শুধু সূর্যস্নান নয়, যখন সূর্যের তেজ কম থাকে, তখন তারা চলে যায় সোলারিয়ামে৷ বিশেষ ধরনের এক বেডে শুয়ে থাকেন, উদ্দেশ্য সেই একই৷ গায়ের রংটা তামাটে মানে একটু শ্যামলা, মসৃণ করে তোলা৷ আর এই কাজ করতে গিয়ে চামড়ার অনেক ক্ষতিও করে ফেলে তারা৷ বাড়াবাড়ি রকম সূর্যস্থান আর সোলারিয়াম অনেকের চামড়া অল্প বয়সেই বুড়ো করে দেয়৷ চামড়ার বিভিন্ন রোগ, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে এসবের ফলে৷ কিন্তু নিজেকে আরো আবেদনময়ী করে তুলতে সেসব আমলে নেয় না অনেক তন্বী৷
ত্বক ক্যানসার ঠেকাতে রোদ থেকে দূরে থাকুন
শরীরে ভিটামিন ডি-এর জন্য একদিকে সূর্যের তাপ যেমন প্রয়োজন, তেমনি অন্যদিকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শরীরে অতিরিক্ত হলে তা ত্বক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ ত্বক ক্যানসার ঠেকাতে কিছু উপায় থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
ঘণ্টার পর ঘণ্টা সূর্যস্নান করেন
শীতের দেশের মানুষরা একটু খানি রোদ পেতে কত টাকা খরচ করে ছুটি কাটাতে যান সমুদ্র সৈকতে, সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সূর্যস্নান করেন৷ যার স্থায়ীত্ব হয়ত মাত্র দু’সপ্তাহ৷ অন্যান্য ক্যানসারের মধ্যে এখন ত্বক ক্যানসারই হয় সবচেয়ে বেশি৷ তার মধ্যে রয়েছে সাদা এবং কালো ত্বক ক্যানসার৷ তবে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে শুধু ক্যানসারই হয় না, ত্বকে বলিরেখা ও দাগ পড়ে আর ত্বক যায় বুড়িয়ে, হয় অ্যালার্জিও৷
ছবি: DW/R. Richter
সাদা এবং কালো ত্বক ক্যানসার
সাদা ত্বক ক্যানসার, অর্থাৎ যা দেখতে হালকা গোলাপি থেকে বাদামি রং-এর, বেশিরভাগই হয় মুখমণ্ডল, গলা, কান, হাত এবং ঠোঁটে৷ জার্মানিতে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় আনুমানিক ২২ হাজার মানুষ৷ আর কালো ত্বক ক্যানসার ‘মেলানোম’ নামে পরিচিত, যাতে আক্রান্ত হয় ২৮ হাজার৷ তবে এই ক্যানসার বেশি পরিচিত এবং মারাত্বক৷ এ ক্যানসার প্রথমদিকে হয়ত তেমন বোঝা যায় না৷ এটা অনেকটা আঁচিলের মতো মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সানক্রিম
বলা বাহুল্য ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে শরীরের নানা সমস্যা দেখা দেয়, তবে শরীরে অতিরিক্ত সূর্যের তাপই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ তাই রোদ শরীরের অবশ্যই দরকার, তবে তা পরিমিত, অর্থাৎ ২০ থেকে ২৫ মিনিটের বেশি নয় এবং তা সকাল দশটার আগে এবং বিকেল চারটার পরে৷ তাছাড়া বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই এলএসএফ ৫০+সানক্রিম ব্যবহার করা উচিত৷ পরামর্শ ত্বক বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: Raedle/Getty Images
গ্রীষ্ম প্রধান দেশে
অনেকের ধারণা, গ্রীষ্মের কড়া রোদই কেবল ক্ষতিকর তাই শীতকালের রোদে যতক্ষণ খুশি থাকা যায়! এই ধারণা মোটেই ঠিক নয়৷ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ বেশি তখনই ক্ষতি করে, সারা বছরই ১০টা থেকে চারটা – এই সময়টুকু সরাসরি সূর্যের তাপ গ্রহণ না করাই ভালো৷ কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার সময়, রিক্সা, গাড়ি বা বাসে বসে থাকায় সময় অবশ্যই সানক্রিম ব্যবহার করা উচিত তা বাইরে বের হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে মুখ, হাত, পা, গলা এবং ঠোঁটে৷
ছবি: DW/A. Islam
শুধু সৌন্দর্য রক্ষায় নয়!
পশ্চিমা বিশ্বের মেয়েরা যেমন একটু রোদে পোড়নো গায়ের রং কে পছন্দ করে আর প্রাচ্যের মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো৷ সৌন্দর্য সচেতন মেয়েরা মুখমণ্ডল বা গায়ের রং কালো হয়ে যাবার ভয়ে তারা রোদে যেতে চায় না৷ তাদের প্রতি পরামর্শ, রোদে না গেলেও অন্তত গ্রীষ্মকালে মেকআপের আগে হালকা সানক্রিম ব্যবহার করলে গায়ের রং সুন্দর থাকার পাশাপাশি ত্বককে ক্যানসার থেকেও দূরে রাখবে৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
সানগ্লাস
আরো কিছু সতর্কতা, একটু মোটা কাপড়ের পোশাক পরা এবং সম্ভব হলে মাথা ঢেকে রাখা৷ চোখকে বাঁচাতে ‘আল্ট্রা ভায়োলেট রে-প্রুভ’ সানগ্লাস পরতে হবে৷ ত্বকের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো পরিবর্তন হলো কিনা, কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত৷ আর সানগ্লাস, হ্যাট নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু আধুনিক হলেই হবে না, যতটা সম্ভব চোখ এবং আশেপাশে ঢেকে রাখে সেরকম রোদ চশমা ব্যবহার করা শ্রেয়৷
ছবি: Colourbox
ত্বক ক্যানসার ও পেশাজীবী
বিশেষ করে যারা মাঠ, ক্ষেত, বাড়ি তৈরির মিস্ত্রির কাজ – সোজা কথায় যারা বাড়ির বাইরে রোদের ভেতর কাজ করে তাদের ত্বকের কোষে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি বা আল্ট্রা ভায়োলেট রে এতটাই মারাত্মক যে, জার্মানিতে পেশাগত কারণে যাঁদের এ ধরনের ত্বক ক্যানসার হয়, তাঁদের চিকিৎসার ভার চাকরি দাতা বহন করবে, এই অল্প কিছুদিন আগেই এই নিয়ম স্বীকৃতি পেয়েছে৷
ছবি: imago/R. Lueger
পাইলটদের ক্যানসার বেশি হয়
অন্যান্যদের তুলনায় পাইলটদের ত্বক ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ৷ কারণ অনেক লম্বা সময় গ্লাসের জানালা দিয়ে তাদের শরীর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি গ্রহণ করে থাকে৷ অ্যামেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা একটি গবেষণার ফলাফলে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
8 ছবি1 | 8
অথচ আমাদের দেশের পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ স্বেচ্ছায় বলুন, আর সমাজের চাপে অনেক শ্যামলা বা তথাকথিত ‘কালো' গায়ের রংয়ের মেয়েরা এমনকি এখন ছেলেরাও চায় রং ফর্সা করতে৷ এজন্য নানারকম সাবান, ক্রিমতো আছেই, পাশাপাশি মুখে মাটি থেকে শুরু করে দই, শাকসবজি সবই ঘষে তারা৷ অনেকে আবার প্রখর সূর্যের আলোতে বাইরেও বের হয়না, পাছে আরো কালো হয়ে যায়, সেই ভয়ে৷
অথচ আমাদের এই শ্যামবর্ণ কিন্তু অনেক দিক দিয়েই ভালো৷ ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, কপালের এক পাশে ছোট একটা তিল আছে আমার৷ সেটা হঠাৎ করে একটু বড় হয়ে গেল৷ আমি খেয়াল না করলেও, এক ইউরোপীয় বন্ধুর চোখ পড়লো সেখানে৷ তারপর একরকম বাধ্য করেই আমাকে পাঠালো স্কিন বিশেষজ্ঞের কাছে৷ তিনি একটু দেখেই বললেন, তোমার চামড়া এত ভালো যে, ওটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই৷ আমাদের সাদা চামড়ায় এরকম তিল বিপজ্জনক, তোমার জন্য নয়৷
আমি মনে করি, শুধু চেহারা বা গায়ের ফর্সা রং এখন আর মানুষের গুরুত্ব বাড়ায় না৷ একসময় হয়ত বাড়াতো৷ কিন্তু সময় বদলেছে৷ এখন বরং দেহের গড়ন, ফিটনেস, আচরণ সবকিছু মিলেই তৈরি হয় সৌন্দর্য৷ তাই আবেদনময়ী হতে গায়ের রং নয় বরং ওজন কমিয়ে, ফিটনেস বাড়ানোর দিকে নজর দিলে ভালো৷
আপনিও কী ফর্সা হতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷