মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০৫ সালে ব্যবসায়ী হিসেবে দেড়শ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছেন৷ বিপরীতে তিনি আয়কর দিয়েছেন প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ডলার৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের এক গণমাধ্যমে ট্রাম্পের আয়কর প্রদান সংক্রান্ত দুই পৃষ্ঠার একটি বিবরণী প্রকাশিত হওয়ার আগে হোয়াইট হাউস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়৷
মঙ্গলবার এমএসএনবিসি টেলিভিশনের উপস্থাপক রাচেল ম্যাডো এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে ট্রাম্পের আয়কর বিবরণী রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে রাতে তাঁর অনুষ্ঠানে আলোচনা হবে৷ এর কিছুক্ষণ পরই বিবৃতি দেয় হোয়াইট হাউস৷
ট্রাম্পের আয়কর বিবরণীটি আসলে পেয়েছিলেন পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড কে জনসন৷ তিনি পরবর্তীতে রাচেল ম্যাডোর অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷ ইমেলের মাধ্যমে জনসনের কাছে বিবরণীটি পৌঁছলেও সেটি কে বা কারা পাঠিয়েছে তা তিনি জানেন না৷ তবে ট্রাম্পও তাঁকে বিবরণীটি পাঠিয়ে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেন জনসন৷
বিবরণীতে দেখা যায়, ট্রাম্প ২৪.৫ শতাংশ হারে কর দিয়েছেন৷ সাধারণ মার্কিনিদের ক্ষেত্রে এ হার ১০ শতাংশের মতো৷ তবে নিয়ম অনুযায়ী, যাঁদের আয় এক মিলিয়ন ডলারের বেশি তাঁদের ২৭.৪ শতাংশ কর দেয়ার কথা৷ সে হিসেবে ট্রাম্প প্রায় আড়াই শতাংশ কর কম দিয়েছেন৷
৩৮ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে কেন্দ্রীয় আয়কর হিসেবে ট্রাম্প দিয়েছেন ৫.৩ মিলিয়ন ডলার৷ আর ৩১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন ‘অল্টারনেটিভ মিনিমাম ট্যাক্স’ বা এএমটি হিসেবে৷ ধনী ব্যক্তিরা যেন আইনের ফাঁকের আশ্রয় নিয়ে কর ফাঁকি দিতে না পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প এএমটি তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন৷
এদিকে, আয়কর বিবরণী প্রকাশ করায় এমএসএনবিসি-র সমালোচনা করে এটি আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস৷ ‘‘এভাবে আয়কর চুরি করা ও প্রকাশ করা একেবারে অবৈধ’’, এক বিবৃতিতে বলে হোয়াইট হাউস৷ তবে জনস্বার্থে এটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এমএসএনবিসি৷ ‘ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট’ অনুযায়ী এটি বৈধ বলেও দাবি করেছে চ্যানেলটি৷
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এক টুইটে আয়কর বিবরণী প্রকাশ করার সমালোচনা করেছেন৷
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও নিজের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করতে না চেয়ে বিতর্কের জন্ম দেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, ‘ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস’ তাঁর বিষয়টি তদন্ত করছে এবং সে কারণে তাঁর বিবরণী প্রকাশ করা উচিত নয় বলে তাঁকে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন৷ তবে এ ব্যাপারে আইনগত কোনো বাধা আসলে নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এপি, ডিপিএ)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পদ ও সাম্রাজ্য
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক কতটা ধনি? সেই সম্পদের ভিত্তিই বা কী? ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সম্পদ নিয়ে বড়াই করে থাকেন, কিন্তু বিশদ কিছু না জানিয়ে৷ যেটুকু জানা গেছে, তা হলো...
ছবি: picture-alliance/AA
ট্রাম্প কতটা বড়লোক?
ট্রাম্পের সম্পত্তি নিয়ে কথা উঠলে প্রথমে কিছুটা ধাঁধা লাগে৷ তাঁর ধনসম্পদ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার অভিযান থেকেও কোনো বিশদ খবরাখবর পাওয়া যায়নি, যেহেতু ট্রাম্প অপরাপর প্রার্থীদের মতো তাঁর আয়করের খতিয়ান প্রকাশ করেননি৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
ট্রাম্প নিজে যে বিবৃতি দিয়েছেন
...তা অন্যান্যদের হিসেবনিকেশের সঙ্গে মেলে না৷ ২০১৫ সালের জুন মাসে ট্রাম্প বলেন যে, তাঁর সম্পদের মূল্য আটশ’ কোটি ডলারের বেশি৷ কিন্তু ফর্বসের হিসেব অনুযায়ী তাঁর সম্পদ ৪১০ কোটি ডলার৷ ২০১৫-র জুলাই মাসের মাঝামাঝি ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায় যে, তাঁর বিত্তের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার৷ কিন্তু ব্লুমবার্গ সংবাদ সংস্থার মতে তখন ট্রাম্পের সম্পদ ২৯০ কোটি ডলারের বেশি নয়৷
ছবি: Reuters/J. Bourg
গ্লোবাল কর্পোরেট নেটওয়ার্ক
ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত জার্মান পত্রিকা ‘হান্ডেলসব্লাট’-এর বিবরণ অনুযায়ী, ২৫টি দেশের ৫০০ কোম্পানিতে ট্রাম্পের শেয়ার আছে৷ এই সব কোম্পানির কার্যকলাপ, আয়-ব্যয় বা মুনাফা সম্পর্কে প্রায় কিছু জানা নেই৷ ২৫টি দেশে ট্রাম্পের ১৪৪টি কোম্পানি আছে, বলে সিএনএন দাবি করে থাকে৷ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী ট্রাম্পের অন্তত ১৮টি দেশে ১১১টি কোম্পানি আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
রিয়্যাল এস্টেট
ট্রাম্পের সাম্রাজ্য হলো ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’, যা তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন৷ ১৯৭১ সাল যাবৎ তিনি এই কোম্পানিটির দায়িত্বে৷ সারা বিশ্বে এই কোম্পানির বড় বড় প্রপার্টি আছে, যেমন নিউ ইয়র্কে ৪০ নম্বর ওয়াল স্ট্রিট, ভ্যানকুভারে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ার বা (ছবিতে) লাস ভেগাসের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল৷
ছবি: Getty Images/J.Raedle
চার বাড়িতেই বাজি মাত
ট্রাম্পের সম্পদ মোটামুটি চারটি বহুতল ভবনে আবদ্ধ, বলে ফর্বস পত্রিকার অভিমত৷ নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের দু’টি অফিস ভবন আছে, এছাড়া তিনি ফিফ্থ অ্যাভিনিউ-এর ট্রাম্প টাওয়ারের অংশীদার৷ সান ফ্রান্সিস্কোতেও তাঁর একটি বহুতল ভবন আছে৷ এই চারটি বহুমূল্য স্থাবর সম্পত্তি ট্রাম্পের সম্পদের মোট ৪০ শতাংশ, বলে ফর্বস-এর ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W.G. Allgoewer
গল্ফ কোর্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মোট ১৭টি গল্ফ কোর্সের মালিক৷ ২০১৬ সালের মে মাসে ট্রাম্প বলেন যে, এই গল্ফ কোর্সগুলি থেকে তাঁর বছরে ৩০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Lawson
তাজ মহল
হ্যাঁ, তবে অ্যাটলান্টিক সিটিতে, এবং এটি একটি ক্যাসিনো৷ ট্রাম্প অ্যাটলান্টিক সিটি ও ফ্লরিডায় তাঁর ক্যাসিনোগুলিতে অনেক টাকা ঢেলেছেন৷ অ্যাটলান্টিক সিটির তাজ মহল ক্যাসিনোটি তৈরি করতে নাকি ট্রাম্পকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে৷ ক্যাসিনোটি প্রথমবার দেউলিয়া হয় ১৯৯১ সালে; তারপর ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আরো তিনবার দেউলিয়া হয়৷ শেষমেষ ২০১৬ সালের ১০ই অক্টোবর ক্যাসিনোটি বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/W.T.Cain
‘ইউ’র ফায়ার্ড’
টেলিভিশন মনোরঞ্জনের জগতেও ভাগ্যানুসন্ধান করেছেন ট্রাম্প৷ ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামের সফল টিভি সিরিজটির সঞ্চালক ও প্রযোজক ছিলেন ট্রাম্প৷ শো’টি চলে ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল অবধি৷ ১৭টি দেশে তা সম্প্রচার করা হয়েছে৷
আদালতে মামলা আর ব্যর্থ চুক্তির কারণে অধিকাংশ মার্কিন ব্যাংক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টাকা ধার দিতে চায় না৷ জার্মানির ডয়চে ব্যাংক কিন্তু কোনোদিনই ট্রাম্পকে না বলেনি, বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ পত্রিকার খবর অনুযায়ী ডয়চে ব্যাংক ১৯৯৮ সাল যাবৎ ট্রাম্পকে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে৷ সিএনএন-এর খবর অনুযায়ী ডয়চে ব্যাংকের কাছে ট্রাম্পের এখনও ৩৬ কোটি ডলার ধার আছে৷
ছবি: picture-alliance/Markus Ulmer
স্বার্থের সংঘাত?
ঘটতে বাধ্য, বলে মনে হতে পারে৷ অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তাদের ব্যবসা কোনো ট্রাস্ট বা নিধির হাতে তুলে দিয়েছেন৷ মালিকানা বজায় থাকলেও, ব্যবসা চালানোয় আর তাঁদের কোনো হাত থাকেনি৷ ট্রাম্পও তাঁর ব্যবসা তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেবার কথা ভাবছেন৷ খুঁটিনাটি নাকি তিনি ২০১৬-র জানুয়ারি মাসে জানাবেন৷