মহানবী(সাঃ)-র কার্টুন বিতর্কের জেরে ফরাসি জিনিস বয়কটে রাজি পাকিস্তান। দাবি করট্টরপন্থী সুন্নি ইসলামি পার্টির।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের কট্টরপন্থী তেহরিক-ই-লেব্বাইক-পাকিস্তান(টিএলপি) দাবি করেছে, ফরাসি জিনিস বয়কটে রাজি হয়েছে পাক সরকার। দলটির বক্তব্য, তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে। তাতে সরকার সব আটক টিএলপি নেতা-কর্মীদের ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। সেই সঙ্গে ফরাসি জিনিস বয়কটকরা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও আর রাখা হবে না বলে সরকার জানিয়েছে বলে দাবি ওই দলটির। এই সমঝোতার পরেই শুক্রবার থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে টিএলপি।
ফ্রান্সে মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)-র কার্টুন বিতর্ক ও তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর মন্তব্যের প্রতিবাদে এই কট্টরপন্থী সংগঠন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। তাদের দাবি ছিল, ইমরান খান সরকারকে ফরাসি জিনিস বয়কটের নির্দেশ দিতে হবে এবং ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তান থেকে বের করে দিতে হবে।
সমঝোতা হয়েছে না হয়নি
টিএলপি মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকার তাঁদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী এবং ইসলামাবাদের কমিশনার সমঝোতায় সই করেছেন।
বয়কটের আর্থিক প্রভাব কেমন?
বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে৷ প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে পণ্য বয়কট কতটা আর্থিক প্রভাব ফেলে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিঘরে৷
ছবি: Chuck Beckley/Getty Images
ডেনমার্কে রপ্তানি হ্রাস
২০০৫ সালে ডেনমার্কের দৈনিক পত্রিকা ‘ইওলান্ত পস্টেন’-এ মহানবি (সাঃ)-এর কার্টুন প্রকাশিত হয়৷ এর প্রতিবাদে ডেনিশ পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছিল৷ ফলে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশটির রপ্তানি সাড়ে ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল বলে সরকারি তথ্যে জানা গেছে৷ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৩২৯ কোটি টাকা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Ali
যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রান্সের পণ্য বয়কট
২০০৩ সালে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ থাকার অভিযোগ এনে ইরাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জর্জ বুশ৷ এর বিরোধিতা করে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়ার হুমকি দিয়েছিল ফ্রান্স৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়৷ ক্যাপিটল হিলের রেস্তোরাঁগুলোতে ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’য়ের নাম পরিবর্তন করে ‘ফ্রিডম ফ্রাই’ করা হয়৷ এক গবেষণা বলছে, বয়কট আহ্বানের শীর্ষ সময়ে ফরাসি ওয়াইনের সাপ্তাহিক বিক্রি ২৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল৷
ছবি: Chuck Beckley/Getty Images
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট
ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণের প্রতিবাদে ২০০৫ সালে ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট, স্যাঙকশনস’ বা বিডিএস নামে একটি মুভমেন্ট শুরু হয়৷ এই আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ ২০১৫ সালে ইসরায়েলি সরকারের ফাঁস হওয়া এক নথি জানায়, দেশটির অর্থনীতিতে বিডিএস-এর আর্থিক প্রভাবের পরিমাণ বছরে ১৪০ কোটি ডলার৷ ঐ বছরই ব়্যান্ড কর্পোরেশন জানায়, ১০ বছরে আর্থিক প্রভাবের পরিমাণ হতে পারে ৪,৭০০ কোটি ডলার৷
ছবি: Imago/S. Zeitz
চীনে জাপানবিরোধী বিক্ষোভ
পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত কয়েকটি দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীন, জাপান ও তাইওয়ানের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে৷ ২০১২ সালে এই দ্বীপগুলো সম্পর্কে জাপানের নেয়া কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চীনে জাপানবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়৷ ফলে চীনের সঙ্গে জাপানের গড়ে এক বছর মেয়াদি ট্রেড ডিজরাপশনের (বাণিজ্যে বিঘ্ন) পরিমাণ প্রায় ২.৭ শতাংশ ছিল বলে এক হিসেবে জেনেছেন গবেষক কিলিয়ান হাইলমান৷
ছবি: Reuters
ভারতে চীনা পণ্য বয়কট
লাদাখে ভারত-চীন সংঘাতের জেরে ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়৷ চীনের একাধিক অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়৷ আইপিএল-এর টাইটেল স্পন্সর পরিবর্তন করা হয়৷ ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ২০০৫ সালের পর এই প্রথম দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খানিকটা হলেও হোঁচট খেয়েছে৷ আমদানি-রপ্তানি দুই ক্ষেত্রেই পতন হয়েছে৷ ছবিতে চীনা পণ্যে আগুন দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
5 ছবি1 | 5
কিন্তু সংবাদসংস্থা এএফপি-কে এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে সরকারের নেই। কোনো দেশের সঙ্গেই তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি দেখা হবে।
ধর্মনিন্দা ও পাকিস্তান
পাকিস্তানে ধর্মনিন্দা খুব বড় বিষয়। কেউ ইসলাম বা মহানবী(সাঃ)-র নিন্দা করলে তার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। পাকিস্তানের ধর্মিনন্দা সংক্রান্ত আইন খুবই কড়া।
২০১৮ সালে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট আসিয়া বিবিকে ধর্মনিন্দার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। তারপর টিএলপি আন্দোলন করে কার্যত পাকিস্তান অচল করে দেয়। তিনদিন ধরে তারা বিক্ষোভ দেখায়।
তবে পাকিস্তানের অধিকাররক্ষা কর্মীদের অভিযোগ, অনেক সময় ব্যক্তিগত বিরোধ ও শত্রুতার জেরেও ধর্মনিন্দার অভিযোগ আনা হয়।