নির্বাচনের ফল যা-ই হোক, যে দলই জিতুক প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন চাইলে নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
ফলাফলের গেজেট প্রজ্ঞাপন দেওয়ার পরও নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা রাখতে নির্বাচন কমিশনের এমন অনুরোধে সম্মতি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
কোনো নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে সেই নির্বাচন বাতিল করতে পারবে- এমন এক প্রস্তাব করেছিল নির্বাচন কমিশন।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, "জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) গেজেট হওয়ার পরে আর এই ক্ষমতা থাকে না। আমরা প্রস্তাবটি তৈরি করেছি যেন নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পরেও কিছু করার ক্ষমতা রাখে। আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আরপিওর ৯১ ধারা কমিশনকে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দিয়েছে। তবে পরবর্তীতে তারা আমাদের যুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছে।"
সিটি নির্বাচন গাজীপুর: যেমন দেখা গেল
কোনো কেন্দ্রে প্রচুর ভোটার, কোনো কেন্দ্র ফাঁকা, নৌকার প্রার্থীর সরব উপস্থিতি, টেবিল ঘড়ির এজেন্ট নেই, ইভিএম ভোট দিতে জটিলতা, সিসিটিভিতে সার্বক্ষণিক নজরদারি৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
শান্তিপূর্ণ
আপাত দৃষ্টিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে শান্তিপূর্ণ৷ বড় ধরনের কোন সংঘাত বা সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে সালনার নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
জায়গা নেই
কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের দাঁড়ানোর মতো যথেষ্ট জায়গাও ছিল না৷ যেমন দারুস সালাম মাদ্রাসার কেন্দ্রে লাইন ধরে ভোটকক্ষে প্রবেশে ভোটারদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
প্রচুর ভোটার
কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে সকালের দিকে প্রচুর ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন ডয়চে ভেলের প্রতিনিধিরা৷ ভোটকেন্দ্রের বাইরে ছিল লম্বা লাইনও৷ যেমন গাজীপুর সদরে অবস্থিত মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসার এই কেন্দ্র৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ভোটার নেই
বিপরীত চিত্রও ছিল৷ যেমন দুপুর দিকে মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রটিতে কোন ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি৷ ভোটারের অপেক্ষায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
টেবিল ঘড়ির এজেন্ট নেই
বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ডয়চে ভেলের দুই প্রতিনিধি টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুনের এজেন্ট দেখতে পাননি৷ ভোটকেন্দ্রের বাইরে অন্য মেয়র প্রার্থীদের প্রচুর পোস্টার থাকলেও ছিল না তার পক্ষে তেমন কোন প্রচারের চিত্রও৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সরব নৌকার সমর্থকেরা
তবে সরব ছিলেন মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের সমর্থকেরা৷ কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল তার এজেন্ট৷ গাজীপুরের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী দারুস সালাম মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি৷ বাড়ির পাশের কেন্দ্রে অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট নেই কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘‘আমি তো কাউকে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট দিতে পারব না৷’'
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ইভিএম জটিলতা
লাইনে দাঁড়ানো অনেক ভোটার জানিয়েছেন ইভিএম মেশিনে কীভাবে ভোট দিতে হয় তারা তা জানেন না৷ কয়েকটি ভোট গ্রহণ কক্ষে ইভিএম নিয়ে জটিলতাও লক্ষ্য করা গেছে৷ কোথাও যন্ত্র কাজ করছিল না, কোথাও আঙ্গুলের ছাপ মিলছিল না৷ এতে বিপাকে পড়েন ভোটাররা৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সাড়ে চার হাজার সিসিটিভি
কেন্দ্রগুলোতে বসানো হয়েছিল চার হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি৷ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বসেই সিসিটিভি'র মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণ করেছেন কর্মকর্তারা৷ সিসিটিভির ছবি প্রদর্শনের জন্য ছিল ১৮টি ডিজিটাল ডিসপ্লে৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আটক দুই
সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে দুইজনকে আটকের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন৷ গোপন কক্ষে প্রবেশ ও ভোটদান প্রভাবিত করায় তাদেরকে আটক করা হয়৷ এর মধ্যে একজনকে ৩ দিন আটক রাখার আদেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট৷
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আশাবাদী জায়েদা খাতুন
কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন৷ এসময় তিনি বলেন, ‘‘জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, হানড্রেড পারসেন্ট।' জাহাঙ্গীর বলেন, ‘‘কিছু লোককে তারা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের এজেন্ট তারপরও ঢুকেছে। তারা টঙ্গীতে কয়েকটি জায়গায় এটা করেছিল। আমরা আরও তথ্য নিচ্ছি, কোথাও যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা হয় আমরা গণমাধ্যমের সামনে আসব৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
মেনে নেবেন আজমত উল্লা
ভোট দিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, ‘‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসেছেন৷ যে বড় লাইন দেখা যাচ্ছে এতেই বোঝা যাচ্ছে পুরো গাজীপুরে জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ ....আজকে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে আমি সেই রায় অবশ্যই মেনে নেব৷’’
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
11 ছবি1 | 11
আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ের সময় সংশোধনী প্রস্তাব বাতিল করা হবে না বলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান।
সংসদে বিল হিসেবে পেশ করার আগে এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে রাশিদা সুলতানা বলেন, "আইন মন্ত্রণালয় বলেছে যে আঙুলের ছাপ ডেটাবেজে থাকা আঙুলের ছাপের সঙ্গে না মিললেও কিছু ভোটারকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, এটি প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই।"
নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বলেছেন, বিধিমালার মাধ্যমে নির্বাচন কর্মকর্তাদের এসব ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।"
বর্তমানে আঙ্গুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা একটি ভোটকেন্দ্রে এক শতাংশ পর্যন্ত ভোটারকে ইভিএমের মাধ্যমে তাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দিতে পারেন। কয়েক মাস আগে এই বিষয়টি আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলে কমিশন।
গত বছরের ৮ আগস্ট কমিশন আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ সাড়া না দেওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবর আবারও জবাব চেয়ে চিঠি দেয় কমিশন।
গত ২৭ নভেম্বর কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় এখনো তাদের চিঠির জবাব দেয়নি।