ফ্রান্স কেন, গোটা ইউরোপ জুড়ে অনেক দেশে এবারকার গ্রীষ্মটাকে ঠিক গ্রীষ্ম বলা চলে না৷ সেই সঙ্গে আরেকটা চমকে ওঠার মতো খবর: হালফ্যাশানের ফরাসি মহিলারা নাকি অনাবৃত বক্ষে সূর্যস্নান করাটাকে ‘অসভ্য’ বলে মনে করেন৷
বিজ্ঞাপন
অথচ এই ফ্রান্সে কিছুদিন আগেও সমুদ্রসৈকতে মহিলাদের ‘ল্য টপলেস' ছাড়া কল্পনাই করা যেত না৷ কিন্তু নারীবাদের পথিকৃৎ ‘এল' ম্যাগাজিনের একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৩৫ বছরের কম বয়সের ফরাসি মহিলাদের মাত্র দুই শতাংশ আজও জনসমক্ষে বক্ষদেশ উন্মুক্ত করতে রাজি৷ অর্থাৎ ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায় ব্রিজিট বার্ডো-র কায়দায় অর্ধনগ্নতার যুগ বোধহয় সত্যই শেষ হয়েছে কিংবা শেষ হতে চলেছে৷
ফরাসি মহিলাদের নাকি সংকোচ বেড়েছে৷ নগ্নতাকে আজকাল নাকি ‘‘ভালগার'', অর্থাৎ অশিষ্ট কিংবা ইতর বলে বিবেচনা করছেন ফরাসি মহিলারা৷ সেখান থেকে যদি ফেরা যায় গত শতাব্দীর ষাটের দশকে, তাহলে শোনা – এবং দেখা যাবে আরেক কাহিনি ও দৃশ্য: নারীবাদকে ‘সেক্সি' করার লক্ষ্যে ‘কোট দাজুর', বা নীল সৈকতে টপলেস হয়েছিলেন অভিনেত্রী ব্রিজিট বার্ডো৷ যুক্তি ছিল: পুরুষদের যখন ওপরে কিছু পরতে হয় না, তখন মহিলাদেরই বা পরতে হবে কেন? খোদ ভ্যাটিকান থেকে আপত্তি উঠেছিল সেবার৷
জার্মানিতে গ্রীষ্মের শেষ ক’টা দিন
গ্রীষ্মকালের ঝলমলে রোদ মানেই ছুটি কাটানো, সূর্যস্নান, বারবিকিউ করা, সাইকেল চালানো আরো কত কী! তাই গ্রীষ্ম শেষ হয়ে যাবার আগের দিনগুলোতে সবাই কিছু না কিছু করার সুযোগে থাকে৷
ছবি: Rido - Fotolia.com
নীল আকাশ
গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ ঝলমলে রোদ আর নীল আকাশ মানেই ছুটি কাটানো, সূর্যস্নান, বারবিকিউ করা, সাইকেল চালানো, বাগান করা আরো কত কী! এই গরমকাল আসার আগে কত প্রস্তুতিই না থাকে সবার, কিন্তু কেমন করে যেন হঠাৎ করেই গ্রীষ্মটা চলে যায় টেরই পাওয়া যায়না৷ তাই শেষের দিনগুলোতে সবারই কিছু না কিছু করার সুযোগে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
কী আনন্দ!
এ বছরের গ্রীষ্ম যে ভালো হয়েছে এতে কারও কোনো সন্দেহ নেই৷ মাঝে কয়েকদিন কিছুটা ঠান্ডা আর বৃষ্টি হওয়া ছাড়া মোটামুটি সুন্দর আবহাওয়াই পেয়েছি আমরা৷ তবে গ্রীষ্ম এখন যাই যাই করছে, অর্থাৎ ক্যালেন্ডারের পাতায় ২১শে সেপ্টেম্বর গ্রীষ্ম ঋতুর শেষ দিন৷ তাই শেষের দিনগুলো ধরে রাখার আনন্দে মেতেছে সবাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আহ কী আরাম !
আজ তাপমাত্রা প্রায় তিরিশ ডিগ্রি৷ শুধু তাই নয় আজ হচ্ছে শুক্রবার (০৬০৯১৩) অর্থাৎ সপ্তাহান্তের শুরু৷ তাই আর কোনো কথা নয়, গ্রীষ্মের শেষ আনন্দটুকু উপভোগ করতে সোজা পানিতে নেমে পড়া৷ যেমন ভাবা তেমনি কাজ, দেখুন ছবিতে !
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রিল করা
গ্রীষ্মে বেশ কয়েকদিনই হয়তো বারবিকিউ করা হয়েছে, জার্মানরা যাকে ‘গ্রিল’ বলে৷ তারপরও ঝলমলে রোদ আর গরম হলেই যেন গ্রিল করার কথা মনে হয়৷ হেমন্ত আসার আগে আগে যেহেতু আবহাওয়ার তেমন ঠিক থাকেনা৷ অর্থাৎ কখনো রোদ আর গরম, আবার হঠাৎ করেই বাতাস, বৃষ্টি আর ঠান্ডা! তাই এমন সুন্দর দিনকে কাজে লাগানো চাই৷
ছবি: Fotolia/stockcreations
গ্রীষ্মকে বিদায় জানাতে বাগানে শেষ পার্টি
জার্মানিতে গত শীত ছিলো খুবই লম্বা, যেন কিছুতেই যেতে চাইছিলো না৷ সবাই হাঁপিয়ে উঠেছিলো শীতের কষ্টে৷ শীত যেমন কষ্টের ছিলো গরমও তেমনি আনন্দের হয়েছে এ বছর৷ আর সেই আনন্দকে স্মরণ করে রাখতে আবারও গার্ডেন পার্টির আয়োজন করেছে অনেকে৷
ছবি: DW/N.Steudel
ভিটামিন ডি
ছুটিতে সূর্যস্নান করে গায়ের রং তামাটে করে ফিরেছিলো, ক’দিন অফিসের বদ্ধ ঘরে বসে থেকে যা ফিকে হয়ে এসেছে৷ তাই গ্রীষ্মের শেষ প্রান্তে আর সপ্তাহান্তের শুরুতে যথেষ্ট সূর্যের তাপ দেখে শুয়ে পড়লেন খোলা মাঠে৷ বলা হয়, গ্রীষ্মে কেউ সূর্যের তাপ থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করলে সে শীতকালে অনেকটাই সুস্থ থাকতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়া
জার্মানরা অনেকে শীতকালেও সাইকেল চালায়৷ তবে শীত আর গ্রীষ্মে সাইকেল চালানোতে রয়েছে বিরাট তফাত৷ শীতকালে অনেকটা প্রয়োজনে সাইকেল চড়া, আর গ্রীষ্মে মনের আনন্দে রাইন নদীর তীর ঘেঁষে ঘুরে বেড়ানো৷ ক্লান্ত হলে কোথাও বা একটুখানি জিরিয়ে নেওয়া, এটা শুধু গরমকালেই সম্ভব তাই আবারো বেড়িয়ে পড়লেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মজা করে আইসক্রিম খাওয়া
জার্মানিতে সারা বছরই আইসক্রিমের দোকানগুলো খোলা থাকে৷ তবে স্বাভাবিকভাবেই গ্রীষ্মকালে বেশি আইসক্রিম বিক্রি হয়৷ আর বাইরে বসে আইসক্রিম খাওয়ার আনন্দ শুধু গ্রীষ্মকালেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাগান করা
বাগানপ্রেমীরা শীতের শেষে অপেক্ষা করেন, কখন আবহাওয়া ভালো হবে আর মনের সুখে তাদের বাগান সাজাবেন৷ কারণ বাগানে বিভিন্ন রং-এর আর নানা জাতের ফুল ফোটানো আর সবজি ফলানো যে শুধু গরমকালেই সম্ভব৷ তাই গ্রীষ্মের শেষ দিনগুলোতে ফুল আর ফলের বিচি যত্ন করে রেখে দেন আগামী গরমের জন্য৷
ছবি: Rido - Fotolia.com
9 ছবি1 | 9
ফ্রান্স কিন্তু রক্ষণশীলদের সোচ্চার প্রতিবাদ সত্ত্বেও তথাকথিত ‘মোনোকিনি'-কে নিষিদ্ধ করতে অস্বীকার করে: এ ছিল সত্তরের দশকের ঘটনা৷ তাহলে পঞ্চাশ বছর পরে আজ যে ‘‘ল্য টপলেস''-এর মৃত্যু ঘটতে চলেছে, সেটা কি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক? ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ও আর কিছু নয়, ফ্যাশন বদলে গেছে, তাই টপলেস-ও উধাও হচ্ছে৷ হালের ফ্যাশান হলো পূর্ণাঙ্গ, ওয়ান-পিস সুইমস্যুট – যাতে নজরটা যায় নিতম্বের দিকে৷
সমাজতত্ত্ববিদরা কিন্তু বলছেন, টপলেস-এর অন্তর্ধানের অর্থ, ফরাসি মহিলারা নারীবাদের অর্জন বিস্মৃত হতে বসেছেন৷ নারী স্বাধীনতা অর্জন করার পর আজকের মহিলারা গতানুগতিকতার অনুগামী, এমনকি অলস হয়ে পড়েছেন৷ উগ্র নারীবাদীদের প্রজন্ম আজ প্রবীণ; অপরদিকে তথাকথিত মিলেন্নিয়াম জেনারেশন পুনরায় প্রথাগত রক্ষণশীল মূল্যবোধের দিকে মোড় নিয়েছে৷
সমাজতত্ত্ববিদদের পরে আসছেন মনস্তত্ত্ববিদরা৷ তাঁরা বলছেন, ইউরোপে আর্থিক সংকটই টপলেস-এর অকালমৃত্যুর কারণ৷ বক্ষ অনাবৃত করার অর্থ ঝুঁকি নেওয়া, বিপ্লব করা; সেক্ষেত্রে এই মাগগিগণ্ডার বাজারে সব কিছু রেখে-ঢেকে রাখাটাই নিরাপদ!
‘এল' ম্যাগাজিন বলছে, মহিলাদের টপলেস বর্জন করার আসল কারণ হলো স্কিন ক্যানসারের ভয়!
শেষ একটা কারণ দেখানো যেতে পারে এবং দেখানো হয়েছে: মহিলারা শান্তিতে সূর্যস্নান করবেন কোথায়, যদি পুরুষরা সর্বত্র ফোন ক্যামেরা হাতে উঁকিঝুঁকি মারেন?