প্যারিসের ব্যঙ্গাত্মক সাপ্তাহিক ‘শার্লি এব্দো’-র কার্যালয়ে মুখোশধারী আততায়ীদের হামলায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আততায়ীদের এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি৷ জার্মান চ্যান্সেলর এ ‘‘ঘৃণ্য'' আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
এটা ছিল গত ২০ বছরে ফ্রান্সে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ স্বয়ং এই আক্রমণকে ‘‘নিঃসন্দেহে একটি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ'' বলে অভিহিত করেছেন৷ ‘‘সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে'' নাকি একাধিক আক্রমণ ব্যর্থ করা সম্ভব হয়েছে, বলে ওলঁদ জানান৷
ফ্রান্স সর্বোচ্চ সতর্কতা ঘোষণা করেছে এবং বিভিন্ন উপাসনার স্থান, বিপণী, মিডিয়া কার্যালয় এবং পরিবহণে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী একাধিক মুখোশধারী স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে প্যারিসের কেন্দ্রীয় এলাকায় ‘শার্লি এব্দো'-র অফিসে ঢোকে এবং তিনতলার নিউজরুমে গিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ পুলিশের খবর অনুযায়ী, পরে তারা একটি অপেক্ষমান গাড়িতে করে পালায় এবং তারও পরে আবার গাড়ি বদলি করে অপর একটি চোরাই গাড়িতে চড়ে পলায়ন করে৷
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
সরকারি ফ্রান্স টেলিভিশনের ভিডিও-য় দেখা গেছে, একটি রাস্তার মোড়ে দু'জন কালো পোশাক পরা বন্দুকধারী রাস্তা বরাবর গুলি চালাচ্ছে: গুলির আওয়াজের মধ্যে একবার আল্লাহু আকবর ধ্বনিও শোনা গেছে৷ ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাস গোষ্ঠী ফ্রান্সকে আক্রমণ করা হুমকি দিয়েছে: বুধবারের আক্রমণের মাত্র কয়েক মিনিট আগে শার্লি এব্দো পত্রিকার তরফ থেকে ব্যঙ্গ করে আইসিস নেতার একটি কার্টুন টুইট করা হয়; কার্টুনের শীর্ষক: ‘‘ফ্রান্সে এখনও কোনো আক্রমণ নেই''৷ কার্টুনে এক আইসিস যোদ্ধা বলছে, ‘‘একটু ধৈর্য ধরো – নববর্ষের কামনা পূরণের জন্য আমাদের হাতে জানুয়ারির শেষ অবধি সময় আছে৷'' হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপার জন্য শার্লি এব্দো পত্রিকাকে একাধিকবার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল – ২০১১ সালে পত্রিকার অফিসে বোমা ছোঁড়া হয়৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এই ‘‘ঘৃণ্য'' আক্রমণের নিন্দা করেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, মার্কিন কর্মকর্তারা ফরাসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিকট যোগাযোগ রেখে চলেছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা ইউরোপে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বসাধ্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ ন্যাটো প্রধান ইয়েন্স স্টল্টেনব্যার্গ বলেছেন, সামরিক জোট যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে৷