প্রায় তিনমাস ধরে কয়েক দফায় ফাইভ-জি নিলামে জার্মানি ধারণার চেয়ে বেশি অর্থ তুলতে পেরেছে৷ নিলামে বিজয়ীদের কাজ হবে জার্মানির ঘরে ঘরে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া এবং অন্যদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক শেয়ার করা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক সংস্থা বুধবার ৪৯৭ ধাপে ফাইভ-জি নিলামের ফলাফল ঘোষণা করেছে৷ দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে দুই এবং তিন দশমিক ছয় গিগাহার্জ ব্যান্ডের ৪১টি ব্লকের স্পেকট্রাম নিয়ে আয়োজিত এই নিলাম থেকে ছয় দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ইউরো পেয়েছে দেশটি৷
জার্মানিতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার বিষয়টি গত কয়েকবছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে৷ বর্তমানে দেশটিতে যে ইন্টারনেটের গতি পাওয়া যায় তা বিভিন্ন কাজের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু হলে কানেক্টেড ফ্যাক্টরি, সিটিসহ চালকবিহীন গাড়ির মতো সেবা প্রদান সহজ হবে৷
তবে, ফাইভজি নেটওয়ার্কের নিলাম থেকে যে এত অর্থ আয় হতে পারে সেটা অবশ্য শুরুতে ধারণা করা যায়নি৷ প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে নিলামে দর সর্বোচ্চ পাঁচ বিলিয়ন ইউরো অবধি উঠতে পারে৷ নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল ডয়চে টেলিকম৷ আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ভোডাফোন এবং টেলিফোনিয়া জার্মানি বা ওটু৷ এক্ষেত্রে '‘ভার্চুয়াল মোবাইল অপারেটর'' হিসেবে পরিচিত আইন্সউন্ডআইন্স ড্রিলিশ নতুন অপারেটর হতে সক্ষম হয়েছে৷
ফাইভ-জি দিয়ে যা করা যাবে
পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা ফাইভ-জি, যা আমূল পালটে দেবে মানুষের প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা৷ ইন্টারনেটের গতি বর্তমানের ফোর-জির তুলনায় হবে ১০০ গুণ বেশি৷ সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়েছে ফাইভ-জি সুবিধার ফোন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
ফাইভ-জি কি?
মোবাইল প্রযুক্তিতে বিবর্তনের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ পর্যায় ফাইভ-জি৷ পঞ্চম প্রজন্মের এই নেটওয়ার্কের গতি হবে ঈর্ষণীয়৷ ইন্টারনেট সংযোগের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি এটা অন্যান্য ডিভাইসকেও মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবে৷ এই প্রযুক্তি নিয়ে উল্লসিত মোবাইল কোম্পানিগুলো নানা রকমের উদ্যোগ নিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/R. Marchante
ফাইভ-জির পরিক্রমা
আশির দশকে প্রথম আসে ওয়ান-জি মোবাইল, যাতে শুধু কথা বলা যেত৷ এরপর কথা বলার সঙ্গে এসএমএস আদানপ্রদান সুবিধা নিয়ে আসে টু-জি৷ ২০০৩ সালে আসে থ্রি-জি, যার মাধ্যমে মুঠোফোনে যুক্ত হয় ইন্টারনেট৷ এরপর ২০০৮ সালে ফোর-জির কারণে উচ্চগতি পায় মোবাইল ইন্টারনেট৷ ফাইভ-জি অতি উচ্চগতির পাশাপাশি হ্যান্ডসেট ছাড়া অন্যান্য ডিভাইসকেও সমানতালে সংযুক্ত করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
এক মিনিটের কম সময়ে নামবে সিনেমা!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইভ-জির কারণে ইন্টারনেটের গতি বর্তমানের তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি বেড়ে যাবে৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি সিনেমা ডাউনলোড করা যাবে মাত্র এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে!
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zhihao
স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ির প্রয়োজনে
২০৩৪ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ির বাজার দাঁড়াবে ৫৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷ ফাইভ-জিকে এই খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে ধরা হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকবিহীন গাড়ির পাশাপাশি অন্য গাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ, সরাসরি ম্যাপ এবং যানবাহন চলাচলের তথ্য পাওয়া যাবে এতে৷
ছবি: DW/K. Ferguson
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ামক
দেশ-বিদেশ ঘুরে রোবট সোফিয়া যখন সবার সঙ্গে আলাপ করে তখন কে-না আনন্দ পায়৷ বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বড় রকমের জায়গা দখল করে নিচ্ছে সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট আর এআই প্রযুক্তি৷ ফাইভ-জি থেকে আসা বিপুল পরিমাণের ডেটা এআই প্রযুক্তির এমন কাজকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে৷
ছবি: DW/K. Ferguson
রোবটিক্স কমিউনিকেশন
শিল্প কল-কারখানা আর দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে রোবটকে ব্যবহার বাড়ছে সারাবিশ্ব৷ ফাইভ-জিতে ইন্টারনেটের গতি বাড়লে রোবটের মধ্যে যোগাযোগের পরিধি বেড়ে যাবে অনেক৷ শিল্প উৎপাদনের ধারাও আমূল পালটে যাবে এর মাধ্যমে৷
ছবি: picture alliance/Imaginechina/R. Xi
বদলে যাবে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা
ভিডিও, মিউজিক স্ট্রিমিংসহ বিভিন্ন বিনোদন মাধ্যমের জনপ্রিয়তার কারণে সারাবিশ্বে ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত৷ কিন্তু বর্তমানে স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ ব্যবহারের বিদ্যমান সক্ষমতার কারণে এ সেবায় ছেদ পড়ে নানা সময়৷ এর বিপরীতে ফাইভ-জিতে হাজার হাজার ডিভাইস সমানতালে চালানোর সক্ষমতা থাকবে৷ ফলে মোবাইল থেকে শুরু করে ইকুইপমেন্ট সেন্সর, ভিডিও ক্যামেরা থেকে স্মার্ট স্ট্রিট লাইট সবকিছুর অভিজ্ঞতা পালটে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
7 ছবি1 | 7
দরদাতারা অবশ্য নিলামে চড়া দামের সমালোচনা করে বলেছে এর ফলে নেটওয়ার্কগুলোতে বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন হতে পারে৷ ডয়চে টেলিকমের বোর্ডের এক সদস্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে জার্মানিতে স্পেকট্রামের দাম অন্য দেশের চেয়ে বেশি৷
তবে, জার্মানিতে ডেটা নেটওয়ার্কের নিলামের ক্ষেত্রে এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড নয়৷ ২০০০ সালে থ্রিজি নিলাম থেকে রেকর্ড পরিমান ৫০ বিলিয়ন ইউরো পেয়েছিল দেশটি৷ আর ২০১৫ সালে ফোরজি নিলাম থেকে উঠেছিল পাঁচ দশমিক এক বিলিয়ন ইউরো৷
উল্লেখ্য, নিলামের চুক্তি অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০২২ সালের মধ্যে জার্মানির ৯৮ শতাংশ বসতবাড়িতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে হবে এবং একটি ন্যাশনাল রোমিং এর আওতায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও নেটওয়ার্ক শেয়ার করতে হবে৷