ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি-র মতো ক্রিম উপমহাদেশেও অপরিচিত নয়৷ এ ধরনের প্রসাধন দ্রব্যে যে হাইড্রোকুইনোন থাকে, তা ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো ঘানাও এবার তা নিষিদ্ধ করল৷
বিজ্ঞাপন
ঘটনাটা সামান্য মনে হলেও, এর পটভূমিতে রয়েছে ঔপনিবেশিকতা, জাতিবাদ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার এক কলঙ্কিত অধ্যায়৷ ‘কালো? তা সে যতই কালো হোক' লিখে দরদ দেখিয়ে গেছেন যে মহাকবি, তিনিও জানতেন না, তিনি তথাকথিত কালো মেয়েদের কত বড় ক্ষতি করে গেছেন৷
ঔপনিবেশিকতার আমল থেকেই শ্বেতাঙ্গরা প্রভু, কৃষ্ণাঙ্গরা কর্মচারী, করণিক, ভৃত্য বা দাস৷ ঔপনিবেশিকতার অন্ত ঘটলেও সেই সাদা চামড়ার ভূত মানুষজনের ঘাড় থেকে নামেনি৷ তবে সাদা চামড়ার লোভ সাহেবরা আসার অনেক আগে থেকেই ছিল, অন্তত ভারতের মতো দেশে, যেখানে উঁচুজাতের মানুষ চেনা যেতো তার গায়ের রং দেখে৷ সব মিলিয়ে এই সাদা-কালোর বর্ণপ্রথা কবে না জানি বিয়ের বাজারে ঢুকে গেছে৷ গোড়ায় ‘উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ', ‘রংটা একটু চাপা', এই সব বলে কাজ চালানো গিয়েছিল৷ পরে এলো ‘স্কিন লাইটেনিং প্রোডাক্টদের' বাজার৷ তার আগেই আবার সিনেমা আর বিজ্ঞাপনের জগতে প্রায় ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশনের মতো যাদের গায়ের রং একটু বেশি সাদা, তারাই জায়গা করে নিয়েছেন৷ পাত্ররা যেমন ফর্সা পাত্রী খোঁজে, তেমনভাবে গোটা সমাজেই সৌন্দর্য ও সাফল্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে – সাদা চামড়া৷
শ্বেতাঙ্গ তারকাদের কৃষ্ণাঙ্গ জীবনসঙ্গী
পত্রিকা খুললেই আমরা ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপন দেখি৷ সেখানে মেয়েদের অন্যতম গুণ হিসেবে আজও অনেক ক্ষেত্রেই ফর্সা হওয়ার কথা বলা হয়৷ তবে অনেক তারকা কিন্তু তেমনটা করেননি৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Lionel
জর্জ লুকাস
‘স্টার ওয়ার্স’ নির্মাতা জর্জ লুকাস ২০১৩ সালে মার্কিন ব্যবসায়ী মেলডি হবসনকে বিয়ে করেন৷ হবসন বর্তমানে শ্রেক, মাদাগাস্কার – এসব অ্যানিমেটেড মুভি তৈরির জন্য বিখ্যাত ‘ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন’ এর চেয়ারম্যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
ডেভিড বোয়ি
ব্রিটিশ রক সংগীতের কিংবদন্তি ডেভিড বোয়ি ১৯৯২ সালে সোমালি-মার্কিন মডেল ইমান-কে বিয়ে করেন৷ ২০০০ সালে তাঁদের একমাত্র সন্তান জন্ম নেয়৷ ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি বোয়ি মারা গেছেন৷
ছবি: AP
হাইডি ক্লুম
জার্মানির শীর্ষ মডেল হাইডি ক্লুম ২০০৫ সালে ব্রিটিশ সংগীত শিল্পী সিল-কে বিয়ে করেন৷ ২০১৪ সালে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Buck
রবার্ট ডি নিরো
দু’বার অস্কারজয়ী অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেন মার্কিন অভিনেত্রী, গায়িকা ও সমাজসেবিকা গ্রেস হাইটাওয়ার-কে৷
ছবি: picture alliance/landov/R. Pitts
মারিয়া ক্যারি
হিরো, ভিশন অফ লাভ, ইমোশনস, উই বিলং টুগেদার গানগুলোর জন্য মারিয়া ক্যারির খ্যাতি বিশ্বজোড়া৷ ২০০৮ সালে তিনি বিয়ে করেছিলেন মার্কিন কমেডিয়ান, ব়্যাপার ও অভিনেতা নিক ক্যাননকে৷ ২০১৪ সালে তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে৷
ছবি: Charley Gallay/Getty Images For Nickelodeon
ডিয়র্ক নোভিৎস্কি
জার্মানির প্রখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড় নোভিৎস্কি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এনবিএ লিগে ‘ডালাস মেভেরিকস-এর হয়ে খেলছেন৷ সুইডেনের যমজ ফুটবলার মার্টিন ও মার্কুস ওলসন-এর বোন জেসিকা ওলসনকে ২০১২ সালে বিয়ে করেন নোভিৎস্কি৷ তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
অলিভিয়ার মার্টিনেস
ফরাসি এই অভিনেতা একসময় অনেক তারকার সঙ্গে ‘ডেটিং’ করেছেন৷ সে কারণে ট্যাবলয়েডগুলোতে তাঁর পরিচয় ছিল ‘উইমেনাইজার’ হিসেবে৷ ২০১৩ সালে তিনি বিয়ে করেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী হ্যালি বেরিকে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Lionel
7 ছবি1 | 7
পশ্চিমে জাতিবাদের চেহারা একরকম, উপমহাদেশে একরকম, আবার আফ্রিকায় একরকম৷ মনে রাখতে হবে, ঘানায় স্কিন ব্লিচিং করার প্রসাধন দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন ‘মাত্র’ ৩০ শতাংশ মহিলা৷ সে তুলনায় নাইজেরিয়ায় ক্রিম মেখে ফর্সা হবার চেষ্টা করেন শতকরা ৭৭ ভাগ ও সেনেগালে শতকরা ৫২ থেকে ৬৭ ভাগ মহিলা (ডেজ্ড অ্যান্ড কনফিউজ্ড পত্রিকার পরিসংখ্যান)৷
আফ্রিকার এক দরিদ্র দেশ ঘানার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি এবার ঘোষণা করে বসলেন যে, ২০১৬ সালের আগস্ট মাস থেকে ঘানায় হাইড্রোকুইনোন যুক্ত কোনো ধরনের প্রসাধন বিক্রয় করা নিষেধ৷ মাত্র দশ বছর আগে পদার্থটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়, কেননা হাইড্রোকুইনোন ক্যানসার ঘটায় কিনা, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি৷ পদার্থটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ৷ এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ঘানা, একটি কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত দেশ৷ ঘানায় হাইড্রোকুইনোন যুক্ত স্কিন ব্লিচিং ক্রিমের ব্যবহার যেমন প্রচলিত, তেমনই কেউ স্বীকার করতে চান না যে, তিনি এই ক্রিম ব্যবহার করেন৷
অর্থাৎ আমাদের তালিকায় আরো যোগ হলো লজ্জা আর ভণ্ডামি৷ সাদা বা ফর্সা হবার লোভ এমনই৷
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশেও ফেয়ারনেস ক্রিম নিষিদ্ধ করা উচিত? লিখুন নীচের ঘরে৷
সুন্দর, সুস্থ হতে ছুরির নীচে
সুন্দর হতে; সুস্থ থাকতে কে না চায়? অনেকে তো সুন্দর হতে, আরেকটু ভালো থাকতে প্লাস্টিক সার্জারিও করান৷ সারা বিশ্বে বছরে অন্তত ১ কোটি মানুষ সৌন্দর্য বাড়াতে ছুরির নীচে নিজেকে সঁপে দেন৷ কত রকমের অস্ত্রোপচার হয় একটু দেখুন৷
ছবি: Colourbox/A.Minde
স্তন ছোট করা
আজকাল অনেকেই স্তন ছোট করান৷ স্তন ছোট করানো অবশ্য সৌন্দর্য বাড়ানোর ব্যাপার নয়, স্তন বেশি বড় হলে ঘাড় এবং মেরুদণ্ডে খুব ব্যথা হয়৷ তা থেকে রেহাই পেতেও স্তনে প্লাস্টিক সার্জারি করান অনেকে৷
ছবি: Colourbox/K.Dmitrii
যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার
যৌনাঙ্গের আকার-আকৃতির কারণেও অনেক নারী অনেক কষ্ট ভোগ করেন৷ দৌড়াতে বা সাইকেল চালাতে গিয়ে ব্যথায় অস্থির হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে যেতে হয়৷ উন্নত বিশ্বে এই ব্যথা থেকে পরিত্রানের জন্যও অস্ত্রোপচারের নজির আছে৷
ছবি: Colourbox
নাক ‘ঠিক’ করা
সাধারণত চেহারা যাতে আরো সুন্দর দেখায়, সেই উদ্দেশ্যেই নাকেরও প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়৷ নাকের এই সার্জারির নাম ‘রিনোপ্লাস্টি’৷
ছবি: Colourbox/A.Minde
ঠোঁট সুন্দর, সব সুন্দর!
ঠোঁট সুন্দর না হলে অনেকের কাছে সব সৌন্দর্যই নাকি অসম্পূর্ণ৷ তাই ঠোঁটও অস্ত্রোপচার করানো হয়৷
ছবি: Colourbox
স্তন বড় করা
অনেক নারী অতি ছোট স্তন নিয়ে খুব হিনমন্যতায় ভোগেন৷ তাঁদেরও নিশ্চিন্ত করছে প্লাস্টিক সার্জারি৷ ভালো হাসপাতাল, ভালো সার্জন পেলে ছোট স্তন বড় করানো এখন আর কোনো ব্যাপারই নয়৷
ছবি: Colourbox
ভুড়ি কমানো
ভুড়ি কমাতেও করানো হয় প্লাস্টিক সার্জারি৷ বিশ্বে যে বছরে দশ কোটি মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করান তাদের মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য একটা অংশ শুধু ভুড়ি কমিয়েই নিজেকে ফিটফাট করতে চান৷
ছবি: Colourbox
ঘাড়, কপাল আর মুখমণ্ডলেও....
হ্যাঁ, ঘাড়, কপাল আর মুখমণ্ডলেও হয় প্লাস্টিক সার্জারি৷ বেশি দাগ বা বলিরেখা পড়লেই সাধারণত এ সব জায়গায় প্লাস্টিক সার্জারি করানো হয়৷
ছবি: Colourbox
চোখের পাতা
চোখের পাতায় সমস্যা হলে বা ভারি হয়ে গেলেও ভীষণ মুশকিল৷ এমনটা হলে তরতাজা মানুষকেও বড় বেশি ক্লান্ত দেখায়৷ খুব ধীরে ধীরে চোখের পাতা পড়লে সেরকম না হওয়াই স্বাভাবিক, তাই না? ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচার এই সমস্যা দূর করে দিতে পারে৷