প্রথম রাউন্ডের ভোটের পর বিশেষজ্ঞদের অনুমান ছিল ফ্রান্সের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোট পাবে দক্ষিণপন্থিরা। কিন্তু সমস্ত অনুমান ভুল প্রমাণ করে দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষে জয়ের পথে বামপন্থিরা। বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী বামপন্থিরা পেতে পারে ১৮৭ থেকে ১৯৮টি আসন। দ্বিতীয় স্থানে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বে তৈরি জোট। তারা পেতে পারে ১৬১ থেকে ১৬৯টি আসন। তৃতীয় স্থান নেমে যাচ্ছে অতি দক্ষিণপন্থি দল এনআর। তারা পেতে পারে ১৩৫ থেকে ১৪৩টি আসন। অথচ প্রথম রাউন্ডের শেষে মনে করা হয়েছিল, এনআর সর্বোচ্চ আসন পাবে।
ফ্রান্সের আলোচিত তরুণ রাজনীতিক বারডেলা
ফ্রান্সে সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া ন্যাশনাল ব়্যালি বা আরএন দলের প্রধান ২৮ বছর বয়সি জর্ডান বারডেলা৷ রোববার দ্বিতীয় ধাপে তার দল জয়ী হলে তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
পরিচয়
ফ্রান্সে ৩০ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল হচ্ছে ন্যাশনাল ব়্যালি বা আরএন৷ ডানপন্থি ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই দলের প্রধান ২৮ বছর বয়সি জর্ডান বারডেলা৷
ছবি: Sarah Meyssonnier/REUTERS
জন্ম
১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইটালীয় অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ তার দাদির বাবা আলজেরিয়া থেকে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন৷ কর্মজীবী শ্রেণির মানুষেরা প্যারিসের যে এলাকায় থাকেন সেই সেন স্যাঁ-ডেনি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন বারডেলা৷
ছবি: Eliot Blondet/abaca/picture alliance
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেননি
হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু রাজনীতিতে মনোযোগ দেওয়ার পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি৷
ছবি: JULIEN DE ROSA/AFP
রাজনীতিতে যোগদান
মাত্র ১৬ বছর বয়সে আরএন দলে যোগ দেন৷ ২১ বছর বয়সে তাকে দলের মুখপাত্র নিয়োগ দেন আরএন দলের সেই সময়কার নেতা মারিন ল্য পেন৷ ল্য পেনের বাবা ১৯৭২ সালে আরএন দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷
ছবি: Julien de Rosa/AFP/Getty Images
ইইউ সাংসদ নির্বাচিত
২০১৯ সালে ২৩ বছর বয়সে ইউরোপীয় সাংসদ নির্বাচিত হন বারডেলা৷
ছবি: Shootpix/ABACA/picture alliance
দলীয় প্রধানের দায়িত্ব
আরএন দলের নেতা ল্য পেন (বামে) দুবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে হেরেছেন৷ ২০২৭ সালে আবার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চান৷ সেই প্রচেষ্টায় পূর্ণ মনোযোগী হতে তিনি ২০২২ সালে বারডেলাকে আরএন দলের প্রধান নির্বাচন করেন৷
ছবি: Alain Jocard/AFP/Getty Images
নিজের সম্পর্কে বারডেলা যা বলেন
আরএন দলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ বাড়ার পেছনে বারডেলার অবদান রয়েছে বলে মনে করা হয়৷ টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ৷ ‘‘আমি অন্য জায়গা থেকে এসেছি, কিন্তু, আজ আমার যা পরিচয়, তা এখানেই হয়েছে৷ আমি ফ্রান্সের ইতিহাসকে বিয়ে করেছি,’’ টিকটকে নিজের পরিচয় সম্পর্কে এভাবেই বলেছেন বারডেলা৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
শান্তির বার্তা
বারডেলা একজন কট্টর অভিবাসনবিরোধী বলে ডিডাব্লিউকে জানান কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডানপন্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মার্টা লরিমে৷ তবে ৩০ জুন প্রথম ধাপের নির্বাচনে জয়ের পর বারডেলার কণ্ঠে কিছুটা শান্তির বার্তা শোনা গেছে৷ তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেলে তিনি সব ফরাসি নাগরিকের প্রধানমন্ত্রী হবেন, সবার কথা শুনবেন, জাতীয় ঐক্যের কথা মনে রাখবেন৷
ছবি: Julien de Rosa/AFP
8 ছবি1 | 8
ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট
বামপন্থিরা সর্বোচ্চ আসন পেলেও সরকার গঠনের জায়গায় তারা পৌঁছাতে পারবে না। ৫৭৭ আসনের ফরাসি পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য় প্রয়োজন ২৮৯টি আসন। বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী তার চেয়ে অনেকটাই পিছনে থাকবে বামপন্থিরা। ফলে ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফ্রান্সের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গাব্রিয়েল আটাল জানিয়ে দিয়েছেন, ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরেই তিনি পদত্য়াগ করবেন।
প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর দল সেন্ট্রিস্ট বা মধ্যপন্থি হিসেবে পরিচিত। প্রথম রাউন্ডের ভোটের সমীক্ষা দেখে চটজলদি তারা বামপন্থিদের একটি অংশের সঙ্গে জোট গঠন করে। দ্বিতীয় রাউন্ডের পর দেখা যাচ্ছে, সেই জোট সব মিলিয়ে ১৬১ থেকে ১৬৯টি আসন পেতে পারে। অন্য়দিকে বামপন্থি দলগুলির জোট ন্যাশনাল পপুলার ফ্রন্ট দুশটি পর্যন্ত আসন পেতে পারে। এখনো পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ এই ফলাফল আঁচ করতে পারেননি।
সকলেই মনে করেছিলেন, মারিন লে পেনের অতি দক্ষিণপন্থি এনআর পার্লামেন্টে সর্বোচ্চ আসন পাবে। যদিও তারাও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছাতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের পর দেখা যাচ্ছে তারা তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। চতুর্থ স্থানে রিপাবলিকানরা। সব মিলিয়ে তারা পেতে পারে ৬৩টি আসন।
২০২৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন মাক্রোঁ। কিন্তু আগামী আড়াই বছর তার জন্য় খুব সহজ হবে না। বামপন্থিদের সঙ্গে মাক্রোঁর নীতির অনেক ফারাক। পার্লামেন্টে যদি বামপন্থি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তাহলে পদে পদে বাধা পেতে হবে মাক্রোঁকে। বস্তুত, গত কয়েকবছরে অনেকটাই জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন মাক্রোঁ। এবারের নির্বাচনে তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।