প্রথা ভেঙে শিল্প বার বার নিত্যনতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে চলে৷ জার্মানির এক ইলাস্ট্রেটর অতি সাধারণ উপকরণ কাজে লাগিয়ে ত্রিমাত্রিক সৃষ্টিকর্মে মেতে থাকেন৷ ডিজিটাল নয়, বাস্তব জগত নিয়ে তাঁর সৃষ্টি গোটা বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance
বিজ্ঞাপন
প্রথা ভেঙে শিল্প সৃষ্টি
04:14
This browser does not support the video element.
রবিবার সকালের প্রাতরাশ, তবে কাগজের তৈরি৷ খেলার মার্বেল দিয়ে তৈরি আঙুর৷ শাকসবজি দিয়ে তৈরি মাংস৷ উল বা পশম দিয়ে তৈরি মস্তিষ্ক৷ খাবারদাবার দিয়ে তৈরি আস্ত একটা মাথা৷ জার্মানির অঙ্কনশিল্পী সারা ইলেনব্যার্গার এমন অপ্রত্যাশিত উপকরণ নিয়ে খেলতে ভালবাসেন৷ তাঁর চারিপাশের পরিবেশের প্রায় সবকিছুই তাঁকে প্রেরণা জাগায়, তাঁর সৃষ্টির উপকরণ হয়ে ওঠে৷
বার্লিনে নিজের স্টুডিওর কাছে এক দোকানে গোটা সপ্তাহের বাজারও অনায়াসে তাঁর কাজের অংশ হয়ে পড়ে৷ সারা বলেন, ‘‘আমার সব উপকরণই ভালো লাগে, তবে ফলমূল ও শাকসবজি অনেকদিন ধরে আমার প্রিয়৷ এর অন্যতম কারণ অবশ্যই এগুলির বৈচিত্র্য, উজ্জ্বল রংয়ের বাহার৷ তাছাড়া শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা জানা না থাকায় বেশ একটা চমক থাকে৷ মনে রাখতে হবে, এটা অরগ্যানিক উপাদান৷''
খাবারের তালিকায় যখন পোকামাকড়
বৈশ্বিক খাদ্য শিল্প ইতোমধ্যে প্রকৃতির উপর চাপ সৃষ্টি করে ফেলেছে৷ মোটের উপর জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে খাবারের চাহিদা মেটাতে বিকল্প ভাবা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ এক্ষেত্রে আহারযোগ্য পোকামাকড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
দুপুরের খাবারে পঙ্গপাল
বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে চাষাবাদের উপযোগী জমিও কমছে৷ ফলে গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ আর মাংস উৎপাদনের কারণেও পরিবেশের ওপর চাপ পড়ছে৷ এই চাপ কমাতে অনেকে কীটপতঙ্গ খাওয়ার কথা ভাবছেন৷ ছবিতে টোকিওতে এক ব্যক্তিকে ডিমের সঙ্গে পঙ্গপাল খেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Yamanaka
কঙ্গোতে খাওয়া হচ্ছে শুঁয়োপোকা
খাদ্য হিসেবে কীটপতঙ্গ খাওয়া হচ্ছে বহুকাল ধরে৷ তবে এই চর্চা গোটা বিশ্বে ছড়ায়নি৷ এক দেশে যেটা খাওয়া হয়, অন্য দেশে হয়ত সেটা খাওয়ার কথা ভাবাই যায় না৷ ছবিতে কঙ্গোতে অলিভ অয়েলের সঙ্গে পোড়া শুঁয়োপোকা খাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.D. Kannah
ধীরে ধীরে চর্চা শুরু হচ্ছে
ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকায় খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়ের ব্যবহার এখনো দুর্লভ এবং মানুষের মধ্যে এক্ষেত্রে এক ধরনের সঙ্কীর্ণতা কাজ করে৷ তবে পরিবেশবিদরা বিষয়টি জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছেন৷ টেকসই খাদ্যের উৎস হিসেবে পোকামাকড়কে বিবেচনা করছেন তারা৷ ছবিতে সিডনির এক শেফ তাঁর তৈরি ঝিঁঝিঁ পোকা দিয়ে রান্না করা খাবার দেখাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
পাম অয়েলের বিকল্প?
ইন্দোনেশিয়ার স্টার্টআপ বাইটব্যাক পাম অয়েলের বিকল্প হিসেবে কীটপতঙ্গ ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে৷ ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদনের এক বিতর্কিত বিষয়, কেননা, এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ ব্যবহার এক ভালো বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতারা৷
ছবি: Founders Valley/Biteback Indonesia
কীটের ললিপপ
২০৫০ সাল নাগাদ মাংসের চাহিদা বর্তমানের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ তবে এই পরিমান মাংস উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিজমি এবং প্রাণীখাদ্য তখন থাকবে কিনা তা এক বড় প্রশ্ন৷ এক্ষেত্রে মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে কীটপতঙ্গ৷ ছবিতে কীট এবং ঝিঁঝিঁপোকার তৈরি ললিপপ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Bleier
মধুর বদলে খান মৌমাছি
কীটপতঙ্গ বিকল্প খাদ্য হতে পারে সত্যি, তবে সেটাকে সার্বজনীন রূপ দিতে আরো সময় এবং উদ্যোগ প্রয়োজন৷ যেসব দেশে এ ধরনের খাদ্যের চর্চা এখনো শুরু হয়নি, সেসব দেশে এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি৷ ছবিতে বার্লিনে একজনকে রোস্ট করা মৌমাছি দেয়া কেক খেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
6 ছবি1 | 6
বার্লিনের ভেডিং পাড়ায় স্টুডিও৷ সেখানে সারা ইলেনব্যার্গার গ্রাফিক ডিজাইনের চিরায়ত কাঠামো ভেঙেচুরে নতুন ধারা সৃষ্টি করছেন৷ বিজ্ঞাপন, পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অথবা শুধু শিল্পের খাতিরেই তিনি নানা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন৷ কখনোই সেগুলি দ্বিমাত্রিক হয় না৷ তাঁকে থ্রিডি ইলাস্ট্রেটর বলা চলে৷ তিনি শিল্প, গ্রাফিক্স ও ফটোগ্রাফির সীমানায় বিচরণ করেন৷ মূলত অ্যানালগ জগতের জন্যই তিনি কাজ করেন৷ তিনি মিউনিখ শহরে বড় হয়েছেন৷
সারা বলেন, ‘‘সম্ভবত ছোটবেলা থেকেই আমি নানা উপকরণ জুড়ে সৃষ্টির কাজে মেতে উঠি৷ আমি আসলে সেই প্রজন্মের শিশু, যারা প্রায় কোনো টেলিভিশন, কম্পিউটার বা ডিজিটাল জগত ছাড়াই বড় হয়েছে৷ তাই যা ছিল, তাই নিয়ে ভাঙাগড়ার জন্য যথেষ্ট সময় ও জায়গা ছিল৷ মজার কথা, মিউনিখে আমার বাবার একটা রেস্তোরাঁ ছিল৷ তখন আমার বয়স চার বা পাঁচ৷ রেস্তোরাঁর ভাঁড়ার ঘরই ছিল আমার খেলার জায়গা৷ তাই খাবারদাবারের সঙ্গে বরাবরই আমার একটা সংযোগ ছিল৷''
লন্ডনে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর তিনি মিউনিখে তাঁর তৎকালীন বন্ধুর সঙ্গে গয়নার এক ব্র্যান্ড চালু করেন৷ কিন্তু সৃজনশীলতার বিকাশ সেখানেই থেমে যায়৷ তিনি তখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিজের থ্রিডি গ্রাফিক প্রকাশের চেষ্টা করছিলেন৷ সেই কাজে তিনি বিপুল সাফল্যও পান৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাঁর ছবি প্রকাশিত হয়েছে৷ সারা ইলেনব্যার্গার বলেন, ‘‘আমার ধারণা, হাতে করে কিছু ধরতে পারলে এবং সৃষ্টির কাজে নিজস্ব শক্তি তার মধ্যে ঢেলে দিলে তার ফল অসাধারণ হয়৷ সেটি নিখুঁত না হলেও অনেক বেশি মানবিক৷ দ্বিমাত্রিক আদর্শ কম্পিউটার সারফেসের তুলনায় আমার কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য৷''
জার্মানির অদ্ভুত সব সবজি
যাঁরা শাক-সবজি খেতে পছন্দ করেন, জার্মানি তাঁদের জন্য মজার এক জায়গা৷ নানা রকম সবজিতে ভরপুর হলেও, যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁদের মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য৷ কোনো কোনো সবজির হয়ত নামই শুনেননি কোনোদিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brichta
কোলরাবি
উপমহাদেশে এই সবজি অবশ্য বেশ পরিচিত৷ বাংলায় একে বলা হয় ওলকপি৷ কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অনেক অঞ্চলেই পাওয়া যায় না এই সবজি৷ রসালো এবং কচকচে এই সবজি কাঁচাও খাওয়া যায়, আবার সেদ্ধ করে নানা রকম সসের সাথেও পরিবেশন করা যায়৷ জার্মানরা অবশ্য তরকারিতে রান্না করে ‘কোলরাবি’ খাওয়ার প্রক্রিয়াটি জানেন না৷
ছবি: picture-alliance/S. Persch
স্যাভয় বাঁধাকপি
দেখতে বাংলাদেশের বাঁধাকপির মতোই, কিন্তু পাতাগুলো একটু বেশি সবুজ আর কোঁকড়ানো, তাই না? খেতেও সাধারণ বাঁধাকপির চেয়ে বেশ আলাদা ভিটামিন-সি পরিপূর্ণ এই সবজি৷ স্যুপ বা স্ট্যু তৈরির জন্য এই কপিটি জার্মানদের খুব পছন্দের৷ অন্য খাবারের সাথে সেদ্ধ ‘স্যাভয়’ কপিও প্রায়ই খাওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: eyetronic/Fotolia
র্যুবশ্টিল
এক ধরনের সবুজ শালগমের ডাঁটাকেই এই নামে ডাকেন জার্মানরা৷ ইংরেজি নাম ‘গ্রিন টার্নিপ’৷ দেশটির পশ্চিম রাইনল্যান্ড এবং পার্শ্ববর্তী দেশ নেদারল্যান্ডসে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়৷ কেটে টুকরো করে আলুর সাথে মিশিয়ে বেশ মজার এক খাবার তৈরি হয়৷ বসন্ত বা শরৎ, এই দুই ঋতুতেই ‘র্যুবশ্টিল’ চাষ করেন কৃষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
বন্য রসুন
রসুন তো রসুনই, এর আবার বন্য কি, আর পোষা কি! এমন ভাবাটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু বনে জন্মানো এই রসুন সাধারণ রসুনের চেয়ে অনেক কড়া স্বাদের৷ জার্মানরা একে ডাকেন ‘বেয়ারলাউখ’ নামে৷ জার্মানিতে বন্য রসুন অনেক জনপ্রিয়৷ স্যুপ, সালাদ, এমনকি পনিরেও ব্যবহার করা হয় ‘বেয়ারলাউখ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/blickwinkel/H. P. Schaub
ব্ল্যাক সালসিফাই
ব্ল্যাক সালসিফাই এক ধরনের গাছের শেকড়৷ মূল সবজি সাদা হলেও এর চামড়া কালো হওয়াতেই এমন নাম৷ ‘শোয়ার্ৎস ভুর্সেল’ ‘গরিবের অ্যাসপারাগাস’ বা ‘শীতের অ্যাসপারাগাস’ নামেও ডেকে থাকেন জার্মানরা৷ জার্মানদের অতিপ্রিয় সাদা অ্যাসপারাগাস শীতকালে পাওয়া যায় না৷ তখন বিকল্প হিসেবে সেদ্ধ আলু ও মাখন দিয়ে এই ‘শোয়ার্ৎস ভুর্সেল’ খেয়ে থাকেন জার্মানরা৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/R. Koenig
সাদা অ্যাসপারাগাস
ওপরের ছবিতে যে সবজি দেখা যাচ্ছে, সেটি সত্যিকারের অ্যাসপারাগাস৷ তবে অন্যান্য দেশে সবুজ অ্যাসপারাগাস বেশি জনপ্রিয় হলেও জার্মানদের পছন্দ এর সাদা প্রজাতি৷ শীত ধীরে ধীরে কমতে থাকে, জার্মানরাও প্রস্তুত হন অ্যাসপারাগাসের জন্য৷ এপ্রিলের শেষ থেকে বাজারে আসতেই ভিড় করে সবাই কিনে নেন পছন্দের এই সবজি৷
ছবি: Imago/Strussfoto
পার্সলের শেকড়
গাজর, মূলার মতোই আরেক ধরনের শেকড়-সবজি এই পার্সলে৷ তবে সাধারণত এই ধরনের অন্যান্য সবজির তুলনায় আকারে একটু বড় হয় পার্সলে৷ ছবিতে বাম দিক থেকে তৃতীয় সবজিটি হচ্ছে পার্সলে৷ যত কচি, তত মজা, পার্সলের ক্ষেত্রে এমনটাই মনে করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brichta
সাদা মূলা
জার্মানির বাভেরিয়া অঞ্চলে কখনও বিয়ারের সাথে হালকা নাশতার অর্ডার দিলে প্লেটের মধ্যে অন্য খাবারের সাথে ছোট ছোট করে কাটা, মচমচে মূলাও পাবেন৷ জার্মানরা সবসময়ই এই সবজি কাঁচা কাঁচা খেয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/B. Jürgens
8 ছবি1 | 8
সারা ইলেনব্যার্গারের শৈলি বড় আকারেও প্রয়োগ করা সম্ভব৷ তিনি জার্মানিতে নিয়মিত ফ্রান্সের ‘অ্যারমেস' ব্র্যান্ডের দোকানের জানালা ডিজাইন করে থাকেন৷ তিনি চ্যালেঞ্জ ভালোবাসেন৷ সব দিক থেকেই তাঁর সৃষ্টিকর্ম দেখতে সুন্দর হোক, সেটাই তিনি চান৷ বড় প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে তিনি সানন্দে শিল্পী ও মিস্ত্রীদের সঙ্গে কাজ করেন৷
সারা ইলেনব্যার্গার গোটা ইউরোপের সবচেয়ে সফল ইলাস্ট্রেটর-দের অন্যতম৷ গোটা বিশ্বে তাঁর অনবদ্য শৈলির বিপুল চাহিদা রয়েছে৷