কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে ব্লগারদের সমবাশ এখন সব মানুষের সমাবেশে পরিণত হয়েছে৷ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিক কর্মী, সাধারণ মানুষ সবাই যোগ দিচ্ছেন এই অভূতপূর্ব সম্মিলনে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগের সমাবেশ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে৷ চারদিকে রাস্তা ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে যাচ্ছে অলিতে গলিতে৷ আর সব শ্রেণির মানুষ জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও মিছিল নিয়ে যোগ দিচ্ছেন সমাবেশে৷ সংস্কৃতিক কর্মীরা গান গাইছেন৷ ফাঁসির মঞ্চ বানানো হয়েছে৷ আর সেখানে স্থাপন করা হয়েছে কাদের মোল্লার কুশপুত্তলিকা৷ তরুণ-তরুণীদের কথা, তাঁরা যাবজ্জীবন মানেন না৷ কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি দিতেই হবে৷
‘মিরপুরের কসাই’ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যু্দ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় রায় ঘোষণা করে৷ রায়ে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়৷ এর মধ্যে দুটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হলেও তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ আর তিনটি অভিযোগে তাকে ১৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: AP
প্রতিবাদে হরতাল
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷ দলটি মনে করে এ রায় গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
রায়ে কেউ খুশি নয়
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় সরকার এবং জামায়াতে ইসলামী কোনো পক্ষই খুশি নয়৷ তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে সারা দেশে৷
ছবি: Reuters
ট্রাইবুনালের দ্বিতীয় রায়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর আগে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগে ‘বাচ্চু রাজাকার’ নামে পরিচিত আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়৷ সেটি ছিল ট্রাইবুনালের দেয়া প্রথম রায়৷ দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামী তাঁর বিচার শুরু আগে থেকেই পলাতক৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
অপেক্ষার অবসানে স্বস্তি
আবুল কালাম আযাদ ওরফে ‘বাচ্চু রাজাকার’-এর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের উল্লাস করতে দেখা গেছে৷ কিন্তু কাদের মোল্লার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় তাঁদের প্রায় সবাই হতাশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের দাবি
একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসসহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটতরাজ, চালিয়েছিল৷ দেশি-বিদেশি সব মাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রচারিত হয়েছে৷ অনেক গ্রন্থেও লেখা আছে এই ইতিহাস৷ ছবিতে একাত্তরের কয়েকজন নারী মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: Zinat Rahman
জামায়াত ও সমমনাদের সহিংসতা
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের বিচার বন্ধ করার দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে চলেছে জামায়াতে ইসলামী৷ কর্মসূচি পালনের সময় দলের কর্মীদের গাড়িতে আগুন দেয়া, ভাঙচুরসহ নানা ধরনের সহিংস কাজেও তৎপর হতে দেখা গেছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সংশয় জন্ম দেয়া পদত্যাগ
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিচার কাজ শুরু করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কিছু প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে, বিতর্কেও জড়িয়েছে৷ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেলজিয়াম প্রবাসি এক আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞের স্কাইপ-এ কথা বলায় পদত্যাগ করতে হয় বিচারপতি নিযামুল হক নাসিমকে৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
তাঁরা প্রশ্ন করেন, ক'টা হত্যাকাণ্ড ঘটালে একজন অপরাধীর ফাঁসি হবে? কতটা রক্ত নিলে একজন যুদ্ধাপরাধী যুদ্ধাপরাধী হবে?
এই সমাবেশে এসে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সরকারের মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, লেখক সাংবাদিক সবাই৷ তাঁদেরও কথা, এই রায় মানা যায় না, মেনে নেয়া হবে না৷ তাঁরা বলেন, সরকারের কোনো নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করবে না জাতি৷
সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ তরুণ ব্লগারদের ডাকা এই সমাবেশে যোগ দিয়ে অভিভূত হন৷ তাঁদের কথা, এই জাগরণ গণজাগরণে পরিণত হবে৷ আর তরুণরাই পারবে যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য বিচার আদায় করতে৷ তাঁরা যখন জেগেছে, তখন এর ফল আসবেই৷
ব্লগাররা জানিয়েছেন, তাঁদের এই সমাবেশ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকবে৷ সারা দেশ থেকে মানুষ এখানে আসবেন৷ তাঁরা ব্লগ, ফেসবুকের পর এখন মোবাইল ফোন মারফতও ‘ম্যাসেজ' দিচ্ছেন৷ খবর দিচ্ছেন জাতিকে সমবেত হতে, ঐক্যবদ্ধ হতে৷