার, শান দেওয়ার আর পালিশ করার একটি কারখানায় হানা দেওয়া হবে৷
সোনা সম্পর্কে ক’টি মজার তথ্য
সোনা পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে৷ সম্পত্তি হিসাবেও সোনা বেশ মূল্যবান৷ তবে সোনা আরও অনেক কাজে লাগে৷
ছবি: Fotolia/Scanrail
চিকিৎসাকাজে সোনা
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগীদের চিকিৎসায় তাঁদের হাড়ের জোড়ায় সোনা মিশ্রিত লবণ লাগালে উপকার পাওয়া যায়৷ এছাড়া যেসব জায়গায় প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে প্রোস্টেট ক্যানসার ও এইচআইভি-র মতো রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না সেখানে সোনা ব্যবহার করা যায়৷ কয়েক ধরণের ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি দিতে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ হিসাবেও স্বর্ণের ব্যবহার রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
মহাকাশ থেকে এসেছে?
‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, স্বর্ণ সহ বিশ্বে যেসব মূলবান ধাতু রয়েছে সেগুলো মহাকাশ থেকে এসেছে! পৃথিবী গঠনের প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর পর কয়েকটি উল্কাপিণ্ডের মধ্যে সংঘর্ষের পর ধাতুগুলো পৃথিবীতে আসে৷ অনেক পুরনো পাথরের নমুনা পরীক্ষা করে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন৷ বিস্তারিত জানতে উপরের (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Nasa/Getty Images
দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনার খনি
বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ সোনার উৎস দক্ষিণ আফ্রিকা৷ এর মধ্যে ৭৮ শতাংশ ব্যবহার হয় অলংকার তৈরিতে৷ ইলেকট্রনিকস শিল্পে ব্যবহৃত হয় প্রায় ৩২০ টন সোনা৷
ছবি: Christopher Furlong/Getty Images
আমরা সোনা ফেলে দিচ্ছি!
স্মার্টফোন সহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের দাম হাতের নাগালে চলে আসায় আমি, আপনি এখন কদিন পরপর পুরনোগুলো ফেলে দিয়ে নতুন কিনছি৷ এভাবে, এক অর্থে কিন্তু আমরা সোনাই ফেলে দিচ্ছি৷ কেননা ঐ সব গ্যাজেট তৈরিতে সোনা ব্যবহার করা হয়েছে৷ জাতিসংঘের এক হিসেব বলছে, ফেলে দেয়া এক টন ফোন থেকে প্রায় ৩৪০ গ্রাম সোনা পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়াজাতকরণ
খনি থেকে সোনা উত্তোলনের পর সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে সোডিয়াম সায়ানাইড ব্যবহার করা হয়৷ এর ফলে যে বর্জ্য উৎপন্ন হয় সেগুলো সতর্কতার সহিত অপসারণ না করলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
কারখানার মালিক ওলে ক্রাভচুক স্বীকার করলেন যে, তিনি অন্যভাবে আইন এড়ান: ইউক্রেনে বৈধভাবে অ্যাম্বার কেনা সম্ভব নয় বলে তিনি ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অ্যাম্বার কেনেন৷ জানালেন, ‘‘আমি পোল্যান্ডে এই অ্যাম্বার কিনেছি, যাতে কাজ শুরু করা যায়৷’’ অথচ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেনের অ্যাম্বার – আগে বেআইনিভাবে পোল্যান্ডে পাচার করে পরে আবার কেনা হয়েছে৷ ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ সেকথা খুব ভালো করেই জানেন বলে দিমিত্রোর ধারণা৷
খুদকুঁড়ো
অ্যাম্বার যে খুব মূল্যবান বস্তু, এমন নয়৷ তা সত্ত্বেও ইউরোপ বা চীনের বাজারে অ্যাম্বার বেচাকেনা করে লাখপতি, কোটিপতি হওয়া যায়৷ কাজেই এই হতদরিদ্র এলাকার মানুষজন যে সেই ব্যবসার খুদকুঁড়ো কুড়িয়েই খুশি, দিমিত্রো লেওন্তিয়ুক তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অ্যাম্বার খোঁড়াটা বৈধ করে দেওয়া যেতে পারে ও এমনভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে যে, সকলেই তা থেকে কিছু পাবে৷ দশ-পনেরোজন স্থানীয় বাসিন্দার একটি সমবায়ের জন্য তিন-চার বছর ধরে যথেষ্ট কাজ থাকবে৷ সব অ্যাম্বার বার করে নেওয়ার পর তাদের আবার গর্তগুলো বুজিয়ে, গাছ লাগিয়ে জমিটাকে ঠিক করে দিতে হবে৷’’
সেটাই হল দিমিত্রোর কামনা: ইউক্রেনের বনাঞ্চলের এই ‘সোনা’ দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে না গিয়ে স্থানীয় মানুষজনের উপকারে আসুক৷
সোনার খোঁজে যারা জীবন দেয়
অন্যান্য বহুমূল্য ধাতুর মতো সোনার কাহিনিও পুরোপুরি স্বর্ণময় নয়৷ সেখানেও পাওয়া যাবে ব্যাপক দারিদ্র্য, শোষণ, বিতাড়ন ও সংঘাতকে – তানজানিয়ার উত্তর মারা অঞ্চলের সোনার খনিগুলি যার কোনো ব্যতিক্রম নয়৷
ছবি: DW/J. Hahn
গুপ্তধন
তানজানিয়ার উত্তর-পশ্চিমে উত্তর মারা এলাকায় মাটির তলায় এক লাখ টনের বেশি সোনা রয়েছে৷ এটি দেশের ছ’টি সোনার খনির মধ্যে একটি৷ ২০০৬ সাল থেকে উত্তর মারা-র সোনার খনি চালাচ্ছে আফ্রিকান ব্যারিক গোল্ড কোম্পানি৷ এই কোম্পানিটি আবার বিশ্বের বৃহত্তম গোল্ড মাইনিং কোম্পানি ব্যারিক গোল্ড-এর একটি শাখা৷
ছবি: DW/J. Hahn
সোনার খনি
উত্তর মারা মাইনিং কমপ্লেক্সে যে তিনটি ওপেন-কাস্ট পিট আছে, তাদের মধ্যে একটি হল ‘‘গোকোনা’’৷ প্রত্যেক দিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর ভাঙা হয়; পরে সেই পাথর থেকে সোনা বার করা হয়৷ প্রতি টন পাথরে বড়জোর চার থেকে পাঁচ গ্রাম সোনা পাওয়া যায়৷ কিন্তু দশ বছরের মধ্যেই এই খনি ফুরিয়ে যাবে৷
ছবি: DW/J. Hahn
চাকরির আশায়
শুধু খনিশ্রমিক হিসেবেই নয়, সংশ্লিষ্ট নানা কাজ থেকেও প্রায় দু’হাজার লোকের অন্নসংস্থান হয়৷ তা সত্ত্বেও এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন৷
ছবি: DW/J. Hahn
কাঁটাতারের বেড়া
চোর-ডাকাতের হাত থেকে খনিসম্পদ বাঁচানোর জন্য এই বেড়া দেওয়া হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও তারা তার কেটে ভেতরে ঢোকে৷ কড়া পাহারার ব্যবস্থা করেছে কোম্পানি৷ কোম্পানির নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা আছেন, তাদের সঙ্গে আবার তানজানিয়ান পুলিশ পাহারা দেয়৷ স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে পুলিশের প্রায়ই সংঘর্ষ বাঁধে, মানুষজন মারা পড়ে৷
ছবি: DW/J. Hahn
হানাদার
মাঝেমধ্যে শত শত ‘হানাদার’ খনির ওপর হামলা চালায় ‘সোনাপাথরের’ খোঁজে৷ পরে দালালদের কাছে সেই সোনা বেচে কিছু পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/J. Hahn
সোনা চোর
‘‘যেটুকু পড়ে থাকে, শুধু সেটাই আমরা নিই,’’ বলেন জুমানে, ‘‘তবুও পুলিশ আমাদের গ্রাম পর্যন্ত তাড়া করে যায়৷’’ অন্যান্য ‘হানাদারদের’ মতো জুমানে-রও বক্তব্য হল, মাইনিং কোম্পানির গুঁড়ো পাথর নিতে দেওয়া উচিত৷
ছবি: DW/J. Hahn
সোনা ধোয়া
টিনের পাত্রে জলের মধ্যে পাথরের গুঁড়ো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, দানা দানা করে সোনা ছাঁকতে হয় – ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ খুবই কষ্টের কাজ, তায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশেষ সোনা ওঠে না৷ গোল্ড প্যানার-দের মাইনে হল মাসে দু’হাজার তানজানিয়ান শিলিং – সাকুল্যে দশ ইউরো৷
ছবি: DW/J. Hahn
অবহেলিত অঞ্চল
উত্তর মারা তানজানিয়ার দরিদ্রতম এবং সর্বাপেক্ষা অনুন্নত এলাকাগুলির মধ্যে পড়ে৷ আগে খনির চারপাশের সাতটি গ্রামের মানুষজন নিজেরাই সোনা বার করে নিতেন৷ গত শতাব্দীর শেষের দিকে বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানি এসে তার অবসান ঘটিয়েছে৷ অন্যদিকে চাষবাস কিংবা পশুপালন থেকে বিশেষ আয় হয় না৷
ছবি: DW/J. Hahn
হতাশা
‘‘খনি থেকে আমাদের কোনো লাভ হয়নি,’’ কেওয়াঞ্জা-র গ্রামবাসীদের অনুযোগ৷ তারা না পেয়েছেন কলের জল, না বিদ্যুৎ৷ বিশজন লোকের একটি পরিবারকে মাসে ১৪০ ইউরো দিয়ে জীবনধারণ করতে হয়৷
ছবি: DW/J. Hahn
ছেলে হারানোর ব্যথা
‘‘সোনার খনি আমার সব নিয়েছে,’’ বলেন গাতি মারেম্বেরা মুইতা৷ ২০১২ সালের ৬ই নভেম্বর তাঁর ছেলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়৷ ইতিপূর্বে নাকি শত শত ‘হানাদার’ খনির ওপর হামলা চালিয়েছিল – তাদের অধিকাংশই ছিল কুঠার-বল্লম হাতে স্থানীয় কিশোর ও তরুণ৷ ‘‘আমার ছেলে হানাদার ছিল না,’’ বলেন মুইতা, ‘‘ও শুধু কাছেই ভেড়া-ছাগল চরাচ্ছিল৷’’
ছবি: DW/J. Hahn
খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে
পাথর গুঁড়িয়ে, অতীব বিপজ্জনক পারদের সঙ্গে তা মিশিয়ে তবে হয়তো এ রকম এক গ্রাম সোনা পাওয়া যায় – বাজারে যার দাম বিয়াল্লিশ হাজার তানজানিয়ান শিলিং বা বিশ ইউরো৷