মাক্রোঁর মন্তব্যের ফলে কুয়েত, কাতার, জর্ডনের দোকান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ফরাসি জিনিস। লিবিয়া, সিরিয়া, গাজা ভূখণ্ডে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)-র একটি কার্টুন দেখিয়ে মত প্রকাশের অধিকারের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন প্যারিসের একটি স্কুলের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। তাঁকে হত্যা করে ১৯ বছর বয়সী এক চেচেন। তারপরই ফ্রান্স জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। মাক্রোঁ তখন বলেছিলেন, ''আমরা কার্টুন ছেড়ে দেব না।'' তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। পশ্চিম ইউরোপের সংখ্যালঘু সংগঠনও বলেছে, মাক্রোঁ ইসলামোফোবিয়া বাড়াতে সাহায্য করছেন।
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reutersএকসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reutersজর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafবিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penneyবর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.comসাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchellসমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishiইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance রোববার মাক্রোঁ টুইট করে বলেছেন, ''আমরা পরাজয় স্বীকার করব না। আমরা হেট স্পিচ বরদাস্ত করব না। যুক্তিসঙ্গত তর্ক সবময়ই সমর্থন করব। আমরা সবসময়ই স্বীকৃত মূল্যবোধ ও মানবিক মর্যাদার পক্ষে।''
এই অবস্থায় ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ফরাসি জিনিস বয়কটের ডাক অর্থহীন। চরমপন্থীরা এই কাজ করছেন। অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করা উচিত।
অনেক আরব দেশেই ফরাসি জিনিস, বিশেষ করে মেক আপ সামগ্রী ও সুগন্ধী আর বিক্রি করা হচ্ছে না। শপিং মল বা দোকানের তাক খালি করে দেয়া হয়েছে। কুয়েতে পাইকারি জিনিস বিক্রেতাদের একটি প্রধান ইউনিয়ন ফরাসি জিনিস বয়কটের ডাক দিয়েছে। তারপরই দোকান ও মল থেকে ফরাসি জিনিস সরে গেছে। সৌদি আরবেও বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে।
জিএইচ/এসজি(এএফপি, এপি, রয়টার্স)