ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর স্ত্রীকে ফার্স্ট লেডি হিসেবে আনুষ্ঠানিক পদ দেয়ার বিপক্ষে আবেদন করেছেন দেশটির জনগণ, যাতে স্বাক্ষর করেন ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ৷
দুই সপ্তাহ আগে এই অনলাইন পিটিশন শুরু করে একটি প্ল্যাটফর্ম, যার নাম চেঞ্জ ডট অর্গ (change.org)৷ সেখানে দাবি জানানো হয়, প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে ফার্স্ট লেডি হিসেবে ভূমিকা পালনের জন্য যেন জনগণের তহবিল থেকে ব্যয় না করা হয়৷ মে মাসে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় মাক্রোঁ স্ত্রী ব্রিগিটেকে আনুষ্ঠানিক পদ দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন৷ আবেদনে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে ব্রিগিটে মাক্রোঁর একটি টিম রয়েছে, যেখানে তাঁর দুই থেকে তিনজন সহযোগী, দু'জন সহকারী এবং দু'জন নিরাপত্তা এজেন্ট রয়েছে৷ এগুলোই যথেষ্ট৷’
ফ্রান্সে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বা ফার্স্ট লেডির জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক পদ নেই৷ প্রেসিডেন্টের স্ত্রীরা কেবল সৌজন্য ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক সফরগুলোতে৷
কয়েকজন বিখ্যাত ফার্স্ট লেডির কথা
স্বামীর কারণে ফার্স্ট লেডি হলেও অনেকে নিজেদের কাজের গুনেই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কয়েকজনের কথা৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মেলানিয়া ট্রাম্প: নতুন ফার্স্ট লেডি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় তার স্ত্রী এখন মেলানিয়া ট্রাম্প এখন ফার্স্ট লেডি৷ স্লোভেনিয়ায় জন্ম নেয়া মেলানিয়া, ট্রাম্প প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত ইন্সটাগ্রামে বেশ সক্রিয় ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
হিলারি ক্লিন্টন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী হিলারি এবার জিতলে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কার্লা ব্রুনি সার্কোজি
নিজে ইটালির মেয়ে৷ ছিলেন গায়িকা, মডেল৷ পরে ২০০৮ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজিকে বিয়ে করে হয়ে যান ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি৷ স্টাইল আইকন হিসাবে এখনও তিনি সক্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জর্ডানের রানি
চার সন্তানের জননী রানিয়া ১৯৯৯ সাল থেকে জর্ডানের রানি৷ নিজ দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে তিনি কাজ করছেন৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও তাঁকে সোচ্চার হতে দেখা গেছে৷ তাঁর অবদানের জন্য গত সেপ্টেম্বরে তিনি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কাছ থেকে একটি পুরস্কার গ্রহণ করেন৷
ছবি: imago/Xinhua
ইনখোসিকাতি লামবিকিজা
তিনি সোয়াজিল্যান্ডের রাজার ১৩ স্ত্রীর একজন৷ তবে বেশিরভাগ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাজার পাশে তাঁকেই দেখা যায়৷ এইডসের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচিতে তিনি যুক্ত আছেন৷
ছবি: Getty Images/C. Jackson
জ্যাকুলিন কেনেডি
বলা হয়, হোয়াইট হাউসে বাস করা সবচেয়ে আবেদনময়ী দম্পতি ছিলেন জ্যাকুলিন ও তাঁর স্বামী প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি৷ ১৯২৯ সালে নিউ ইয়র্কের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম নেয়া জ্যাকুলিন ১৯৫৩ সালে কেনেডিকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৪ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্যাশন সচেতনতার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images
গ্রেস কেলি
ছিলেন হলিউডের সফল অভিনেত্রী৷ পরে ১৯৫৬ সালে হয়ে যান মোনাকোর প্রিন্সেস৷ তবে তাঁর দাম্পত্য জীবন কখনও সুখের ছিল না বলে শোনা যায়৷ সে এমনও বলেছিলেন, বিয়ের দিনটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন৷ ১৯৮২ সালে ৫২ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কেলি৷
ছবি: AP
সোরাইয়া এসফানডিয়ারি-বখতিয়ারি
ইরানের শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন সোরাইয়া৷ ১৯৫১ সালে ১৯ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়৷ তবে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা না থাকায় মাত্র সাত বছর পর তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল৷ জার্মান ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী সোরাইয়া ঘোড়ায় চড়া ও স্কিয়িং করতে পছন্দ করতেন৷ ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইরানের ক্ষমতায় ছিলেন পাহলভি৷
ছবি: picture alliance/Bildarchiv
ইমেলদা মার্কোস
সাবেক সুন্দরী ইমেলদা তাঁর ভোগ বিলাসী জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন৷ ফিলিপাইনের দশম প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোসের স্ত্রী ছিলেন তিনি৷ রেকর্ড পরিমাণ জুতার সংগ্রহের কারণে ইমেলদা মার্কোস বিশ্বে পরিচিত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
মিশেল ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট৷ হার্ভার্ড ল স্কুলেও তিনি পড়াশোনা করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সরকারি অনেক সফরে তিনি গেছেন৷ পোশাক নির্বাচন ও ভদ্র ব্যবহারের কারণে তাঁকে অনেকেই পছন্দ করেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
10 ছবি1 | 10
৩৯ বছর বয়সি মাক্রোঁর স্ত্রী ব্রিগিটের বয়স ৬৪ বছর৷ মাক্রো বরাবরই বলে আসছেন যে, তাঁর স্ত্রীর জন্য যে পদ সৃষ্টি করা হবে, তা কোনো পাবলিক ফান্ড বা জন-তহবিল থেকে খরচ করা হবে না৷ চেঞ্জ ডট অর্গ বিশেষ করে পিটিশনে উল্লেখ করেছে, জাতীয় পরিষদে একটি নতুন আইন পাস হয়েছে, যেখানে এমপিদের পরিবারের সদস্যদের সহযোগী হিসেবে দায়িত্বে না রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ পার্লামেন্ট সদস্যদের বিভিন্ন দুর্নীতির কেলেঙ্কারির পর এই আইনটি পাস হয়৷ যদিও সেখানে প্রেসিডেন্টের কথা উল্লেখ ছিল না৷
এদিকে, পার্লামেন্টে মাক্রোঁর বিরোধী দল এই ঘটনাকে ইস্যু করে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে৷ তাদের অভিযোগ মাক্রোঁ সেনাখাতসহ অন্যান্য খাতে বাজেট কমিয়ে স্ত্রীর জন্য ব্যয় করছেন৷
শ্রমিক আইন সংস্কার এবং সেনাবাহিনীর বাজেট হ্রাসের কারণে নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মাক্রোঁর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)
ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডিদের কথা
রবিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ নিজের স্কুল শিক্ষিকাকে বিয়ে করেছেন তিনি৷ নির্বাচনে জয়ে দারুণ ভূমিকা ছিল ব্রিজিট মাক্রোঁর৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
শিক্ষক থেকে ফার্স্ট লেডি
ফ্রান্সের নতুন ফার্স্ট লেডি হচ্ছেন ব্রিজিট মাক্রোঁ৷ তাঁর স্বামী এমানুয়েল মাক্রোঁ ছিলেন তাঁর ছাত্র৷ স্বামীর চেয়ে ২৪ বছরের বড় ব্রিজিটের এমানুয়েলের নির্বাচনি প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন৷ মাক্রোঁর বক্তব্য দেখে দেয়া, স্টেজে উঠে কীভাবে কী করতে হবে সেই পরামর্শ দেয়া ইত্যাদি নানান কাজ করেছেন ব্রিজিট৷ ফার্স্ট লেডি হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/C. Liewig
ট্রিয়াভিলেয়া থেকে গাইয়ে
২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সেটি তাঁর সেই সময়কার পার্টনার ভ্যালেরি ট্রিয়াভিলেয়াকে (বামে) নিয়ে উদযাপন করেছিলেন ফ্রঁসোয়া ওলঁদ৷ এরপর ২০১৪ সালে অভিনেত্রী জুলি গাইয়ের সঙ্গে ওলঁদের সম্পর্কের কথা প্রকাশিত হয়৷ তার আগ পর্যন্ত সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপিকা হিসেবে ব্যস্ত থাকলেও ফার্স্ট লেডি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রিয়াভিলেয়া৷
মডেল, গায়ক থেকে ফার্স্ট লেডি
২০০৮ সালে ফ্রান্সের তখনকার প্রেসিজেন্ট নিকোলা সার্কোজিকে বিয়ে করেন একসময়কার শীর্ষ মডেল ব্রুনি৷ পরবর্তীতে তিনি সংগীতের দিকে মন দিয়েছিলেন৷ ২০০২ সালে তাঁর একটি অ্যালবামও বের হয়েছিল৷ প্রেসিডেন্টকে বিয়ে করলেও রাজনৈতিক দায়িত্ব কমই পালন করেছেন তিনি৷ ৪৯ বছর বয়সে আজও স্টাইল আইকন হিসেবে পরিচিত ব্রুনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
ব্যার্নাডেত শিরাক
১৯৯৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ফার্স্ট লেডি ছিলেন তিনি৷ স্বামী জ্যাক শিরাকের সাফল্যের পেছনে তাঁরও অবদান ছিল৷ কারণ তিনি নিজেও রাজনীতিক ছিলেন৷ সত্তরের দশকে তাঁর এলাকায় কাউন্সিলেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি৷ কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Dieffembacq
ডানিয়েল মিতেরঁ
ফ্রান্সের প্রথম সোশ্যালিস্ট ফার্স্ট লেডি ছিলেন তিনি (ডানে)৷ একবার তিনি বলেছিলেন, ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডির কোনো আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেই৷ তাই বিভিন্ন সময়ে তাঁকে বামপন্থি গোষ্ঠীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে৷ যেমন ছবিতে মেক্সিকোর ‘জাপাটিস্টাস’-দের সঙ্গে তাঁকে দেখা যাচ্ছে৷ এছাড়া কুর্দি ও তিব্বতিদের পক্ষও নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/
ক্লোদ পপিদুঁ
রাজনৈতিক জীবনের চাপ তাঁর পছন্দ ছিল না৷ তাই ১৯৬৯ থেকে ৭৪ পর্যন্ত ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পালন করা পপিদুঁ (সাদা পোশাক) দাতব্য কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন৷ পঙ্গু শিশু, হাসপাতালের রোগী ও বয়স্ক মানুষদের দেখভালের কাজ করত তাঁর ফাউন্ডেশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ইভন দু গল
প্রচন্ড ক্যাথলিক ঘরানার দু গল পতিতাবৃত্তি, তালাক, মিনিস্কার্ট – এ সবের বিপক্ষে ছিলেন৷ তাঁর প্রেসিডেন্ট স্বামী ফ্রান্সে এ সবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলেও আশা করেছিলেন তিনি৷ তাঁর এমন মনোভাবের জন্য তিনি ‘ইভন খালা’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন৷ তবে ১৯৬২ সালে তাঁকে ও তাঁর প্রেসিডেন্ট স্বামীকে হত্যা করতে যে হামলা হয়েছিল সেই সময় মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন৷